বর্ধমান জেলার সাঁই পরিবারকে দিনের আলোয় পৈশাচিক ভাবে হত্যা করে, তাদের অপরাধ, তারা কংগ্রেস ছেড়ে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করতে চায়নি। এই ঘটনাটি সাঁইবাড়ি হত্যাকান্ড নামে খ্যাত।সদ্য প্রয়াত নিরুপম সেন, বিনয় কোঙার, অমল হালদার ও অনিল বোসের মত কিছু সিপিআইএম নেতার নাম এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা কোনদিন সাজা পায়নি। এদের ছাড়াও এই ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত অন্যান্য অভিযুক্তরা হলো সুবোধ চৌধুরী, সুশীল ভট্টাচার্য, রামনারায়ণ গোস্বামী, আব্দুল রাশিদ, অশ্বিনী হাজরা ইত্যাদি।এই নামগুলি বাদ দিয়ে এক খোকন সেনের নাম পুলিশের চার্জশিটে উঠে আসে, ইনি আর কেউ নন স্বয়ং নিরুপম সেন, এই পৈশাচিক হত্যাকান্ডের অন্যতম প্রধান কারিগর যিনি তার “বিনয়ী” স্বভাবের জন্য সকলের প্রিয় ছিলেন।
১৯৬৯ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারী বাংলা কংগ্রেসের নেতা অজয় মুখোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রীত্বে যুক্তফ্রন্ট
সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পশ্চিমবাংলায় সিপিএমের অত্যাচার চরমে উঠেছিল। যুক্তফ্রন্ট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যোতি বসু সিপিএম পার্টির সমস্ত অনাচার অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রর মত উপেক্ষা করে ক্ষমতা ভোগ করতেন। শেষে অবস্থা এতটাই চরমে উঠল যে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখার্জী নিজেরই সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে বললেন, ‘এই অসভ্য বর্বর সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে থাকতে চাই না’এবং পত্রপাঠ ১৬ই মার্চ, ১৯৭০-এ সিপিএমের উচ্ছৃঙ্খলায় বিরক্ত হয়ে তিনি পদত্যাগ করেন।যুক্তফ্রন্ট সরকার। সরকারের পতনের ফলে বাংলায় কংগ্রেস সমর্থকরা যতটা উল্লসিত হয়ে ওঠেন, আচমকা ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ার আক্রোশে সিপিএম ঠিক ততটাই ফুঁসতে থাকে।
বর্ধমানে সেই সময় কংগ্রেসের দূর্গ টিকিয়ে রেখেছিলেন যাঁরা তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাঁই পরিবার। সাঁইরা ছিল বর্ধমানের বড় জোতদার এবং পুরোনো কংগ্রেসি। সেই সময় বর্ধমানে যখন সিপিএম প্রায় একাধিপত্য স্থাপন করে ফেলতে চাইছে তখন সাঁইবাড়ি একরকম শেষ কংগ্রেসি দূর্গ ছিল বলা যায়। সাঁইরা ছিল সাত বোন পাঁচ ভাই- প্রণব, মলয়, নবকুমার, উদয় এবং বিজয়। অভিযোগ, ১৯৬৯ সালের ১১ই ডিসেম্বর বর্ধমানের আলমগঞ্জে কংগ্রেসের সক্রিয় সমর্থক ইন্দ্রভূষণ গড়িয়াকে সিপিএম সমর্থকরা বোমা মেরে খুন করে। সেই হত্যামামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল সাঁই পরিবার। ১৬ই মার্চ গোটা রাজ্যের মতো বর্ধমানের কংগ্রেসীরা যুক্তফ্রন্টের পতনে আনন্দিত হয়ে একটা মিছিল বার করে এবং স্বাভাবিক ভাবেই সাঁইরা তাতে অংশগ্রহন করে। নেহাতই নিজেদের অভ্যন্তরীন কোঁদলে যুক্তফ্রন্টের পতনের ফলে উৎফুল্ল কংগ্রেসীদের আনন্দ দেখে ফুঁসতে থাকা সিপিএম ১৭ই মার্চ বাংলা জুড়ে বনধ্ ডাকে, একই সঙ্গে প্রতিশোধস্পৃহা গ্রাস করে তাদের।
