দাঙ্গাবাজ তাহির হুসেন দিল্লিওয়ালা নাকি বাংলাদেশি? তাহির হুসেনের বাড়িতেই কি অঙ্কিত শর্মা খুনের ছক তৈরি হয়েছিল?

জাতীয় রাজনীতি নিয়ে উত্তাল, দিল্লির সেই দাঙ্গা আদতে অনেকগুলি ঘটনার একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ যেগুলির সময়ানুক্রমটি তুলে না ধরলে বিষয়টি স্পষ্ট হয় না।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নিযুক্ত তিনজন ইন্টারলকিউটার বা মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে শাহিনবাগের অবস্থানকারীদের সঙ্গে আলােচনাটি ব্যর্থ হওয়ার পরেই শাহিনবাগ মঞ্চ মারমুখী হয়ে ওঠে। তারা বুঝতে পারে যে তাদের প্রতিবাদে ভারত সরকার কর্ণপাত করছে না এবং রামলীলা ময়দানে সরে গেলে তাদের প্রতিবাদ একেবারেই গুরুত্ব হারাবে। কারণ রামলীলা ময়দানে ধরনা দিলে তার কোনাে নেতিবাচক প্রভাব সাধারণ দিল্লিবাসীর দৈনন্দিন জীবনে তারা ফেলতে পারবেন না। এই মধ্যস্থতা ব্যর্থ হওয়ার পরে ভারত সরকারের ওপর চাপ বাড়ানাের উদ্দেশ্যে একই ধরনের অবরােধ তারা শুরু করে দিল্লির জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশনের সামনেও। জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশন শাহিনবাগ মডেলে অবরুদ্ধ হওয়ার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি, রবিবার, দিল্লির মৌজপুরে সিএএ-র সমর্থনে মিছিল করতে যান বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। সেই মিছিলকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে প্রতিবাদীরা। মিছিলের মঞ্চ থেকে কপিল মিশ্র বলেন, জাফরাবাদকে শাহিনবাগ হতে দেওয়া হবে না। পুলিশের সামনে হাত জোড় করে তিনি বলেন যে, পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে পুলিশ যদি রাস্তা অবরােধ তুলতে না পারে তবে ২৫ তারিখ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতবর্ষ ছাড়ার পর কপিল মিশ্ররাই পথে নামবেন রাস্তা খালি করতে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে রবিবার মৌজপুরে কপিল মিশ্রের মিছিলে পাথর ছোঁড়ার পাশাপাশি দিল্লির মালব্যনগরেও কিছু মহিলা আজাদি স্লোগান দেন শিব মন্দিরের সামনে। পরিস্থিতি দেখে দিল্লির বহু বিশিষ্ট মানুষই চাইছিলেন যে পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক। এই অবস্থায় নিজের মিছিলে পাথরবাজদের হামলার পর বাকসংযমে যতটুকু ত্রুটি কপিল মিশ্রের হয়েছিল, ততটুকু না হলেই বােধ করি তাকে মানুষ কম, যন্ত্র বেশি বলে মনে হতাে।
কপিল মিশ্রের এই মন্তব্যকে লুফে নেয় শাহিনবাগ মঞ্চের প্রতিবাদীরা। তারা সম্ভবত এটাই চেয়েছিল যে প্রতিবাদী মহিলা ও শিশুদের ওপর পুলিশি অ্যাকশন হােক এবং তাতে যতখানি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে, তাকে মূলধন করে বিভেদের নারকীয় রাজনীতি তারা শুরু করে দেবে বামপন্থী লবির সহায়তায়। দেশ জুড়ে তথা গােটা পৃথিবী জুড়ে। একবার দেশভাগ করে যে দৃষ্টান্ত তারা রেখেছেন, তার যে পুনরাবৃত্তি হতাে না, তা কি নিশ্চিতভাবে বলা যায়? দিল্লি নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদী যখন নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বলেছিলেন যে ‘শাহিনবাগ কোই সংযােগ নহি, এক প্রয়ােগ হ্যায়’ তখন ভারতের সংবাদ মাধ্যম তার সেই মন্তব্যকে নির্বাচন-পূর্ব ধর্মীয় মেরুকরণের প্রয়াস বলে লঘু করে দেখালেও দেশের বিদগ্ধ জনের একাংশ বিলক্ষণ বুঝেছিলেন যে কেবলমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে এমন মন্তব্য করার মতাে রাজনীতিবিদ নরেন্দ্র মােদী নন।
