সিডনি টেস্টে খেলছেন না রোহিত শর্মা। তবে শনিবার মাঠে নেমে পড়লেন তিনি। প্রথম ১ ঘণ্টা খেলার পর জলপানের বিরতিতে প্রথম বার মাঠে ঢোকেন রোহিত। পরে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে রোহিত মুখ খুললেন তাঁর ‘বিশ্রাম’ নিয়ে। জানিয়েছেন, দলের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে অধিনায়ক হিসাবে নিজেই সিডনিতে না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নিজের সিদ্ধান্তে সিডনি টেস্ট না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রোহিত। খেলার মাঝে সব বিতর্কে জল ঢেলে জানিয়ে দিলেন, অবসর নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই তাঁর। কারও কথায় অবসর নেবেনও না। সিডনিতে না খেলা নিয়ে রোহিত বলেছেন, ‘‘রান করতে পারছিলাম না। ব্যর্থ হলে তো মানতেই হবে। তাই দলের স্বার্থে না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘অবসর নিইনি। শুধু এই ম্যাচটা না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রান করতে পারছিলাম না। আমাদের অনেক ব্যাটারই ভাল ফর্মে নেই। ম্যাচে প্রভাব পড়ছিল। অধিনায়ক হিসাবে দলের কথাই আগে ভাবি। কী করলে দলের লাভ ভাবি। সেই ভাবনা থেকেই সরে দাঁড়িয়েছি। অধিনায়ক হিসাবে ভাবি না, তিন মাস বা ছ’মাস পর কী হবে। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিই। এটা দলগত খেলা। ব্যক্তিগত খেলা নয়। আমি নিজেই কোচ, নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কোথাও যাচ্ছি না। দলের সঙ্গেই আছি।’’
আপনার না-খেলা নিয়ে বিতর্ক কি সাজঘরে প্রভাব ফেলেছে? রোহিত বলেছেন, ‘‘প্রশ্নই নেই। দলের ছেলেরা সব ইস্পাত দিয়ে তৈরি। আমরা এ রকমই কঠিন মানসিকতার খেলোয়াড় চাই। দেখুন, সব কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। যেগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, সেগুলো নিয়ে ভাবিও না। এ সব নিয়ে সময় নষ্ট করার কোনও মানে হয় না। অনেক সময় ভিতরের কিছু জিনিস বাইরে চলে আসে। কী করা যাবে? আমরা শুধু জেতা নিয়ে ভাবি। আরও ভাল খেলার চেষ্টা করি। সেটাই আমাদের কাজ।’’
আপনি কি চতুর্থ টেস্টের পরই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? রোহিত বলেছেন, ‘‘না। সিডনিতে এসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুটো টেস্টের মধ্যে খুব বেশি সময় ছিল না। মাঝে নববর্ষও ছিল। তার মধ্যে এ সব নিয়ে কথা বলতে চাইনি। এখানে আসার পর কথা বলেছি। দেখুন, এই ম্যাচ খেলছি না মানে পরের টেস্ট খেলব না, তা নয়। এখন রান পাচ্ছি না। ব্যাটে-বলে হচ্ছে না। দুই বা পাঁচ মাস পরে রান করতেই পারি। এত দিন ধরে খেলছি। জানি কী করা উচিত। ক্রিকেটে এ রকম হতেই পারে। আবার একটা ইনিংসই ফর্ম ফিরিয়ে দিতে পারে। আসলে এই ম্যাচটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দলে এমন কাউকে দরকার ছিল, যে ফর্মে রয়েছে। এই অবস্থায় যে ফর্মে নেই, তাকে খেলিয়ে যাওয়ার মানে হয় না। কারণ আমরা এই ম্যাচটা জিততে চাই। এটা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। আর এটাই আমার মাথায় ঘুরছিল। সেটাই কোচ, নির্বাচকদের বলেছিলাম। ওঁরা আমার সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছেন।’’
