বাঙলার প্রথম সার্বভৌম সম্রাট শশাঙ্ক : মুখ ঢাকে লজ্জায়

পরানুবাদ ও পরানুকরণের দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এখনকার বাঙ্গলার ইতিহাস চর্চা। তাই যাদের কীর্তিতে বাঙ্গলার বিজয় পতাকা আকাশ ছুঁয়েছিল, তাঁরা আজ উপেক্ষিত। সম্রাট শশাঙ্ক বাঙ্গলার ইতিহাসের তেমনই এক স্বল্প চর্চিত ব্যাক্তিত্ব, যার অপরাজেয় পরাক্রম ও কৃতিত্বে আমাদের বঙ্গভূমি প্রাচীন ভারতের রাজনীতিতে তার স্বতন্ত্র উজ্জ্বল স্থান অধিকার করেছিল।

খৃষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে সূচনা হয়েছিল গুপ্তযুগের। সনাতন সংষ্কৃতির আদর্শে প্রতিষ্ঠিত, সমগ্র ভারতব্যাপী বিস্তৃত পরবর্তী তিন শতাব্দীর যাত্রায় ভারতবর্ষ জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প-কলা-সাহিত্য-বাণিজ্য-বৈভবের সমস্ত ক্ষেত্রে উত্তুঙ্গ শিখর স্পর্শ করেছিল। সেই কালখন্ড পরিচিত হয়ে আছে ভারতবর্ষের স্বর্ণযুগ নামে। ষষ্ঠ শতকের শেষভাগে সেই গুপ্ত সাম্রাজ্যের সূর্য যখন অস্তাচলে ঢলে পড়ছে, এমন পটভূমিতে শশাঙ্কের উত্থান। তাঁর গড়ে তোলা গৌড় রাজ্যের মাধ্যমে ভারতের রাজনীতিতে এক স্বতন্ত্র সার্বভৌম শক্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল সংহত বাঙ্গলা।

শশাঙ্কের জন্ম কোনো উল্লেখযোগ্য রাজপরিবারে নয়। রাজত্বও তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পাননি। ফলে তাঁর জন্ম, বংশপরিচয় বা বাল্যকাল সম্পর্কে কিছু জানা যায়না। রোহতাসগড়ের শিলালিপি থেকে জানা যায় তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় একজন সামন্ত হিসেবে। গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর বঙ্গভূমি তখন বিচ্ছিন্ন, বহু ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত। উত্তরাংশে পুন্ড্রবর্ধন, উত্তর পূর্বাংশে হরিকেল, মধ্যবঙ্গে গৌড়, সমতট ও রাঢ়, পূর্বাংশে বারেন্দ্রভূমি, দক্ষিণাংশে চন্দ্রদ্বীপ ও সুম্মদেশ, দক্ষিণ পশ্চিমাংশ ও বর্তমান ওড়িশা নিয়ে গঠিত দন্ডভুক্তি– এই রকম খন্ড ছিন্ন রাজ্যগুলিকে এক ছত্রতলে সংহত করে, ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষে শশাঙ্ক গড়ে তুললেন অখণ্ড গৌড়রাজ্য। রাজধানী স্থাপন করলেন বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণে।

গৌড়রাজ্যকে সুবিন্যস্ত করে, শশাঙ্ক মন দিলেন রাজ্যবিস্তারে।তাঁর প্রথম অভিযান ছিল পার্শ্ববর্তী কামরূপ রাজ্যে, যা এখনকার আসাম ও পূর্বোত্তর ভারত। কামরূপ রাজকে পরাজিত করে নিজের রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করলেন।

