#পর্ব_৩
দুর্গে শিবেঽভয়ে মায়ে নারায়ণি সনাতনি । জয়ে মে মঙ্গলং দেহি নমস্তে সর্বমঙ্গলে ॥ দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ । উকারো বিঘ্ননাশার্থবাচকো বেদসম্মতঃ ॥ রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ । ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিতঃ ॥ স্মৃত্যুক্তিস্মরণাদ্যস্যা এতে নশ্যন্তি নিশ্চিতম্ । অতো দুর্গা হরেঃ শক্তির্হরিণা পরিকীর্তিতা ॥ বিপত্তিবাচকো দুর্গশ্চাকারো নাশবাচকঃ । দুর্গং নশ্যতি য়া নিত্যং সা দুর্গা পরিকীর্তিতা ॥
যাই হোক আবার ফিরে আসা যাক দুর্গা পূজায়। বিশেষ করে পটের দুর্গা পূজার কথায় …..
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে মহিষমর্দিনী শ্রীশ্রী দুর্গাদেবীর পূজানুষ্ঠান। ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক তথা নানাবিধ ক্রিয়াকর্ম এই পূজানুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ অনুষ্ঠানকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। ভাব-ভক্তি, ইষ্ট-নিষ্ঠা, ভক্তপ্রাণের মুখরতা আর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সৌন্দর্য-সৌকর্যে দুর্গা পূজা আজ অতুলনীয় ধর্মানুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
আচারে-অনুষ্ঠানে, আয়োজনে, অংশগ্রহণে, আকারে-আঙ্গিকে, আনন্দ-উৎসবে এ পূজা আজ ব্যক্তি ও পরিবারের সংকীর্ণ গন্ডী পেরিয়ে পেয়েছে সার্বজনীনরূপ। দুর্গামায়ের আগমনী ছন্দে ছন্দায়িত হয় ভক্তজনের তনুমন। মঙ্গলালোকে উচ্ছ্বসিত, সমুদ্ভাসিত ও উদ্বেলিত হয় শরণাগতের অন্তরাকাশ।
দুর্গাপূজা মূলতঃ শক্তিপূজা। শুভশক্তি আবাহনার্থেই মহিষমর্দিনী দুর্গাময়ের পূজানুষ্ঠান।
নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা আর দুর্গা ও শক্তি পূজার মধ্যে নেই কোন প্রভেদ। কারণ ‘এক ও অদ্বিতীয় নিরতিশয় চৈতন্যস্বরূপ ব্রহ্ম অনাদিসিদ্ধ মায়ার আবরণে ধর্ম ও ধর্মীরূপে প্রতিভাসিত হন।’
অগ্নি ও তার উত্তাপকে যেমন পৃথক করা যায় না, ধর্ম ও ধর্মীকে যেমন স্বতন্ত্র ভাবা যায় না, তেমনি ব্রহ্ম আর শক্তিও অভিন্ন।
দেবী ভগবতে আছে-
“সদৈকত্বং ন ভেদোহস্তি সর্বদৈব মমাস্য চ।
যোহসৌ সাহম্ অহং যাসৌ ভেদোহস্তি মতিবিভ্রমাৎ”
