অনলাইনে গাড়ি কিনতে গিয়ে প্রতারিত যুবক, তদন্তকারীদের নজরে রাজস্থানের ‘ভরতপুর গ্যাং’

অনলাইনে গাড়ি কিনতে গিয়ে প্রতারিত হলেন আসানসোলের কুলটির যুবক। আর প্রতারণার বিষয়টি বোঝামাত্রই তিনি অভিযোগ দায়ের করেন আসানসোল সাইবার সেলে। তবে ততক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার, হয়ে গিয়েছে। তাঁর ই-ওয়ালেট (E-Wallet) থেকে কয়েক দফায় প্রায় ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকের দল। তদন্তে উঠে আসছে নতুন এক প্রতারণা চক্রের হদিশ।


প্রতারণার কেন্দ্রে এই গাড়িই
এতদিন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মতো অপরাধের শীর্ষে ছিল ‘জামতাড়া গ্যাং’
এবার OLX-এ গাড়ির ভুয়ো বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে রাজস্থানের ‘ভরতপুর গ্যাং’। গত একবছর ধরে অনলাইন সাইটে পুরনো গাড়ির ভুয়ো বিজ্ঞাপন দিয়ে, নিজেদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিসারের পরিচয় শুরু হয়েছে প্রতারণা চক্র। রবিবার কুলটির যুবক সজল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যে কায়দায় প্রতারণা হয়েছে, তার সঙ্গে মিল রয়েছে ‘ভরতপুর গ্যাং’য়ের অপারেশনের। এমনটাই মনে করছেন সাইবার সেলের দায়িত্বে থাকা তদন্তকারী অফিসাররা। গ্যাংটিকে হাতেনাতে ধরার জন্য বেড়েছে তৎপরতা।


জনপ্রিয় বিকিকিনির সাইট OLX-এর মাধ্যমে অনেকেই পুরনো জিনিস বিক্রি করছেন। কেউ তা কিনেওছেন। কিন্তু সেই অন্তর্জালের ভিতরেই যে প্রতারণার জাল বিছিয়ে রাখা, তা কে-ই বা বুঝেছিল? কুলটির মিঠানির যুবক সজল চট্টোপাধ্যায়ও সেই জালে ফেঁসে খোয়ালেন ৪০ হাজার টাকা। সজল জানান, তিনি অন্যের গাড়ি ভাড়ায় চালান। নিজে গাড়ি কিনে চালাবেন, এই পরিকল্পনা ছিল। OLX-এ দেওয়া বিজ্ঞাপনে তিনি দেখেন, আসানসোলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া অল্টো গাড়ি বিক্রির জন্য রাখা আছে। ওই গাড়িটি বিক্রির জন্য যিনি ওই সাইটে পোস্ট করেছিলেন, তিনি নিজেকে সেনা আধিকারিক চন্দ্রভূষণ মিশ্র বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। চন্দ্রভূষণ দাবি করেন, একসময় আসানসোলে ছিলেন, বর্তমানে ভূবেনশ্বরে কর্মরত।

গাড়িটি কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন সজলবাবু। এরপর বিক্রেতা চন্দ্রভূষণ সজলকে জানান, ক্যুরিয়ারের মাধ্যমে গাড়িটি পাঠানো হবে। ক্যুরিয়ার সংস্থার ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে রাম কুমার নামে একজন ফোন করে সজলকে। জানানো হয় ক্যুরিয়ারের তরফ থেকে গেটপাসের জন্য ৫১০০ টাকা পাঠাতে হবে। যেটা পরে ফেরত মিলবে। শুক্রবার সরল বিশ্বাসে ওই টাকা অনলাইন ওয়ালেট থেকে সজল পাঠিয়ে দেন সংস্থায়।

এরপর শনিবার ফাইল প্রসেসিং চার্জ বাবদ ১৪ হাজার ৯৯৯ টাকা চাওয়া হয় সজলের কাছে। একইভাবে সেই টাকাও পাঠান তিনি। এরপর আর্মি কুরিয়ারে GPRS সিস্টেমের নামে ওই ব্যক্তি আরও ৭ হাজার ২০০ টাকা পাঠাতে বলেন। তিনি তাও পাঠান। এরপর ফাইনাল প্রসেসিংয়ের জন্য ৯ হাজার ৯০০ টাকা চাওয়া হলে তাও দিয়ে দেন। কিন্তু সময় গড়িয়ে গেলেও গাড়ি আর আসেনি। শেষ পর্যন্ত সজল বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। মোট ৩৮ হাজার ৪০০ টাকা খুইয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি।


আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের এসিপি (ডিডি ও সাইবার) সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য্য বলেন, ”প্রতিদিন এই ধরণের অভিযোগ প্রচুর জমা পড়ছে আমাদের কাছে। আর্মি অফিসারের নাম নিয়ে বা ছবি ব্যবহার করে এই প্রতারণা হচ্ছে। এই প্রতারণা চক্রটি স্থানীয় নয়। মূলত রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশের বর্ডার থেকে অপারেট হচ্ছে। আমরা শহরবাসীকে অনুরোধ করব, ভারচুয়াল আলাপের মাধ্যমে যে লেনদেন হচ্ছে, তা এড়িয়ে সরাসরি যোগযোগ করে কেনাকাটা করতে। তাতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।” এই প্রতারণা চক্রের হদিশ পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.