It would not be impossible to prove with sufficient repetition and a psychological understanding of the people concerned that a square is in fact a circle. They are mere words, and words can be molded until they clothe ideas and disguise. -Joseph Goebbels (Nazi propaganda Minister)
একই বিষয় যদি বার বার উচ্চারণ করা হয় এবং সেই পুনরাবৃত্তিটি যদি যথেষ্ট মাত্রায় ঘটে, তবে জনগণের মনেও দিব্যি ঢুকিয়ে দেওয়া যায় যে, একটি চতুর্ভুজ আসলে বৃত্তই। এসব প্রতীতি নিছক শব্দের অভিব্যক্তি, আর কে না জানে শব্দকেও ভাবনার ছদ্মবেশ পরিয়ে ইচ্ছেমতো বদলে নেওয়া যায়। জোসেফ গোয়েব (নাজি প্রচার প্রমুখ)
সাম্প্রতিকতম ডার্বি ফুটবলে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে কতিপয় এসএফআই সমর্থকের ‘মহানুভবতার নিদর্শন হিসেবে’ ‘রক্ত দিয়ে কেনা মাটি, কাগজ দিয়ে নয়’ খচিত ব্যানারটি দেখে আমার জোসেফ গোয়েবলসের কথাই মনে পড়ছে। কী ভাবছেন? বাড়িয়ে বলছি? একদম নয়। একই মিথ্যা যদি বার বার উচ্চারণ এবং প্রচার করা হয়, কালক্রমে সেটিই সত্য বলে বিবেচিত হবে, (বাংলায় যাকে দশচক্রে ভগবান ভূত বলা হয়ে থাকে। পরিকল্পিতভাবে একটি ছাগলকে কীভাবে কুকুর বানিয়ে দেওয়া যায় অর্থাৎ সত্যকে মিথ্যা, এই মর্মে একটি নীতিকথার গল্পও আছে।) এই গোয়েবলসীয় রণকৌশলটিকে নাজিরা যতটুকু কাজে লাগাতে পেরেছে, তার লক্ষ কোটি গুণ কাজে লাগিয়েছে মার্কসবাদী বামপন্থীরা। বলাই বাহুল্য নাগরিক আইনের বিরোধিতা করে অনুপ্রবেশকারী মুসলমানদের আড়াল করা এবং প্রশ্রয় দেওয়ার মধ্যেও নাজি প্রচার মন্ত্রীর মুখটিকেই বার বার দেখতে পাই। সংখ্যালঘু অধিকারের নাম করে মুসলমান সমাজের ‘নয়নের মণি’ হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা করা রাজনৈতিক দলগুলি (ডান-বাম নির্বিশেষে) নিছক ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির স্বার্থেই এই অবস্থান নিয়েছেন এমন ভাবা ভুল হবে। নিছক নির্বাচনে জেতা একটি রণকৌশল মাত্র! তবে উদ্দেশ্যটি কী? ভারত নামক রাষ্ট্রটি, যা পেগান অর্থাৎ বহুত্ববাদীদের (পড়ুন হিন্দু ধর্মাবলম্বী) সর্বশেষ ভূখণ্ড হিসেবে অদ্যাবধি টিকে আছে, তাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা। দুটি আব্রাহামিক মতকে (খ্রিস্টান ধর্ম এবং ইসলাম। মতবাদ বলাই শ্রেয়) ষড়যন্ত্রের দোসর বানিয়ে মার্কসবাদীদের এই কার্যক্রম ইন্ডিপেন্ডেন্ট সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অনেক মানুষই ধরে ফেলেছেন। কীভাবে? খুব সহজ উত্তর। গণতন্ত্র এবং তথাকথিত মেকি ধর্মনিরপেক্ষতাকে (যা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের তোল্লা দিয়ে গোল্লায় পাঠায়) মূলধন করে এদেশের ডেমোগ্রাফি অর্থাৎ জনবিন্যাসের সুবিধাজনক পরিবর্তন সাধন। ইংরেজিতে যাকে demographic shift বলা হয়। যে পদ্ধতি অবলম্বন করেই ৫৭টি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের প্রায় ২৫ শতাংশ জমি ইসলামের দখলে আনা সম্ভব হয়েছে। আর এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই ওরা এদেশের ইতিহাস থেকে শুরু করে চিন্তন, মনন, সংস্কৃতিকেও হয় বিকৃত করেছে, নয় ধামাচাপা দিয়েছে। স্বাধীনতার পর পরই শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আজাদ এবং জওহরলাল নেহরুর হাত ধরে যে শিক্ষাব্যবস্থাটির জন্ম হয়, সেটিও এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার একটি কৌশল ছিল, এমন মতও উঠে আসছে। খেলার মাঠে এসএফআই ছাত্র সংগঠনের এই ‘মানবিকতাও’ সেই বৃহত্তর কর্মসূচির অংশ মাত্র। কীভাবে? মোটামুটিভাবে দুটি পদ্ধতিতে (১) ধর্মনিরপেক্ষ (যদিও সেকুলার শব্দটি ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে, জরুরি অবস্থার আবহেই সংবিধানের প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অর্থাৎ প্রাথমিক অবস্থায় এর অস্তিত্বই ছিল না। স্বয়ং আম্বেদকর এই অন্তর্ভুক্তির তীব্র বিরোধিতা করেন।) সংবিধানের সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি বিশেষ ধর্মের লাগামহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি। তার সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদেরও (এই বিশেষ ধর্মের) এদেশে বসবাস এবং সংখ্যাবৃদ্ধির অধিকার দেওয়া। এভাবেই এ রাজ্যটি বিগত কয়েক দশকে সংখ্যালঘু বৃদ্ধির বিপুল হার প্রত্যক্ষ করেছে। ২০১১ সালের জনগণনা হিসেবেও যা প্রায় ২৮ শতাংশ! এমন একটি জনগোষ্ঠীর বাড়বাড়ন্ত যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠলে সর্বাগ্রে গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাই বিপন্ন হয়। (২) ইতিহাস ধামাচাপ দেওয়া অথবা বিকৃত করা। যা শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সূত্রপাত ঘটলেও কালক্রমে ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়াকেও এই দেশবিরোধী শক্তি ফসিল ফুয়েলের দাপটে করায়ত্ত করে ফেলেছে। দেশভাগের প্রকৃত কারণ, নোয়াখালির পৈশাচিক হিন্দু হত্যা যা কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার দিন পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত করা হয়, এমনকী গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং নামক সুরাবর্দি, বাম, জেহাদি রচিত নরমেধ যজ্ঞ যা গোপাল মুখার্জির (গোপাল পাঁঠা) নেতৃত্বে ব্যর্থ করা সম্ভব হয়েছিল— এই জাতীয় যাবতীয় ঘটনাপ্রবাহকে অস্বীকার অথবা বিকৃত করে নতুন প্রজন্মকে অন্ধকারে রাখার সুচিন্তিত প্রয়াস। শুধু কি তাই? বাঙ্গালি হিন্দুর অগ্রগণ্য পরিত্রাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকেও চরম নেতিবাচক আলোকে চিত্রিত করতেও এদের রুচিতে বাঁধে না!তার দূরদর্শী নেতৃত্বের সঙ্গে যে মেঘনাদ সাহা, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, রমেশচন্দ্র মজুমদার, যদুনাথ সরকারের মতো মনীষীও একমত হয়েছিলেন সেই সত্যটিও বেমালুম চেপে দেওয়া হয়।
