গত দশ বছরে এভাবেই প্রতারকরা শাসকের ছাতার আড়াল পেয়েছে এ বঙ্গে

অনিচ্ছাকৃত খুন ?

আনন্দবাজারের রিপোর্ট যদি সত্যি হয় ? কি লিখেছে আজ ২৬ জুন, আনন্দবাজার ? প্রথম পাতায় ?

  • পুলিশ কমিশনারকে ফোন মুখ্যমন্ত্রীর/ অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলার নির্দেশ ।

দেড় হাজার লোককে জাল ইনজেকশন দেওয়ার পরও সেটা “অনিচ্ছাকৃত খুন” হতে পারে ? সেই লাইনে মামলা হতে পারে ? কোন সভ্য দেশে ?

আনন্দবাজারের প্রতিবেদক এরপর লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী এতটাই ক্ষুব্ধ যে দেবাঞ্জনকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে ৫ হাজার বার ওঠবোস করানো উচিত বলে ঘনিষ্ঠ মহলে মন্তব্য করেছেন ।

বুঝলেন কিছু ? যে প্রতারকের ফাঁসির জন্য লড়া উচিত ছিল প্রশাসনের তার মাথা বলছে অনিচ্ছাকৃত খুন ! বলছে কান ধরে ওঠ বোসের দাওয়াই । কিছু বুঝলেন ?

ভাবছিলাম যোগী রাজ্যে এই দাওয়াই যদি সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী বলতেন কি লিখত এই আনন্দবাজার ?

নিশ্চিতভাবে হেডলাইন হত – “অমানবিক যোগীর দোষীকে বাঁচানোর নির্লজ্জ চেষ্টা” । সম্পাদকীয় বেরোত – “ধিক্ এই শাসন” । তারপর ঘণ্টা খানেক, ঘণ্টা দেড়েকের ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় যোগীর মুন্ডুপাত । মিডিয়া ট্রায়াল । সব কিছু হয়ে যেত এতক্ষনে ।

এসব কিছু ঘটল না । কারণ রাজ্যের নাম পশ্চিমবঙ্গ । এখনকার মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এখানকার অধিকাংশ বাংলা সংবাদ মাধ্যম হল গৃহপালিত ।

ঘটনাটা এরকম – আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন, কেউ গাড়ি চাপা পড়ল । অনিচ্ছাকৃত খুন বলা যেতেই পারে । কিন্তু আপনি জেনে শুনে ইচ্ছাকৃত ভাবে কাউকে যদি চাপা দেন তাহলেও কি একই তত্ব খাটে ? খাটানো যায় ? কোন সুস্থ মানুষ সেই তত্ব বিশ্বাস করবে ? দেবাঞ্জন যা করেছে সেটা কি না জেনে ? তাহলে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলার নির্দেশ কেন ? কি কারণে ? কাকে কাকে আড়াল করতে ? বলুন ? কার ছাতার আড়ালে এই প্রতারকের বেড়ে ওঠা ? বলুন মুখ্যমন্ত্রী বলুন ।

আসলে মমতা এখন খেলছেন উইংস এর আড়াল থেকে । কারণ এত বড় অপরাধের সামান্য দায় তিনি নেবেন না । তিনি সম্যক জানেন যা হয়েছে তার গভীরতা, তার ব্যাপকতা । লক্ষ্য করুন মুখ্যমন্ত্রী নিজে কোন প্রেস বাইট এত সেনসেটিভ একটা ইস্যুতে দিচ্ছেন না । দোসর এক শ্রেণীর পেটোয়া বাংলা সংবাদ মাধ্যমকে দিয়ে আড়াল থেকে প্রচার চালাচ্ছেন – মুখ্যমন্ত্রী ভীষণ কড়া । এই নির্দেশ দিয়েছেন, সেই নির্দেশ দিয়েছেন । ইত্যাদি …ইত্যাদি ।

