রক্তিম দাশ, কলকাতা: বছরের শুরুতেই সিপিএমে ভাঙন। এবার বামেদের শেষ গড় বলে পরিচিত যাদবপুর বিধানসভায় বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীর অন্যতম অনুগামী গোবিন্দ দাস শতাধিক কর্মী নিয়ে সিপিএম ছাড়লেন। বুধবারই গোবিন্দ দাস দলকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন তিনি সিপিএমের সঙ্গে সম্মানজনক বিচ্ছেদ করছেন। গোবিন্দ দাসের মতো সক্রিয় নেতা দল ছেড়ে দেওয়ায় রীতিমতো আলোড়ন পড়ে গিয়েছে যাদবপুরে।
২০১৬ সালে যাদবপুরে প্রবল তৃণমূলের হাওয়াতেও সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর জয়ের পিছনে গোবিন্দ দাস ছিলেন অন্যতম কারিগর। যাদবপুর বিধানসভা নিয়ে গঠিত সিপিএমের যুব সংগঠনের তিনি জোনাল কমিটির প্রাক্তন সহ সভাপতি ছিলেন। ছিলেন সিপিএমের হালতু লোকাল কমিটির সদস্যও। এছাড়াও সিপিএমের অসংগঠিত শ্রমিক, সাক্ষরতা, বিজ্ঞান সহ একাধিক শাখা সংগঠন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নেতা ছিলেন তিনি। উদ্বাস্তু আন্দোলন করতে গিয়ে অসমের শিলাপাথরে কাণ্ডে জড়িত ছিলেন। সক্রিয়ভাবে ছিটমহলের মুক্তি আন্দোলনে, ১০৬ ওর্য়াডে ৪৯ টি ক্লাব সমন্বয়ের সম্পাদক হিসাবেও কাজ করেছেন। এলাকার যাদবপুরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আন্দোলনে তাঁর বিশাল প্রভাব রয়েছে।
জানা গিয়েছে, মতুয়া মহাসংঘের কলকাতার জেলার আহ্বায়ক গোবিন্দবাবুর সঙ্গে সিপিএমের অভ্যন্তরে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসিকে সমর্থন করা নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। তারপরেই তিনি দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এদিন
গোবিন্দবাবু বলেন, ‘আমার ৩০ বছরে বামপন্থী রাজনৈতিক জীবন আজ শেষ হল। দলের
অভ্যন্তরে জমিদারি মানসিকতা, গোষ্ঠিদ্বন্ধ চরম আকার ধারণ করেছে। একই
মতাদর্শে কথা বলেও কেরলে সিপিএম বিরুদ্ধে আরএসপি লড়াই করছে। সর্বভারতীয়
ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সঙ্গে আঁতাত। অসমে বাঙালিদের প্রশ্নে দ্বীমুখি নীতি।
এসব মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। উদ্বাস্তুদের ভোটে ক্ষমতায় আসার পর মরিচঝাঁপির
মতো ঘটনার ভুল না স্বীকার করা। সর্বোপরি নাগরিকত্ব সংশোধনি আইন এবং
এনআরসির বিরোধিতা করা একজন উদ্বাস্তু পরিবারের সন্তান হিসাবে মানতে
পারছিলাম না। দল থেকে কোনও দিন সুযোগ-সুবিধা নেয়নি। তাই অনেক চিন্তা করে
দল ছাড়লাম। আমার মতো মানুষদের জন্য এদল নয়। এই দলে যাঁরাই বুদ্ধিবৃত্তির
চর্চা করে তাঁরা থাকতে পারেন না।’
গোবিন্দবাবু আরও বলেন,‘ আমি রাজনীতি
ছাড়ছি না। অবশ্যই করব। তবে এতদিন রাজনীতি করেছি দলের জন্য এবার রাষ্ট্রের
জন্য করব। আমি কাউকে দল ছাড়াতে বলিনি। কিন্তু শতাধিক দলীয় কর্মী-সমর্থক
তাঁরা আমায় সর্মথন করে দল ছাড়ছেন।’
প্রাক্তন সিপিএম নেতা অভিজিৎ রায় বলেন, ‘তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ২০১৬-তে যাদবপুর জয়ের অন্যতম কাণ্ডারী গোবিন্দ দাস। উনি যেকোনও দলের সম্পদ হতে পারেন। এটাই সিপিএম বোঝেনি। তিনি যে দলে যান না কেন আসন্ন পুরসভা বা পরবর্তী বিধানসভায় যাদবপুরে সেই দলের জেতার পথ আরও প্রশস্থ হবে।’
এদিকে গোবিন্দ দাসকে গেরুয়া শিবিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদিকা শর্বরী মুখোপাধ্যায়। এদিন তিনি বলেন, ‘ওঁনাকে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বহুদিন চিনি। যাদবপুরের রাজনীতিতে অন্যতম সেরা সংগঠক। একাধিক ধর্মীয় ও সামজিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। আমি রাজ্যসভাপতি দীলিপদাকে জানিয়েছি। তিনিও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা চাই তিনি আমাদের দলে যোগ দিন। তাঁকে আমরা যোগ্য সম্মান দিয়েই দলে গ্রহণ করব।’