প্রয়াত হলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের স্বয়ং সেবক, বিশিষ্ট সাংবাদিক,লেখক, সুবক্তা অসীম কুমার মিত্র । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩। বিগত বেশ কয়েক দিন ধরেই তিনি হৃদয় যন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন। বছর দুয়েক আগে তার হার্ট অপারেশন হয় । দিন পনেরো আগে তিনি পুনরায় অচৈতন্য হয়ে পড়ে যান। তাঁকে টালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে আরএসভি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । সেখানে তিনি কয়েক দিন আগে কোমায় চলে যান । শেষ পর্যন্ত কলকাতা প্রেসক্লাবের চেষ্টায় তাকে SSKM হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । আজ সকাল সাড়ে নটায় সেখনেই তাঁর মৃত্যু হয় । কয়েকদিন আগে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন তাঁর অবস্থার খবর নিতে হাসপাতালে ফোন করেন ।
এক সময় ‘স্বস্তিকা’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন অসীম মিত্র । ‘আজকাল’ পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক ছিলেন । ‘যুগশঙ্খ’ পত্রিকাতেও বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন । তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে দু দশকের বেশি অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বেশ কিছু বই লিখেছেন । সর্বভারতীয় সাংবাদিক সংগঠন ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টয়ের রাজ্য সভাপতি এবং প্রেস কাউন্সিল, ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন । তারসঙ্গে তিনি নিবেদীতা মিশন ট্রাস্টের সভাপতিও ছিলেন। নিয়মিত লেখক ছিলেন অর্গানাইজার ও পাঞ্চজন্য পত্রিকারও।
তিনি স্বর্গীয় অমিয় কান্তি মিত্রের সুপুত্র। অসীম বাবু কর্মজীবন শুরু করেন ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-এ । এই প্রতিষ্ঠানে তিনি ১৯৬২ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত কাজ করেন । সাব এডিটর হিসেবে ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় যোগ দেন ১৯৬৯ –এ । ১৯৮১ সালে আজকাল পত্রিকায় যোগ দেন । সেখান থেকে সিনিয়রএসিস্টেন্ট এডিটর হিসেবে ১৯৯৯ সালে অবসর নেন । তিনি প্রায় আড়াই বছর বাংলা সাপ্তাহিক স্বস্তিকার সম্পাদক ছিলেন ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও তিনি টেকনো ইন্ডিয়ার মাস কমিনিকেশন ডিপার্টমেন্ট, ঝাড়খন্ডের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটি, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি, মাখনলাল চতুর্বেদী ইউনিভার্সিটি অফ জার্নালিজম, পুনে ইউনিভার্সিটি সহ বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন । ১৯৭২ সালে তিনি সংবাদপত্রের ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িয়ে পরেন । তিনি সদস্য ছিলেন পালেকর এওয়ার্ড রূপায়ণ কমিটির । নিউজ প্রিন্ট এডভায়সারী কমিটি,প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া, ফিল্ম সেন্সর বোর্ড, সেন্ট্রাল প্রেস এক্রিডিয়েশন কমিটির সদস্য ছিলেন । তিন দফায় তিনি ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্ট-এর সভাপতি ছিলেন । ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন । পাঞ্চজন্য পত্রিকা আয়োজিত সাংবাদিকতার সেরার সম্মান ‘নচিকেতা সম্মান’ গ্রহণ করেন তিনি, ২০০১ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তাঁর হাত থেকে। ২০০৫ সালে অশোক সিংহলের কাছ থেকে পান ‘বাপুরাও লেলে’ এওয়ার্ড । ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলে জরুরি অবস্থা চলার সময় তিনি তিন মাসের জন্য জেলও খাটেন ।
আজ কিছুক্ষণ প্রেস ক্লাবের তাকে শায়িত রাখা হয় । রবীন্দ্র সঙ্গীতের মাধ্যমে ভাব গম্ভীর পরিবেশে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয় । কলকাতা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে সভাপতি স্নেহাশিস সূর, সম্পাদক কিংশুক প্রামানিক এবং হীরক কর পুস্পস্তবক দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান । হিন্দুস্থান সমাচারের পক্ষে অন্যতম ডিরেক্টর রথীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান । শোকপ্রকাশ করেন হিন্দুস্থান সমাচারের বর্তমান ব্যুরো চিফ সন্তোষ মধুপ । তাকে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন সংগঠন, এবং সাংবাদিকরা । প্রেসক্লাব থেকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বেহালার বাসভবনে । আজ সন্ধ্যারাতে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় ।
হীরক ও দুর্গা