চার বছর আগে রাজারহাটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে এক যুবতীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের খবর আমজনতার আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল। ওই অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে তদন্ত শেষ করে দিয়েছিল বিধাননগর পুলিশ। সেই ঘটনাটি এত দিন পরে ফের আতসকাচের তলায় ফেলেছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। আর তাতেই উঠে এসেছে সারদা মামলায় অভিযুক্ত প্রভাবশালীদের সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য।
ওই যুবতীর নাম পিয়ালি মুখোপাধ্যায়, সারদার প্রাক্তন আইনি পরামর্শদাতা। ২০১৩ সালের ২৬ মার্চ রাজারহাটের একটি ফ্ল্যাট থেকে ২৮ বছরের পিয়ালির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এই মৃত্যু নিয়ে বিস্তর হইচই হলেও বিধাননগর পুলিশ এটিকে নিছক আত্মহত্যার ঘটনা বলেই তদন্ত শেষ করে দেয়।
তদন্তকারীদের দাবি, পিয়ালি যে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন, সে সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, ‘‘রোজ ভ্যালি ও সারদার টাকায় মদন মিত্র শহরের পাঁচতারা হোটেলে একাধিক বার রাত্রিবাস করেছেন। ওই সময়ে মদনের আশেপাশে দেখা গিয়েছে ওই যুবতীকে। এই জন্যই আমরা তাঁর সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু করি।’’ প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এবং হোটেলের নথি উদ্ধার করে পিয়ালি সম্পর্কে নানা তথ্য পান তদন্তকারীরা। জানা যায়, সারদার আইনি পরামর্শদাতার পদ পাওয়ার মতো অভিজ্ঞতা আদৌ ছিল না সদ্য আইন পাশ করা পিয়ালির। তদন্তকারীদের দাবি, মদন মিত্রের নির্দেশেই যে পিয়ালি সারদায় মাসে এক লক্ষ টাকা বেতনের চাকরিটি পেয়েছিলেন, তার অনেক তথ্যই পেয়েছেন তাঁরা। এত অভিজ্ঞ আইনজীবী থাকতে পিয়ালির মতো আনকোরাকে মোটা বেতনে নিয়োগ করার বিষয়টি স্বাভাবিক বলে মনে হয়নি তদন্তকারীদের। সিবিআই সূত্রের খবর, এর পরেই তাঁরা পিয়ালির মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখেন, মৃত্যুর আগের দশ দিনে তিনি মদন মিত্রকে মোট ৭৫ বার ফোন করেছিলেন। এই কল-লিস্ট এখন তদন্তকারীদের হাতে। কেন এত বার পিয়ালি মন্ত্রীকে ফোন করলেন? জানতে গিয়ে আরও তথ্য হাতে আসে সিবিআইয়ের। তদন্তকারীরা বলেন শুধু মদন মিত্র নন, রাজ্যের আরও কয়েক জন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গেও নিত্য ওঠাবসা ছিল পিয়ালির। তাঁদের অনেকেই তাঁর রাজারহাটের ফ্ল্যাটেও আসতেন বলে তথ্য মিলেছে।
পিয়ালীর হত্যার এখনো তদন্ত হয়নি এবং তাঁর আত্মা শান্তি পায়নি।
তরুণজ্যোতি তিওয়ারি