শাহিনবাগ আন্দোলনের শুরুতেই সেখানে অবস্থানরত বেশ কিছু মহিলার কথা শুনে ও মরিয়াভাব দেখে মনে হয়েছিল যে সকল মহিলাই যে সেখানে স্বেচ্ছায় ধরনা দিয়েছেন, এমন হয়তাে নয়। ইন্ডিয়া টিভিতে দেশের আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের সঙ্গে আলােচনা সভায় দু’জন মুসলমান মহিলা সাহসের সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন যে শাহিনবাগের ক্ষেত্রে যে অপরিসীম ও প্রশংসনীয় ধৈর্য ভারত সরকার দেখিয়েছে, তা আদতে মুসলমান মহিলাদেরই প্রাণ রক্ষা করেছে। ওই দুই মহিলার ওই স্বীকারােক্তি বাস্তব সত্য। ভারত সরকারের অপরিসীম ধৈর্য একদিকে যেমন শাহিনবাগে ধরনারত মুসলমান মহিলাদের প্রাণরক্ষা করেছিল, অন্যদিকে তেমনই শাহিনবাগ-চক্রীদের অধৈর্য করে তুলেছিল। সরকার বা বিজেপির দিক থেকে এমন কোনাে আচরণের প্রতীক্ষা তাদের মধ্যে প্রথমদিন থেকেই ছিল, যে-আচরণকে তারা প্ররােচনা বা উস্কানি বলে দাবি করতে পারে, যাতে সেই অজুহাতে কোনাে নেতিবাচক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের সূচনা করা যায়। দিল্লির নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর কপিল মিশ্রের মৌজপুরের মন্তব্যটি তাদের সেই অজুহাত সরবরাহ করেছিল।
সােমবার সকাল থেকেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে উত্তর -পূর্ব দিল্লি। ভারতবর্ষে মার্কিন প্রেসিডেন্টের আগমনের দিনেই তাণ্ডব নারকীয় রূপ ধারণ করে রাজধানীর বুকে। হিংসার বলি হন গােকুলপুরীর এসিপি অফিসের হেড কনস্টেবল রতনলাল। দিল্লির চান্দবাগে কর্তব্যরত অবস্থায় পাথর এসে লাগে তার মাথায়। রতনলালের মৃত্যুর পর পরিস্থিতির অবনতি দ্রুততর হয়। একপক্ষের ক্রমাগত হুংকার, শুক্রবার থেকে মসজিদের লাউডস্পিকারের জোর আওয়াজ, পাথরবাজি, পেট্রল বােমাবাজি ও জায়গায় জায়গায় অগ্নিসংযােগের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে দিল্লির শান্তিকামী জনতার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যখন আমেদাবাদে বক্তৃতা দিচ্ছেন, ভারতবর্ষের রাজধানী তখন আগ্নেয়গিরি। খবর ছড়িয়ে পড়ে যে সােমবার রাত্রেও ভয়াবহ জেহাদি পরিকল্পনা কার্যকর করার চেষ্টা করতে পারেন আপ বিধায়ক আমানাতুল্লাহ খান। কিন্তু সেরকম কিছু ঘটতে দেওয়া হয়নি।
মঙ্গলবার সােশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল নানা ভিডিয়াে যেখানে দেখা গিয়েছিল মহম্মদ শাহরুখ হাতের পিস্তল নাচাতে নাচাতে পুলিশকে তাগ করে গুলি ছুঁড়ছে। দেখা গিয়েছে উন্মত্ত পাথরবাজ মহিলাদের ছবি যাঁদের মুখে হিংস্রতার নগ্ন প্রকাশ। এমন অজস্র সব ছবি ও ভিডিয়াে পােস্ট করে নেটিজেনরা দাবি তুলেছিলেন দিল্লির দাঙ্গাকারীদের ওপর কড়া পুলিশি তৎপরতার, অথচ পশ্চিমবঙ্গের একপেশে সংবাদমাধ্যম পাথরবাজ, বন্দুকবাজদের কথা এবং সােমবার তারা কী ভয়ানক তাণ্ডব চালিয়েছে সেই তথ্যকে কার্যত প্রায় এড়িয়ে গিয়ে দিল্লির হিংসাকে হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডব বলে প্রচার করতে শুরু করল। মহম্মদশাহরুখকে ‘চন্দরলাল শুক্লা বলে প্রচার করতেও তারা ছাড়ল না।
এই দিনই, অর্থাৎ মঙ্গলবার দুপুরে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে মিটিং করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল- সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে। যে মিটিঙের পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলেন প্রয়ােজনে দিল্লির রাস্তায় নামবে সেনা। রবিবার ও সােমবার দিল্লির পরিবেশ যখন ধাপে ধাপে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তখন কীভাবে যেন নিপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে আবার দেখা যায় মঙ্গলবার সকালে রাজঘাটে, মণীশ শিশােদিয়াকে সঙ্গে নিয়ে মৌনব্রত পালন করতে। তারপর দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মিটিঙের পর তার চকিত বােধােদয় এবং সংবাদমাধ্যমের সামনে বিবৃতি যে হিংসা কারুর পক্ষেই মঙ্গলজনক নয়। তার এই বােধােদয়। পুবেই হলে, হিংসার তাণ্ডবলীলা হয়তাে ঘটত না।
