আসল স্বাধীনতার​ অর্থ হ’ল সভ্যতার মালিকানা ধরে রাখার স্বাধীনতা ,যেটা প্রতিটি দেশ গুরুত্ব সহকারে পালন করতে চায়… যাতে সেই দেশের সভ্যতার মালিকানা তাদের নিজেদের​ হাতে থাকে

দেড়শ বছরের দুর্ভাগ্যজনক আবর্তের মধ্যে বাঁধা পড়ে হিন্দুদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিজেদের মূল গতিপথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং আমরা জানি যে, আত্ম-বিচ্ছিন্নতা হ’ল সংস্কৃতি বিপর্যয়ের দিকে প্রথম পদক্ষেপ যা শেষ পর্যন্ত একটা সভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে। সমষ্টিগত হিন্দু চেতনা বলতে, গত পঞ্চাশ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে, এই স্ব-বিচ্ছিন্নতার যে চিত্রটি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে তা হ’ল: হিন্দুরা সম্মিলিতভাবে এই সত্যিটা ভুলে গিয়েছিল যে তারা একটি প্রাচীন এবং সমৃদ্ধশালী সভ্যতার উত্তরাধিকারী আর এই ধারা বয়ে চলেছে আবহমানকাল ধরে।

এটা কেবলমাত্র আভিধানিক অর্থের​ একটি সভ্যতা নয় কারণ অতীত থেকে শুরু করে বর্তমান কালেও এর দার্শনিক, বেদাত্মক মূল অক্ষত রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি হ’ল এই সভ‍্যতার শেকড়কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, রক্ষা করার জন্য, জনমানসে এই সভ‍্যতাকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে সেইসব প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে যারা ভীষণ ভাবে চায় এই সভ‍্যতাকে চিরতরে ধ্বংস করতে। ভারতীয় ইতিহাসের​ দিকে তাকালে দেখতে পাবো যে বৈদিক সভ্যতার সূচনাকালে আমাদের দেশ কতটা সমৃদ্ধশালী ছিল এবং তখন সম্প্রীতির বন্ধনও ছিল অটুট।

স্ব-বিচ্ছিন্নতা স্মৃতিভ্রংশের অন‍্যতম কারণ: হিন্দু ধর্মের পবিত্রতা,স্নিগ্ধতা, আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা ভৌগোলিক ইতিহাসে ভারতবর্ষকে গড়ে তুলছিল ঐশ্বর্য‍্য এবং সম্প্রীতির পীঠস্থান হিসাবে এবং এটা বলা একান্ত প্রয়োজন যে আমরা কখনই এর পুনরাবৃত্তি করতে ক্লান্ত হইনি। সারা বিশ্বের মধ্যে এখনও পর্যন্ত টিকে থাকা অ-আব্রাহামিক সভ্যতা হ’ল হিন্দু সভ্যতা যা এখনও সাহসিকতার সাথে ইসলাম, খ্রিস্টান ও কমিউনিজমের মতো ত্রিগুণ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একা লড়াই করে চলেছে।

তবে, হিন্দুরা এই যুদ্ধটি লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছে— বিশেষ করে রাজনৈতিক দিক থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর— সঠিক কোনো গতিপথ ছাড়াই, নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই এবং মূলত উদ্দেশ্যহীনভাবে​। এর প্রধান কারণ হ’ল হিন্দুরা অবচেতন তাদের সভ্যতাকে রক্ষা এবং পুনরুজ্জীবিত করার এই লড়াই লড়ে চলেছে।