অর্থাৎ “আমি ও ব্রহ্ম এক। উভয়ের মধ্যে ভেদ নেই। যিনি ব্রহ্ম তিনিই আমি। আমি যাহা, তিনিও তাহাই। এই ভেদ ভ্রমকল্পিত, বাস্তব নহে।” ‘আমি’-ই দুর্গা বা শক্তি। সচ্চিদানন্দরূপিণী মহামায়া পরাশক্তি অরূপা হয়েও ভক্তপ্রাণের পরিত্রাণ রূপে ধরা দেন। যিনি সর্বশক্তিমান সব কিছুই তাঁর ইচ্ছাধীন, সব কিছুই তাঁর আয়ত্তাধীন। তাই তিনি নিরাকার পরব্রহ্ম হয়েও স্বেচ্ছায় সাকারে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন।
মায়ের পূজা ভাবের পূজা। আমরা আগেই বলেছি আতিশয্য পূজার অত্যাবশ্যকীয় কোন অঙ্গ নয়। ভক্ত হৃদয়ের ভাবের উদ্বোধনে মোক্ষ লাভ করবে, অন্তরাত্মায় জানবে পরমব্রহ্মময়ী রূপকে।তাই শাক্ত মতে বা তন্ত্রমতে যে পূজা পদ্ধতি সেখানে যন্ত্রের ব্যবহার ই শেষকথা।
যন্ত্রের উপর পূর্ন ঘট স্থাপনা করা তাই পূর্ণতার প্রতীক। যে কোন পূজার সময় ঘট স্থাপন করতে হয়। ঘট কোন দেবী বা দেবতার প্রতিমা নয়। ঘট ভগবানের নিরাকার অবস্থার প্রতীক। হিন্দুরা পূজার সময় যেমন ভগবানের সাকার স্বরূপ কে পূজা করে তেমনি নিরাকার স্বরূপকেও পূজা করেন। তাই ঘট স্থাপন প্রতি পূজাতে একান্ত আবশ্যক। ঘট স্থাপন ছাড়া পূজা অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। প্রায় সব পূজায় ঘট লাগে। ঘটের মধ্যে অনেক উপাদান ব্যবহার হয়। যেমন- পঞ্চশস্য, পঞ্ছগুড়ি,পঞ্চপল্লব,পঞ্চরত্ন, জল,মাটি,নারিকেল,গামছা,কান্ডকাঠি ইত্যাদি।
ঘট আমাদের দেহের প্রতিরুপ……… পুজোর সময় পঞ্চগুড়ি দিয়ে পিঠ তৈরি করা হয় ।এই পঞ্ছগুড়ি_পঞ্চমহাভুত (অর্থাৎ ক্ষিতি , অপ , তেজ , মরুৎ , ব্যোম ) এর প্রতিক। এই পঞ্চমহাভুত এর উপর মৃত্তিকা দিয়ে পিঠ তৈরি করা হয়। মৃত্তিকা বেদীর উপর পঞ্চশস্য দেয়া হয়। এই পঞ্চশস্য আমাদের পঞ্চবৃত্তি (কাম,ক্রোধ , লোভ, মোহ ও মাৎসর্য) এর প্রতীক । এর ওপর ঘট উপস্থাপন করা হয় ।ঘট আমাদের দেহের প্রতিক। আধ্যাত্মিক ভাষায় দেহকে দেহঘটও বলা হয়। ঘটের ভেতর পঞ্চরত্ন দেয়া হয়। পঞ্চরত্ন হল এই পঞ্চইন্দ্রিয়ের (চক্ষু, কর্ন, নাসিকা, ত্বক ও জিহ্বা) প্রতিক।
এর পর ঘটে জল ঢেলে পূর্ণ করা হয়।জল হল দেহরস বা রক্ত।
ঘটে এবার পঞ্চপল্লব দেয়া হয়। এই পঞ্চপল্লব এই পঞ্চবায়ু (পান, অপান, উদ্যান, সমান , ব্যান)এর প্রতিক ।
এর উপর ডাব বা নারিকেল দেয়া হয়। আমরা জানি নারিকেল এ আমাদের মুখের মত চোখ, মুখ ,নাক দেখা যায়।
সেই কারনে নারিকেল আমদের মুখমন্ডলের প্রতিরুপ।
মস্তক থাকলে তাতে আচ্ছাদন দেতে হয়। তাই নারিকেল এর উপর গামছা বা বস্ত্র দেয়া হয়।
এই হল আমাদের দেহের প্রতিরুপ।
—আর কান্ডকাঠি হল চারবেদের প্রতিক।
