#দুইটি_উপত্যকা_ও_সনাতনী

মানবাধিকার নেই। না যাদের জন্য পুরো বিশ্বের তথাকথিত মানবাধিকারীদের  চক্ষে এক ফোঁটা জল আসে না। যাঁদের উপর চরম অত্যাচারেও ভারতের বুদ্ধিজীবীরা মুখে কুলুপ আঁটে তাঁরা হলেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অত্যাচারিত হিন্দু।পিপিলস রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ  এবং ইসলামিক রিপাবলিক অফ পাকিস্তান এই দুই রাষ্ট্রে বসবাসকারী হিন্দুদের উপর মানবাধিকার উলঙ্ঘনের উত্তরোত্তর বৃদ্ধিই পাচ্ছে। উক্ত দুই রাষ্ট্রে হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমশ হ্রাসমান অবস্থায় আছে। বলতে গেলে আরো কিছু দিন পরে তা প্রায় শূন্য হয়ে যাবে। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা ও দেশ ভাগের পরে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ৩১% থেকে নেমে ৯%  এরও কম হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক স্বনামধন্য অধ্যাপক ডাক্তার আবুল বরকতের মতে বাংলাদেশে আগামী তিন দশকের মধ্যে হিন্দু বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

 ২০১৮ সালের পূর্বে র ১১ মাসে, বাংলাদেশে ধর্মীয় ভাবে সল্প সংখ্যকদেরকে নিশানা করে হিংসাত্মক আক্রমন সংঘঠিত হয়েছে এবং তার সংখ্যা প্রায় ১৭৯২ টি। বাংলাদেশ ন্যাশনাল হিন্দু মহাজোটের নেতা শ্রী গোবিন্দ প্রামানিকের বক্তব্য অনুসারে , ২৪ টি হিন্দু অধিকারের সংগঠনের যৌথ উদ্যোগ হল উক্ত সংগঠন। যা বর্তমানে সেই দেশে হিন্দুদের অধিকার রক্ষার নিমিত্ত লড়াই করে চলেছেন। 
যাই হোক, উক্ত সহিংস ঘটনা ৫০ টি ধর্মীয় স্থান ও মন্দিরের উপর সংঘটিত হয়। ২০১৯ সালের পাওয়া হিন্দু মানবাধিকার সংক্রান্ত তথ্য অনুসারে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় হিন্দুদের জমি জোর করে দখল করা হয়েছে এবং তার পরিমান প্রায় ২৭৩৪ একর।


  “IndiaFacts Research Group” এর শুভদীপ মুখোপাধ্যায় , সংক্রান্ত সানু এবং নিতিন শ্রীধর প্রমুখের তথ্য থেকে বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর হওয়া ভয়ঙ্কর অত্যাচারের বিষয় অবগত হওয়া যায়।সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে , ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে পৃথিবীর সকল ইসলামিক দেশে হিন্দুদের উপর আক্রমনের পরিমান ক্রমশ বেড়েছে।  তাঁদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নষ্ট করা হয়েছে। শুধু তাই নয় । ভারতের এরম অনেক স্থানে যেখানে হিন্দু সংখ্যালঘু সেখানে তাঁদের উপর যথেষ্ট অত্যাচারের সংবাদ আমরা জানি। কাশ্মীর থেকে কৈরানা , কালিয়াচক থেকে কেরল…হিন্দুরা কেবল মুখ বুজে মার খেয়ে চলেছে। প্রতিবাদ করলে বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার সংগঠন গুলি কেবল সংবিধানের দোহাই দিয়ে চলেছে।