ভারত বিস্তৃত গুপ্ত সাম্রাজ্যের অবসানের পর গৌড়ের সাথে সাথেই ভারতের বিভিন্ন অংশে মাথা তুলেছিল অন্য আঞ্চলিক শক্তিরা। বর্তমান হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র অঞ্চলের থানেশ্বরকে কেন্দ্র করে পুষ্যভূতি বংশ,  অধুনা উত্তর প্রদেশের কনৌজকে কেন্দ্র করে মৌখরি বংশ, এখনকার  মধ্যপ্রদেশের মালব অঞ্চল প্রভৃতি ছিল সেই সময়কার উত্তর ভারতের প্রধান শক্তি। শশাঙ্ক নিজের পরাক্রম ও প্রচেষ্টায় আর্যাবর্তের নিয়ন্ত্রণকারী শক্তিগুলির মধ্যে গৌড়কেও যুক্ত করলেন।থানেশ্বর আর কনৌজ তখন বিবাহসুত্রে আবদ্ধ। এই যৌথশক্তির প্রতিপত্তিকে খর্ব করে তাদের বিস্তারে রাশ টানতে শশাঙ্ক কূটনৈতিক মৈত্রীতে কাছে টানলেন মালবকে। তারপর আক্রমণ করলেন কনৌজ রাজ্য। একে একে দখল করলেন বারাণসী, কনৌজ সহ সম্পূর্ণ রাজ্য। স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধে অবতীর্ণ হল থানেশ্বর। থানেশ্বরের রাজা রাজ্যবর্ধন নিহত হলেন শশাঙ্কের হাতে। ভারতীয় রাজনীতিতে পরাক্রমশালী শক্তিরুপে উত্থান হল গৌড়ের।

ওদিকে রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর পর থানেশ্বরের সিংহাসনে অভিষিক্ত হলেন হর্ষবর্ধন। সপ্তম শতকের প্রথমভাগের ভারতের ইতিহাস তাই শশাঙ্ক-হর্ষবর্ধনের আধিপত্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর গৌড়-থানেশ্বরের বৈরিতায় পরিপূর্ণ।

শশাঙ্কের রাজত্বকালে হর্ষবর্ধন কর্তৃক বারংবার আক্রান্ত হয়েছে গৌড়। কিন্তু প্রবল পরাক্রমে শশাঙ্ক প্রতিহত করেছন প্রত্যেক আক্রমণকে। শশাঙ্কের জীবদ্দশায় হর্ষের গৌড়বিজয়ের অভিলাষ অপূর্ণই থেকে গেছে, আর আজীবন অপরাজিত থেকে গেছেন শশাঙ্ক।

আর্যাবর্ত ও উত্তরাপথে থানেশ্বর ও মৌখরিদের প্রতিপত্তি খর্ব করার সঙ্গে গৌড়রাজ্যের কল্যাণ এবং ধর্মের সংরক্ষণেও সমান তৎপর ছিলেন শশাঙ্ক।  তাঁর সময়কার তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে ধর্মাচরণের পীঠস্থানগুলি থেকে শাকদ্বীপী, কান্যকুব্জীয় ব্রাহ্মণকুলকে নিজ রাজ্যে সসম্মানে নিয়ে এসে তাদের নিষ্কর ভূমি দান করে বসবাসের ব্যবস্থা করেন।

সম্রাট শশাঙ্কের রাজ্যভুক্ত ছিল অধুনা ওড়িশা রাজ্যও। সেখানকার বর্তমান রাজধানী ক্ষেত্র ভুবনেশ্বর তখন পরিচিত ছিল একাম্র ক্ষেত্র নামে। পরম শিবভক্ত শশাঙ্ক সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন সুবিশাল শিবালয়– লিঙ্গরাজ মন্দির। অবশ্য লিঙ্গরাজ মন্দিরের যে স্থাপত্য আজ আমরা দেখি, তা শশাঙ্ক নির্মিত সেই মূল মন্দিরের সংস্কারিত ও পরিবর্ধিত রূপ, যার নির্মাণকাল দ্বাদশ শতক। শশাঙ্কের রাজধানী সংলগ্ন মুর্শিদাবাদ জেলায় তাঁর লিঙ্গরাজ মন্দিরের স্থাপনের তিথি মাঘমাসের শুক্লা সপ্তমীতে আজও মানুষ মহাসমারোহে শিবগৌরীর পুজা এবং মাকরী সপ্তমী উৎসব উদযাপন করেন। একাম্র পুরাণ নামক গৌণ পুরাণেও এই ঘটনার উল্লেখ মেলে। শশাঙ্কের রাজধানী ক্ষেত্র গৌড় অর্থাৎ এখনকার  মালদহ-মুর্শিদাবাদ অঞ্চলের আমের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তাই একাম্র ক্ষেত্রে তাঁর মন্দির প্রতিষ্ঠাকে নিছক কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত হবে, তা ভাবনার বিষয়, বরং এই যোগাযোগ নিয়ে বিশদ ঐতিহাসিক গবেষণা অনেক নতুন তথ্য উন্মোচিত করতে পারে।