ঠিক ১৯৭০ সালের ১৭ই মার্চ সাঁইবাড়িতে এক নবজাত শিশু অমৃতের নামকরণ উৎসব ছিল। আচমকা বনধ্ ডাকা হলেও যেহেতু অনুষ্ঠানটি আগে থেকে ঠিক করা এবং কেউ কেউ ইতিমধ্যেই চলে এসেছেন তাই অনুষ্ঠানে কাজকর্ম যথারীতি চলতে থাকে। ঐ দিন সকাল ১০টা নাগাদ সিপিএমের একটা ৫০-৬০ জনের মিছিল বড় রাস্তা ছেড়ে তেলমারুই রোডে সাঁইবাড়ির সরু গলিতে এসে ঢোকে। এইরকম মিছিল আসছে দেখে মলয় প্রণব সাঁই-এর মা মৃগনয়না দেবী ভয় পেয়ে বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেন। এই সময় কারা যেন বলে মিছিলে একটা ইট এসে পড়েছে এবং সেটা পড়েছে সাঁই বাড়ির দিক থেকে। চারিদিকে হইচৈ বেধে যায়। পরিকল্পিত ভাবে দাবানলের মত গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়, সিপিএমের মিছিলে বোমা মেরেছে সাঁই বাড়ির লোকেরা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছড়ানো গুজবের আগুনে বহুরূপী ‘ইট’ কখনো হয়ে যায় ‘বোমা’ কখনো বা ‘গরম ফ্যান’।
সেই সময় বর্ধমানের গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে আদিবাসী লোকজনের ওপর সিপিএমের এতটাই প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছিল যে তারা সিপিএম নেতাদের মুখের কথা বেদবাক্যের থেকেও দামী মনে করত। এখন কিছুটা কমলেও অনেক জায়গাতেই বছর দশেকে আগেও এরকম প্রভাব ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগে থেকে সাঁইভাইদের সিপিএম বিরোধীতার চরম শিক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে থাকা প্রায় দেড় হাজার সিপিএম সমর্থক দিকবিদিক থেকে ছুটে এসে তীর ধনুক, টাঙ্গি,বল্লম ইত্যাদি নিয়ে সাঁই বাড়ি ঘিরে ফেলে। ভেঙ্গে ফেলে আতঙ্কিত বাসিন্দাদের আত্মরক্ষার্থে বন্ধ করে রাখা বাড়ির সদর দরজা।এরপরের পৈশাচিক ঘটনাবলীর কথা অনেকেই জানেন। নারকীয় ভাবে বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে খাটের তলা থেকে বার করে খুন করা হয় প্রণব সাঁইকে। ওদের বাড়ির এক দিদিকে বাড়ির উঠোনে চিত করে ফেলে তাকে ঐ অবস্থায় চেপে ধরে তার ছোট ভাই যে বয়সে নিতান্তই তরুণ মলয় সাঁইকে তার ওপর উপুর করে ফেলা হয়। তারপর তার গলা হেঁসো (বড় কাস্তে) দিয়ে দু ফাঁক করে দেওয়া হয় দিদির চোখের সামনে। ফিনকি দিয়ে রক্ত দিদির মুখের ওপর ছিটকে পড়ে, কিছুক্ষণ পরে নিথর হয়ে যায় ভাই এর দেহ। বাড়ির গৃহশিক্ষক জীতেন্দ্রনাথ রায় জীবন বাঁচানোর তাগিদে রান্না ঘরের পাশের পাঁচিল দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু ভাতের ফ্যানে পা পিছলে পড়ে যান। তাঁকেও কুপিয়ে খুন করা হয়। শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিনিধি বলে বাগড়ম্বর করা সিপিএমের কমরেডরা বাড়ির দুজন পরিচারকের মাথাও কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে ফেলে। দুজনেই পরের দিন হাসপাতালে মারা যান। এরপর ছেলেদের রক্তমাখা ভাত মৃগনয়না দেবীর মুখে গুঁজে দেয় সিপিএমের বীরপুঙ্গবরা। মৃত ছেলেদের রক্ত ছিটিয়ে দেয় আতঙ্কে স্তব্ধ মায়ের গায়ে। এত কিছুর পরেও আক্রোশ হয়তো মেটেনি, তাই যাওয়ার আগে নরপিশাচরা রান্না ঘরের উনুনে ছুঁড়ে দিয়ে যায় তিনমাসের নিষ্পাপ অসহায় শিশু অমৃতকে, যে পরে হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসার পর কোনক্রমে প্রাণে বেঁচে যায়।
