তৈরি হল না কেন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (চৈতন্যবাদী) অথবা ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (বিবেকানন্দবাদী)?

নামের মধ্যেই ধরা পড়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (খেয়াল করুন, কথাটা ভারতীয় নয়) ‘ভারতবোধ’ বা ভারতীয় সংস্কৃতি থেকে বহু দূরে। ‘ভারতের’ (of India) কথাটির অর্থ হল কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশানালের ভারতীয় সংস্করণ। কিন্তু যদি পরিবর্তে বলা হত ‘ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি’ তবুও তা ভারতবোধ-সঞ্জাত বলে মনে করাতে পারতো। পক্ষান্তরে দেখি জাতীয়তাবাদী দলগুলির নাম ‘ ভারতীয় জনতা পার্টি ‘, জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির নাম ‘ ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ’ , ‘ ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ ‘ — এই নামগুলির মধ্যে ভারতবোধ ফুটে ওঠে শব্দ চয়নের মধ্যে, ভারতীয়ত্বই তার মূল কথা। অথচ সিপিএম-এর ছাত্র/যুব সংগঠনের নাম ‘ ভারতের ছাত্র ফেডারেশন ‘, ‘ ভারতের যুব ফেডারেশন ‘।

‘ভারতের’ কথার মধ্যে বোধ জন্মে এই, বিদেশী ভাবনা জোর করে ভারতে প্রবেশ ও প্রক্ষেপ করে দেওয়া হচ্ছে । আর সেটা তো সত্যিই তাই। ভারতের সামাজিক ও আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলে কমিউনিজমের মতাদর্শ খাপ খায় না। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ‘ এক গাছের ডাল আর এক গাছে লাগে না‘ । তখন তাকে বলে Grafting বা জোড়-কলমের ভাষায় Incompatibility বা অসামঞ্জস্যতা । হাজার হাজার বছর ধরে পথচলা ভারতীয় ঐতিহ্যে কীভাবে অনুজ-প্রতিম বিদেশি সংস্কৃতি জোর করে গেঁড়ে বসবে? ভারতবর্ষ যখন সভ্যতা-সংস্কৃতিতে বহু দূর এগিয়ে ছিল, তখন ইউরোপীয় মানুষ নেহাতই অসভ্য বা অল্পসভ্য অবস্থায় দিনাতিপাত করছিলো। এটা ঐতিহাসিক সত্য। পশ্চিমবঙ্গ-বাসী দীর্ঘ সময় ধরে লক্ষ্য করেছে, বাহুবল, বন্দুকের নল, উগ্রবাদ তাদের উপর চেপে থাকায় বিদেশী কথা মানতে বাধ্য হয়েছে; মেনে নিয়েছে কিন্তু মনে নেয়নি । তাছাড়া ভারতে সাম্যবাদী ধারায় বহু সনাতনী হিন্দু মনীষী অগ্রণীর ভূমিকা নিয়েছেন, তারজন্যে মার্ক্স, এঙ্গেলসের তত্ত্ব ধার করতে হয় নি, তাকে বিদেশী কথার বস্তা আমদানি করতে হয় নি। কমিউনিস্টরা তাদের শত চেষ্টা করেও অস্বীকার করতে পারেন না শ্রীচৈতন্য এবং স্বামী বিবেকানন্দের মতাদর্শ ও সেবাকাজ যথার্থ সাম্যবাদের একটি পরিষ্কার পথ, যা ধর্ম ও ভারতীয় পারম্পর্য-আশ্রিত।
জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমী ভারতীয়রা যদি প্রশ্ন তোলেন, কেন নাম রাখা হল না ‘ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (চৈতন্যবাদী)’, কিংবা ‘ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (বিবেকানন্দবাদী)’ — তবে কী উত্তর দেবেন কমরেডরা? কেন স্বদেশী ঠাকুর থাকতে বিদেশীকে সিংহাসনে বসাবো? কেন একটা পার্টির চিন্তা-চেতনার হেডকোয়ার্টার ভারতে না হয়ে রাশিয়ায় বা চীনে হবে? অথবা কিউবা, ভেনেজুয়েলা, ভিয়েতনামের শরণাপন্ন হবে? তাদের কী এমন হাজার বছরের ঐতিহ্য ও বিশ্বাসযোগ্যতা? এখনও সময় আছে, কমরেডরা বরং বাবা-রে, মা-রে বলে বিবেকানন্দবাদী সিপিএম দল গঠন করুক। কারণ ‘ আপনি বাঁচলে বাপের নাম, তারপর ভিয়েতনাম।’

কচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.