সম্রাট শশাঙ্কের আরেক অক্ষয় কীর্তি, যা আজও বিদ্যমান, সেটি হল তাঁর রাজত্বভুক্ত বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুরের দাতন এলাকার জামুয়াপতি গ্রামের সুবিশাল শরশঙ্ক দীঘি। জনশ্রুতি আছে, শশাঙ্ক তাঁর মায়ের আদেশে এখানকার মানুষের জলকষ্ট দূর করতে উদ্যোগী হয়ে মনস্থ করেন যে, তাঁর ধনুক থেকে নিক্ষিপ্ত তীর যে দূরত্ব অতিক্রম করবে, সেই দৈর্ঘ্যের জলাশয় খনন করা হবে। শশাঙ্ক নির্মিত, ৫০০০ ফুট দীর্ঘ, ১৫০ একরে বিস্তৃত, আশিটি ফুটবল মাঠের সমান এই দীঘি এযাবৎকালের পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম দীঘির শিরোপা নিয়ে সগৌরবে তাঁর নামের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

গৌরব ও গরিমার নিরিখে মহারাজা শশাঙ্কের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কীর্তিস্তম্ভ হল বঙ্গাব্দের প্রচলন। শশাঙ্কের রাজ্যাভিষেক ঘটেছিল ৫৯২ বা ৫৯৩ খৃষ্টাব্দে। গুপ্তযুগ তথা তাঁর পূর্ববর্তী সম্রাটগণ নিজেদের রাজ্যাভিষেক বা বিশেষ কীর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে বর্ষপঞ্জী প্রবর্তন করতেন। সেই রীতিতেই, ভারতের কালগণনার সুপ্রাচীন সুর্যসিদ্ধান্ত পদ্ধতি অনুযায়ী, শশাঙ্কের সিংহাসনারোহণের সময় থেকে সূচনা হয়েছিল, সৌরবর্ষ ভিত্তিক এক নতুন বর্ষপঞ্জী, যা এখন প্রচলিত বঙ্গাব্দ নামে।

সমরাঙ্গণে শশাঙ্ককে পরাজিত করার হর্ষবর্ধনের দীর্ঘলালিত বাসনা আজীবন অপূর্ণ থেকে গিয়েছিল বটে, কিন্তু প্রচার ও ভাবমুর্তি নির্মাণের যুদ্ধে শেষ হাসিটা হেসেছিলেন হর্ষই। শশাঙ্ক সম্পর্কে যা তথ্যাবলী পাওয়া যায়, সেগুলির অধিকাংশের উৎস হল হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট রচিত প্রসিদ্ধ ‘হর্ষচরিত’, বুদ্ধগ্রন্থ ‘আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প’ এবং বৌদ্ধ চৈনিক পর্যটক হিউ-য়েন-সাঙ এর ‘সি-ইউ-কি’ গ্রন্থ। বাণভট্টের হর্ষচরিত হর্ষের চিরশত্রু শশাঙ্কের জন্য ব্যবহার করেছেন গৌড়ভুজঙ্গ, গৌড়াধম ইত্যাদি বাছা বাছা বিশেষণ। বৌদ্ধমতাবলম্বীদের বর্ণনাতেও শৈব উপাসক শশাঙ্ক বৌদ্ধবিদ্বেষের অতিরঞ্জনে কলঙ্কিত হতে থেকেছেন।কিন্তু, ঐতিহাসিকদের বিশ্লেষণে শশাঙ্কের বৌদ্ধবিদ্বেষের কোন তথ্য প্রমাণিত হয়নি।বরং এই কলঙ্ক প্রচারের বিপ্রতীপে হিউ-য়েন-সাঙ এর বর্ণনা থেকেই জানা যায় যে, শশাঙ্কের রাজত্বকালে গৌড় কৃষি, শিল্প, বানিজ্য, জ্ঞান-চর্চা সব ক্ষেত্রেই উন্নত ছিল। তাঁর রাজধানী কর্ণসুবর্ণ নগরী পূর্ব ভারতের সমৃদ্ধির পীঠস্থাণ হয়ে উঠেছিল। এই রাজধানী ক্ষেত্রের মধ্যেই অবস্থান ছিল সম্মতীয় বৌদ্ধধারার দশটি মঠের সমন্বয়ে বিকশিত রক্তমৃত্তিকা মহাবিহারের। সেই পরিসরে বৌদ্ধমঠের সঙ্গেই ছিল পঞ্চাশের অধিক হিন্দু মন্দির। উপরন্তু শশাঙ্কের শাসনকালে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভূত উন্নতির বর্ণনাও তাঁর পরমত সহিষ্ণুতার প্রমাণকেই জোরালো করে। শশাঙ্ক অর্থাৎ চন্দ্র, কলঙ্ক যার সহগামী; তাতে চন্দ্রের শুভ্র জ্যোৎস্না বিকিরণ বাধিত হয়না। হর্ষ অনুগামীদের আরোপিত কলঙ্কচিহ্ণ নিয়েও সম্রাট শশাঙ্ক তাঁর কীর্তির রাজপ্রভায় উজ্জ্বল থাকবেন।