আসুন প্রশ্ন করি। প্ল্যাকার্ড, ব্যানার যে নামেই ডাকি, তাতে যে রক্ত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সে রক্ত কে বা কারা নিয়েছিল? নাকি ঝরিয়েছিল? সেই ইতিহাসটি কি অনুগ্রহ করে সামনে আনবেন কমরেড? সত্য বলার হিম্মত আছে? ভিটেমাটি ছেড়ে প্রাণ হাতে নিয়ে লক্ষ কোটি মানুষ কেন শ্যামাপ্রসাদের মননজাত হিন্দু হোমল্যান্ড পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং ত্রিপুরায় আশ্রয় নিল, গণধর্ষিতা কন্যা, জননী ভগিনীর লাশ মাড়িয়ে, মৃত, অর্ধমৃত আপনজনকে পথে ফেলে যারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল, এখনও পালিয়ে আসছে, তারা সবাই কেন হিন্দু? ‘অমর একুশের বাংলাদেশেও পূর্ণিমা শীলরা কেন মর মর হয়ে ৮ শতাংশে পৌঁছে গেছে? অসহায় হিন্দু কিশোরীর মাকে আজও কেন বলতে হচ্ছে, তোমরা এক এক করে যাও, মেয়েটা আমার বড় ছোটো? এই প্রশ্নের উত্তর আছে। কমরেড ? আপনারা কথায় কথায় সেই অর্থনীতির কাসর ঘন্টাটিই বাজিয়ে থাকেন। অর্থাৎ অর্থনৈতিক কারণেই নাকি এই রক্তপাত, দাঙ্গা! অপেক্ষাকৃত দরিদ্র মুসলমান সম্প্রদায় নাকি হিন্দু জমিদার, জোতদারদের তাড়িয়ে দিয়ে মহান শ্রেণী সংগ্রাম— কোনো কোনো ‘সেকুলার’ মহামানবের মতে ভূমিসংস্কার কর্মসূচির রূপায়ণ ঘটিয়েছিল। এমনকী মার্কসবাদী পরিচালক ঋত্বিক ঘটকও তার পার্টিশন ট্রিলজিতে (সুবর্ণরেখা, মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার) এই অর্থনৈতিক কারণের’ পরিকল্পিত ধূম্রজাল সৃষ্টি করে নিতা, সীতা, অনসূয়া, ঈশ্বর চক্রবর্তীরা কেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে এদেশে পালিয়ে এলেন, তার প্রকৃত কারণটি মার্কসবাদ প্রতিষ্ঠার মহান স্বার্থে সজ্ঞানে, সচেতনে এবং পরিকল্পনা মাফিক চেপে গেলেন। কিন্তু ইতিহাস কি চিরকাল চাপা থাকে? অন্তর্জাল মণ্ডিত এই যুগ সন্ধিক্ষণে তা কি সম্ভব? স্ফুলিঙ্গের মতো তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। বেরিয়ে আসছে চাপা দেওয়া ইতিহাসের কঙ্কাল, ধর্ষিতার পচা গলা লাশ। ১৯৫০ সালে প্রেসিডেন্সিতে পাঠরত একটি ছাত্র (স্বনামধন্য ডাক্তার ব্রজেশ পাকড়াশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক উল্লেখযোগ্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ) পালিয়ে আসা হিন্দু শরণার্থীদের সহায়তা করতে গিয়ে শিয়ালদহ স্টেশনে কী কী দৃশ্য দেখেছিলেন, কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির সেই ভয়াবহ স্মৃতিচারণ। সেবা কার্যে যোগ দিয়ে নদীয়া জেলায় তিনি কী কী ভয়ানক দৃশ্যপটের সাক্ষী হয়েছিলেন ইত্যাদি অনেক কিছুই এখন প্রকাশ্য দিবালোকের মতোই পরিষ্কার। আর পাকিস্তানের মন্ত্রীসভায় ঠাই নেওয়া দলিত-মুসলমান মিত্রতার প্রতিভূ যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের ইস্তফা তো ‘ধনী, জমিদার, জোতদার বিতাড়নের মিথটিকে অনেক আগেই ধুলিসাৎ করেছে। পাকিস্তানের দাবিতে গলা ফাটানো যোগেন মণ্ডল ভেবেছিলেন