অষ্টম অধ্যায় – তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে নববর্ষ

#অষ্টম_অধ্যায়

বাংলা সনের আরেক নাম’ #বঙ্গাব্দ । বাঙ্গালী  এই অব্দটি আজও গণনা করে চলেন। এই বঙ্গাব্দ সৌর অব্দ হিসাবে চলিত। যদিও পঞ্জিকা মতে এই অব্দ সৌর নিয়ন্ত্রিত চান্দ্র বৎসর। তাই পঞ্জিকায় মলমাস, অধিমাস বা ক্ষয়মাসের উল্লেখ থাকে । মেষ – সংক্রান্তির পরেরদিন বৎসরের শুরু অর্থাৎ সৌর পয়লা বৈশাখ। এর প্রতিটি মাসই সৌর। এই অব্দের মাসগুলি পক্ষ এবং তিথি চিহ্নিত সংক্রান্তির পরের দিন থেকে সূচিত হয়। বঙ্গাব্দের সঙ্গে ৫৯৪ সংখ্যাটি যোগ করলে ইংরেজি বছর বা খ্রিস্টাব্দ পাওয়া যায়। 


১৪২৬ বঙ্গাব্দ + ৫৯৪ =  ২০২০ খ্রিস্টাব্দ


৫৯০ খ্রিস্টাব্দ হতে বীর নৃপতি মহারাজ শশাঙ্ক রাজত্ব করতেন গৌড় দেশে। শশাঙ্কের প্রথম পরিচয় মহাসামন্তরূপে। কাহর মহাসামপ্ত তিনি ছিলেন, নিঃসংশয়ে বলা কঠিন, তবে, মনে হয়, মহাসেনগুপ্ত বা তৎপরবর্তী মালবাধিপতি দেবগুপ্ত তাঁর অধিরাজ ছিলেন। রাজ্যবর্ধন কর্তৃক দেবগুপ্তের পরাজয়ের পর শশাঙ্কই যে দেবগুপ্তের দায়িত্ব ও কর্তব্যভার (মৌখরী-পুষ্যভূমি মৈত্রীবন্ধনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম) নিজ স্কন্ধে তুলে নেন। তা হতে মনে হয়, শশাঙ্ক মগধ-মালবাধিপতি গুপ্তরাজাদেরই মহাসামন্ত ছিলেন। শব্দ, এ তথ্য নিঃসংশয় যে, ৬০৬-৭ খ্ৰীষ্টাব্দের আগে কোনও সময়ে শশাঙ্ক গৌড়ের স্বাধীন নরপতিরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন এবং কর্ণসুবৰ্ণে (মুর্শিদাবাদ জেলার রাঙ্গামাটির নিকট কানসোনা) নিজ রাজধানী প্রতিষ্ঠিত করেন।


শশাঙ্ক কীর্তিমান নরপতি ছিলেন, সন্দেহ নেই। তিনি ‘জাতীয় নায়ক অথবা বীর । যদি এবিষয় কারো সন্দেহ থাকে তবে সে নির্দ্বিধায় শশাঙ্ক নিয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করতে পারেন।  মহাস্যমন্তরূপে জীবন আরম্ভ করে তদানীন্তন উত্তর-ভারতের সর্বোত্তম রাষ্ট্রগুলির সমবেত শক্তির (কনৌজ-স্থানীশ্বর-কামরূপ মৈত্রী) বিরুদ্ধে সার্থক সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে, শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র স্বাধীন নরপতিরূপে সুবিস্তৃত রাজ্যের অধিকারী হয়েছিলেন, এ-তথ্যই ঐতিহাসিকের প্রশংসিত বিস্ময় উদ্রোকের পক্ষে যথেষ্ট। পুরুষপরম্পরাবিলম্বিত কনৌজ-গৌড়-মগধ সংগ্রাম তাঁরই শৌর্য ও বীর্যে নূতন রূপে রূপান্তরলাভ করিয়াছিল; সকলোত্তরপথনাথ হর্ষবর্ধনকে যদি কেউ সাৰ্থক প্রতিরোধ প্ৰদান করে থাকেন তবে শশাঙ্ক এবং চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীই তা সম্ভব করেছিলেন। উত্তর-ভারতের আধিপত্য নিয়ে পালরাজ ধর্মপাল-দেবপাল প্ৰভৃতির আমলে গৌড়-কনৌজের যে সুদীর্ঘ সংগ্রাম পরবর্তী কালের বাঙ্গালার রাষ্ট্ৰীয় ইতিহাসকে উজ্জ্বল ও গৌরবান্বিত করেছে, তার প্রথম সূচনা শশাঙ্কের আমলেই দেখা দিল এবং তিনিই সর্বপ্রথম বঙ্গকে উত্তর-ভারতের রাষ্ট্ৰীয় রঙ্গমঞ্চে অবতীর্ণ করিয়েছিলেন।