কূর্মপুরাণে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে , ভিতরের ধ্যান সাধকের সামর্থ অনুসারে চিত্তবৃত্তির নিরোধের ফলে আপনি ফুটে ওঠে । এই উদ্বোধনের প্রকৃষ্ট সময় হিসেবে তারা বেছে নিয়েছিলেন শরৎকাল অর্থাৎ দক্ষিণায়নের সময়কে। এই হচ্ছে দেবনিদ্রার কাল।তাই এই সময় কুলকুন্ডলিনীও থাকেন নিদ্রিতা । তাঁকে জাগানোই, তাঁকে জাগিয়ে অন্তত রহস্যময় এই পৃথিবী, প্রকৃতি ও সুবিশাল ব্রম্ভান্ডকে আবিষ্কার করে পরম মোক্ষকে লাভ করাই এই সাধনার উদ্দেশ্য। যা আছে দেহভান্ডে তাই আছে ব্রম্ভান্ডে । দেহস্থ কুলকুন্ডলিনী শক্তিকে জাগ্রত করে ব্রম্ভাণ্ডব্যাপিনী কুলকুন্ডলিনী শক্তির সঙ্গে মেলাতে পারলে তবেই সিদ্ধিলাভ সম্ভব।
অম্বরনাথ সেনগুপ্তের একটি মন্তব্যকে বলি, মূর্তিকে ব্যতিরেকে পূজা-অর্চনা যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায় এই ধারণাই জনমানসে আছে। নিরাকার ব্রহ্ম উপাসনা উচ্চমার্গের উপাসনা। অনেক জ্ঞান চর্চার মাধ্যমেই সেই উপাসনায় সাফল্য আসে।অথচ , ঢাকের বাদ্য , ধূপের গন্ধে আজন্ম পরিচিত মাতৃমূর্তির উপস্থিতি , গুরু গম্ভীর উচ্চারিত মন্ত্র, উপবাস কৃষ্ট ভক্তকুলের উপস্থিতি, পুষ্পাঞ্জলি, আরতি ,ছোট বাচ্চাদের আনন্দ ,কোলাহল ইত্যাদির সমন্বয়ে যে অদ্ভুত নৈসর্গিক পরিবেশর সৃষ্টি হয় তা কেবলমাত্র অনুভবের বিষয় ; তাকে সঠিক করে লিখে বা বলে ,ব্যাখ্যায় বোঝানো যাবে না ।এই পরিবেশ একটা গুরুগম্ভীর প্রার্থনা সভাতে হয়তো অনুভব করা যায় না। এটা আমাদের প্রাচীন বিশ্বাস। ভক্তকুলের আহ্বানে দেবী মৃন্ময়ী মূর্তিতে আবির্ভুতা হন। এই সুপ্রাচীন সংস্কারকে কোনোদিনই অস্বীকার করা যায় না। দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেবার পর প্রণাম এর মাধ্যমে আত্মসমর্পণের ভক্ত-পূজারিরা উপলব্ধি করেন দেবীর কৃপায় তাঁদের মনোবাসনা পূর্ণ হবে। বিগ্রহ হীন পূজা সে অনুভূতি হওয়া সম্ভব নয় এটা সকলের বিশ্বাস।
অনুমান করা হয় তন্ত্রের দেশ বীরভূমের তন্ত্র সাধকগন এটা উপলব্ধি করেছিলেন যে মূর্তির ঐশ্বর্য বৈভব তাঁদের একান্ত সাধনায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে তাদের ভক্তি- প্রাবল্য উচ্ছ্বাসে জাঁকজমকের লোপ পেতে পারে । এই ধারণা থেকেই তাঁরা বাহুল্য থেকে দূরে সরিয়ে মায়ের মূর্তি বা ধ্যানমূর্তি টুকুকেই তাঁরা মানস পটে এঁকে দিতে চেয়েছিলেন। দেখা যায় ২৫০ এর থেকেও প্রাচীন পটের দুর্গাপূজায় দুর্গার পূর্ণাবয়ব চিত্র প্রায় নেই । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুর্গার মুখমন্ডলের ছবিই একমাত্র অবলম্বন। পরবর্তীকালে পটে সপরিবার দুর্গা চিত্র কালের বিবর্তনে এসেছে।
