পার্শ্ব-শিক্ষক ইস্যুতে এবার সরব হলেন বিদ্বজনেরা। দীর্ঘদিনের অচলাবস্থায় দাঁড়ি টানতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়ে এবার তাঁকে খোলা চিঠি লিখলেন তিরিশ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব সহ মানবাধিকার কর্মীরা।
৩৭ জন পার্শ্ব-শিক্ষকেরা যে অনশন চালাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি, চিঠিতে লেখা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে অনির্দিষ্টকালের অনশনকে থামাতে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে সাইত্রিশ জন পার্শ্ব শিক্ষক অনশনে বসেছেন।
প্যারা টিচার ঐক্য মঞ্চের কো-কনভেনর ভগীরথ ঘোষ জানিয়েছেন, পাঁচদিন আগে অসুস্থ হয়ে এখনও একজন পার্শ্ব শিক্ষক নীল রতন সরকার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই চিঠি রাজ্য সদর দফতর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর অফিস অরথায় সিএমও-তে পাঠিয়েছেন। তবে কোন রিসিপ্ট কপি তাঁদের তরফে দেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো খোলা চিঠিতে অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটের সুজাত ভদ্র এবং সমাজকর্মী এবং কলমিস্ট মীরাতুন নাহার এই চিঠিতে সই করেছেন বলেই জানা গিয়েছে।
চুক্তিভিত্তিকভাবে সরকারী স্কুলগুলিতে কর্মরত প্রায় ১০০০ জনেরবেশি পার্শ্ব শিক্ষক নভেম্বর মাসের ১১ তারিখ থেকে অনশনরত। তাদের মধ্যে কমপক্ষ ৩৭ জন অনির্দিষ্টকালের জন্য নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগে এই অচলাবস্থার জন্য সিপিএম চালিত দীর্ঘদিনের সরকারকে দায়ি করেছেন। অর্থনৈতিক বাঁধা থাকলেও, তৃণমূল শাসিত সরকার পার্শ্ব শিক্ষকদের বেতন ২০১৮ সালে বৃদ্ধি করা হয়েছিল বলেই জানিয়েছেন তিনি।
প্যারা টিচার ঐক্য মঞ্চের কো-কনভেনর বেতন প্রসঙ্গে বলেছেন, পার্শ্ব শিক্ষকরা দাবী জানিয়েছে তাঁদের মাসিক বেতন যেন গ্রুপ-ডি কর্মীদের স্কেলের থেকে বেশি হয়। এছাড়াও তাঁদের ‘প্যারা টিচারে’র পরিবর্তে ‘এলিমেণ্টরি টিচারসে’র আখ্যা দেওয়া হয়, এই দাবিও জানানো হয়।
পার্শ্ব-শিক্ষকদের সমস্যার সমাধানে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীকে সুজনবাবু লিখেছেন, পার্শ্ব-শিক্ষকদের অনশন-আন্দোলন ১৪ দিনে পড়েছে। তাঁরা যে সামান্য বেতন পান, তাতে দুর্মূল্যের বাজারে জীবন নির্বাহ করা কঠিন। তাই তাঁদের দাবির নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।
সেই সঙ্গেই সুজনবাবু মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘আন্দোলনরত মাস্টারমশাইরা সেই দাবিটুকুই মূলত করছেন, যা বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন পার্শ্ব-শিক্ষকদের ধর্না-মঞ্চে আপনি (মমতা) দাবি করেছিলেন এবং ২০১১ সালের ৩ জুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মহাকরণ থেকে পার্শ্ব-শিক্ষকদের জন্য আপনি ঘোষণা করেছিলেন। তাঁদের দাবি অবশ্যই সঙ্গত’।
এদিকে পার্শ্ব শিক্ষক ইস্যূতে কেন্দ্র দোষারোপ করেছে রাজ্যকে। কেন্দ্র জানিয়েছে তারা টাকা পাঠালেও দিচ্ছে না রাজ্য। কেন্দ্র-রাজ্যের পরস্পরবিরোধী দাবিতে নাজেহাল শিক্ষকেরা। তবে তাঁরাও পরিস্থিতির জট কাটাতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী কথা বলুক।