আনুমানিক ৫৩৭-৫৩৮ খৃষ্টাব্দে কোনো এক সংক্রমণে শশাঙ্কের মৃত্যু হয়।তাঁর মৃত্যুর পরে গৌড়রাজ্য হর্ষবর্ধনের মিত্র কামরূপ রাজ ভাস্করবর্মার হস্তগত হয়। শশাঙ্কের মৃত্যুপরবর্তী শতাধিক বর্ষ বঙ্গভূমি শাসনহীনতা ও অরাজকতায় নিমজ্জিত হয়। এই কালখণ্ড বাঙ্গলার মাৎস্যান্যায় যুগ বলে পরিচিত।

পূর্বরেলের হাওড়া বিভাগের কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখার একটি ক্ষুদ্র রেলস্টেশন ছাড়া বর্তমান বাঙ্গলায় কর্ণসুবর্ণের নাম আর কোথাও অবশিষ্ট নেই। সেই স্টেশন থেকে ৩ কি.মি দূরত্বে অবস্থিত রাজবাড়ীডাঙ্গা। সেই স্থান, যেখান থেকে ১৪০০ বছরেরও আগে শশাঙ্কের সাথে শুরু হয়েছিল বাঙ্গলার বিজয়যাত্রা। ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে বাঙ্গলা তার গৌরবের আসন অধিকার করেছিল। দীর্ঘদিন কবরস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হবার পর ১৯৬০ এর দশকে উৎখননে এখানে প্রাসাদের অবশেষ পাওয়া যায়। অদূরে অবস্থিত রক্তমৃত্তিকা মহাবিহারের ধ্বংসস্তুপ যা এখন পরিচিত রাক্ষসীডাঙ্গা নামে। বাঙ্গালীর পরাক্রম ও শৌর্যের স্মারকস্থল চরম অবহেলা আর ঔদাসীন্যে পড়ে রয়েছে। প্রহরাবিহীন প্রত্নস্থলে সাধারণের অবাধ বিচরণ, গরু-ছাগলের চারণভূমি। সহস্রাব্দী প্রাচীন ইঁট ও প্রত্নসামগ্রী যথেচ্ছ চুরি হচ্ছে। প্রত্নস্থলের আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বৌদ্ধবিহারের অদূরে নির্মীয়মাণ বিশাল মসজিদ। পরিসরের ভিতরেই রয়েছে মাজার, তারপাশে এখন গড়ে উঠছে ঈদগাহ।