তাঁর ৮ম ও ১০ম রাজ্যাংকে প্রকাশিত দুটি লিপি পাওয়া গেছে মেদিনীপুর থেকে এবং তারিখবিহীন অপর একটি লিপি খড়গপুরের নিকট এগ্‌রা হতে আবিষ্কৃত হয়েছে। এছাড়া শশাঙ্কের অধীনস্থ গঞ্জামের (উড়িষ্যা) রাজা মাধববর্মার তাম্রশাসন (৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের), হর্ষবর্ধনের বাঁশখেরা ও মধুবন তাম্রশাসন এবং কামরূপের রাজা ভাস্কর বর্মনের নিধানপুর তাম্রশাসন থেকে তাঁর সম্পর্কে জানা যায়। শশাঙ্কের উৎকীর্ণ স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রাও পাওয়া গেছে। গুপ্তদের পতন ও শশাঙ্কের উত্থানের মধ্যবর্তী সময়ে বাংলায় বেশ কিছু স্বাধীন শাসকের উদ্ভব ঘটে। এঁদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায় অল্প কিছু লিপি এবং স্বর্ণ মুদ্রার ভিত্তিতে। রোহতাসগড়ে প্রাপ্ত সিলের ছাঁচে লিখিত ‘শ্রী মহাসামন্ত শশাঙ্ক’, বাণভট্টের সমসাময়িক সাহিত্য উপকরণ, চৈনিক তীর্থযাত্রী হিউয়েন-সাং এর বিবরণ এবং বৌদ্ধ গ্রন্থ আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প শশাঙ্কের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ঐতিহাসিক মতে ,সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি বঙ্গাব্দ চালু করেন।
রমেশ চন্দ্র মজুমদার মনে করেন, ” ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ ভাগে গুপ্ত রাজ মহাসেনগুপ্ত মগধ ও গৌড়ের অধিপতি ছিলেন । সুতরাং, শশাঙ্ক এই মহাসেনগুপ্তের অধীনে মহাসামন্ত ছিলেন । ৬০৬ অব্দের পূর্বে শশাঙ্ক একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।”

একজন মহাসামন্ত, একজন শ্রেষ্ঠ রাজা শশাঙ্ক বঙ্গাব্দের প্রবর্তক। হ্যাঁ প্রবর্তক তিনি, বলা যেতে পারে তিনি পন্ডিত বরাহমিহিরের বক্তব্যকে রাজনৈতিক ভাবে প্রচলিত করেছিলেন। যাতে সাধারণ প্রজা থেকে শুরু করে রাজপরিবার পর্যন্ত একই নিয়ম  মেনে চলে। কি ভাবে সেই ব্যাখ্যায় আসি – 
সমকালীন যেসব লেখ বা পুঁথিতে শশাঙ্ক বঙ্গাব্দের প্রবর্তক ছিলেন এমন কোন  প্রমাণ পাওয়া যায়নি । যেমন – তাঁর নানা মুদ্রা, রোটাসগড়  সিলমোহর, গঞ্জাম রাজ মাধববর্মার তাম্রশাসন, স্বরূপ যেমন তারা হতাশ করে সেই মহরম সামন্তরাজ দ্বিতীয় মাধব তাম্রশাসন হর্ষবর্ধনের ঘেরাও মধুবন তাম্রশাসন, হর্ষবর্ধনের বাঁশখেরা ও মধুবন তাম্রশাসন এবং কামরূপের রাজা ভাস্কর বর্মনের নিধানপুর তাম্রশাসন,   বানভট্ট রচিত হর্ষচরিত, হিউ এন সাঙ এর বিবরণ অথবা আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প নামক বৌদ্ধ কিংবা পরবর্তীকালে  প্রাপ্ত দুবি শাসন, মেদিনীপুর তাম্র শাসন, এগরা তাম্রশাসন ইত্যাদিতে বঙ্গাব্দ বলে কোনো শব্দের উল্লেখ নেই।