সেই কারণে সপরিবারে মা দুর্গা পটের পূজার শুরু মধ্যযুগের শেষভাগ থেকে। হাটসারেন্দি , চারকল গ্রাম, বাহিরি, পাঁচশোয়া বীরভূমের এইসব গ্রামে যে পূজা তা কোনমতেই দুইশত থেকে আড়াইশত বছরের সীমা অতিক্রম করে না । তুলনায় দেখা যায় খটঙ্গা , লম্বদরপুর, রাজনগর ইত্যাদি গ্রামের পূজা আড়াইশো বছরের সীমা অতিক্রম করে সেখানে ইতিহাসের ছোঁয়ায় জেগে উঠেছে।
আদিত্য মুখোপাধ্যায় তার দুর্গাপট প্রবন্ধে পটপূজা উদ্ভবের কারণ হিসেবে যা বলেছিলেন আমি তা পূর্বেই উল্লেখ করেছি। তিনি সেখানে ঘটেপটে পূজার কথা বলেছেন। তবে বলে রাখি যে মূর্তি পূজার জাঁকজমকের পূর্বেই ঘটপটে পূজার প্রচলন হয়েছিল। অনেক দূর অতীতে না তাকিয়ে মঙ্গলকাব্যগুলি পড়লেই তার উদাহরণ আমরা পেয়ে যাই। তাই পট বা ঘট পূজার জন্য অর্থনৈতিক কারন কোনো কারণ নয়। ঘট কেন পূজার আবশ্যক তাও আমি এই পর্ব সূচনায় ব্যাখ্যা করেছি। তাই ঘটেপটে পূজা ভারতীয় পূজার ইতিহাসে এক গূঢ় দার্শনিক চেতনা।
আদিত্য মুখোপাধ্যায় সম্ভবত ঘটেপটে পূজা বলতে সপরিবারে মা দুর্গার ছবি এঁকে পূজার কথা বলছেন ।এক্ষেত্রে তিনি একটি কাহিনীর কথা উল্লেখ করেছেন কাহিনীটি এরকম- অর্থনৈতিক কারণে পূজা বন্ধ হওয়ার জোগাড় হলে কোন এক অচেনা কিশোরী হঠাৎ দেখা দিয়ে ঘটেপটে পূজার নিদান দিয়ে উধাও হয়ে যায় । এ কিশোরী দেবী দুর্গা। কাহিনী পটে পূজা করা পরিবারের কারুর কাছ থেকে শুনতে পাওয়া যায় । এই কিংবদন্তীর মাধ্যমে অর্থনৈতিক ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে অথবা পট মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে তা বলা মুশকিল। যে সময় বাংলায় বিভিন্ন জমিদারগন রাজকীয় দুর্গাপুজো করে চলেছেন এর বিপরীতে হচ্ছে পটের পুজো নিরারম্বর ভাবে ,এবং তার প্রচলন জমিদারদের দুর্গা পূজা প্রচলনের অনেক আগে থেকে।
সিউড়ি থানার কোমা গ্রামের পটের দুর্গা পুজো সেই গ্রামের একমাত্র পুজো । ১৬২২ খ্রিস্টাব্দে দিগম্বর চট্টোপাধ্যায় এই পুজোর প্রবর্তন করেন। অর্থাৎ ঐতিহাসিক ভাবে পটে মায়ের আরাধনা বীরভূমে অনেক প্রাচীন। ইছাই ঘোষের শ্যামরূপা থানের কথাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। পুরাণের কথা অনুসারে রাজা সুরথের পূজার সঙ্গে বীরভূম এবং বীরভুমের বোলপুর এর নাম জড়িয়ে রয়েছে…..
