ঘূর্ণিঝড় আমফান চলে গিয়েছে দিন তিনেক হতে চলল। তা সত্ত্বেও দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পড়ে রয়েছে উপড়ে পড়া হাজার হাজার গাছ। কলকাতায় ভূমিশয্যা নেওয়া গাছের অন্তত ৬০ শতাংশ এখনও না সরানোয় শহর ও শহরতলির যানচলাচল ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সর্বত্র স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না। মহানগরের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাতেও রাস্তায় ভেঙে পড়া গাছের সরিয়ে পরিস্থিতি ও পরিষেবা দ্রুত স্বাভাবিক করতে নেমেছে কলকাতা পুরসভা এবং জেলা প্রশাসনগুলি। ঝড়ে উপড়ে পড়া সাড়ে পাঁচ হাজার গাছ সরিয়ে কলকাতাকে সচল করতে কমপক্ষে আরও সাতদিন লাগবে বলে স্বীকার করেছেন কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
আর সেই কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে রাতারাতি বরো পিছু লাখ টাকা দামের করাত কেনার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা পুরসভা। আর প্রশ্ন এখানেই। কেন এতদিন পরে এমন করাত কেনা হচ্ছে? অন্তত ১০ দিন আগে জানা সত্বেও এত বড় ঝড় আসবে বলে প্রস্তুতি নেওয়া হল না? তবে এই ঝড়ে যেভাবে সিইএসসি মুখ থুবড়ে পড়েছে, তা বিস্ময়কর। কিছুটা ক্ষুব্ধ ফিরহাদ হাকিম বলেন, “সিইএসসি না পারলে বলুক পুরসভাকে বলুক, আমরাই লোক দেব।”
করোনা সংক্রমণ সরিয়ে আপাতত কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গের প্রশাসনের মাথাব্যাথার মূল কারণ রাস্তায় ও গৃহস্থের বাড়িতে শুয়ে থাকা হাজার হাজার গাছ। এছাড়াও পুরসভার পার্ক ও সরকারি এবং বেসরকারি অফিসের মধ্যেও পড়ে রয়েছে আরও কয়েক হাজার নানা মাপের গাছ। শুক্রবার ‘গাছ-সংকট’ নিয়ে পুরভবনে সমন্বয় বৈঠক শেষে পুরমন্ত্রী জানিয়েছেন, “আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিইএসসি ও বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম পরিস্থিতি স্বাভাবিক করবে। গাছ কাটা ও সরাতে পুরসভা, দমকল ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মিলিয়ে প্রায় দশ হাজার লোক নামানো হয়েছে।” নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কলকাতার পাশাপাশি জেলায় জেলায় পুলিশ, জেলা পরিষদ ও পুরসভা উপড়ে পড়া গাছ সরিয়ে জনজীবন স্বাভাবিক করতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে।
মহানগরে গাছ সরাতে পুরসভা ধীরগতিতে চলছে বলে বিরোধীদের অভিযোগের উত্তরে এদিন ফিরহাদ বলেন, “পুরসভার হাতে জাদুকাঠি নেই যে মুহূর্তে সাড়ে ৫ হাজার ভেঙে পড়া গাছ ও উপড়ে যাওয়া আড়াই হাজার লাইট পোস্ট সাফ করে দেব। একটু সময় দিন, সবাই রাস্তায় আছি, পরিস্থিতি দ্রুত ঠিক হবে।” দ্রুত মিটিং করে গাছ কাটার মেশিন আনার বরাত দিয়েছে পুরসভা।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, ঝড় চলে যাওয়ার পর দুদিন কাটলেও বালিগঞ্জ, লেক গার্ডেন্স, নিউ আলিপুর থেকে টালা, সার্দান অ্যাভিনিউ, বালিগঞ্জ, বেলেঘাটা, কসবা, বাগবাজার, মানিকতলা, কাঁকুড়গাছির মতো এলাকায় ৭০ শতাংশের বেশি ভেঙে পড়া গাছ সরানো সম্ভব হয়নি। একই চিত্র দুই ২৪ পরগনা ও হাওড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “তারের উপর গাছ পড়ে থাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করতে পারছে না বলে অজুহাত দিয়েছে সিইএসসি। ওরা গাছ কাটবে না, উপড়ে পড়া গাছ কাটার দায়িত্ব নাকি পুরসভার। তাই বলেছি, লোক ভাড়া করে সমস্ত গলিতে গাছ কেটে দ্রুত বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ দিতে হবে।” তবে কবে যে সব স্বাভাবিক হবে, তা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কেউই।