আমরা অতীতের পাতায় স্থান পাওয়া কয়েকটি বড় সভ্যতার​ ইতিহাস পর্যালোচনা করতে পারি, যেমন: সুমেরিয়া, মিশর, গ্রীস, রোম, পার্সিয়া, চীন এবং ভারত। এইসমস্ত সভ‍্যতা প্রায় একই সময়ে শুরু হয়েছিল। আমরা যখন তাদের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি খুঁজতে যাই তখন দেখতে পাই যে সেইসময়ের প্রায় সবকিছুই এখনও বিদ‍্যমান, শুধুমাত্র তাদের নামের বদল হয়েছে আঙ্গিকের নয় যেমন: পৌত্তলিকতা, সর্বপ্রানবাদ, প্রকৃতিপুজা ইত‍্যাদি, অর্থাৎ এঁরা সকলেই প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তি থেকে উদ্ভূত একাধিক দেবদেবীতে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তাদের পূজা করতেন। কিন্তু এবার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হ’ল যে বর্তমানে এর মধ্যে আর কয়টি সভ‍্যতা টিকে আছে? উত্তর: প্রায় কেউই নেই। আজ্ঞে হ‍্যাঁ, সনাতন বা হিন্দু সভ্যতা ব্যতীত আর কেউ নেয়, কারও অস্তিত্ব নেই। নাহ্, এটা শুধুমাত্র অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নয়: হিন্দু সভ্যতা দীর্ঘকাল ধরে বজায় রেখেছে তার দার্শনিকতার মূল, ঐতিহ্য, অনুশীলন থেকে শুরু করে উৎসব, রীতিনীতি সবকিছুকে।

আজকে বিশ্বের ধর্মীয় মানচিত্রের দিকে তাকালে এই বাস্তবতার তাৎপর্য আরও স্পষ্টভাবে নজরে পড়ে​: ১৯৫ টি দেশগুলির মধ্যে, ৫২টি ইসলামিক দেশ রয়েছে এবং খ্রিস্টধর্ম প্রতিটি মহাদেশেই ছড়িয়ে রয়েছে। তবে হিন্দুরা কেবল ভারতবর্ষেই রয়েছে অত‍্যন্ত হাস্যকরভাবে, মর্মান্তিকভাবে। এমনকি তাদের একমাত্র স্বদেশ, নিজেদের জন্মভূমি ভারতবর্ষেকে হিন্দুরা তাদের বাড়ি বলতেও পারেনা। আর এটাই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্মের অদৃষ্ট।

পারলে এটা সম্পর্কে এক মুহূর্ত ভাবুন।

কিন্তু কীভাবে এই প্রাচীন সভ্যতাগুলি হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেল? উত্তরটি সুপরিচিত: তাদের সবাইকে জোর করে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছিল আর সেই অশুভ শক্তির তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে খ্রিস্টধর্ম, আর ঠিক পরের​ স্থান আলোকিত করেছে ইসলাম। সেই দিক থেকে দেখলে খ্রিস্টান ও ইসলাম উভয়ই সভ্যতার সভ‍্য সন্তান নয়: এরা আসলে ধর্মের​ আড়ালে বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ। আগের সভ্যতা গুলোকে ধ্বংস করার পরে তারা যা নির্মাণ করেছিল তা কোনো সভ্যতা বা সংস্কৃতি ছিল না বরং ছিল এমন এক সিস্টেম এবং কাঠামো যা ধর্মীয় মতাদর্শের​ ছায়ায় বেড়ে ওঠা নিষ্ঠুর সামরিক শক্তি। মোহনদাস গান্ধীর সাথে আমি যে খুব কম বিষয়েই একমত ছিলাম তার​মধ‍্যে একটি হল তাঁর সেই স্মরণীয় উক্তি। একজন বিদেশী সাংবাদিক যখন তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “পশ্চিমের সভ্যতার ব্যাপারে আপনার মতামত কী?”, গান্ধী বলেছিলেন, “আমি মনে করি এটা একটি ভাল ধারণা।” তবে এই ঘটনাটি আরও সমসাময়িক পরিভাষায় বোঝার জন্য, আসুন আমেরিকান সভ্যতা নামে পরিচিত সভ‍্যতাটির দিকে একবার ফিরে তাকাই । প্রথমে কে “আমেরিকান সভ্যতা” শব্দটি তৈরি করেছিলেন তা ভেবে দেখুন। উত্তর: আমেরিকানরা নিজেরাই। অস্কার ওয়াইল্ড সম্ভবত সবচেয়ে ভালোভাবে​ এর বিশ্লেষণ করেছেন:

আমেরিকা হ’ল একমাত্র দেশ যে বর্বরতা থেকে অধঃপতনের দিকে এগিয়ে গেছে সভ্যতার কোনোরকম অগ্ৰগতি ছাড়াই।
সুতরাং, আমেরিকান “সভ্যতা” কি? স্পষ্ট এবং অকপট উত্তর: এটা হ’ল বিশৃঙ্খল বস্তুবাদের একটি কৃষ্ণগহ্বর, যেখানে কোনও কালজয়ী সভ্যতা তৈরি করা কখনোই সম্ভব নয় কারণ এখানে অর্থশক্তি মানুষের মনের আধ্যাত্মিক চেতনার অবক্ষয় ঘটায়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, সেজেলি ডব্লিউটি স্টাড সুন্দর বাক্যাংশবিদ্যার মাধ্যমে এই ব্ল্যাকহোল তৈরির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন:

একটি অক্ষত, কুমারী মহাদেশের বিপুল কোষাগারগুলির মধ্যে একটি অল্প বয়স্ক এবং তেজস্বী জাতিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে … আমেরিকানদের​ প্রবণতা এটাই যে এই সমগ্ৰ প্রক্রিয়াটিতে আমাদের সমস্ত শক্তি গ্রাস করা এবং উচ্চতর আত্মার চর্চার জন্য আর কিছুই বাকি না রাখা। এটা অনেকটা নরক দর্শনের মতো একটি নিখরচায় দর্শনীয় স্থান।

যদিও আমেরিকান​রা গভীরভাবে খ্রিস্টান​ এবং তাদের রাজনীতির বিস্তৃত পরিসরে তারা খ্রিস্টীয় উপাদানগুলোকে রক্ষা করতে ভীষণ ভাবে উদ্যোগী। এই ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা পিতারা প্রকৃতঅর্থে খ্রিস্টান মৌলবাদী ছিলেন।

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এই খ্রিস্টীয় উপাদানগুলোকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য চলুন “ন‍্যাশন‍্যল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট” নামক পরিচিত প্রথার সাথে পরিচিত হই, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে বার্ষিক বৈঠকের জন্য ফেব্রুয়ারির প্রথম বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়।

“ন‍্যাশন‍্যল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট”-এর সূচনা হয় যায় ১৯৫৩ সালে। এটা আসলে আমেরিকান মেথোডিস্ট মন্ত্রী আব্রাম ভেরাইডের এক চতুর্থাংশ শতাব্দী ধরে বজায় রাখা জেদ এবং কর্মদক্ষতার চূড়ান্ত ফসল এবং তিনি মূলত নরওয়ে থেকে এই চিন্তাধারা ধার করেছিলেন। একজন খ্রিস্টান মৌলবাদী, আব্রামের আমেরিকার জন্য এক বিশাল দৃষ্টিভঙ্গি​ ছিল যেখানে “প্রত্যেক খ্রিস্টান [হ’ল] নেতা এবং প্রতিটি নেতাই হলেন খ্রিস্টান”। মার্কিন প্রবীণ তদন্তকারী সাংবাদিক এই দর্শনটিকে দক্ষতার সাথে বর্ণনা করেছেন:

… খ্রিস্টের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এই শাসক শ্রেণীর লোকেরা স্বেচ্ছায় ঐশ্বরিক একনায়কত্বে অভিষিক্ত, নির্বাচিত, মূল পুরুষদের অংশীদারিতে আবদ্ধ হবেন।

