ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে ঘিরে মঙ্গলবার রণক্ষেত্র হয়ে উঠল ভাঙড়। মঙ্গলবার সকালে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকের বিডিও অফিসের সামনে মেলার মাঠে সংঘর্ষ বেধে যায় আইএসএফ এবং তৃণমূলের মধ্যে। সংঘর্ষে মুড়িমুড়কির মতো বোমাবাজি এবং গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসও। করা হয় লাঠিচার্জও। কিন্তু পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি এবং বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। তার জেরে প্রাথমিক ভাবে পিছু হটে পুলিশ। কয়েক জন পুলিশকর্মী জখম হন। কিছুটা পরে পুলিশপরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষই অভিযোগ তুলেছে একে অপরের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার ভাঙড় ১ নম্বর ব্লক থেকে শুরু হতে চলেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৃণমূলের ‘নবজোয়ার যাত্রা’ কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিকে সামনে রেখে নিজের গড় দক্ষিণ ২৪ পরগনায় উপস্থিত থাকার কথা তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
আইএসএফের অভিযোগ, সোমবার ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকের বিডিও অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে যাচ্ছিলেন আইএসএফ কর্মীরা। তাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও তৃণমূল সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময় ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকের বিজয়গঞ্জ বাজারে আইএসএফ এবং তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। যার জেরে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি এবং গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় মুহুর্মুহু বোমা পড়তে দেখা গিয়েছে। আরও জানা গিয়েছে, সাত রাউন্ড গুলিও চলেছে। হামলা নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে তৃণমূল এবং আইএসএফ। দু’পক্ষের কয়েক জন জখম হয়েছেন বলে দুই দলেরই দাবি। ওই কাণ্ডে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসা কয়েক জন আইএসএফ কর্মীকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ আইএসএফের।
বিষয়টি নিয়ে আইএসএফকেই বিঁধেছে তৃণমূল। ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা ভাঙড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা শওকত মোল্লা অভিযোগ করেছেন, মঙ্গলবার তৃণমূলের ‘নবজোয়ার যাত্রা’ কর্মসূচি বাতিল করতেই সমাজবিরোধীদের একত্রিত করে পরিকল্পিত ভাবে হামলা করেছে আইএসএফ। এ জন্য ভাঙড়ের আইসএফ বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকিকেই দায়ী করেছেন তিনি। নৌশাদদের এ জন্য ‘চরম মূল্য’ দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শওকত। এক তৃণমূল কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে অভিযোগ।
শওকতের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন নৌশাদ। তাঁর দাবি, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচিতে অশান্তি করার ইচ্ছা থাকলে আমরা আজ ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকে মনোনয়নপত্র জমা দিতাম না। তা হলে আজ আমরা ভাঙড় ১ নম্বর ব্লকেই মনোনয়নপত্র জমা দিতাম।’’ বিষয়টির জন্য তিনি সম্পূর্ণ দায় চাপিয়েছেন তৃণমূলের ঘাড়ে। এই ঘটনার কথা রাজ্য নির্বাচন কমিশনেও জানানো হবে বলে বক্তব্য নৌশাদের। আইএসএফ প্রার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে অভিযোগ দলীয় নেতৃত্বের।
এলাকায় উত্তেজনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কাশীপুর থানার পুলিশ। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশকর্মীদের লক্ষ্য করে পাল্টা ইট ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। তাঁদের লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। ইটের ঘায়ে কয়েক জন পুলিশকর্মী রক্তাক্ত হয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ পিঠু হটলেও, পরে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে পুলিশ। ভাঙড়ের ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এই পরিস্থিতির জেরে মঙ্গলবার সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায় ভাঙড় ২ নম্বর বিডিও অফিসে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া। অফিসের দরজায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তালা।
সোমবার রাতে ভাঙড়ের চালতাবেড়িয়া এলাকায় কুতুবউদ্দিন আলি মোল্লা নামে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে আইএসএফের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সোমবার ভাঙড় ২ বিডিও অফিসে তৃণমূলের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় গিয়েছিলেন কুতুবউদ্দিন। সেই কারণে তাঁর বাড়িতে ইট এবং বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। যদিও আইএসএফ সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ঘিরে অশান্তির অভিযোগ উঠেছে ক্যানিংয়েও। মঙ্গলবার দুপুরে বিজেপি প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন ক্যানিং ১ বিডিও অফিসে। অভিযোগ, সেখানে তৃণমূল কর্মীরা তাঁদের প্রার্থীদের মারধর করেন। পুলিশের সামনেই মারধর চলে বলে অভিযোগ। যদিও বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। ভাঙড় ২ ব্লকের বিডিও অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে বিজেপি কর্মীরা শাসকদলের হাতে আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।