উক্ত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, উগ্র ইসলামিক আক্রমনের ভয়াবহ ঘটনা বাংলাদেশে ব্যাপক আকার ধারন করেছে। প্রায় দু বছর পূর্বে বাংলাদেশের উত্তরভাগে ময়মনসিংহের নেত্রকোনা জেলায় পূর্ব পাড়া কালী মন্দিরের মূর্তি উগ্র ইসলামিক জিহাদিদের দ্বারা বিকৃত করে হয়। ভাঙচুর চালানো হয় মন্দিরে। একই বছর একই  রকম ঘটনা ঘটে ….. চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা শহরের কলেজ পাড়া এলাকায় উগ্র মুসলিমরা তফসির মাহফিল (ইসলামী আলোচনা) চালাচ্ছিল। পুলিশ সেই সভা থামিয়ে দেয়। উগ্র ধর্ম ব্যবসায়ীকে সেই ক্ষোভ গিয়ে পড়ে হিন্দুদের উপর। ফলত একটি বিশাল উগ্র দল হিন্দু প্রতিমা অবমাননা করে একটি মন্দির ভাঙচুর করেছিল এবং হিন্দু পাড়ায় তাণ্ডব চালিয়েছিল।

২০১৭ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দীপাবলির দিনে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়, যার ফলে ১৫ টিরও বেশি মন্দিরকে বিনষ্ট করে  দেওয়া হয়েছিল এবং দেড় শতাধিক লোক আহত হয়েছিল।  গোপালগঞ্জে সাঁওতাল উপজাতি সম্প্রদায়ের উপরও হামলা হয়েছিল। এখনো হিন্দু পুরোহিত এবং ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদের শিরশ্ছেদ, হিন্দু মেয়েদের অপহরণ এবং ধর্মান্তরিত করা এবং  ধর্ষন , সংখ্যালঘুদের মালিকানাধীন জমিগুলিতে জোরপূর্বক দখল বাংলাদেশে অব্যাহত রয়েছে।


  হিন্দুদের পক্ষে কাজ করা একটি সংগঠন হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন (এইচএএফ) এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: “ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও নাস্তিকদের দুর্দশা ক্রমবর্ধমান , তাঁদের অস্তিত্ব অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ….কারণ গত কয়েক বছর ধরে ধর্মীয় অনুপ্রাণিত সহিংসতা স্পষ্টত বৃদ্ধি পেয়েছে।  তা হয়েছে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদী দলগুলির উত্থানের সাথে।  সাম্প্রতিক সহিংসতা বাড়ানোয় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী গোষ্ঠী  ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে- যেমন জামায়াতে ইসলামী (জেআই), জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসারুল্লাহ বাংলা দল (এবিটি), ভারতে আল কায়েদার উপমহাদেশ (একিউআইএস) এবং আইএসআইএস ও অন্যান্য।

ইসলামিক প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানেরও একই অবস্থা।  মানবাধিকার গোষ্ঠী দক্ষিণ এশিয়া পার্টনার-পাকিস্তানের মতে, প্রতি বছর, উগ্রপন্থী ইসলাম পুরুষরা প্রায় এক হাজার মহিলা, বেশিরভাগ হিন্দু ও শিখদের অপহরণ করে এবং জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করে।  পাকিস্তান হিন্দু কাউন্সিল জানিয়েছে, প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার পাকিস্তানি হিন্দু ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে আসেন। 


  উদাহরণস্বরূপ, হিন্দু ব্রাহ্মণ কিশোরী আরতি কুমারী শর্মা (১৯), যিনি কাসিম মডেল বিদ্যালয়ের স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে পাকিস্তানের সিন্ধুর খেরপুর জেলায় তাঁর বাড়ির কাছ থেকে এক উগ্র মুসলিম দ্বারা বন্দুকের ভয় দেখিয়ে  তাঁকে অপহৃত করা হয়েছিল। সেই শিক্ষিকাকে জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়, নাম পরিবর্তন করে নামকরণ করা হয় “মহাবীশ” এবং স্থানীয় মুসলিম ছেলে আমির বক্সের সাথে তার বিয়ে থুড়ি নিকাহ করানো হয়। ।  তাকে একটি হলফনামায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল যাতে দাবি করা হয় যে তিনি বাক্সকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছেন এবং নিজের ইচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

