লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ হিসেবে পরিচিত মহীয়সী নারী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।
ইতালির ফ্লোরেন্সে জন্মগ্রহণ করেন নাইটিঙ্গেল। তার বাবা উইলিয়াম এডওয়ার্ড নাইটিঙ্গেল ও মা ফ্রান্সিস নাইটিঙ্গেল। দুই বোনের মধ্যে ফ্লোরেন্স ছিলেন ছোট। তিনি ছিলেন অভিজাত ব্রিটিশ পরিবারের মেয়ে। ১৮২১ সালে তার বয়স যখন ২১ বছর, তখন তার পরিবার আবার ব্রিটেনে ফিরে যায়।
ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের সবসময়ই ইচ্ছে ছিল একজন সেবিকা হওয়ার। তার এ সিদ্ধান্ত তার বাবা-মা মেনে নিতে পারেননি, কেননা সেই সময়ে অভিজাত পরিবারের মেয়েরা সেবিকা হতো না, সেটাকে খুব নিচু দৃষ্টিতে দেখা হতো। পরবর্তীতে অবশ্য সেবিকার পেশা বেছে নেওয়ার ব্যাপারে বাবা-মায়ের সম্মতি পান তিনি। তাদের সম্মতিতেই একটি হাসপাতালে সুপারিনটেনড্যান্ট পদে যোগদান করেন ফ্লোরেন্স। শুরু করেন সেবাদানের কাজ।
১৮৫৪ সালে যখন ব্রিটেন, রাশিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়, তখন ৩৮ জন সেবিকাসহ যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন নাইটিঙ্গেল। ক্রিমিয়া ওয়ার বা ক্রিমিয়ার যুদ্ধ নামে পরিচিত এ যুদ্ধ চলেছিল দুই বছর। দুই বছরই নাইটিঙ্গেল ও তার দলের সেবিকারা আহতদের সেবা দিয়ে গেছেন ক্লান্তিহীনভাবে।
ক্রমে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল আধুনিক নার্সিংয়ের পথপ্রদর্শক বনে যান। গড়ে তোলেন নার্সিং শিক্ষার প্রতিষ্ঠান। ভারতবর্ষ ও ব্রিটেনের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতিতেও ছিলো তার ভূমিকা। নার্সিং বিষয়ক বইও লিখেছেন তিনি।
সেবাকাজে অসামান্য অবদানের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন নাইটিঙ্গেল। ১৮৮৩ সালে তিনি রানী ভিক্টোরয়ার কাছ থেকে ‘রয়্যাল রেডক্রস’ পদক লাভ করেন। প্রথম নারী হিসেবে অর্জন করেন ‘অর্ডার অব মেরিট’ খেতাব।
ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলকে বলা হতো ‘দ্যা লেডি উইথ দ্যা ল্যাম্প’। যেখানেই ছিল অসহায়ত্ব, যন্ত্রণার আঁধার, সেখানেই আলো হাতে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট এই মহীয়সী নারী মারা যান। পৃথিবী আজও তার প্রতি কৃতজ্ঞ, মানবসেবায় তার অসামান্য অবদানের জন্য।