২৬ ফেব্রুয়ারি, বুধবার আবিষ্কৃত হয় আর একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। ইন্টেলিজেন্স ব্যুরাের অফিসার অঙ্কিত শর্মার দেহ উদ্ধার হয় চান্দ বাগে একটি নালার ভিতর থেকে। নালার মধ্য থেকে তার উত্থিত, মুষ্টিবদ্ধ হাত জানান দিচ্ছিল যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেছিলেন অফিসার অঙ্কিত শর্মা। ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়। যে অঙ্কিতের দেহে ধারালাে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল ৪০০ বার এবং প্রতি আঘাতের পর ক্ষতে ঢালা হয়েছিল অ্যাসিড। তাঁর চোখ খুবলে বের করে নিয়ে এসে চোখের কোটরেও ঢালা হয়েছিল অ্যাসিড। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের অন্তরাত্মাকে কঁপিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতাে পুলিশ জানতে পারে যে দিল্লি কর্পোরেশনে আম আদমি পার্টির পার্ষদ তাহির হুসেনের বাড়িতে হিচড়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অঙ্কিত শর্মাকে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, তাকে যখন ঘিরে ধরে হিচড়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় তাহির হুসেনের বাড়িতে, তখন তিনি ডিউটি থেকে বাড়ি ফিরে স্থানীয় পরিস্থিতির পরিদর্শনে বেরিয়েছিলেন। অঙ্কিত শর্মার এই মর্মান্তিক পরিণতির খবরের সঙ্গে সঙ্গে ২৬ ফেব্রুয়ারির খবরে এও প্রকাশিত হয় যে দিল্লির ঘটনার পিছনে হাত হয়েছে আইএসআই স্লিপার সেলের। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে অঙ্কিত শর্মার মৃত্যুকে একই দাঙ্গায় আর পাঁচজনের মৃত্যুর সঙ্গে এক করে দেখানাের জন্য মিডিয়ার যে প্রয়াস দেখা গিয়েছে তা সম্পূর্ণতই উদ্দেশ্যপ্রণােদিত। লক্ষণীয় বিষয় হলাে, অন্য কাউকেই ৪০০ বার কোপানাে হয়নি। তবে কেবল অঙ্কিত শর্মাকে এমন নৃশংসভাবে মারা হলাে কেন ? ইন্টেলিজেন্স ব্যুরাের অফিসার অঙ্কিত শর্মা কি তবে এমন কিছু জেনে ফেলেছিলেন, দাঙ্গাবাজদের জন্য যা মঙ্গলজনক ছিল না? দিল্লির ঘটনার সঙ্গে আইএসআই-এর সংযােগ থাকার সংবাদ হয়তাে সেই দিকেই ইঙ্গিত করে। অফিসার অঙ্কিত শর্মাকে যারা মেরেছে, তাকে মারতে তারা হয়তাে চেয়েছিল আরও আগেই। কিন্তু সুযােগ হয়নি। দাঙ্গা হয়তাে তাদের সামনে এনে দিয়েছিল সেই সুযােগ, যাতে লােকে ভাবতে পারে যে অঙ্কিত মারা গিয়েছেন দাঙ্গায় এবং সেই সুযােগে অপরাধীরা নিজেদের জিঘাংসা চরিতার্থ করতে পারে অফিসার শর্মার ওপর।
অঙ্কিত শর্মাকে হত্যার পদ্ধতির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সন্দেশখালিতে প্রদীপ মণ্ডলদের মৃত্যুর পদ্ধতির সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও এবং উক্ত হত্যালীলায় রাডিকাল ইসলামিস্টদের হাত স্পষ্টভাবে অনুভূত হওয়া সত্ত্বেও মিডিয়ার হিন্দুত্ববিরােধী ও সরকার বিরােধী একপেশে রিপাের্টিংকে সাম্প্রদায়িক অশান্তির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বহু বিদগ্ধ মানুষ। উস্কানি দেওয়ার জন্য দায়ী যদি কাউকে করতেই হয়, তবে রাজদীপ সারদেশাই, বরখাদত্ত, শেখর গুপ্তা, সাবা নাকভিরাও বাদ যাবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দেন নেটিজেনরা।
