ভোট ব্যাঙ্কের নেশায় জ্ঞানপাপী

ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন বা এন আর সি নিয়ে বর্তমান ভারতবর্ষে উদ্ভুত রাজনৈতিক পেক্ষাপটকে বুঝতে হলে মহাভারতের ছোট্ট একটি ঘটনার উল্লেখ করা প্রয়োজন ।পিতামহ ভীষ্ম যখন দুর্যোধনের ক্রমবর্ধমান অনৈতিক জীবন যাপন দেখে বিস্মৃত হয়ে একদিন দুর্যোধনকে ডেকে জিজ্ঞেসা করলেন যে সে এবং তার পাণ্ডব ভাইরা একই সাথে গুরুগৃহে শিক্ষালাভ করার পরেও তাদের চরিত্রের এত বৈসাদৃশ্য কেন ? উত্তরে দুর্যোধন জানিয়েছিলেন যে গুরুগৃহের শিক্ষা তার মধ্যে যথেষ্টই বর্তমান কিন্তূ পাণ্ডবদের অনুসরণ করার প্রবৃত্তি তার মধ্যে নেই ।পিতামহ সেদিনই বুঝতে পেরেছিলেন নৈতিকতা ও অনৈতকতার আবহমান দ্বন্দে দুর্যোধন দ্বিতীয় পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা পেতে চলেছে । আসাম যা প্রাচীন বার্মা দেশের একটি অংশ ছিল যা পরবর্তী কালে প্রথম ইঙ্গ বর্মা যুদ্ধের পর ১৮২৬ সালে ইয়ানডাবো চুক্তির মাধ্যমে ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণে আসে । প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ আসামকে বাণিজ্যিক প্রয়োজনে যথেচ্ছ ব্যবহারের জন্য ইংরেজরা পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলি থেকে প্রচুর মানুষকে সেখানে স্থানান্তরিত করেছিল ।প্রথম দিকে আসামী জনজাতি ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলি থেকে আসা মানুষগুলির মধ্যে তেমন কোন বিরোধ ছিলনা ,পরবর্তীকালে প্রাকৃতিক নিয়মে জীবন ও জীবিকার লড়াইয়ের প্রশ্নে তাদের মধ্যে কিছু বিরোধ দেখা দেয় যার ফলশ্রুতি হিসেবে ১৯৫১ সালের জনগণনাকে ভিত্তি হিসেবে ধরে আসামে সেই বছরই প্রথম এন আর সি গঠন করা হয় ।এরপর বহ্মপুত্র দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে ।প্রথম এন আর সি গঠনের প্রায় ৬২ বছর পর ২০১৩ সালে আসাম পাবলিক ওয়ার্কস ও আসাম সম্মিলিত মহাসঙ্ঘের যৌথ উদ্যোগে করা জনস্বার্থ মামলার পরিপেক্ষিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আসামে দ্বিতীয় বার এন আর সি গঠন করার নির্দেশ দেয় ।পাঁচ বছর ধরে চলা এই প্রক্রিয়ায় মোট ৩৩০২৭৬৬১ জন মানুষ নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন করেছিলেন যার মধ্যে চূড়ান্ত তালিকায় ৩১১২১০০৪ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয় । এন আর সি পক্রিয়া চলাকালীন এদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের ভোটব্যংককে সচল রাখতে কখনো বাঙালী অসমীয়া দ্বন্দ্ব ,কখনো আদিবাসী জনজাতির সহিত সাধারণ জনজাতির দ্বন্দ্ব,কখন সংখ্যালঘু উৎপীরণের তত্ত্ব কে সামনে এনে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করেছেন ,এবং একশ্রেণীর আঞ্চলিক সংবাদ মধ্যম ডি-ভোটার ,ডিটেনশন ক্যাম্প এই শব্দ গুলি যা এদেশের যুব সম্প্রদায়ের কাছে সম্পূর্ণ নতুন তার অপপ্রয়োগ করে বিজেপি সরকারকে খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ করার চেষ্টা করেছেন ।