 বরং এরকম লেখা আছে যে,  “শশাঙ্ক রাজত্বের ৮ম বৎসরে পৌষমাসের ১২শ দিবসে এই তাম্রশাসন প্রদত্ত হলো’ ইত্যাদি ।

সিংহাসনে আরোহন উপলক্ষে হর্ষাব্দ প্রচলন করেন হর্ষবর্ধন। আলবেরুনি তাঁর কিতাবু ল হিন্দ গ্রন্থে এই হর্ষাব্দ নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন। সেদিনের  উত্তর ভারতে  (আজকের নেপালও তার মধ্যে ছিল ) এই সংবৎ প্রচলিত ছিল প্রায় ৩০০ বছর ।  তাই একজন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজা যখন নিজের নামে অব্দ বা সংবৎ প্রচলন করেন , তখন শশাঙ্কের পক্ষে একটি নতুন অব্দ ঘোষণাঘোষণা করা অসম্ভব ছিলনা। হর্ষবর্ধনের সমকালে এসেছিলেন চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ। ভারতবর্ষের মগধে তিনি বেশিরভাগ দিন অবস্থান করেন।মগধের বোধিবৃক্ষ দর্শন কালে সি ইউ কি গ্রন্থে ওই সময়ে প্রচলিত বৎসর গণনা সম্পর্কে কিছু আলোকপাত তিনি করেছিলেন । ইংরেজি ভাষায় গ্রন্থের অনুবাদ করেন স্যামুয়েল বেল।

ভারতীয় মাসগুলিকে হিউয়েন সাঙ দুটি ভাগে ভাগ করে দেখিয়েছিলেন। প্রথমে ১৫ দিন প্রথম অর্ধ এবং শেষ ১৫  দিন দ্বিতীয় অর্ধ। সেইসঙ্গে নিজের দেশ অর্থাৎ চৈনিক মাসগুলিরও তুলনা টেনেছিলেন। চীন দেশে বর্ষ সূচনা ছিল ভারতীয় চৈত্র মাসে । তাই আমাদের শ্রাবণ মাস সেদিনের চৈনিক নিয়ম অনুসারে পঞ্চম মাস এবং ভারতবর্ষের চতুর্থ মাস। অর্থাৎ ভারতীয় বছরের সূচনা বৈশাখ মাসে চালু হয়েগিয়েছিল।


 অর্থাৎ বুদ্ধদেবের পবিত্র নির্দেশে শ্রাবণ মাসের প্রথম অর্ধের প্রথম দিবস ভিক্ষুগণ #বর্ষা_উদযাপন_ব্রত পালন করতেন। সেই ব্রতের কাল শেষ হতো আশ্বিন মাসের দ্বিতীয় অর্ধের ১৫ তম দিবসে । যা আমাদের হিসেবে আশ্বিন মাসের ৩০ তারিখ । চীন দেশে এটি অষ্টম মাস। হিউয়েন সাঙ এও জানান যে এই বর্ষ উদযাপন এবং মাসের তারিখ নির্ধারণ করেছেন বুদ্ধদেব- স্বয়ং।


 এখানে এই প্রসঙ্গে স্মরণ করা যায়, হর্ষবর্ধন প্রেরিত হর্ষাব্দ কিন্তু পৌষ বা পুষ্য মাসেই শুরু হতো। হিউয়েন সাঙ এখানে  সেই উত্তর পথ নাথ হর্ষবর্ধনের প্রবর্তন করা হর্ষাব্দকে  উপেক্ষা করে বুদ্ধের নির্দেশমতো শ্রাবণের প্রথম দিন অর্থাৎ চতুর্থ মাস উল্লেখ করেছেন। বিনয়পিটকের অন্তর্গত #খন্ধকা  অংশের #মহাবগ্গগে কিন্তু কোথাও ভিক্ষুদের বর্ষা উদযাপনের জন্য শ্রাবণ বা আশ্বিন মাসের কথা বলা হয়নি। ভিক্ষুদের বাস অর্থাৎ  বাসস্থানের যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে বর্ষাকালে ।বর্ষবাস শুরু হয় #অস্লেষা নক্ষত্রের পূর্ণিমার পর দিবস থেকে । ইংরেজি জুন জুলাই অর্থাৎ আষাঢ় মাস থেকেই শুরু হতো বর্ষ উদযাপন।