ঐ দিন দুপুর সাড়ে বারোটায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে দিলীপ কুমার ভট্টাচার্যের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বর্ধমান থানায়। ঐ অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ৬২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন (কেস নং-৫০, ১৭/০৩/১৯৭০, বর্ধমান থানা) বর্ধমানের তৎকালীন ওসি চিত্ত মুখোপাধ্যায়। মামলা রুজু হয় ১৪৮/১৪৯/৩০৭/৩০২/৪৩৬/৩৮০ ধারায়। এই ঘটনার সাক্ষী খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল হয়েছিল পুলিশের পক্ষে যেহেতু ঘটনাস্থলে সকলেই সিপিএমের লোক ছিল, সাধারন মানুষ ভয়ে তল্লাট ফাঁকা করে পালিয়েছিল কিংবা ঘরে দরজা বন্ধ করে বসেছিল। সমস্ত দোকানের ঝাঁপ পড়ে গিয়েছিল। যারা কৌতূহল বশতঃ ঘটনা প্রত্যক্ষ করার সাহস করেছিল ভয়াবহ হিমশীতল আতঙ্ক তাদের মুখ সেলাই করে রেখেছিল। তবু অনেক কষ্টে পুলিশ ৭৮ জনকে সাক্ষী দেওয়ার জন্য প্রাথমিক ভাবে রাজি করায়। ১৯৭০ সালের ৬ই জুন বর্ধমান টাউন হলে ‘মুখার্জী কমিশন’বসেন সাঁইবাড়ি হত্যার তদন্ত করার জন্য। সেই তদন্ত কমিশনেরসামনে সাক্ষ্য দিয়ে ফেরার পথে সাঁইবাড়ি হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী গুলমনী রায়কে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করা হয়।
সাঁইবাড়ির সদস্যদের এবং সাক্ষীদের ওপর সাক্ষ্য না দেওয়ার এবং কেস তুলে নেওয়ার জন্য প্রচন্ড চাপ আসতে থাকে। চাপের মুখে মাথা নোয়াতে না চাওয়ার শাস্তি হিসাবে ঠিক গুলমনী রায়ের মতই সাঁইবাড়ির এক ছেলে নবকুমার সাঁইকে রায়নার আহ্লাদিপুরে টাঙ্গি দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। এর ফলে সমস্ত সাক্ষী ভয়ানক ভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তদন্তের কাজ চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়। এতদসত্বেও পরবর্তীকালে মামলার তদন্ত যত এগোতে থাকে তদন্তকারীদের সামনে মূল দোষী রাঘববোয়ালদের নাম উঠে আসে। সরাসরি খুন করার জন্য অভিযুক্ত হন সিপি(আই)এম দলের পাঁচ নেতা- মেমারির তৎকালীন বিধায়ক বিনয় কোঙার, খোকন সেন ওরফে নিরুপম সেন, হুগলীর চুঁচুড়ার আরও কয়েকটি কয়েকটি খুনের মামলার আসামী মানিক রায়,সিপিএম নেতা অমল হালদার এবং সেই সময় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই নেতা পল্টু ব্যানার্জী ওরফে রজত বন্দ্যোপাধ্যায়- যে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পরীক্ষার সাতটি পেপারের পরীক্ষা দিলেও ঠিক ১৭ই মার্চ, ১৯৭০ এর পর থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় অষ্টম পেপারের পরীক্ষাটি দিয়ে উঠতে পারেনি।পুরো হত্যাকান্ডে এবং ষড়যন্ত্রে এদের ভূমিকা স্পষ্ট হওয়ার পর আসানসোল ডিডিআই ১৯৭১ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারী সিপিএমের ঐ পঞ্চরত্ন সমেত মোট ১১১ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করেন। বর্ধমান দায়রা আদালতে মামলা চলাকালীন সাক্ষীদের ক্রমাগত হুমকি, চাপ এবং উল্টোদিকে জনগণের মনে বাড়তে থাকা অসন্তোষের কারনে মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আবেদনের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট ১৯৭৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী আলিপুর দায়রা আদালতে মামলাটি স্থানান্তরিত করার আদেশ দেন এবং তৃতীয় অতিরিক্ত দায়রা বিচারক গীতেশ ভট্টাচার্যের এজলাসে শুনানি শুরু হয়।