ডিসেম্বর ২০১৮ সালে, পাকিস্তানকে হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, আহমদিয়া মুসলমান এবং শিয়া সহ তার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে “নিয়মতান্ত্রিক, চলমান [এবং] ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘন” বলে মার্কিন বিদেশরাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্বেগের দেশ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই ব্যাপক ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন থেকে বাঁচার জন্য হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান এবং আহমদদিয়া মুসলমানরা গত বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রমবর্ধমানভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন।  পাকিস্তানের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা এবং ভারতে এনজিওদের মতে, বছরে প্রায় ৫০ হাজার হিন্দু ভারতে আশ্রয় নেন।  একইভাবে, প্রায় ১২০০০ পাকিস্তানি (প্রধানত খ্রিস্টান) থাইল্যান্ডে আশ্রয় দাবি করেছেন এবং আনুমানিক ১০,০০০ আহমদিয়া জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চেয়েছেন।


  হিউম্যান রাইটস কমিশন অফ পাকিস্তান (এইচআরসিপি) এর মতো মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি অনুমান করেছে যে বার্ষিকভাবে এক হাজারেরও বেশি হিন্দু ও খ্রিস্টান যুবতী মেয়েদের তাদের পরিবার থেকে চুরি করা হয় এবং  ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়।  সম্প্রতি, শিখ মেয়ে জগজিৎ কৌর, হিন্দু মেয়ে রেণুকা কুমারী এবং খ্রিস্টান মেয়ে ফাইজা মুখতারকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং  কয়েক সপ্তাহের মধ্যে জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল।

“দক্ষিণ এশিয়ায় মানবাধিকার” শুনানির অংশ হিসাবে হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন সম্প্রতি এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয়, এবং অ-বিস্তার সম্পর্কিত মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির বিদেশ বিষয়ক উপকমিটি সম্পর্কিত লিখিত সাক্ষ্য জমা দিয়েছে।  এইচএএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমীর কালরা এবং  কার্যকারী নির্দেশক সুহাগ শুক্লার সহ-বিবৃতিটি ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পাকিস্তান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং সেই সাথে সদ্য নির্মিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করে । তার সাথে জম্মু ও কাশ্মীর এবং  লাদাখ যা সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের শিকার সে কথাও স্বীকার করে।
  কালরা বলেছেন “জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য মানবাধিকারের পরিস্থিতি পাকিস্তান ও বাংলাদেশে দ্রুত অবনতি অব্যাহত রেখেছে।  মার্কিন নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকারদের সাথে মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের সুরক্ষা এবং প্রচারের ক্ষেত্রে আরও সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকতে হবে, এবং এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলছে এমন আন্তঃসীমান্ত হস্তক্ষেপকে ধ্বংস করতে হবে। “


 “এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় মার্কিন সরকারেরও ভারত সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করা উচিত এবং জম্মু ও কাশ্মীরের সদ্য নির্মিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং লাদাখের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে ভারতকে সহায়তা দানের কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত।”

আন্তর্জাতিক  সমুদয়ের কাছে তাঁর সুপারিশে এইএএফ, মার্কিন প্রশাসনকে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর হামলা বন্ধ করতে, অতীতের সহিংসতার শিকারদের পুরোপুরি পুনর্বাসিত করতে এবং হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত ফিরিয়ে এনে তাদের বিচার নিশ্চিত করতে….. বাংলাদেশ সরকারের সাথে গঠনমূলকভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

 তাহলে  হিতপদেশ  কি বলে? উক্ত মানুষ গুলোর জন্য এই দেশকে অনুপ্রবেশকারী মুক্ত দরকার নেই? তারজন্যই কি CAB অনুমোদন হওয়া আবশ্যক নয়?

#দুর্গেশনন্দিনী


তথ্যঃ sundayguardianlive.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.