 আসলে , সেই সময় জনসাধারণের  মধ্যে প্রচলিত বৈশাখ মাস থেকে বর্ষগণনাকে গুলিয়ে ফেলেছিলেন হিউয়েন সাঙ। এই গণনা তাঁর আগমনের পূর্ব কাল থেকে প্রচলিত ছিল । তাই স্বাভাবিক ভাবেই গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক তো বটেই তার সঙ্গে স্পষ্টতা পেয়ে ওঠেন জ্যোতিষ গুরু বরাহমিহির। 

সেই সময়  গৌড় বা বৃহৎ বঙ্গ এবং আজকের গয়া প্রভৃতি অঞ্চলে বরাহমিহিরের অদৃষ্ট তত্ত্ব, শুভাশুভ নির্ণয় , সাধারনপ্রজা সমাজে এত বেশি প্রচলিত ছিল যে রাজা শশাঙ্ক তাকে শুধুমাত্র নিজের মতো করে রাজনৈতিক ভাবে ঘোষণা করেছিলেন।  কিন্তু তাকে সমাজে প্রচলন করার জন্য জোর করতে হয়নি। বরং এই পঞ্জিকা, সিংহাসনে বসে প্রথম ব বঙ্গাব্দ গণনায় তিনি উৎসাহ প্রদান করেছিলেন । 
আমাদের দেশের কিছু পন্ডিত মানুষ আজও মনে করেন আকবর এই বঙ্গাব্দের প্রচারক ।। তাদেরকে সবিনয়ে বলি আকবর ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন । যদি তিনি বঙ্গাব্দের প্রচারক হতেন তাহলে ওই সময় ১ বঙ্গাব্দ ধরলে বঙ্গাব্দের বয়স মাত্র ৪৬৪ বছর হতো। কিন্তু তা হয়নি …. বঙ্গাব্দের বর্তমান বয়স ১৪২৬ বছর। এই সম্পর্কে বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা মহাশয় নিজ সমর্থন দিয়েছিলেন।
আকবর বিজ্ঞানসম্মত সৌর ক্যালেন্ডার হয়তো প্রচলিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ধর্মীয় কারণে হিজরী সনকেই ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন । আকবরনামা গ্রন্থের প্রমাণ থেকে গেছে আবুল ফজলের বর্ণনায়। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রকাশিত পাঁচ খণ্ডের আকবরনামা তৃতীয় এবং চতুর্থ খন্ড ভূমিকায় এ বিষয়ে বৃত্ত বিস্তারিত আলোচনা করেছেন হুইলার এম থ্যাক্সন।

ইদানিং কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন রাজা মঙ্গত রায় এই বঙ্গাব্দের সূচনা করেছেন ,আরাকান অর্থাৎ পূর্বের ব্রম্ভ দেশের প্রভাবে । এর উত্তরে বলা যায় কেবল , আরাকান নয় প্রাচীন বঙ্গ নয় , কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড ,নেপালেও বৈশাখ বর্ষ সূচনাকারী মাস পালিত হয়। বরাহমিহিরের শুভাশুভ নির্ণয় , অদৃষ্টতত্ত্ব, জাতক তত্ত্ব কেবল পূর্ব ভারত নয়,  সমগ্রঅখন্ড ভারত বর্ষ এবং  বৃহত্তর ভারতবর্ষেও ছড়িয়ে গিয়েছিল। বৈশাখ মাসে তামিলনাড়ু , কেরল এবং পাঞ্জাবেও বর্ষ সূচনাকারী মাস।  তামিল ভাষায় একে #পুঠান্দু এবং মালায়ালাম বলে #মেডাম । ভিন্ন দেশ ,ভিন্ন রাজ্য, ভিন্ন মানুষের এই বর্ষ গণনার পদ্ধতি অর্থাৎ বর্ষ সূচনাকারী মাস হিসাবে বৈশাখ মাসের প্রয়োগ এবং সঙ্গে সঙ্গে  বাংলায় প্রচলিত বঙ্গাব্দের উৎস প্রসঙ্গে আমরা প্রকৃতার্থে দেখতে পাই বরাহমিহিরের দীর্ঘ ছায়া।

#সমাপ্ত
©দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ  ১ . লোকায়ত রাঢ় বঙ্গ       

   ২. বিজ্ঞান চর্চায় প্রাচীন ভারত ও সমকালীন অন্যান্য দেশ   

       ৩. ঋগ্বেদ সংহিতা     

      ৪. শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা     

      ৫. বঙ্গাব্দ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.