তাই এদেশের যুব সম্প্রদায়ের কাছে সত্য ইতিহাস তুলে ধরাটা অত্যেন্ত্ প্রয়োজন । স্বাধীনতার পর নাগরিকত্ব নিয়ে আসামের আন্দোলনের মূল পর্ব টির সূত্রপাত ১৯৭৮ সালে ,যখন মঙ্গলদোই লোকসভা উপনির্বাচনে অস্বাভাবিক ভাবে ভোটার বৃদ্ধি পায় যার একটা বড় অংশই বাংলাদেশী মুসলিম ।তার পর থেকেই অল অসম স্টুডেন উনিয়ন যা পরবর্তীতে অসম গণপরিষদ নামক রাজনৈতিক দলের জন্ম দেয় ,তাদের নের্তৃত্বে আসাম জুড়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জী গঠনের দাবিতে নিরন্তর আন্দোলন চলতে থাকে । কিন্তূ তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধী সরকার তাদের আন্দোলনকে কোনরূপ আমল না দিয়ে কোনরকম ভোটার তালিকায় সংশোধন ছাড়াই ১৯৮৩ সালে আসামে বিধানসভা নির্বাচন সংগঠিত করে । এর আগে ১৯৭৭সালে পরীক্ষামূলক ভাবে ভোটারতালিকা সংশোধনী পক্রিয়াই ১২০০০০ মানুষকে ডি-ভোটার হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং তাদেরকে বিদেশি ট্রাইবুনালের কাছে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমান করতে পাঠানো হয় ।এইরকম ডি-ভোটার চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া আসামে বহুবার হয়েছে এবং ২০১১ সালের গুয়াহাটি হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে ৬ টি ডিটেনশন সেন্টারে রেখে তাদের বিদেশীদের জন্য গঠিত ট্রাইবুনালে গিয়ে নাগরিকত্ব প্রমান করতে বলা হয় । কাজেই ডি-ভোটার বা ডিটেনশন সেন্টার কোনটিই বিজেপির দ্বারা সৃষ্ট নয় । আসামে নাগরিকত্বের এই আন্দোলনে দুটি ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি হল ১৯৮৩ সালের নেইলি গণহত্যা যার ফলস্বরূপ সেই বছরই সদ্য গঠিত হিতেশ্বর সাইকিয়ার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার ভেঙ্গে দেওয়া হয় । আর একটি হল ২০১২সালে কোকরাঝড় হিংসার ঘটনা ।দুটি ক্ষেত্রেই বোড়ো জনজাতির সাথে বাংলাদেশী মুসলিমদের সংঘর্ষ বাধে । তাই বাঙালী অসমীয়া দ্বন্দ্ব বা আদিবাসী ও সাধারণ জনজাতি দ্বন্দ্ব কোনটিই ধোপে টেকে না । এবার যারা অসমে বসবাসকারী বাংলাদেশী হিন্দু ও মুসলিমদের একই দাঁড়িপাল্লাই রেখে বিচার করতে চাইছেন তাদেরকে কিছু তথ্য দেবার প্রয়োজন । ১৯৬৩ সালে শ্রীনগরের হজরতবেল মসজিদের একটি ধ্বংসাবশেষ হারিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা খুলনা সহ ঢাকা ,নারায়নগঞ্জ ,রাজশাহী ,সিলেট ও ময়মনসিংহে সরকারের প্রত্ক্ষ মদতে অবাধ হিন্দু নিধন সংগঠিত হয় এবং ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকার একটি অর্ডিন্যান্স জারি করে হিন্দুদের সম্পত্তি বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ,যার ফলস্বরূপ ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু সহায় সম্বল হারিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ,আসাম ও ত্রিপুরায় আশ্রয় নেয় । সরকারী