এই মানুষটিকে সবাই চেনেন। নাম – #ক্রিস_গেইল। ক্রিকেট দুনিয়া তাকে বলে – ইউনিভার্সাল বস। টেস্ট ম্যাচে ১৫টি শত রান, একদিনের খেলায় ২৫ টি শত রান, বর্ণময় এক ব্যাটসম্যান। মাঠে নেমে রানের বন্যা বইয়ে দিতেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিপক্ষের যেকোনো বোলারকে উড়িয়ে দিয়ে বল পাঠিয়ে দিতেন স্টেডিয়ামের বাইরে। টেস্ট ম্যাচে দুবার তিনশত রান করেছিলেন গেইল। আর আইপিএল এর বিনোদনকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
বিতর্কও পিছু ছাড়েনি গেইলের, মাঠের বাইরের বেহিসেবি জীবন, মদ, মহিলাসঙ্গ সব কিছু যেন গেইলের সাথে জুড়ে থাকতো।
২০২১ সালে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর নেবার পরে আর্জেন্টিনাতে গেইল স্বামীজির একটি বই হাতে পান, বইটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়তে পারেন নি। কি কথা, কি তার তেজ, ভিতরটাকে নাড়া দিয়ে দিচ্ছে, ভেবেছিলেন ৪২ বছর বয়সের জ্যামাইকার ক্রিকেটেরটি। তারপরই গেইলের ধ্যান জ্ঞান হয়ে যায় স্বামী বিবেকানন্দ।
বিবেকানন্দ মানে ঝড়। যার পরতে পরতে মিশে আছে রুদ্রময় তেজ। স্বাভাবিকভাবে এমন চরিত্রের প্রতি গেইল যে আকৃষ্ট হবেন সেটাই স্বাভাবিক। ২২ গজে তিনিও যে ঝড় তোলেন। রুদ্র মূর্তিতে সংহার করেন প্রতিপক্ষের বোলারদের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি খবরের কাগজের সাংবাদিককে গেইল বলেছেন, বিবেকানন্দ আমার ভিতরের আলো জ্বেলে দিয়েছেন সম্প্রতি। এখন গেইলের কাজ স্বামীজির কথা ছড়িয়ে দেওয়া।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে যে খুব স্বামীজি চর্চা হয় তা নয়। রামকৃষ্ণ মিশনের কোনো শাখা কেন্দ্র সেখানে নেই। কিন্তু গেইল এখন জমাইকাতে নতুন এক মানুষ, রামকৃষ্ণ মিশনের একটি ছোট্ট আশ্রম খুলেছেন। ওয়েস্টইন্ডিজের ক্যালিপসো সুরে মিশে গেছে – খণ্ডন ভব বন্ধন জগ বন্দন বন্দি তোমায়।
রোমা রলা বলেছেছিলেন Vivekananda’s words are great music. জর্জ হ্যারিসন-ও তাই মনে করেছেন। আর গেইলকে আকৃষ্ট করে স্বামীজির এক জোড়া চোখ, ব্যক্তিত্ব আর মানুষের প্রতি সীমাহীন দরদ।
গেইল গতিকে ভালোবাসেন। মাঠে নেমে ঝড় তুলতেন, বন্যা বয়ে যেত রানের। সব সময় উত্তেজনা চাই। সেই গেইল আজ ধীর, শান্ত, নিজের ভিতরে খুঁজে পেয়েছেন এক আনন্দের জগৎকে।
এগিয়ে যাও, থেমে থেকো না, পিছনের দিকে তাকিও না, স্বামীজির জীবন্ত এই বাণী নতুন জীবন দিয়েছে গেইলকে।
একবার স্বামীজি পড়তে শুরু করো, দেখবে নতুন করে নিজেকে চিনতে আর বুঝতে পারবে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে বেলুড় মঠে বসিয়ে স্বামীজি বলেছিলেন এখান থেকেই ঠাকুরের আদর্শ গোটা জগৎকে প্লাবিত করবে, মানুষের জীবন গতি পাল্টে দেবে।