জেএনইউতে নিবন্ধন বয়কটের ডাক ব্যর্থ হওয়ার পরে বামেরা হিংস্রতার আশ্রয় দেয়; সাধারণ শিক্ষার্থী এবং এবিভিপি নেতারা নির্মমভাবে আক্রমণের শিকার হয়

জেএনইউ প্রশাসন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি অনলাইনে করার পরে বাম শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বর্জন করার আহ্বান জানায়। তারা সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করলে বাম শিক্ষার্থীরা আরও একবার জেএনইউতে সহিংসতার আশ্রয় নেয় । জেএনইউ থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বাম ইউনিয়নের গুন্ডারা ক্যাম্পাসে এবিভিপি সদস্যদের নির্মমভাবে আক্রমণ করা ছাড়াও রেজিস্ট্রেশন করতে আসা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপরও হামলা চালিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মণীশ জঙ্গির সহ বেশ কয়েকজন এবিভিপি ছাত্র নেতা
হামলায় আহত হয়েছেন।

জেএনইউতে বামপন্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে জোর করে তালাবন্ধ করে রেখেছিল এবং শিক্ষার্থীদের শেষ সেমিস্টার পরীক্ষা দিতে দিচ্ছিল না। কেউ সেমিস্টার পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা‚ এমনকি তাদের প্রফেসররাও বামেদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছিলেন। বামপন্থীরা বহিরাগত গুন্ডাদের নিয়ে জেএনইউ এর সার্ভার রুম দখল করে রাখে । গতকাল যেসব শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন নিতে চেয়েছিল‚ সেখানে যাওয়ার সময় বামেরা তাদের চলে যেতে বলে। যে শিক্ষার্থীরা এর বিরোধিতা করেছিল তাদের বামপন্থী ছাত্ররা অপমান করে। পরে সন্ধ্যাবেলায় বামপন্থী গুন্ডারা বিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের উপর হামলা চালায়।

জেএনইউ থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বামপন্থী গুন্ডারা কোনও উস্কানি ছাড়াই এবিভিপি কর্মীদের আক্রমণ করার জন্যে
হোস্টেলগুলিতে প্রবেশ করে । এটি ছিল
বহিরাগতদের গুন্ডাদের সাহায্যে একটি পরিকল্পিত আক্রমণ । বামপন্থী গুন্ডারা পেরিয়ার হোস্টেল থেকে পাহারাদারদের তাড়া করার পরে তারা সবরমতি হোস্টেলে আক্রমণ করে এবং পাথর ছুঁড়তে ও জানালাগুলি ভাঙতে শুরু করে। তখন হোস্টেলের ছাত্ররা তাদের তাড়া করার জন্য হকিস্টিক ইত্যাদি নিয়ে বেরিয়ে আসে। এগুলিই সেই ভিডিও এবং ছবি যা বামদের দ্বারা প্রচারিত হচ্ছে ‘এবিভিপি’ এর ছবি হিসাবে।

বামেরা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বন্ধ করে দেয়

৩ রা জানুয়ারী, বাম ইউনিয়ন সদস্যরা মুখোশ পরে সার্ভার রুমে প্রবেশ করে জেএনইউ এর ওয়াই-ফাই পরিষেবাগুলি বন্ধ করে দিয়েছিলো। প্রশাসন অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের অপশন দেওয়ার জন্যই তারা ওয়াই-ফাই পরিষেবা ব্যাহত করার পরিকল্পনা করে। ৪ জানুয়ারীর ভোরে জেএনইউ প্রশাসন জেএনইউতে ওয়াই-ফাই পুনরায় সক্রিয় করার চেষ্টা করে। যেইসময় নিরাপত্তা কর্মী এবং বামপন্থীরা ঝগড়া-বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলো ।
.
ওয়াই-ফাই ব্যাহত করার এই ব্যর্থ চেষ্টার পরে বামেরা আবার সদলবলে ফিরে আসে ও আক্রমণের পরিকল্পনা করে। বামপন্থীরা ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালায় ও তাদের দেওয়া বয়কটের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে আসা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আক্রমণ করে। অভ্যন্তরীণ বিবরণ জানাচ্ছে যে সন্ধ্যার মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও নিজেকে নিরাপদ রাখতে রাস্তায় নামে কারণ বামপন্থীরা সেই সমস্ত ছাত্রকে টার্গেট করতে শুরু করেছিল যারা নিজেরাই নিবন্ধন করেছে এবং তাদের ভয়ানক পরিণতির হুমকি দিয়েছিল।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে সর্বশেষ জেএনইউ সংঘর্ষগুলি বাম এবং এবিভিপি-র মধ্যে নয়, বরং যারা রেজিস্ট্রেশন করতে চাওয়া ছাত্রছাত্রীদের সাথে এবং যারা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বন্ধ করতে চাওয়া বামপন্থী দের মধ্যে ঘটেছিলো। বাম নেতৃত্বাধীন জেএনইউএসইউ রেজিস্ট্রেশন বর্জন করার আহ্বান জানালেও কয়েকশ ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ নিজেদের রেজিস্ট্রেশন করায় । এমনকি জেএনইউসিএস – জেএনইউ সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি পোস্টার গত সপ্তাহে জেএনইউতে প্রকাশিত হয় জেএনইউএসইউকে রেজিস্ট্রেশন করতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য। বামপন্থী সংগঠনের নেতৃত্বাধীন জেএনইউএসইউর দেওয়া এই জোরপূর্বক ‘বয়কট ‘ এর ডাকের ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজেদের অসহায় বোধ করতে শুরু করে।

এবিভিপি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে জেএনইউতে ইন্টারনেট কানেকশন লাল গুন্ডাদের একটি মুখঢাকা দলের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। এর ফলে জেএনইউ ক্যাম্পাসে লজ্জাজনকভাবে ওয়াই-ফাই ব্ল্যাকআউট হয়েছে। যখন এইসব উগ্রবাদীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে ধরা পড়ে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তখন তারা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে! এবিভিপির বিবৃতিতে বলা হয়েছে‚ বাম গুন্ডাদের দ্বারা ভাঙচুর, সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও এবিভিপি কর্মকর্তাদের উপর আক্রমণের ঘটনা অবশ্যই রেড করিডরের নকশালরা তাদের শক্ত ঘাঁটিগুলিতে যে অরাজকতা অনুসরণ করেছে তা আমাদের মনে করিয়ে দেয়। তারা আদিবাসী শিশুদের পড়াশোনা থেকে বিরত রাখার জন্য এ জাতীয় অঞ্চলে সরকারী বিদ্যালয়ে হামলা চালায়।
.
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পদক্ষেপ

জেএনইউ-র পরিস্থিতি নিয়ে জেএনইউর প্রাক্তন শিক্ষার্থী অর্থমন্ত্রী শ্রীমতি নির্মলা সীতারামন অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন । তিনি টুইট করে বলেছেন যে জেএনইউ তীব্র বিতর্ক ও মতামত আদানপ্রদানের জন্য পরিচিত কিন্তু এটি কখনও সহিংস আচরণ করেনি এবং তিনি সেদিনের সহিংস ঘটনার নিন্দা করেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘটনাগুলি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন এবং তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। জেএনইউ সহিংসতা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লির পুলিশ কমিশনারের সাথে কথা বলেছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তটি যুগ্ম সিপি পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্তৃক পরিচালিত হবে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.