কোভিডের প্রকোপ যে রাজ্যগুলিতে বেশী যেমন মহারাস্ট্র, দিল্লী ইত্যাদি সেই রাজ্যগুলোতে নির্বাচন ছিল না – তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার জন্য একমাত্র ইলেকশন কমিশনই দায়ী এটা বলা যায় না

মহামাণ্য মাদ্রাজ হাইকোর্ট যে ধরণের বেনজির কঠোর ভাষায় নির্বাচন কমিশনকে সমালোচনা করেছেন তার সাথে সহমত হতে পারছি না। 6ই এপ্রিলে চার জায়গার ভোট সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ভোট চলছে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে। কোভিডের প্রকোপ যে রাজ্যগুলিতে বেশী যেমন মহারাস্ট্র, দিল্লী ইত্যাদি সেই রাজ্যগুলোতে নির্বাচন ছিল না। তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার জন্য একমাত্র ইলেকশন কমিশনই দায়ী এটা বলা যায় না।

তবে নির্বাচন কমিশনকে পুরোপুরি নির্দোষ এমনটাও বলছি না। বস্তুত এই মারাত্মক করোনাকালে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া যেভাবে একমাসের বেশী সময় ধরে চালানো হল তা একেবারেই বাস্তব সম্মত ও কান্ডজ্ঞান সম্মত নয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যে আসতে পারে এটা কমিশন সম্ভবতঃ হিসেবের মধ্যেই রাখে নি। 6ই এপ্রিলের পর দেশের আর কোন রাজ্যে নির্বাচন ছিল না। তা সত্ত্বেও কেন অন্য রাজ্য থেকে অতিরিক্ত বাহিনী এনে পশ্চিমবঙ্গের ভোট পরবর্তী দশ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ করা হল না- এই প্রশ্ন বারংবার উঠতে থাকবে। চতুর্থ ও পঞ্চম দফার মাঝে সাত দিনের ব্যবধান এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ দফার মাঝে পাঁচ দিনের ব্যবধান রাখা যথেষ্ট আশ্চর্যজনক লেগেছে আমার। দুটি পাশাপাশি জেলার মধ্যে বাহিনীর চলাচল করতে সাত দিন সময় লাগে ? এই ধরণের কান্ডজ্ঞানহীন নীতির জন্যই নির্বাচন প্রক্রিয়া এতটা দীর্ঘায়িত হয়েছে।

করোনা যেভাবে বাড়ছে তাতে অন্তত দুই মাস ধরে পাঁচটি রাজ্যে কোন নির্বাচিত সরকার না থাকা অত্যন্ত বিপজনক বিষয়। রাজ্যে নির্বাচিত সরকার না থাকলে শাসনের ভার থাকে প্রশাসনিক অফিসারদের উপরে। কিন্তু সমস্যা হল পরিস্থিতি অনুযায়ী চটজলদি গুরুত্বপূর্ণ নীতি গ্রহণ মন্ত্রীদের কাজ। অফিসাররা মন্ত্রীসভার নীতিগুলি কার্যকর করতে পারেন। কিন্তু নীতি গ্রহণ করা অফিসারদের কাজ নয়। যার যেটা কাজ নয় তাকে দিয়ে যদি সেই কাজটি করানো হয় তবে ব্যর্থতা অবশম্ভাবী। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে সেটাই দেখা যাচ্ছে। নতুন সরকার গঠিত হতে হতে মে মাসের পাঁচ তারিখ হবেই। ততদিন রাজ্যের মানুষকে এই ভয়ংকর সংকটকালে কার্যত অভিভাবকহীন ভাবে থাকতে হবে- এটা খুবই আতঙ্কজনক।

এর সাথে মনে রাখতে হবে এই রাজ্যে এখনো এক দফা নির্বাচন বাকি। যখন খুব জরুরী কাজেও বাইরে বেরোন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে তখন নির্বাচনের মতো একটা কর্মকান্ড চালানো যে কতটা বিপদজনক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সংশ্লিষ্ট বিধানসভাগুলির প্রতিটি ভোটার, ভোটকর্মী ও রাজনৈতিক কর্মীদৈর আরো একবার এক ভয়ংকর বিপদজনক পথ পার করতে হবে। এর পরেও ভোট গণনা ও ভোটের ফল প্রকাশের পরে বিজয় উৎসবও বাকি আছে।
এই করোনকালে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অহেতুক অতি দীর্ঘায়িত করাটা যে একটা মারাত্মক ভুল হয়েছে এটা এখন দিনের আলোর মতোই পরিস্কার। শেষ দুটি দফাতে অনেক ভোটার হয়তো ভোটদান করতে যেতে সাহস করতে নাও পারেন। এর ফলেও স্বচ্ছ নির্বাচন খানিকটা হলেও ব্যবহত হতে পারে।

বামাখ্যাপা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.