তিনি নিজেও জানেন তাঁর তৈরি করা স্বর্গ রাজ্যে তিন বছর ধরে একজন ফেক আই এ এস ক্ষমতার অলিন্দকে ব্যবহার করে নিশ্চিন্তে অপারেট করে গেছে । ববি, অতীন, শান্তনুর ছায়া সঙ্গী হয়ে পাওয়ার করিডোর দাপিয়েছে । ফেক ব্যাংক একাউন্ট খুলে লক্ষ লক্ষ টাকার ডিল করেছে । দেড় হাজার মানুষের দেহে বিনা বাধায় জাল ওষুধ ঢুকিয়ে দিয়েছে । পুলিশ জানেনি, পুরসভা জানেনি । সব এমনি এমনি হয়ে গেছে ?

খাবেনা মানুষ এই তত্ব । বুঝেছেন ।

তাই সরকারের এখন ভাব ভঙ্গি – একটা লোক প্রতারক । তিনি ‘ব্যক্তি প্রতারক’ । এর সঙ্গে সরকারের কোন সম্পর্ক নেই । লোকটির কাজ কারবার দেখে মুখ্যমন্ত্রী ভীষণ কড়া হয়েছেন । পুলিশ কমিশনারকে বলেছেন অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা করতে, পারলে পাঁচ হাজার বার প্রকাশ্যে ওঠ বোস করিয়ে নাও ।

কিছু বুঝলেন ?

একটা সরকার চলছে । কেউ যদি প্রশ্ন করেন –

তার পুর প্রশাসন কলকাতা শহরে কি করছিল ?

পুরসভার স্বাস্থ্য অফিসাররা কি করছিল ?

কসবা থানার ওসি কি করছিল ?

পুলিশের তো আই বি দফতর আছে ? তার গোয়েন্দারা ? শুধু কি বিরোধীরা কে কোথায় যাচ্ছে তা দেখতে ব্যস্ত ছিল ?

পাড়ার শাসক দলের চুনোপুটি নেতারা যারা আপনার বারান্দায় কাক বসলেও নজর রাখে তারা জানতেন না “এই জালিয়াত” পুরসভার কেউ নয় ?

মঞ্চে নেতারা বসে থেকেছেন, ঘোষণা হয়েছে পুরসভার যুগ্ম সচিব দেবাঞ্জন দেবের নাম । তাঁরা শোনেননি সেই ঘোষণা, হয় ?

বড় কাঁচা চিত্রনাট্য । নয় কি ।

একদিন নয় টানা তিন বছর ১০৯৫ দিন এই কীর্তি করে যাওয়ার পর প্রায় দেড় হাজার মানুষ মারার প্রক্রিয়া সারার পর সব কিছু যখন জানাজানি হয়ে গেছে এখন মুখ্যমন্ত্রী কড়া হচ্ছেন ? তাও আবার অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা করার নির্দেশ দিয়ে ? কান ধরে ওঠ বোস করানোর দাওয়াই দিয়ে ?
কতটা নির্লজ্জ না হলে এমন শাসক হওয়া যায় !! কেউ বলতে পারেন ?

আসলে গত দশ বছরে এভাবেই প্রতারকরা শাসকের ছাতার আড়াল পেয়েছে এ বঙ্গে । সুদীপ্ত সেন, কুণাল ঘোষ, বিনয় মিশ্রর সেই লাইনেই এবার দেবাঞ্জন দেব নবতম সংযোজন । কিছুদিন আমরা তাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকব । তারপর ভুলে যাব সব জালিয়াতির ইতিহাস ।

ব্যস্ত হয়ে পড়ব খেলা মেলা উৎসবে । ততদিন পর্যন্ত এই ” কড়া কড়া ” নির্দেশের গল্প শুনব আমরা । আড়াল থেকে তৈরি করা এই গল্পের রানিং কমেন্ট্রি করে যাবে বাংলা মিডিয়ার গৃহপালিতরা ।।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.