পশ্চিমবঙ্গের এক বৈচিত্র ময় ভূখণ্ড বীরভূম। ভুমিরূপের বৈচিত্রে , প্রাচীনত্বে , জনজাতির বিন্যাসে , সংস্কৃতির উত্তরাধিকারে বীরভূম সত্যিই অন্যন্য। রুক্ষলাল মাটি, ছোটনাগ পুর মালভূমির প্রান্তবর্তী উঁচু নিচু ভূমি, জঙ্গল- ডহরের পারস্পরিক সহাবস্থান – সব মিলিয়ে এই জেলা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য , প্রকৃতির অপরিমেয় সৌন্দর্য তাকে করে তুলেছে রূপকথার প্রান্তর। এহল সেই রূপকথার দেশ , যেখানের দুয়োরানীর কষ্ট বুকে করে সাত সমুদ্দুর তেরো নদী তেপান্তেরের মাঠ পেরিয়ে গিয়ে উপস্থিত হয় ঘুমন্ত পুরীর সামনে। সেই ঘুমন্ত পুরীতে ঘুমিয়ে থাকে রাজকুমার । তাঁর পায়ের তলায় মরন আর শিয়রে থাকে জীয়ন কাঠি।
হম , যদি কাব্য কে ভেঙে দি , তবুও বীরভূম এমনি। তাই তো এই বীরভূমেই কবির শান্তিনিকেতন।
গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ আমার মন ভুলায় রে।
ওরে কার পানে মন হাত বাড়িয়ে লুটিয়ে যায় ধুলায় রে॥
ও যে আমায় ঘরের বাহির করে, পায়ে-পায়ে পায়ে ধরে–
ও যে কেড়ে আমায় নিয়ে যায় রে যায় রে কোন্ চুলায় রে।
এই সেই উদাসী হওয়ার পথে পথে বাউল সুরে মনমাতানো বীরভূম। এখানে জল জঙ্গল রৌদ্র মেঘে কথা হয় ফিসফিসে। এখান দিয়ে হেঁটে গেছেন রাজা , কত মহাপুরুষ। কত সাম্রাজ্যের উত্থান পতন হয়েছে ,কিন্তু বীরভূম থেকে গেছে বীরভূমে….
এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে মুকুলগুলি ঝরে;
আমি কুড়িয়ে নিয়েছি, তোমার চরণে দিয়েছি–
লহো লহো করুণ করে॥
যখন যাব চলে ওরা ফুটবে তোমার কোলে,
তোমার মালা গাঁথার আঙুলগুলি মধুর বেদনভরে
যেন আমায় স্মরণ করে॥
বউকথাকও তন্দ্রাহারা বিফল ব্যথায় ডাক দিয়ে হয় সারা
আজি বিভোর রাতে।
দুজনের কানাকানি কথা দুজনের মিলনবিহ্বলতা,
জ্যোৎস্নাধারায় যায় ভেসে যায় দোলের পূর্ণিমাতে।
এই আভাসগুলি পড়বে মালায় গাঁথা কালকে দিনের তরে
তোমার অলস দ্বিপ্রহরে॥
এই উদাসীন পথে , বাউলের প্রান্তরে পড়ে আছে সুপ্রাচীন ইতিহাস, সংস্কৃতি , ঐতিহ্য। মানুষ এর যথাযথ মূল্য বোঝে না। প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যর ন্যায় বস্তুগত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যতেও বর্তমানে মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। কিন্তু তন্ত্রমতে দেহভান্ড ই ব্রম্ভান্ডের স্বাদ দেয়। সেখানেই সন্ধানের আকাঙ্খা করতে হয়। নিজের দেশ , নিজের অঞ্চল ,নিজের ভাষা, নিজের সংস্কৃতিকে না জানলে বিশ্বকে কি করে জানবে মানুষ? এখনো চর্যাপদের কবিদের কথামত উচ্চবিত্তের প্রতি নিম্নবিত্তের সচেতন দূরত্ব বা অবজ্ঞা…..
আলো ডোম্বি তোএ সম করিব মই সাঙ্গ ।নিঘিণ কাহ্ন কাপালি জোই লাঙ্গ ॥॥এক সো পদমা চউসট্ঠী পাখুড়ি ।তহিঁ চড়ি নাচই ডোম্বি বাপুড়ি ॥॥হালো ডোম্বি তো পুছমি সদভাবে ।আইসসি জাসি ডোম্বি কাহেরি নাবেঁ ॥
দিগম্বর সন্ন্যাসী এখনো মানুষ ঢিল ছোঁড়ে । কিন্তু নিজের গায়েও কাপড় নেই তা দেখে না।
উদাসীন বীরভূমের তাই প্রকৃত তথ্য অন্তরালে থেকে গেছে।
#ক্রমশঃ
#দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ ১. পটের দুর্গা : বীরভূম
২.পট : বিমলেন্দু চক্রবর্তী