বাঙ্গলার প্রথম স্বতন্ত্র, সার্বভৌম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা, অপরাজিত সেনানায়ক, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে জোট রাজনীতির পথিকৃৎ, বঙ্গাব্দের প্রণেতা, ধর্ম সংরক্ষক, পরমত সহিষ্ণু সম্রাট শশাঙ্ক; গৌরবের নিরিখে তাঁর স্থান বাঙ্গলার ইতিহাসের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রদের মাঝে। কিন্তু আত্মবিস্মৃত বাঙ্গালী  সযত্নে তাঁকে বিস্মরণের অন্ধকূপে ঠেলে দিয়েছে।  

‘তর্কপ্রিয় বাঙ্গালী’ বঙ্গাব্দের প্রচলনের কৃতিত্বটুকুও অক্লেশে কেড়ে নেয় শশাঙ্কের কীর্তি থেকে। বাঙ্গালী নিজের সেকুলার চরিত্র প্রমাণ করতে কল্পিত, দুর্বল যুক্তি সাজিয়ে আকবরকে যুক্ত করেছে বঙ্গাব্দের প্রসঙ্গে।

তাই সিরাজ, তিতুমীররা ক্যানিং, কার্জন আর লেনিন, মার্ক্সদের সঙ্গে ভাগ করে নেয় বাঙ্গলার পথ, উদ্যান, স্থান বা রেলস্টেশনের নামগৌরব। তাই শশাঙ্কের চিরবৈরী হর্ষবর্ধনের নামাঙ্কিত বিশাল যাত্রীবাহী জলযান এম.ভি হর্ষবর্ধণ বাঙ্গলার জলসীমা থেকে প্রত্যেকবার আন্দমান যাত্রার সময় নীরব ঔদ্ধত্যে বিদ্রুপ করে বাঙ্গলার প্রথম সম্রাটকে। তাই সাম্যবাদী বিপ্লবী বাঙ্গালী যুবকের পোষাকে বা শরীরের ট্যাটুতে উদ্ভাসিত হয় ধূমপানরত গুয়েভারার মুখ, বাঙ্গালীর কাছে ব্রাত্য শশাঙ্ক মুখ লুকায় স্বজাতির লজ্জায়।

স্বদেশ ও স্বজাতির গৌরবকে উজাগর করতে ব্রতী হয়েছিলেন যে সব ঐতিহাসিক, সেই রমেশচন্দ্র মজুমদার, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, যদুনাথ সরকারদের মত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বগণ আজ অপাংক্তেয় হয়ে থাকেন প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের কাছে। অথচ যার প্রণীত ইতিহাস গ্রন্থ Early India তে সম্পূর্ণ বিস্মৃত ও উপেক্ষিত থাকেন বাঙ্গলার সম্রাট, সেই রোমিলা থাপারকে ইতিহাস চর্চার দেবীর আসনে বসানো হয় সাড়ম্বরে।

শশাঙ্ক পরবর্তী রাজনৈতিক মাৎস্যান্যায় যুগের অবসান ঘটেছিল অচিরেই। বাঙ্গলার রাজনৈতিক প্রবাহ আবার এগিয়েছিল তার নির্দিষ্ট গতিপথে। কিন্তু আত্মবিস্মৃত বাঙ্গালীর বৌদ্ধিক স্তরের এই জঘন্য পরানুকরণ আর তার ফলে ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে যে মাৎস্যন্যায় আরও গভীর হয়ে চলেছে, তার অবসান হবে কবে?

