এই বাল্মীকি জয়ন্তী পুন্যদিবসে, আপনি এইটা জেনে খুবই আশ্চর্য হবেন যে শুধু একজন সংস্কৃত পন্ডিত নন, মহর্ষি বাল্মীকি একজন মহান জ্যোতির্বিজ্ঞানীও ছিলেন। ওঁর লিখিত রামায়ণ কাব্য পড়ে বোঝা যায় যে ওনার জ্যোতিষ শাস্ত্রেও যথেষ্ট দখল ছিল। আধুনিক সফটওয়্যার এইটা প্রমান করেছে যে রামায়ণে উল্লেখিত ওনার মহাকাশসংক্রান্ত তথ্য অক্ষরে অক্ষরে সত্য।
শ্রীমতি সরোজ বালা, পরিচালক, ‘সাইন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট অন বেদাস’ নামে একটি বই লিখেছেন “রামায়ণ কি কাহানি, বিজ্ঞান কি জুবাণী”(রামায়ণের ব্যাখ্যা বিজ্ঞানের ভাষায়)। উনি তাঁর লেখা এই বইয়ে উনি কিছু আশ্চর্যজনক তথ্য তুলে ধরেছেন, আসুন দেখা যাক কি সেই তথ্য।
যদি আমরা খুব সন্তর্পনে মহর্ষি বাল্মীকির লেখা রামায়ণ পড়ি, তাহলে দেখা যাবে শ্রী রামের জন্মের তিথি ও ক্ষণ মহাকাশের অবস্থানের সাথে খুব বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছেন। এইটা মাথায় রাখতে হবে যে এই গ্রহনক্ষত্রের অবস্থানগুলি ২৫৯২০ বছরের আগে আর দেখা যাবে না।
শ্রীমতি সরোজ বালা প্লানেটারিয়াম গোল্ড সফটওয়্যার ভার্সন ৪১১ ব্যবহার করেছেন, যা গ্রহনক্ষত্রের সময়, তারিখ ও স্থান অনুযায়ী খুবই হাই রিসোলিউশণের দৃশ্য প্রদান করে।
বিশেষজ্ঞরা স্টেলারিয়াম সফটওয়্যারও ব্যবহার করেন রামায়ণে দেওয়া মহর্ষি বাল্মীকির এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে। তাঁরা খুঁজে পান যে নক্ষত্রপুঞ্জ ও গ্রহের অবস্থান সময়ের অনুরূপ যেমন বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ সত্য। স্টেলারিআম একটি মুক্ত-উৎস সফটওয়্যার যা আপনিও নিশুল্ক ডাউনলোড করতে পারেন। আপনি চাইলে যাচাই ও করে নিতে পারেন।
শ্রীমতি সরোজ বালার মতে, স্কাই গাইড সফটওয়্যারও একই তারিখ ও নক্ষত্রপুঞ্জের দৃশ্য অনুমোদন করে যা স্টেলারিয়াম সফটওয়্যার করেছে। পাঠকেরা নিজেদের মোবাইল ফোন, আইপ্যাড, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে এই সকল গ্রহনক্ষত্রের দৃশ্য ও তারিখ যা বইয়ে উল্লেখিত আছে যাচাই করে দেখতে পারেন, কারণ দুটো সফটওয়্যার-এর ফলাফল একই।
রামায়ণে উল্লেখিত নক্ষত্রজগতের তারিখ নিশ্চিত করা হয়েছে আধুনিক প্রত্নতত্ব, উদ্ভিদতত্ব, সমুদ্রবিজ্ঞান, ভূতত্ব, জলবায়ু বিজ্ঞান, উপগ্রহ প্রতিবিম্ব, সৃষ্টি সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান ইত্যাদির মাধ্যমে ও প্লানেটারিয়াম সিমুলেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে।
মহাকাশের তথ্যগুলি এতটাই সঠিক যে শ্রী রামের জন্মের সময়ে মহর্ষি নক্ষত্রপুঞ্জ, গ্রহ এবং সকল রাশিচক্রের ব্যাখ্যা সূর্য, মঙ্গল, শনি ও বৃহস্পতি এই পাঁচটি গ্রহ নিজেদের সর্বোচ্চ স্থানে ছিল এবং চন্দ্র বৃহস্পতি লগ্নে ছিল। নক্ষত্রের অবস্থান ও গণনার এই প্রক্রিয়া বেদ যুগ থেকে প্রচলিত। এই প্রক্রিয়া এখনো অবলম্বন করা হয় জ্যোতির্বিজ্ঞানে।
যদি ডেটা বসানো হয় সফটওয়্যার-এ যেমন রামায়ণে উল্লেখ করা আছে তাহলে অযোধ্যার অবস্থান মহাকাশীয় রূপরেখায় দাঁড়াবে অক্ষাংশ ২৭ ডিগ্রি উত্তরে ও দ্রাঘিমা ৮২ ডিগ্রি পূর্বে ১০ জানুয়ারী ৫১১৪ বিসি, সময় দুপুর ১২০০ থেকে দুপুর ২ ০০ এর মধ্যে। এটাই চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের নবমী তিথি। এটাই সঠিক সময় এবং তারিখ যখন সারা ভারতবর্ষে রামনবমী উদযাপন করা হয়। এইটা মাথায় রাখতে হবে যে এইরকম মহাকাশীয় রূপরেখা গত ২৫০০০ বছরে সমান ছিল না, যা ৭০০০ বছর ছিল শ্রী রামের জন্মের সময়।
এটা মাত্র একটা উদাহরণ। বহু এরকম ব্যাখ্যা আছে যা একদম সঠিক ফলাফল দিয়েছে যখনই সফটওয়্যার-এ গণনা করা হয়েছে।
এর থেকেই বোঝা যায় শ্রী রাম কাল্পনিক নন এবং রামায়ণও একটি কাল্পনিক গল্প মাত্র নয়।
শ্রী রাম অযোধ্যার ৬৪তম মহান সূর্যবংশী রাজবংশের শাসক ছিলেন ও মহর্ষি বাল্মীকি ছিলেন তাঁর সমসাময়িক। আদি কবি বাল্মীকি রামায়ণ লেখা শুরু করেন রাজা শ্রী রামের উত্তরণের পরে। উনি রাজা শ্রী রামের জীবনী ২৪০০০ সংস্কৃত শ্লোকে ব্যাখ্যা করেন। রামায়ণে মোট ৭ টি অধ্যায় (কান্ড) আছে যার নামগুলো হলো – বালকান্ড, অযোধ্যাকান্ড, অরণ্যকান্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকান্ড, সুন্দরকান্ড, যুদ্ধকান্ড এবং উত্তরকান্ড।