পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী হিংসা বিষয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের মাননীয় সরকার্যবাহ শ্রী দত্তাত্রেয় হোসাবালেজীর বক্তব্য :
০৭/০৫/২০২১।
গণতন্ত্রে নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। এই পরম্পরা অনুসারে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাঙালী সমাজ ব্যাপকভাবে এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিরোধী পক্ষের অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলে, তার মধ্যে কখনো বা আবেগের বশে সীমা অতিক্রম করে ফেলাটা খুবই স্বাভাবিক। তবে আমাদের সর্বদা মনে রাখা উচিত যে সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলি আমাদের দেশেরই দল এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়া সমস্ত প্রার্থী, তাদের সমর্থক, ভোটাররা এই দেশেরই নাগরিক।
তবে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরপরই রাজ্যে যেভাবে ব্যাপক হিংসা প্রকাশ পেয়েছে , তা তীব্র নিন্দনীয় তো বটেই, এটি ষড়যন্ত্রমূলক বলেও মনে হচ্ছে।
সমাজবিরোধী এই গুন্ডারা বর্বর ও ঘৃণ্য উপায়ে মহিলাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছে, নির্দোষ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, নির্লজ্জভাবে দোকান ও বাজার লুট করেছে। এই নিরবচ্ছিন্ন উৎপীড়নের ফলস্বরূপ হাজার হাজার তপসিলি জাতি ও উপজাতির ভাইসহ বহু সাধারণ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। জীবন ও সম্মান বাঁচাতে তারা নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে বাধ্য হয়েছেন । কোচবিহার থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত সর্বত্রই সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ভীতি এবং আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ এই ভয়ানক হিংসার কঠোর নিন্দা করছে। আমাদের বিবেচিত মতামত এই যে নির্বাচন পরবর্তী এই হিংসা সহাবস্থান এবং সর্বমত-শ্রদ্ধার ভারতীয় ঐতিহ্যের পরম্পরার পরিপন্থী,পাশাপাশি এই হিংসা গণতান্ত্রিক চেতনার এবং সংবিধানের সম্পূর্ণ বিরোধী।
রাজ্য প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন, এই নিরবচ্ছিন্ন ও অমানবিক সহিংসতার সবচেয়ে জঘন্যতম অংশ। দাঙ্গাবাজরা যেমন কোনও কিছুরই তোয়াক্কা করছে না,তেমনি রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
ক্ষমতাসীন প্রশাসনের সর্বপ্রথম দায়িত্ব, যে কেউ বা যে কোনও পক্ষই ক্ষমতায় থাকুক না কেন আইন-শৃঙ্খলা বজায় রেখে সমাজে শান্তি ও সুরক্ষা প্রতিষ্ঠা করা, সমাজবিরোধীদের মনে আইনের প্রতি ভয় জাগানো এবং সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া । নির্বাচনী বিজয় রাজনৈতিক দলগুলির হলেও, নির্বাচিত সরকার সমগ্র সমাজের কাছে দায়বদ্ধ।
আমরা পশ্চিমবঙ্গের নবনির্বাচিত সরকারকে দাবি জানাচ্ছি , অবিলম্বে হিংসা বন্ধ করে কার্যকরভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হোক, আর দেরি না করে এই অসামাজিক তত্ত্বকে গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক যাতে সাধারণ নাগরিকের মধ্যে সুরক্ষা ও আত্মবিশ্বাসের অনুভূতি জাগিয়ে তোলা যায়। রাজ্যসরকারের উচিত ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমাদির আবেদন যাতে এই রাজনৈতিক হিংসা শেষ করতে প্রয়োজনীয় এবং সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় এবং যাতে রাজ্য সরকার উপরোক্ত দিকগুলিতে কাজ করে তা নিশ্চিত করা হয়।
আরএসএস সমস্ত বুদ্ধিজীবী, সামাজিক-ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে আহ্বান করছে, সঙ্কটের এই সময়ে এই হিংসার তীব্র নিন্দা করে সমাজের অত্যাচারিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সদর্থক ভূমিকা পালন করুন এবং রাজ্যে শান্তি, সদিচ্ছা ও সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করুন।