আব্রাম দূর্দান্তভাবে সফল হয়েছিলেন। আইসনআওয়ার থেকে বিডেন পর্যন্ত প্রতিটি রাষ্ট্রপতি “ন‍্যাশন‍্যল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট”-এ অংশগ্ৰহন করেছিলেন। সময়ের সাথে সাথে, এনপিবি আরও বেশি শক্তিশালী লোককে আলিঙ্গনে করে কাছে টেনে নিয়েছে এবং তার সাথে সাথেই অবিচ্ছিন্নভাবে নিজেদের পরিধির​ বিস্তার ঘটিয়েছে। অন‍্য আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ সত্য হ’ল যে প্রথম থেকেই, এনপিবি-র উপর কংগ্রেসের​ পৃষ্ঠপোষকতা ছিল অব্যাহত, অর্থাৎ মার্কিন করদাতারা খ্রিস্টান মৌলবাদকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অর্থ প্রদান করে বৃহত্তর শক্তি অর্জনে সহায়তা করেছে। এই সমৃদ্ধশালী ব‍্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিল জর্জ ডাব্লু বুশ। এই বিত্তবান মানুষটি ছিলেন তৈল ব‍্যবসায়ী এবং ১৯৮৫ সালে তিনি “কমিউনিটি বাইবেল স্টাডিজ” -এর মাধ্যমে তিনি নিজের ধর্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করে তোলেন।

ধীরে ধীরে এনপিবি’তে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে কম করে ৩০০০ এরও বেশী মানুষ আসতে থাকে, এছাড়াও বিভিন্ন শক্তিশালী চার্চের​ প্রধান, কর্পোরেট নেতৃবৃন্দ, এবং নানান দেশের প্রতিনিধিরা সহ একাধিক মানুষের উপস্থিতি ছিল। ২০০৭ সালে, প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর জন্য ৪২৫ ডলার প্রবেশমূল্য ধার্য করা হয়। একজন সাংবাদিকের জবানীতে এনপিবি বৈঠকের​ একটি সাধারণ দৃশ্য তুলে ধরা হ’ল:

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, “প্রাতঃরাশ, মাফিনস্ এবং প্রার্থনার​ মধ‍্যেই আবদ্ধ থাকে কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রের জন্য খ্রিস্টের বার্তাগুলি বিভিন্ন সেমিনারের মাধ্যমে সেখানে ছড়িয়ে দেওয়া একান্ত প্রয়োজনীয়​। বিগত বছরগুলিতে আমাদের পরিবার বিভিন্ন স্তর যেমন তেল, প্রতিরক্ষা, বীমা এবং ব্যাংকিংয়ের কার্যনির্বাহকদের জন্য এই জাতীয় ইভেন্টগুলির আয়োজন করে চলেছে। ২০০৭ সালে এইধরণের ইভেন্টে অন্যদের মতোই আকৃষ্ট হয়েছিলেন​ পূর্ব ইউরোপের “এইড্-হাঙরি” প্রতিরক্ষামন্ত্রীর একটি দল, পাকিস্তানের বিখ্যাত দুর্নীতিবাজ বেনজির ভুট্টো এবং দারফুরের গণহত্যার সাথে যুক্ত থাকা সুদানের এক জেনারেলের একটি দল।

যাক, এবার ভারতে ফিরে আসুন এবং একটি সহজ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন: আপনি কি সমস্ত হিন্দু মঠ এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী হিন্দু প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বছরে একবার প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির সাথে প্রাতঃরাশে বসার কথা ভাবতে পারেন?

আর হ‍্যাঁ, এটা কিন্তু সেই আগের আমেরিকা’ই যারা ভারতে ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সহনশীলতার গুণাবলী প্রচার করত।

খ্রিস্টান মৌলবাদ হ’ল একটি স্বল্প-পরিচিত পদ্ধতি যার মাধ্যমে আমেরিকা নিজেদের​ রক্ষা করে এবং বিভিন্ন উপায়ে নিজেদের শক্তি এবং প্রভাব বিস্তার করে। এটা হ’ল আসলে আক্রমণাত্মক এবং প্রতিরক্ষামূলক কৌশল: যা চার্চ ভিত্তিক রাজনৈতিক লবিংয়ের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে একটি প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেয় এবং ফলস্বরূপ, ভারতের মতো দেশে নিজেদের প্রচারকদের রপ্তানি করে আমেরিকান প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। তবে আমরা যদি সামগ্ৰিক চিত্রটিকে একটু বড় করে দেখি তাহলে বুঝতে পারবো যে এরমধ্যে রয়েছে সেই তথাকথিত আমেরিকান সভ্যতা যার মূল অত্যন্ত গভীর এবং সুরক্ষিত। যদি আমরা ১৭৭৬ সালকে সূচনাকাল হিসাবে দেখি তাহলে দেখতে পাবো যে ২৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এই তথাকথিত সভ্যতাটি আমাদের চোখের আড়ালেই বেড়ে উঠেছে। বিভিন্নভাবে আমেরিকার চলমান পতন ছিল আদপে একটা ভালো​ দিক যেখানে অতীত বর্তমানের সাথে মিলিত হয়। তবে এটি অন্য দিনের গল্প।