তথ্যঋণ :–

বাংলা বই

  1. রমেশচন্দ্র মজুমদার; বাংলা দেশের ইতিহাস; জেনারেল প্রিণ্টার্স য়্যাণ্ড পাব্লিশার্স লিমিটেড : কলকাতা; ১৯৪৪ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ)।
  2. নীহাররঞ্জন রায়; বাঙ্গালীর ইতিহাস : আদিপর্ব; দে’জ পাবলিশিং : কলকাতা; ২১০৩ (১৪২০ বঙ্গাব্দ)।
  3. রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়; বাঙ্গালার ইতিহাস; শ্রীহরিদাস চট্টোপাধ্যায়, মেসার্স গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স : কলকাতা; ১৯২৩ (১৩৩০ বঙ্গাব্দ)।
  4. নগেন্দ্রনাথ বসু সিদ্ধান্তবারিধি; বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস (কায়স্থ কাণ্ড); বিশ্বনাথ বসু : কলকাতা; ১৯৩৩ (১৩৪০ বঙ্গাব্দ)।
  5. দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায়; ভারত-ইতিহাসের সন্ধানে আদি পর্ব; সাহিত্যালোক : কলকাতা; ২০০০।
  6. রমাপ্রসাদ চন্দ; গৌড়রাজমালা; অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় (সম্পাদক); বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি : রাজশাহী; ১৯১২ (১৩১৯ বঙ্গাব্দ)।
  7. দীনেশচন্দ্র সেন; বৃহৎবঙ্গ; কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় : কলকাতা; ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪১ বঙ্গাব্দ)।
  8. সুধীর রঞ্জন দাশ; কর্ণসুবর্ণ মহানগরী : বঙ্গদেশের বিস্মৃত রাজধানী; পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ : কলকাতা; ১৯৯২।
  9. রাধারমণ রায়; রাজা শশাঙ্ক ও অন্যান্য; ভবিষ্যৎ : কলকাতা; ২০১১।
  10. দেবার্চনা সরকার; নিত্যকালের তুই পুরাতন (নির্বাচিত সংস্কৃত অভিলেখমালা); পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ : কলকাতা; ২০১৩।

Books in English

  1. Sudhir Ranjan Das; Rajbadidanga: 1962 (Chiruti : Jadupur): An Interim Report on Excavations at Rajbadidanga and Terracotta Seals and Sealings; The Asiatic Society : 2003; ISBN  978-81-7236143-3
  2. Ramesh Chandra Majumdar; History of Bengal; University of Dacca : Dhaka; 1943.
  3. Kulke Hermann & Rothermund Dietmar; A History of India; Routledge : London; 2004 (4th ed.).
  4. Radhagovinda Basak; The History of North-Eastern India Extending from the Foundation of the Gupta Empire to the Rise of the Pala Dynasty of Bengal (c. A.D. 320-760); K. Paul, Trench, Trubner & Company Limited; 1934.
  5. Bindeshwari Prasad Sinha; Dynastic History of Magadha; Abhinav Publications : New Delhi; 1977.
  6. Sailendra Nath Sen; Ancient Indian History and Civilization; New Age International : New Delhi; 1999 (2nd ed.).
  7. Dinesh Chandra Sircar; Studies in the Geography of Ancient and Medieval India; Motilal Banarsidass : New Delhi; 1971.

Web resource, Magazines and Newspapers

  1. ড. তমাল দাশগুপ্ত; ‘বাঙ্গালীর সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক ইতিহাস’; সপ্তডিঙা retrieved from https://shoptodina.wordpress.com/2018/11/06/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%99%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%93-%e0%a6%ac%e0%a7%8c%e0%a6%a6-19/ on 26 August 2020
  2. Sweta Mishra; ‘The King Who Brought Shaivism To Odisha’; (31 July 2018); retrieved from https://odishabytes.com/king-brought-shaivism-odisha/ on 26 August 2020.
  3. গুপ্ত যুগের স্থাপত্যের ইট চুরি রাক্ষসীডাঙায়’ প্রতিবেদক– শুভাশিস সৈয়দ; আনন্দবাজার পত্রিকা; ২২ ডিসেম্বর ২০১১।  retrieved from http://archives.anandabazar.com/archive/1111222/22mur3.html on 26 August 2020
  4. রূপায়ণ ভট্টাচার্য; ‘বাংলার বৃহত্তম দীঘির গল্প’; এই সময়; ৮ আগস্ট ২০১৫। retrieved from https://blogs.eisamay.indiatimes.com/rupayanbhattacharya/a-story-about-bengal-s-largest-lake/ on 26 August 2020.

Atanu Nandan Maity; “A Note on Sarasanka Dighi” retrieved from http://www.chitrolekha.com/V4/n1/07_Sarasanka_Dantan_Medinipur.pdf on 26 August 2020.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.