এরপর ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গের মসনদে বসতেই শুরু হয় আসল খেলা। বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চলে আদালতের পিছনের দরজা দিয়ে নৃশংস খুনের দায়ে অভিযুক্ত কমরেডদের বের করে নিয়ে আসার মরিয়া প্রয়াস। সরকারের তরফে প্রধান কৌঁশুলি হিসাবে মামলা লড়ছিলেন জ্যোতির্ম্ময় রায়চৌধুরী। তাঁর সহকারী কৌঁশুলি হিসাবে ছিলেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত। সাক্ষীদের ভয়দেখানো ও নানাভাবে চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি চলছিল সরকারী কৌঁশুলীদের ওপরও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল সমানে। ভেবে দেখুন যে সরকার নিহত ব্যক্তিদের হয়ে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা লড়ছে সেই হত্যাকারীদের কমরেডরাই ক্ষমতায় এসে বিচার ব্যবস্থাকে পিছন থেকে ছুড়ি মেরে হত্যাকারীদের খালাস করিয়ে দিতে চাইছে! বিচারব্যবস্থার সঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের নির্লজ্জ ব্যভীচারের প্রতিবাদে ইস্তফা দেন সরকারের তরফে সহকারী কৌঁশুলী নরেন্দ্রনাথ দত্ত। কিন্তু এতে শাপে বর হল বামফ্রন্টের। নরেন্দ্রবাবুর পদে সরকারী কৌঁশুলী হিসাবে নিয়োগ করা হল দক্ষিণ কলকাতার সিপিএম নেতা অসিত গঙ্গোপাধ্যায়কে।এরপর পথের ছোটোখাটো কাঁটাগুলিকে সরিয়ে হত্যাকারীদের মুক্তি ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। সরকারের তরফে সরকারি কৌঁশুলি ১৯৭৭ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর তারিখে সিপিএমের ‘পঞ্চরত্ন’ সমেত ৮৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আবেদন করলে বিচারপতি ৩০শে সেপ্টেম্বরের গীতেশরঞ্জন ভট্টাচার্য চারজনের জন্য তা মঞ্জুর করলেও তা বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা তোলার আবেদন পুরোপুরি খারিজ করে রায় দেন।
এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা হলে হাইকোর্টও হত্যাকরীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের সরকারি আবেদন পুনরায় খারিজ করে দেন।চাল ভেস্তে যাওয়ায় বামফ্রন্ট সরকার একই খেলা অন্য ছকে খেলার পরিকল্পনা ফাঁদে। এবার টার্গেট করা হয় অভিযোগকারী এবং মূল সাক্ষীদের। যে সরকারি কৌঁশুলিদের সাক্ষীদের সাহায্যে আদালতে সত্য প্রমাণের দায়িত্ব ছিল, তাঁরাই অভিযোগকারী দিলীপ ভট্টাচার্যকে এবং অন্যতম প্রধানসাক্ষী ইতিকা দত্তকে দিয়ে লিখিয়ে নেন যে তাঁরা প্রত্যক্ষদর্শী নন। সাঁই পরিবারের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি, হত্যার হুমকী, নবকুমার সাঁই এর হত্যা, হত্যাকান্ডের ভয়বহতায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে এক ভাই উদয় সাঁই এর উন্মাদগ্রস্ত হয়ে পড়া এবং কার্যত শ্মশানে পরিণত হওয়া সাঁইবাড়িতে জীবিত দুই ভাই-এর অন্যতম বিজয় সাঁই বা তার দিদি স্বর্ণলতা দেবী এবং জামাইবাবু অমলাকান্ত যশদের সামনে সরকার এবং সাঁইবাড়িকে শ্মশানে পরিণত করে বর্ধমানকে সিপিএমের দূর্গে পরিণত করা বর্ধমানের একচ্ছত্র অধিপতি সিপিএমের ক্রমাগত দ্বিমুখী চাপ ও হুমকির সামনে মাথা নোয়ানো ছাড়া আর কোন রাস্তা রইল না।
তাদেঁর বুকে পাথর চাপা দেওয়া দীর্ঘশ্বাস আর অশ্রুজল পান করে জীবিত থাকার অন্তহীন নরকযন্ত্রণার বিনিময়ে সিপিএমের জহ্লাদেরা মুক্তি পেল ১৯৭৮ সালের ৬ই মে। বাম সরকারের আটঘাট বেঁধে (হ্যাঁ, ততদিনে আলিপুর তৃতীয় দায়রা আদালতের বিচারপতিও বদল হয়ে গেছে!) মোকোদ্দমা প্রত্যাহারের আবেদন আর ফেরানো সম্ভব হল না বিচারপতি করের পক্ষে। বাম সরকারের লাল শালুতে রক্তাক্ত হাত মুছে আদালতের খিড়কী দরজা দিয়ে বেরিয়ে সদর্পে রাজপথে উঠে এল হত্যাকারীরা, তুলে নিল রাজ্যের শাসনভার। পড়ে রইল জনমানবহীন খন্ডহরে পরিণত হওয়া সাঁইবাড়ির হাহাকার আর বর্ধমানের রাস্তায় রাস্তায় উন্মাদ হয়ে যাওয়া উদয় সাঁই-এর আর্তচিৎকার।