স্কুলে নাম নথিভুক্ত করার সময়েই পোর্টাল-প্রবেশ প্রতারকদের? পুলিশের প্রাথমিক অনুমান সেটাই

ট্যাব কেনার জন্য পড়ুয়াদের বরাদ্দ টাকা কী ভাবে বেহাত হয়েছে, প্রাথমিক ভাবে সে সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারণা মিলেছে তদন্তকারীদের। তবে কখন প্রতারকেরা টাকা হাতানোর ‘ছক’ কষেছিলেন, তা নিয়েই কাঁটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। লালবাজারের তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, স্কুল কর্তৃপক্ষ যখন আবেদনকারী পড়ুয়াদের নাম সংশ্লিষ্ট পোর্টালে নথিভুক্ত বা তথ্য সংশোধন করতেন, সেই সময়টাকেই বেছে নিতেন প্রতারকেরা! পোর্টালে তথ্য নথিভুক্ত করার জন্য স্কুলগুলির ‘নির্দিষ্ট’ লগইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড রয়েছে। প্রত্যেক স্কুলের ক্ষেত্রে সেই আইডি এবং পাসওয়ার্ড আলাদা আলাদা হয়। তদন্তকারীরা মনে করছেন, ওই লগইন আইডি আর পাসওয়ার্ডকে কাজে লাগিয়েই প্রতারকেরা পোর্টালে প্রবেশ করতেন। তার পর সংশ্লিষ্ট স্কুলের আবেদনকারীদের তালিকা থেকে কয়েক জনের তথ্য পরিবর্তন করে দেওয়া হত। মূলত, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরই পাল্টে দিয়ে প্রতারণার জাল বিছোতেন প্রতারকেরা!

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব কিনতে ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে পড়ুয়াদের ১০ হাজার টাকা করে দেয় রাজ্য সরকার। তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর ২০২১ সালে এই প্রকল্প চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে শুধু দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরই এই টাকা দেওয়া হত। এ বছর একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও ট্যাব কেনার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিয়ম হল, স্কুল কর্তৃপক্ষই পড়ুয়াদের নাম-সহ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরের তালিকা তৈরি করে থাকেন। সেই তালিকা প্রথমে পাঠানো হয় এসআই (স্কুল ইন্সপেক্টর)-কে, তার পর যায় ডিআই (স্কুল পরিদর্শক)-এর কাছে। যাচাইকরণের পর পোর্টালে থাকা পড়ুয়াদের নামের তালিকায় টাকা পাঠানো হয়।

ট্যাবের টাকা না পাওয়ার অভিযোগ প্রথম উঠেছিল পূর্ব বর্ধমানে। তার পর রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকেই পড়ুয়াদের টাকা গায়েব হওয়ার অভিযোগ মিলতে থাকে। কলকাতারও বিভিন্ন জায়গার স্কুলের পড়ুয়ারা একই সমস্যার সম্মুখীন হয়। এখনও পর্যন্ত কলকাতার ১০৭ জন পড়ুয়া প্রতারণার শিকার হয়েছে। সেই ঘটনার তদন্তে লালবাজার ইতিমধ্যেই বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছে। সেই তদন্তকারীদের অনুমান, নাম নথিভুক্ত হওয়ার সময়ই যত গন্ডগোল হয়েছে। প্রতারকেরা বেছে নিয়েছেন এই সময়টাকেই। যে সব আইপি অ্যাডড্রেস ব্যবহার করে প্রতারণা হয়েছে সেগুলিকে খতিয়ে দেখেই সময়ের আন্দাজ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। দেখা গিয়েছে, স্কুলগুলি যে সময়ে পোর্টালে নাম নথিভুক্ত বা সংশোধন করত, সে সময় বা তার কাছাকাছি সময়ে ওই চিহ্নিত আইপি অ্যাডড্রেস ব্যবহার হত!

প্রশ্ন উঠছে, কী ভাবে স্কুলগুলির লগইন আইডি, পাসওয়ার্ড হাতে পেতেন প্রতারকেরা? তদন্তকারীদের অনুমান, স্কুল কর্তৃপক্ষ যে ধরনের আইডি এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতেন, তা খুবই দুর্বল। প্রতারকেরা তা সহজে অনুমান করে থাকতে পারেন। তবে এই টাকা হাতানোর চক্রে পরোক্ষ ভাবে স্কুলের কেউ জড়িত রয়েছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। যে হেতু পড়ুয়াদের নাম এবং তথ্য পোর্টালে নথিভুক্ত এবং সংশোধন করার এক্তিয়ার শুধু মাত্র স্কুলের, তাই তদন্তকারীদের অনুমান প্রতারকেরা সে সময়ই প্রতারণা করেছেন।

অন্যান্য জেলায় ট্যাব-কাণ্ডের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে সাইবার ক্যাফের যোগ মিলেছে। কলকাতাতেও এমন কোনও সাইবার ক্যাফে থেকে প্রতারণা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে! কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যেই বিকাশ ভবন, স্কুলগুলির সঙ্গে যোগযোগ করেছে। বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। সঙ্গে আরও তথ্যও চেয়েছেন তদন্তকারীরা। ট্যাবের টাকা কী পদ্ধতিতে পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছয়, তা শিক্ষা দফতরে গিয়ে বুঝে এসেছেন তাঁরা। এই ট্যাবের টাকা প্রতারণায় ভিন্‌রাজ্যের অসাধু চক্রের যোগ রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.