আসুন এবার, সনাতন সভ‍্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ডঃ এস.শ্রীকান্ত শাস্ত্রীর এক উজ্জ্বল বর্ণনার দিকে আলোকপাত করা যাক।

ভারতের সভ্যতা ও সংস্কৃতি, এ দেশের মতোই অবিচ্ছেদ্য এবং কালজয়ী। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, বিশ্বেশ্বর থেকে রামেশ্বর, বিন্দু মাধব থেকে শেঠু মাধব পর্যন্ত বিস্তৃত ভারতের অবিচ্ছিন্ন ভৌগোলিক বিস্তৃতি। ভারতীয় সংস্কৃতি সেই অবিচ্ছিন্ন ধারা বয়ে নিয়ে চলেছে​ কাল থেকে কালান্তরে, সমস্ত বেদ থেকে শুরু করে রামকৃষ্ণ পরমহংস পর্যন্ত এই অবিভাজ্য ধারাবাহিকতার​ প্রতিনিধিত্ব করে। ভারতীয় সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থলে যে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে তা সারা বিশ্বজুড়ে আজও জীবিত এবং সমৃদ্ধ। এই কারণেই ভারতীয় সংস্কৃতির প্রত্যেকটি বিষয় যেমন- খাদ্য, সামাজিক রীতিনীতি, ব্যবসায়িক নীতি, দর্শন, নান্দনিকতা, সত্য এবং সৌন্দর্য— এই সবকিছুরই একটা আলাদা সত্তা রয়েছে, যা তাকে করে তুলছে স্বতন্ত্র। ভারতীয় সংস্কৃতি কেবল সর্বজনীন মূল্যবোধকেই রূপ দেয়নি, বরং ব্যক্তি এবং সমাজ উভয় স্তরেই তার অনন্য মূল্যব্যবস্থাকে উপস্থাপিত করেছে। প্রবর্তন করেছে।

এখন যদি আমরা “সনাতন” বা “হিন্দু” উপাদানটি কেড়ে নিই, তাহলে তৎক্ষনাৎ ভারতীয় সভ্যতার অবসান ঘটাবে: সর্বোপরি, তখন একে অপরের সাথে পাশ্চাত্য বস্তুবাদ এবং সবচেয়ে খারাপ ধর্মান্ধ ইসলামিক স্বৈরশাসনের সাথে নিরলস যুদ্ধে লিপ্ত হবে।

আমরা যখন এগুলো সম্পর্কে চিন্তা করি, তখন সেই বিখ্যাত প্রবাদটির কথা মনে পড়ে, যার অন্তর্নিহিত অর্থ হ’ল স্বাধীনতার দাম। স্বাধীনতার​ আসল মানে হ’ল একটি সভ্যতার মালিকানা ধরে রাখার স্বাধীনতা এবং এই মালিকানা সর্বদা সেই সভ্যতা গড়ে তোলার​ কারিগরদের হাতেই থাকা উচিত।

প্রতিটি দেশ যেটা অত‍্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছে​ তা হ’ল এনপিবি বা চীনের মতো কৌশল। অন‍্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে, ভারত তার অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজ বাবুদের ভারতীয় “সংস্কৃতি” প্রচারের নামে বিদেশে ব্যক্তিগত ব্যবসার সাম্রাজ্য তৈরি করার অনুমতি এবং মদত দিয়ে এসেছে। আর এইজন্যই আমি ভীষণ আশ্চর্য হব যদি আমরা আমাদের নিজস্ব সভ‍্যতার মালিকানা আবার ফিরে পাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.