যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার মৃত্যুর রেশ এখনও কাটেনি। এবার কসবায় স্কুল ভবনের ৬ তলা থেকে পড়ে মৃত্যু হল দশম শ্রেণির এক পড়ুয়ার। ওই ছাত্র আত্মঘাতী হয়েছে নাকি পেছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সিলভার পয়েন্ট স্কুলের ওই ছাত্রের বাবার অভিযোগ তার ছেলের উপরে মানসিক নির্যাতন করা হতো। পাশাপাশি আজ তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়।
পড়ে যাওয়ার পর আহত ছাত্রকে নিকটবর্তী একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মৃত বলে ঘোষণা করা হয় ওই ছাত্রকে। তবে পরিবারের তরফে অভিযোগ উঠছে ঘটনার ২ ঘণ্টা পর ছাত্রটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল কেন? পড়ুয়ার পরিবারের অভিযোগ, একটি প্রজেক্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। সেটি জমা দিতে পারেনি বলে তাদের ছেলেকে বকাবকি করা হয়। সবার সামনে কান ধরে দাঁড় করিয়েও রাখা হয়। তাতেই অপমানিত বোধ করেছিল। স্কুলের শিক্ষক, নিরাপত্তারক্ষীদের এড়িয়ে সে কীভাবে ও ছয় তলায় উঠে গেল তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে পরিবারের তরফে। ছয় তলা থেকে কেউ পড়ে গেলে তার শরীরে কিছু হবে না? দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। শুধুমাত্র মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। স্কুলের সামনেই নার্সিং হোম। সেখানে কেন আহতকে নিয়ে যাওয়া হল না!
কসবা থানায় অভিযোগ জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মৃত পড়ুয়ার বাবা। তিনি বলেন, স্কুল থেকে ফোন করে বলা হল, আপনি শানের বাবা? বললাম হ্যাঁ। আপনাকে মুকুন্দপুর আমরি হাসপাতালে আসতে হবে। আমাকে বলল ও একটু সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। আপনি তাড়াতাড়ি আসুন। আমি ওদের ক্লাস টিচার মৌসুমী ম্যামকে ফোন করলাম। উনি বললেন আপনি অত উতলা হবেন না। হাসপাতালে আসুন। এমার্জেন্সিতে আসুন। গিয়ে দেখলাম সব শেষ। আমাকে বলা হল ও স্কুলের উপর থেকে ঝাঁপ দিয়েছে। ওপর থেকে কেউ ঝাঁপ দিলে তো ফ্রাকচার হবে। ও ঝাঁপ দিল কেন? ওর এক বন্ধু বলল সম্প্রিত সব জানে। আমি সম্প্রিতকে ফোন করলাম। জানতে পারলাম স্কুলেই আমার ছেলেকে মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ওকে পাঁচতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সঙ্গে বন্ধুও ছিল। তাকে পরে নীচে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওকে বেধড়ক মেরেছে জয়িতা ম্যাম, মৌসুমী ম্যাম। সঙ্গে আরও অনেকে ছিল। ও প্রজেক্টে করেনি। এনিয়ে তর্ক হয়েছে। ও হয়তো কিছু বলছে। শিক্ষকদের একটা চাপা রাগ ছিল আমাদের ওপরে। করোনার সময়ে আমরা সবাই একজোট হয়ে ম্যামদের বলেছিলাম ফি কমাবার কথা বলেছিলাম। তখন আমি একটু নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। এতে হেড মিস্ট্রেস অসন্তুুষ্ট ছিলেন। সেইসময় আমাকে বলেছিলেন, ইউ আর আইডেন্টিফায়েড। আজ ওরা বদলা নিয়ে নিল। থানায় সবকিছু বলেছি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার ছেলের মৃত্যুর বিচার চাই। আমার ছেলের উপরে মানসিক নির্যাতন চলত, দুর্বব্যবহার করত। পাঁচতলা থেকে নীচে পড়লে গোটা দেহচা থেঁতলে যাবে। শরীরের কোনও হাড় ভাঙেনি।
ওই ছাত্রের মৃত্যুর পর একাদিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তদন্তে নেমে পুলিস স্কুলের সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে দুপুর দুটো নাগাদ ওই পড়ুয়া পাঁচতলায় যাচ্ছে। পাঁচতলায় একটি রুমে ক্লাস চলছিল। তার পাশেই একটি নির্মাণ চলছিল। দুটো নাগাদই ওই পড়ুয়া নীচে পড়ে যায়। তার পর সাড়ে চারটে নাগাদ স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিসকে খবর দেয়। মাত্র ১.৪ কিলোমিচার দূরে থানা। সেই থানায় খবর দিতে স্কুলের কেন আড়াই ঘণ্টা লেগে গেল? এই প্রশ্নটা তুলছেন পড়ুয়ার আত্মীয়রা।
এদিকে, স্কুল ওই ছাত্রের উপরে মানসিক নির্যাতন করা হত এই মর্মে কসবা থানায় অভিযোগ করেছে পড়ুয়ার পরিবার। তাদের দাবি, স্কুলের শিক্ষকদের জন্য এসব হয়েছে। প্রজেক্ট করেনি বলে কান ধরে পাঁচতলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। লকডাউনে মাইনে বাড়িয়েছিল স্কুল। তার প্রতিবাদ করেছিল ওর বাবা। তার জন্যই আজ এটা করা হল।