সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীমৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয় শুক্রবার রাতে। জুনিয়র ডাক্তারদের উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের (ডব্লিউবিজেডিএফ) প্রতিনিধিরা। ছিল কিঞ্জল নন্দ, দেবাশিস হালদার-সহ একাধিক চেনা মুখ। হামলার প্রতিবাদে নিরাপত্তা চেয়ে শুক্রবার রাত থেকে সাগর দত্তে শুরু হয়েছে কর্মবিরতি। সেখানকার জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। কিঞ্জল জানিয়েছেন, বাকি হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা কী করবেন, তা জেনারেল বডির বৈঠকের মাধ্যমে স্থির করা হবে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন তাঁরা।
সাগর দত্ত হাসপাতালে শুক্রবার রাতে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ, রোগীর পরিবারের সদস্যেরা হাসপাতালের চার তলায় উঠে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর হামলা চালান। ভাঙচুর করা হয় মহিলাদের ওয়ার্ডে। এমনকি, মহিলা চিকিৎসকদের ঘর থেকে টেনে বার করে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের বেগ পেতে হয়েছিল। এই ঘটনায় জুনিয়র ডাক্তার, নার্স-সহ সাত জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পুলিশকর্মীও রয়েছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার রাত ১১টা থেকে সাগর দত্তে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন সেখানকার জুনিয়র ডাক্তারেরা।
সাগর দত্তের ঘটনার পর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতে এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাসপাতালে পৌঁছে কিঞ্জল নন্দ বলেন, ‘‘সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে রাতে এক রোগীকে ভর্তি করানো হয়েছিল। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। হঠাৎ করে রোগীর আত্মীয়েরা হাসপাতালের চার তলায় উঠে যান। ২০ থেকে ২৫ জন ছিলেন তাঁরা। কী ভাবে উঠে গেলেন, কেন নিরাপত্তা ছিল না, সেটা দেখতে হবে। উপরে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর তাঁরা অত্যাচার করেন। ডাক্তারদের মধ্যে মহিলা, পুরুষ উভয়েই ছিলেন। হাসপাতালে ভাঙচুর করা হয়। বার বার আমরা হাসপাতাগুলিতে নিরাপত্তার দিকটিতে জোর দিতে চাইছি। এখনও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। আমরা পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের তরফে আমরা এখানে এসেছি। আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলেছি। যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কলেজে গিয়ে জিবি বৈঠক করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাব। আমরা হতাশ। আপাতত সাগরদত্তের জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। আমরা আলোচনা করে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।’’
হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তার প্রশ্নে কিঞ্জল আরও বলেন, ‘‘যতই মৌখিক ভাবে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হোক, প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে নিরাপত্তার জায়গায় বড় ফাঁক থেকে যাচ্ছে। সাগর দত্তের ঘটনাই তার প্রমাণ। আমরা সত্যিই হতাশ। প্রশাসন বলছে তারা পদক্ষেপ করেছে। তা হলে সিঁড়ি ভেঙে চার তলায় উঠে কী ভাবে ডাক্তারদের মারধর করা হল? মহিলা ওয়ার্ডে কী ভাবে বাইরের লোকজন ঢুকে পড়লেন? দরজা ভেঙে হাত ধরে ডাক্তারদের বার করে আনা হয়েছে। এমনকি, ‘আর একটা আরজি কর করে দেব’ হুমকিও দেওয়া হয়েছে। আরজি করের ঘটনাও নিরাপত্তার অভাবের কারণেই হয়েছে। এত দিন পরেও কেন এই জিনিস শুনতে হচ্ছে?’’
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত মহিলা ডাক্তারকে ধর্ষণ-খুনের অভিযোগে গত ৯ অগস্ট থেকে আন্দোলন করছে ডব্লিউবিজেডিএফ। ৪২ দিন ধরে তাঁরা কর্মবিরতি পালন করেছেন। সরকারের সঙ্গে নিরাপত্তা-সহ বিভিন্ন দাবিতে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে তাঁদের। আংশিক কর্মবিরতি তুলে নিলেও জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন চলছে। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে বিচার চেয়ে মহালয়ার দিন ধর্মতলায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। আংশিক কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার সময়েই তাঁরা জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে আবার তাঁরা সম্পূর্ণ কর্মবিরতির পথে হাঁটবেন। তার মাঝেই সাগর দত্তে হামলার ঘটনা ঘটল। ডব্লিউবিজেডিএফ কী পদক্ষেপ করে, তা শনিবার জানা যেতে পারে।