১৯৭১ সালের ১৪ মে পাবনার সাঁথিয়ার রুপসী গ্রাম এবং ডেমরায় হানাদার বাহিনী সাড়ে আটশ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। সেই স্মৃতির ভার এখনো বহন করে চলেছে রুপসী ও ডেমরাবাসী এবং দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
রুপসী ও ডেমরা সে সময় হিন্দু প্রধান এলাকা ছিল। যুদ্ধের সময় পাবনা, বেড়া, শাহজাদপুর, কুচিয়ামারা, নগরবাড়ি প্রভৃতি এলাকা থেকে মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছিলো। আশ্রিত মানুষের মধ্যে অধিকাংশই ধনী হিন্দু ব্যবসায়ী ছিল। এ অঞ্চলের হিন্দুদের অর্থ সম্পদ এবং আশ্রিত মহিলাদের কথা বলে কিছু রাজাকার এবং বিহারি সম্প্রদায়ের কিছু লোক পাক হানাদার বাহিনীকে নিয়ে আসে।
১৯৭১ সালের এ দিনে পাঁচশতাধিক পাক সেনা পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। সব সড়ক বন্ধ করে ভোরে আক্রমণ চালায়। বেলা একটা পর্যন্ত এ নারকীয় তাণ্ডব চলে। বাড়ি থেকে খুঁজে এনে মানুষকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চারশ মানুষই ডেমরা এবং রুপসী গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলো। এদের মধ্যে একজন ছিল মুক্তিযোদ্ধা। জমিদার পরিবারের আটজন নিহতের দুই ভাই মাখন লাল রায় এবং বলরাম রায়কে গাছের সঙ্গে বেঁধে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
পাক বাহিনীর হাতে নিহত বিভুতি ভূষণ কুণ্ডু, বীর ভদ্র কুণ্ডু, শুরেন্দ্র নাথ ঘোষ, সতিন্দ্র নাথ ঘোষ, ঋষিকেশ কুণ্ডু, স্বপন কুণ্ডু, সুশান্ত ঘোষ, মাহমুদ আলী, দুলাল কর্মকার, অনাথ বন্ধু, জগদীশ কুণ্ডু, সতিশ চন্দ্র কুণ্ডু, নীল মনি পাল, মংলা কুণ্ডু, বিরেন্দ্রনাথ পাল, জামিনী মোহন পাল।
এ সময়ে অসংখ্য নারী ধর্ষিত হয়। অনেকে সম্ভ্রম বাঁচাতে পাশের নদীতে ঝাঁপ দেয়। এখানে একটি কুয়ার মধ্যে অনেক নারী পুরুষকে ফেলে দেয়া হয়। এর পর পাক হানাদার বাহিনী তাণ্ডব চলে ডেমরা বাজারে। তারা সব দোকান পাট জ্বালিয়ে দেয়।
ডেমরা ও রুপসীবাজারে অগ্নি সংযোগ করে। জীবিতরা কোন মতে নিহতদের কবর দিয়ে রাখে। ধুলাউড়ি-ডেমরা সড়কের পাশে (বাউসগারি) এলাকায় দীর্ঘ গণকবর রয়েছে।
পরে ২০০৯ সালে বলরাম রায়, রাম জগনাথ রায় ও দিলিপ রায়কে যে ভিটাতে সমাহিত করা হয়েছিল সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ করা হয়েছে।
১৪ মে বাউশগাড়ী গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতি বছরই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় দিবসসহ ১৪মে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণ যৌথভাবে গণকবরে শায়িত শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা করে থাকেন।