একটি গ্রামেই এক লক্ষ ম্যানগ্রোভ চারা, মোট লাগানো হচ্ছে ১০ লক্ষ

তিন সপ্তাহ পরে ঘূর্ণীঝড় বুলবুল নিয়ে আর কোনও আলোচনা নেই। তবে যাঁরা ভুক্তভোগী তাঁরা জানেন ঝড় চলে গেলেও এখনও স্বাভাবিক হয়নি তাঁদের জীবন। ঘরবাড়ি তো গেছেই, সঙ্গে গেছে ধান, পান, শাকের ক্ষেত। উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি আর অসংখ্য গাছ।

বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় লাগানো হচ্ছে ম্যানগ্রোভের চারা

বিস্তীর্ণ এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য লবনাম্বু উদ্ভিদ বা ম্যানগ্রোভ থাকা অত্যন্ত জরুরি। মাটির ক্ষয়ও রোধ করে ম্যানগ্রোভ। প্রশাসনের তৎপরতায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে শুরু হয়েছে ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানো। একই সঙ্গে লাগানো হচ্ছে নারকেল গাছও। এই গাছ অর্থকরী তো বটেই, অনেক সময় বজ্রপাতের হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায় নারকেল ও তাল গাছ থাকলে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের দাপটে এখনও বিধ্বস্ত অবস্থা গোসাবা, বাসন্তী, ক্যানিং ১ নম্বর, পাথরপ্রতিমা, মথুরাপুর ২ নম্বর, নামখানা, সাগর প্রভৃতি ব্লক। এই সব ব্লকে লবনাম্বু উদ্ভিদের চারা লাগানোর পাশাপাশি চলছে অর্থকরী গাছের চারা লাগানোও। ফলের গাছ ও দামি কাঠ হয় এমন গাছের চারা লাগানো হচ্ছে এই সব ব্লকে।

মহত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চতা প্রকল্প (এমজিএনরেগা) বা ১০০ দিনের কাজের আওতায় যে সব মহিলার জব কার্ড রয়েছে, তাঁদের দিয়েই বৃক্ষরোপন করাচ্ছে প্রশাসন। তাতে গাছ লাগানো যেমন হচ্ছে তেমনই বুলবুলে ক্ষতিগ্রদের পরিবারে সাময়িক কর্মসংস্থান ও রোজগারের সুযোগও হচ্ছে।

জেলার সুন্দরবনের নদীর পাড়ে এবং গ্রামের মধ্যে ম্যানগ্রোভ গাছের নার্সারি করে ১০ লক্ষ ম্যানগ্রোভ চারা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যানিং ১ ব্লকের মাতলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে মাতলা নদীর পাড়েও ম্যানগ্রোভের মোটামুটি ১ লক্ষ চারা তৈরি করা হয়েছে।

এমনকি এই পঞ্চায়েত এলাকায় ক্যানিং মাতলা নদীর পাড়ে জব কার্ডের মহিলা সুবিধাভোগী মলিনা হালদার, ভাস্বতী সরদার, কাকলি পাল ও বাসন্তী বিশ্বাস – এই চার জন মহিলা বিভিন্ন প্রজাতির পাঁচ হাজার কাঠ ও ফলগাছের চারা রোপন করে রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন দেশের মধ্যে। এই চার জন মহিলাকেই নারকেল গাছের চারা রোপন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ম্যানগ্রোভের চারাগুলি নদীর চর ও বাঁধে বসানো হচ্ছে।

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের দাপটে গত ৯ নভেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপররে এই এলাকা হেলিকপ্টারে পরিদর্শন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে তিনি কাকদ্বীপে প্রশাসনিক বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই নির্দেশ দেন ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান তা নিশ্চিত করতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.