অনেক পুরোনো দিনের কথা | সাহিত্যিক বনফুল থাকতেন ভাগলপুরে। তিনি তখন ওখানকার নামকরা ডাক্তার-প্যাথোলজিস্ট। গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ ছিলেন বনফুল | প্রায়ই দেখা যেত লাঠি হাতে সাদা খদ্দরের পাঞ্জাবি গায়ে, ধুতিটা লুঙ্গির মতো পরে নিজের ল্যাবরেটরিতে চলেছেন। একবার এক বাঙালি চিত্র পরিচালকের বনফুলের ছোট গল্প ‘অর্জুন কাকা’-কে নিয়ে ছবি করার খুব ইচ্ছে হল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সেই চিত্র পরিচালকের শৈশব-কৈশোর কেটেছে ওই ভাগলপুরেই | কিন্তু বনফুলের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সাহস হয়নি।
একদিন ভয়ে ভয়ে চিঠি লিখে ফেললেন ভাগলপুরে। উত্তরও এল। তাতে লেখা, কোনও এক কাজে কলকাতায় আসছেন বনফুল। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-এ তাঁর ছেলের ফ্ল্যাটে দেখা করতে হবে।জড়সড় হয়ে দুরু দুরু বুকে গেলেন সে-ফ্ল্যাটে। দেখা হল। কিশোরবেলায় দেখা বনফুলের সেই গাম্ভীর্য ভাবটা তখন কই! বনফুল বললেন, ‘‘কথা পরে হবে। আগে ভাগলপুর থেকে আম এনেছি, জর্দালু আম, একটু খেয়ে নাও। এ রকম আম কলকাতায় আর কোথায় পাবে?’’ এই এক কথাতে ভয়ের প্রাচীরটা যেন ভেঙে গেল। ‘অর্জুন কাকা’ নিয়ে ছবি হবে শুনে তার নামও ঠিক করে দিলেন বনফুল—‘আরোহী’। চিত্রনাট্য আগে শোনাতে চাইলে হেসে বললেন, ‘‘কিছু দরকার নেই। মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করে যাও।’’ টাকাপয়সা নিয়ে একটি কথাও বললেন না।
ছবি তৈরি হল। কিন্তু মুক্তি নিয়ে নাটকীয় কাণ্ড ! রিলিজের আগে পশ্চিমবঙ্গের সব প্রেক্ষাগৃহের কর্মীরা হরতাল ডেকে বসলেন। খবরটা কানে যেতেই পরিচালক ধরেই নিয়েছিলেন ছবির দফারফা! কিছুতেই আর রক্ষা পাওয়ার নয়। ছবির মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল মিনার-বিজলী-ছবিঘরে। তার আগে ছবিটা এক বার চালিয়ে শব্দ আর প্রজেক্টরের আলো প্রিন্ট অনুযায়ী ঠিক করা হবে। মুক্তির ঠিক দু’দিন আগের কথা। শূন্য হলে তপন সিংহ আর তাঁর কিছু সহকর্মী বসে। ছবি চলল। ওঁরা দেখলেন। সবার অজান্তে ইউনিয়নের কিছু লোকও দেখলেন। সেই যাঁরা হরতালের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু ছবি শেষে তাঁরা এত খুশি যে, হরতাল কিছু দিনের জন্য বন্ধ রেখে দিলেন। বাংলা ছায়াছবির ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কবে ঘটেছে, জানা নেই।
চিনতে পারলেন সেই পরিচালককে ? তিনি কিংবদন্তি তপন সিনহা |
বাংলা ছবির ফ্যান্টাসি শাখার এখনও পর্যন্ত সফলতম স্রষ্টা তপন সিংহ। গল্প হলেও সত্যি, এক যে ছিলো দেশ, বাঞ্ছারামের বাগান, আজব গাঁয়ের আজব কথা তো এখনও বেঞ্চমার্ক | ২০০৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি, সমস্ত আশ্রয়ের ঊর্ধ্বে উঠে চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘আপনজন’।
জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য |
© অহর্নিশ
তথ্যসূত্র:
মনে পড়ে, তপন সিংহ, আনন্দ পাবলিশার্স