মদতে সংগঠিত হওয়া এটি বিশ্বের অন্যতম এথনিক ক্লিনসিং বা জাতিগত নির্মূলকরণ , যাতে মাত্র দুই বছরে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ খুলনা জেলা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতে রূপান্তরিত হয় । জাতিগত নির্মূলকরণের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশের ছয় বছর পর ১৯৭৭ সালে যখন তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে ধৰ্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থেকে পরিবর্তন করে ইসলামিক প্রজাত্ৰন্ত্রে রূপান্তরিত করার কথা ঘোষণা করেন । এরপর থেকে প্রথমে ১৯৮৮ তারপর ১৯৯২ ,১৯৯৮ ,২০১১সালে ঘটে চলা সংগঠিত হিন্দু নিধন এছাড়াও নিরন্তর বিচ্ছিন্নভাবে ঘটে চলা হিন্দু উৎপীড়ন লক্ষাধিক বাংলাদেশী হিন্দুকে তাদের ভিটে মাটি ছেড়ে এদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে । এটি একটি বৃহত্তর ইসলামিক মৌলবাদী পরিকল্পনার অংশ যেখানে প্রথমে বাংলাদেশকে হিন্দু শূন্য করা ও পরে ভারতের উত্তর পূর্ব অংশে জনসংখ্যার বিন্যাসে পরিবর্তন করে সেখানে ইসলামিক প্রভুত্ব স্থাপন করা ।২০১১সালের জনগণনাও আমাদের সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে যেখানে ২০০১থেকে ২০১১ এই দশ বছরে আসামে হিন্দু জনসংখ্যা তিন শতাংশ কমেছে ও মুসলিম জনসংখ্যা ঠিক সমপরিমাণে বেড়েছে । এই প্রবণতা চলতে থাকলে আসামে তেত্রিশ টি জেলার মধ্যে পনেরোটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়বে । এই সত্যিটা কোন রাজনৈতিক দলের কাছেই অজানা নয় তবুও তারা ভোটব্যংকের স্বার্থে এই অসহায় হিন্দুদের পাশে দাঁড়াতে অপারগ । তাতে তারা রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবধিকার সনদ যাতে ভারত অন্যতম সাক্ষরকারী তার বিরোধীতা করতেও পিছুপা নয় । মহাভারতের দুর্যোধনের মতই তাদেরও জ্ঞান আছে কিন্তু নৈতিকতার পথে চলার প্রবৃত্তি নেই ।

ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন বা এন আর সি নিয়ে বর্তমান ভারতবর্ষে উদ্ভুত রাজনৈতিক পেক্ষাপটকে বুঝতে হলে মহাভারতের ছোট্ট একটি ঘটনার উল্লেখ করা প্রয়োজন ।পিতামহ ভীষ্ম যখন দুর্যোধনের ক্রমবর্ধমান অনৈতিক জীবন যাপন দেখে বিস্মৃত হয়ে একদিন দুর্যোধনকে ডেকে জিজ্ঞেসা করলেন যে সে এবং তার পাণ্ডব ভাইরা একই সাথে গুরুগৃহে শিক্ষালাভ করার পরেও তাদের চরিত্রের এত বৈসাদৃশ্য কেন ? উত্তরে দুর্যোধন জানিয়েছিলেন যে গুরুগৃহের শিক্ষা তার মধ্যে যথেষ্টই বর্তমান কিন্তূ পাণ্ডবদের অনুসরণ করার প্রবৃত্তি তার মধ্যে নেই ।পিতামহ সেদিনই বুঝতে পেরেছিলেন নৈতিকতা ও অনৈতকতার আবহমান দ্বন্দে দুর্যোধন দ্বিতীয় পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা পেতে চলেছে । আসাম যা প্রাচীন বার্মা দেশের একটি অংশ ছিল যা পরবর্তী কালে প্রথম ইঙ্গ বর্মা যুদ্ধের পর ১৮২৬ সালে ইয়ানডাবো চুক্তির মাধ্যমে ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণে আসে । প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ আসামকে বাণিজ্যিক প্রয়োজনে যথেচ্ছ ব্যবহারের জন্য ইংরেজরা পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলি থেকে প্রচুর মানুষকে সেখানে স্থানান্তরিত করেছিল ।