আম আদমি পার্টির পার্ষদ তাহির হুসেনের বিরুদ্ধে ওঠে অঙ্কিত শর্মাকে হত্যার অভিযােগ ও দাঙ্গার অন্যতম মূল চক্রী হওয়ার অভিযােগ। বহু প্রত্যক্ষদর্শী বয়ান, কপিল মিশ্রের এবং অন্যান্য আরও বহু মানুষের পােস্ট করা নানা ভিডিয়াে দেখিয়ে তীব্র অভিযােগ তােলা হয় যে তাহির হুসেনের বাড়ি থেকেই ছোঁড়া হয়েছে। পেট্রলবােমা, আগুন লাগানাে হয়েছে নানা জায়গায়, ছোঁড়া হয়েছে পাথর। ক্ষোভে ফুসতে থাকে দেশ। এমন সময় ২৭ তারিখ দুপুরবেলা খবরে প্রকাশিত হয় যে তাহির হুসেনের বাড়ির ছাদে বস্তা বস্তা পাথর, অ্যাসিড, পেট্রলবােমা, ছোঁড়ার গুলতি সব পাওয়া গিয়েছে।
দাঙ্গার অন্যতম মূল কারিগর হিসেবে তাহির হুসেনের নাম ২৬ ফেব্রুয়ারি ছড়িয়ে পড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সােশ্যাল মিডিয়ায় এমন সংবাদও ছড়িয়ে পড়ে যে তাহির হুসেনের সঙ্গে বাংলাদেশি সন্ত্রাসবাদীদের সংযােগ রয়েছে, শােনা যায় তাহির হুসেন নিজেও বাংলাদেশি এবং অরবিন্দ কেজরিওয়াল তা জানেন। শিরােমণি আকালি দলের নেতা মজিন্দর সিরসা বলেন, অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও মণীশ শিশােদিয়ার ফোনের কল ডিটেল প্রকাশ করলেই দেখা যাবে যে হিংসার দিনগুলিতে তাহির হুসেনের সঙ্গে অনবরত কথা হয়েছে তাদের। কী কথা হয়েছে, তা যেন জনসাধারণকে জানায় দিল্লি পুলিশ, সেই অনুরােধ করেছেন সিরসা। বাংলাদেশি সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে তাহির হুসেনের যােগাযােগের অভিযােগ করেন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীও। স্বামী টুইট করেন যে অঙ্কিত শর্মা হয়তাে তাহির হুসেনের গতিবিধির ওপর নজর রাখছিলেন এবং তার বাংলাদেশি যােগাযােগের সন্ধান পেয়েছিলেন। সেইজন্যই কি মরতে হলাে তাকে? যদি তা হয়, তবে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর এবং সরকারের উচিত তা খতিয়ে দেখা। তবে তাহির হুসেনের বাংলাদেশি সংযােগ এবং দিল্লি দাঙ্গায় আইএসআই স্লিপার সেলের মদত—এই দুইটি বিষয় এক সুত্রে বাঁধা হলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। ভারত বিরােধী কার্যকলাপের জন্য আইএসআই যে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে না, এমন কোনাে নিশ্চয়তা নেই। উপরন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে রােহিঙ্গাদের উপস্থিতির ফলে আইএসআই মদতপুষ্ট ভারতবিরােধী কার্যকলাপে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে, এটাই স্বাভাবিক। রােহিঙ্গাদের জঙ্গি কার্যকলাপের নথি ভারত সরকারের কাছে আছে। তাছাড়া এনডিএ আমলে ভারতবর্ষের পশ্চিম সীমান্তের সুরক্ষা ব্যবস্থা অতিরিক্ত আঁটোসাঁটো হওয়ার ফলে ওই সীমান্ত দিয়ে। সন্ত্রাসবাদী অনুপ্রবেশ আগের চেয়ে অপেক্ষাকৃত দুরূহ হয়ে পড়ায় প্রায় উন্মুক্ত পূর্ব সীমান্তকে সন্ত্রাসবাদীরা যে ভারতে প্রবেশের জন্য ব্যবহার করতে চাইবে, তা অপ্রত্যাশিত নয়। উপরন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রবেশকারী-প্রীতি বর্তমানে তার ঘােষিত নীতি এবং তার জন্যই পশ্চিমবঙ্গ অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের স্বর্গরাজ্য। তার নিরবচ্ছিন্ন অনুপ্রেরণায় অন্যান্য সাধারণ অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে আইএসআই মদতপুষ্ট বাংলাদেশি জঙ্গিও যে এ রাজ্য হয়ে দিল্লি বা উত্তরপ্রদেশে পৌঁছে যাচ্ছে না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।
দেবযানী ভট্টাচার্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.