বিশ্ব যখন অতিমারির দাপটে কাবু, তখন সংক্রমণ পরিস্থিতির নিরিখে খানিকটা স্বস্তির আশ্বাস দিয়েছিল তাইওয়ান। তবে সেই চিত্র দ্রুত বদলাতে শুরু করে চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে। এপ্রিল মাসে দেশে করোনা সংক্রমণ শীর্ষে উঠেছে। শুধুমাত্র বৃহস্পতিবারই এ দেশে প্রায় এগারো হাজার বাসিন্দা নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
তাইওয়ানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চেন শি-চুং জানান, গত কাল দেশে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১,৩৫৩ জন। এই নয়া ঢেউয়ে আক্রান্তদের মধ্যে ৯৯.৭ শতাংশেরই মৃদু উপসর্গ রয়েছে বা কোনও উপসর্গই নেই।
রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় নিভৃতবাসের নিয়মাবলির ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। কারও করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এলে বাড়িতেই থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বর্তমানে। শুধুমাত্র গুরুতর উপসর্গের ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির কথা।
তাইওয়ানে চার দেওয়ালের ভিতরে এবং বাইরে দু’জায়গাতেই মাস্ক পরার নির্দেশ রয়েছে। দোকান, সিনেমা হল কিংবা গণপরিবহণ— অতিমারির শুরু থেকেই এ সব জায়গাতেই মাস্ক পরার উপরে জোর দেওয়া হয়েছিল। তবে এত সতর্কতার মধ্যেও আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত জনতা। র্যাপিড টেস্ট কিট কিনতে উপচে পড়ছে ভিড়। রাজধানী তাইপেইয়ের বেশ কিছু দোকানে শেষ হয়ে গিয়েছে কিটের জোগান।
তবে সরকার গণহারে পরীক্ষা করানোর কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় সমালোচনা শুরু হয়েছে। যদিও তার পরেও নিজেদের অবস্থানে অনড় সরকার। গত বছর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, গণহারে পরীক্ষা করানোর চেয়ে আরও অনেক বেশি প্রয়োজনীয় খাতে সরকারি অর্থ খরচের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। তবে দেশে টেস্ট কিটের আকাল দেখা দেওয়ার পরে তা বিক্রির উপর নিয়ন্ত্রণ আনার পথে হেঁটেছে প্রশাসন। জানানো হয়েছে, এক জন একটাই টেস্ট কিট (যা দিয়ে পাঁচ বার পরীক্ষা করা যায়) কিনতে পারবেন। কেনার সময় তা তাঁর সরকারি পরিচয়পত্রটির সঙ্গে ‘লিঙ্ক’ করে দেওয়া হবে।
দেশ জুড়ে এখনও কমপক্ষে ৫০ লক্ষ মানুষের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হওয়া বাকি। বাড়তে থাকা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে তাঁদের নিয়ে বিশেষ চিন্তিত প্রশাসন। এই নয়া ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্করা। পাল্লা দিচ্ছে শিশুরাও। ৭৫ বছর বয়সি বা তার ঊর্ধ্বদের ক্ষেত্রে টিকাকরণের হার ৭২.৫ শতাংশ। আর বুস্টার পেয়েছেন ৫৯.১ শতাংশ। শিশুদের ক্ষেত্রেও সংক্রমণ বৃদ্ধি নজরে আসায় ফের অনলাইন ক্লাস করার পন্থায় ফিরেছে দেশের বেশির ভাগ স্কুল। আগামী সপ্তাহ থেকেই ৬ থেকে ১১ বছর বয়সিদের টিকাকরণ শুরু করা হবে।