ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে সময় নষ্ট বিতর্ক। অভিযোগ দলীপ ট্রফির উত্তরাঞ্চল দলের বিরুদ্ধে। প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালের শেষ পর্বে ৫.৫ ওভার বল করতে ৫৩ মিনিট সময় নেয় উত্তরাঞ্চল। সময় নষ্ট করে ফাইনালে উঠার চেষ্টা করেছিল তারা। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
দক্ষিণাঞ্চলের ফাইনালে ওঠার রাস্তা কঠিন করতে শনিবার সময় নষ্ট করে উত্তরাঞ্চল। সেমিফাইনালের বৃষ্টি বিঘ্নিত চতুর্থ তথা শেষ দিনে জয়ের জন্য দক্ষিণাঞ্চলের প্রয়োজন ছিল ১৯৪ রান। উত্তরাঞ্চলের দরকার ছিল ১০ উইকেট। তবে ম্যাচ অমীমাংসিত ভাবে শেষ হলে প্রথম ইনিংসে ৩ রানে এগিয়ে থাকার সুবাদে ফাইনালে চলে যেত উত্তরাঞ্চল। অভিযোগ, এই হিসাব মাথায় রেখে খেলার গতি ইচ্ছাকৃত ভাবে মন্থর করে দেয় উত্তরাঞ্চল।
শনিবার বেঙ্গালুরুতে বৃষ্টি এবং খারাপ আলোর জন্য পুরো সময় খেলা হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। সেই সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করে উত্তরাঞ্চল। বৃষ্টির জন্য অনেকটা সময় নষ্ট হয় শনিবার। দিনের শেষ পর্বে খেলা শুরু হওয়ার পর প্রতিটি বল হওয়ার পর বোলারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করতে দেখা যায় উত্তরাঞ্চলের অধিনায়ক জয়ন্ত যাদব এবং অন্য ক্রিকেটারদের। ফিল্ডিং পরিবর্তন করতেও অনেক সময় নিচ্ছিলেন তাঁরা। এ ভাবে ৫.৫ ওভার বল করতে ৫৩ মিনিট সময় নেন তাঁরা। শুধু ৩৫তম ওভার করতেই ১২ মিনিট সময় নেন জয়ন্তেরা। সে সময় জয়ের জন্য ৩২ রান দরকার ছিল দক্ষিণাঞ্চলের। উত্তরাঞ্চলের এই কৌশল অবশ্য কাজে আসেনি। ৮ উইকেট হারিয়ে প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় দক্ষিণাঞ্চল। তবে উত্তরাঞ্চলের রণনীতি ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে জয়ন্তদের ক্রিকেটীয় মানসিকতা নিয়ে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, উত্তরাঞ্চলের রণকৌশল ক্রিকেটের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করেছে। ভারতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার ডোডা গণেশ বলেছেন, ‘‘দারুণ খেলেছে ছেলেরা। উত্তরাঞ্চলের সময় নষ্টের কৌশল ব্যর্থ করে দুর্দান্ত জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। আশা করি এমন অখেলোয়াড়োচিত মানসিকতার বিরুদ্ধে আগামী দিনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ দর্শক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঋষভ পন্থ এবং হার্দিক পাণ্ড্য। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে থাকার সুবাদে, তাঁরা উত্তরাঞ্চল-দক্ষিণাঞ্চল সেমিফাইনালের শেষ দিনের খেলা দেখতে এসেছিলেন। কোনও মন্তব্য না করলেও তাঁরাও বিস্মিত উত্তরাঞ্চলের এমন রণকৌশলে।
প্রশ্ন উঠলেও উত্তরাঞ্চলের এই রণকৌশলে অবাক নন দক্ষিণাঞ্চলের অধিনায়ক হনুমা বিহারি। তিনি বিস্মিতও নন। বরং সমর্থনই করেছেন। হনুমা বলেছেন, ‘‘আমি ওই পরিস্থিতিতে উত্তরাঞ্চলকে নেতৃত্ব দিলে হয়তো একই কৌশল নিতাম। ঘরোয়া ক্রিকেটে এরকম প্রচুর ম্যাচ খেলেছি। যে ম্যাচগুলোয় খেলার চূড়ান্ত পর্বে দলগুলো মন্থর বোলিং করেছে। ওদের দিক থেকে কোনও ভুল নেই। অনেকে বলতে পারেন, এই কৌশল ক্রিকেটের জন্য ভাল নয়। কিন্তু উত্তরাঞ্চলের অধিনায়ক হলে আমিও একই কাজ করতাম।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘হয়তো কম ওভার রেটের জন্য উত্তরাঞ্চলের জরিমানা হবে। ম্যাচ জেতার জন্যই ওরা এমন কৌশল নিয়েছিল। খেলার মতো আলো না থাকলে তো ওরাই জিতে যেত। এমন কিছু হতে পারে আমাদের মনে হয়েছিল। তাই ব্যাটারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া ছিল। আবহাওয়া কিছুটা ভাল হতেই দ্রুত রান তোলার বার্তা পাঠানো হয়েছিল মাঠে।’’
উল্লেখ্য, গত আইপিএলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সময় নষ্টের কৌশল দেখা গিয়েছিল। একটি ম্যাচে ধোনি বল করতে ডেকেছিলেন মাতিশা পাতিরানাকে। সে সময় আম্পায়ারেরা জানিয়েছিলেন, মাঠের বাইরে থাকায় পাতিরানাকে বল করার জন্য আরও ৪ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। ধোনি আম্পায়ারদের সঙ্গে খেলার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করে ৪ মিনিট কাটিয়ে দিয়েছিলেন এবং পাতিরানাকে দিয়েই বল করিয়েছিলেন। সে সময়ও ধোনির রণকৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।