ঘরবন্দি থেকেও নিয়ম মানছেন না রোগীরা, কলকাতার অভিজাত এলাকায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণ

কলকাতায় ডেঙ্গুর আঁতুড়ঘর হিসেবে বহুল পরিচিত এলাকাগুলিতে তাণ্ডব বাড়াচ্ছেন করোনা ভাইরাস (Coronavirus)। পুরসভার বরো ১০ এলাকার রাসবিহারি, টালিগঞ্জ ও যাদবপুরের একাংশের বাসিন্দারা রীতিমতো দিশেহারা।  হোম আইসোলেশনের রোগীর বর্জ্য হলুদ প্যাকেটে করে নির্দিষ্ট গাড়িতে ফেলা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। যার জেরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। সপরিবারে করোনা আক্রান্ত হয়ে ঘরবন্দি থাকলেও অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বলে অভিযোগ স্বাস্থ্যদপ্তরের। যে কারণে হোম আইসোলেশন, কনটেনমেন্ট জোন করেও বিশেষ লাভ হচ্ছে না বলে পর্যবেক্ষণ বিশিষ্টদের। যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে আরও কয়েকগুণ।

দেখা গিয়েছে, কারও কারও শরীরে স্বাদ চলে যাওয়া, গন্ধ না পাওয়ার মত করোনার উপসর্গ স্পষ্ট থাকলেও পরীক্ষা করাতে চাইছে না অভিজাত ও শিক্ষিত পরিবার। উদ্বিগ্ন পুরসভার মুখ্য প্রশাসক পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বুধবার জানিয়েছেন,“মানুষ সচেতন না হলে শুধুমাত্র সরকার বা পুরসভার পক্ষে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। যাঁরা হোম আইসোলেশনে আছেন, তাঁদের বাড়ির বর্জ্য হলুদ প্যাকেটে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতেই হবে। কারণ ওই বাড়ির বর্জ্য সঠিক জায়গা না ফেললে তা থেকেই সংক্রমণ ছড়াতে পারে।”

টেস্ট না করানো ও হোম আইসোলেশনের নিয়ম ভাঙা রোগীর পরিবারের জন্যই ডেঙ্গু-জোনে সম্পন্ন পরিবার ও পাকাবাড়িতেও কোভিডের দাপট চলছে। ফি বছর বর্ষায় মহানগরের যে সম্পন্ন জনপদে ডেঙ্গুতে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী, সেই টালিগঞ্জ, আলিপুর ও রাসবিহারীতে এখনও পর্যন্ত মশাবাহিত রোগে মৃত্যুর খবর নেই। এমনকী গত বছরও এই এলাকায় দু’জন ডেঙ্গুতে মারা যান। তবে আশঙ্কার তথ্য হল, যে ওয়ার্ডে যত হোম আইসোলেশন, সেখানেই সংক্রমণ তত বেশি।

পরিসংখ্যান বলছে, ৯৩ ওয়ার্ডে হোম আইসোলেশন ২২৮ জন, সংক্রমিত সংখ্যা ৩১৫ জন। আবার ৮৯ ওয়ার্ডে গৃহবন্দি ১৯৩, আক্রান্ত ২৪৯ জন। ৯৩ ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা পুরসভার প্রশাসক রতন দে স্বীকার করেন, “হোম আইসোলেশনে থাকা পাকা বাড়ির বাসিন্দারা বর্জ্য হলুদ প্যাকেটে রেখে নির্দিষ্ট গাড়িতে দিচ্ছেন না বলে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।” বরো ১০-এর কো-অর্ডিনেটর তপন দাশগুপ্ত জানান, “প্রতিটি ওয়ার্ডে ১৪টি করে পয়েন্টে হলুদ ড্রাম রাখা হচ্ছে। ওই ড্রামে এখন থেকে ব্যবহৃত মাস্ক, ক্যাম্প, ফেস শিল্ড ফেলতে হবে। সংক্রমণ রুখতে হলে বর্জ্যভর্তি হলুদ প্যাকেটও নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতেই হবে।”

EM বাইপাস লাগোয়া ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের সঙ্গে করোনা সংক্রমণে পাল্লা দিয়ে চলেছে যোধপুর পার্ক, লেক গার্ডেন্সের ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড। পুরসভার হেলথ সেন্টারের চিকিৎসকরা জানান, জ্বর না হলেও কোভিডের অন্য লক্ষণ দেখা দিলেই ওষুধের দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ও ভিটামিন কিনে খেয়ে অসুখ ভাল করতে চাইছেন, কিন্তু পরীক্ষা করাচ্ছেন না। কারণ, পরীক্ষা করালেই ঘরে বন্দি হতে হবে, রোগীর ছাপ পড়ে গেলে বাইরে ঘুরতে পারবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.