পিছিয়ে পড়া গরিব, দলিত হিন্দুদের সঙ্গে মুসলমানরা বেশ মিলে মিশেই থাকবে। যেহেতু উভয়েই দরিদ্র। তার এই ভুলটি ভাঙতে সময় লাগেনি। নিম্নবর্ণের দরিদ্র হিন্দুদের উপর যখন একই রকম মর্মান্তিক অত্যাচার নেমে এল তিনিও বুঝলেন জেহাদিরা অর্থনীতি বোঝে না, মানবিকতাও বোঝে না, উচ্চবর্ণ, নিম্নবর্ণ বোঝে না। হিন্দু মাত্রেই ওদের চোখে কাফের। রাজা, প্রজা নির্বিশেষে। অর্থ থাক বা না থাক অনর্থ ঘটবেই। ব্যানারে যা লেখা নেই, রক্তটা হিন্দুরাই দিয়েছে, আর নিয়েছে জিহাদিরা। যারা তখনও থামেনি, এখনও থেমে নেই। দেশ বিশেষত এই রাজ্য জুড়ে তারা সেই একই কার্যক্রমের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাইছে। সিএএ নামক নতুন নাগরিক আইনটি এই পরিকল্পনাটিতেই জল ঢেলে দিতে পারে এমন আশঙ্কাতেই এই দেশবিরোধী শক্তি সহস্র গুণ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পালিয়ে আসা হিন্দুরা নাগরিকত্ব পেলে যেমন এ রাজ্যের হিন্দুরা আরও সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে, অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত হলে সংখ্যালঘুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। এই বন্দোবস্ত তারা মানবে কেন?
তবে এই কতিপয় বামপন্থী যতই চেষ্টা করুক,ইস্টবেঙ্গল নামক দলটির ব্যানারে যতই লম্ফঝম্প করুক, ওরা কখনই সিংহভাগ হিন্দু শরণার্থীর প্রতিনিধিত্ব করে না। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়াতেই খেলার মাঠে ওদের এই হাস্যকর এবং মরিয়া প্রচেষ্টা।
এবিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই পালিয়ে আসা বেশ কিছু হিন্দু উদ্বাস্তু এদেশে পা দেওয়া মাত্র রাজনীতির কারবারি হয়ে ওঠেন। গুছিয়ে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় শামিল এই বিশ্বাসঘাতক সেকুলারকুল রক্তাক্ত অতীতটিকে কার্পেটের তলায় পাঠিয়ে দিয়ে বালিতে মুখ গোঁজা উটপাখি হয়ে গেছেন। উদ্বাস্তু থেকে তারা এখন বাস্তুঘুঘু! আর কে না জানে—
“উদ্বাস্তু আর বাস্তুঘুঘুর মাঝখানে সীমান্ত নয়, আসলে একটি বাজার আছে; কেজি দরে পূর্বপুরুষের লাশ বিক্রি হয়।”
গোয়েবলীয় প্রচার যেভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছিল, মার্কসবাদী প্রোপাগান্ডারও একই অভিমুখ। কারণ বুদ্ধিমান, মননশীল হিন্দু সমাজ (শ্রীযদুনাথ সরকার যাদের অত্যাচারিত ইহুদিদের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। মেধার কারণে।) দেরিতে হলেও দেশবিরোধী শক্তির পরিকল্পনাটি ধরে ফেলেছেন। আইডেন্টিটি যে কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তারা ক্রমশ বুঝতে পারছেন। উপলব্ধি করছেন— Kill a man, you will end up killing only an individual ; destroy identity, you will succeed in destroying a nation. একজন মানুষকে হত্যা করলে বড়ো জোর একজন মানুষকেই নির্মূল করা যায়, আইডেন্টিটি ধ্বংস করা মানে সমগ্র জাতিটিকেই বিনাশ করা।
দেবাশিস লাহা
2020-02-05