বিশ্রাম নিয়ে রোহিতের বক্তব্য, ‘‘দেশ থেকে এত দূরে তো খেলার জন্যই এসেছি। বসে থাকার জন্য এত দূরে আসিনি। কিন্তু দলের স্বার্থ আগে রাখতেই হয়। এটা দলগত খেলা। ১১ জন নিলে খেলতে হয়। একা কেউ খেলতে পারে না। দেখুন কে কী লিখল বা বলল, তাতে আমাদের জীবন বদলায় না। এত দিন ধরে খেলছি। আমি অভিজ্ঞ। দুই সন্তানের বাবা। জানি কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়। চেষ্টা করেছি রান করার। পারিনি। তাই এই ম্যাচটা না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যথেষ্ট সংবেদনশীল আমি। কারও কথায় অবসর নেব না। কখন থামতে হয়, এটুকু বুঝি।’’
অধিনায়ক রোহিতকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে। তা নিয়ে রোহিতের বক্তব্য, ‘‘ছ’মাস আগে যে ভাবনা নিয়ে নেতৃত্ব দিতাম, এখনও সে ভাবেই দিই। সিদ্ধান্তগুলো কাজে লাগলে ভাল মনে হয়। কাজে না এলে, সমালোচনা হয়। তখন লোকে বলে, এ কী করছে! সব দিন এক রকম যায় না। দেখুন আমরা ভারতে থাকি। ১৪০ কোটি মানুষ আমাদের বিচার করেন। তাঁরা মতামত দিতেই পারেন। কিন্তু মাঠে নেমে আমাদের পারফর্ম করতে হয়। সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একই রকম মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামি সব সময়। অধিনায়ক হিসাবে দলে স্বার্থকে আগে রাখি। যেটা ভাবি, সেটাই বলি, সেটাই করি। অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করি।’’
নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে রোহিত বলেছেন, ‘‘দলের জন্য চিন্তা করে না, এমন ক্রিকেটার বা অধিনায়ক চাই না। অন্যদের কথা বলতে পারব না। এটা আমার ভাবনা। এ ভাবেই আমি ক্রিকেট খেলেছি। জীবনের ক্ষেত্রে যেমন, মাঠেও তেমন। আলাদা কিছু করতে চাই না। আমাকে আপনারা যেমন দেখেন, আমি তেমনই। কারও ভাল না লাগলে ক্ষমা করবেন। আমার যেটা সঠিক মনে হয়, সেটাই করি।’’ বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি নিয়ে রোহিতের বক্তব্য, ‘‘আমরা এখানে এসে আগে দু’বার সিরিজ় জিতেছি। আর কোন দলের এমন কৃতিত্ব আছে? এ বার আমাদের সিরিজ় জেতার সুযোগ না থাকলেও ড্র করতেই পারি। অস্ট্রেলিয়া যাতে সিরিজ় জিততে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে পারি। সেটাই এখন আমাদের লক্ষ্য।’’
রোহিতের অনুপস্থিতিতে পার্থে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জসপ্রীত বুমরাহ। সিডনিতেও দিচ্ছেন। সতীর্থের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন রোহিত। ভারতীয় দলের অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘বুমরাহ যথেষ্ট পরিণত ক্রিকেটার। খেলাটা খুব ভাল বোঝে। ভালই নেতৃত্ব দিচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘ভারতীয় দলের নেতৃত্ব চাপ তো বটেই। দু’কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে চলতে হয়। তবে তার থেকেও অনেক বড় সম্মান। আমার আগে বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা নেতৃত্ব দিয়েছে। এখন বুমরাহ দিচ্ছে। নেতৃত্বের দায়িত্ব এমনি পাওয়া যায় না। এটা অর্জন করতে হয়। বুমরাহ সেটা করেছে।’’
আগামী দিনে ভারতের টেস্ট দলের অধিনায়ক কে হতে পারেন? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি রোহিত। তিনি বলেছেন, ‘‘এ ভাবে কারও নাম বলা যায় না। আমাদের দলে এখন বেশ কয়েক জন তরুণ ক্রিকেটার রয়েছে। সকলেই ভাল খেলোয়াড়। তবে ওদের আরও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। ভারতের হয়ে খেলার গুরুত্ব আরও উপলব্ধি করতে হবে। নেতৃত্বের গুরুত্ব বুঝতে হবে। এটা অনেক বড় দায়িত্ব। সেটা সামলানোর মতো করে তুলতে হবে নিজেদের।’’