প্রথম দিকে আসামী জনজাতি ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলি থেকে আসা মানুষগুলির মধ্যে তেমন কোন বিরোধ ছিলনা ,পরবর্তীকালে প্রাকৃতিক নিয়মে জীবন ও জীবিকার লড়াইয়ের প্রশ্নে তাদের মধ্যে কিছু বিরোধ দেখা দেয় যার ফলশ্রুতি হিসেবে ১৯৫১ সালের জনগণনাকে ভিত্তি হিসেবে ধরে আসামে সেই বছরই প্রথম এন আর সি গঠন করা হয় ।এরপর বহ্মপুত্র দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে ।প্রথম এন আর সি গঠনের প্রায় ৬২ বছর পর ২০১৩ সালে আসাম পাবলিক ওয়ার্কস ও আসাম সম্মিলিত মহাসঙ্ঘের যৌথ উদ্যোগে করা জনস্বার্থ মামলার পরিপেক্ষিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আসামে দ্বিতীয় বার এন আর সি গঠন করার নির্দেশ দেয় ।পাঁচ বছর ধরে চলা এই প্রক্রিয়ায় মোট ৩৩০২৭৬৬১ জন মানুষ নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন করেছিলেন যার মধ্যে চূড়ান্ত তালিকায় ৩১১২১০০৪ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয় । এন আর সি পক্রিয়া চলাকালীন এদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের ভোটব্যংককে সচল রাখতে কখনো বাঙালী অসমীয়া দ্বন্দ্ব ,কখনো আদিবাসী জনজাতির সহিত সাধারণ জনজাতির দ্বন্দ্ব,কখন সংখ্যালঘু উৎপীরণের তত্ত্ব কে সামনে এনে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করেছেন ,এবং একশ্রেণীর আঞ্চলিক সংবাদ মধ্যম ডি-ভোটার ,ডিটেনশন ক্যাম্প এই শব্দ গুলি যা এদেশের যুব সম্প্রদায়ের কাছে সম্পূর্ণ নতুন তার অপপ্রয়োগ করে বিজেপি সরকারকে খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ করার চেষ্টা করেছেন ।তাই এদেশের যুব সম্প্রদায়ের কাছে সত্য ইতিহাস তুলে ধরাটা অত্যেন্ত্ প্রয়োজন । স্বাধীনতার পর নাগরিকত্ব নিয়ে আসামের আন্দোলনের মূল পর্ব টির সূত্রপাত ১৯৭৮ সালে ,যখন মঙ্গলদোই লোকসভা উপনির্বাচনে অস্বাভাবিক ভাবে ভোটার বৃদ্ধি পায় যার একটা বড় অংশই বাংলাদেশী মুসলিম ।তার পর থেকেই অল অসম স্টুডেন উনিয়ন যা পরবর্তীতে অসম গণপরিষদ নামক রাজনৈতিক দলের জন্ম দেয় ,তাদের নের্তৃত্বে আসাম জুড়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জী গঠনের দাবিতে নিরন্তর আন্দোলন চলতে থাকে । কিন্তূ তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধী সরকার তাদের আন্দোলনকে কোনরূপ আমল না দিয়ে কোনরকম ভোটার তালিকায় সংশোধন ছাড়াই ১৯৮৩ সালে আসামে বিধানসভা নির্বাচন সংগঠিত করে । এর আগে ১৯৭৭সালে পরীক্ষামূলক ভাবে ভোটারতালিকা সংশোধনী পক্রিয়াই ১২০০০০ মানুষকে ডি-ভোটার হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং তাদেরকে বিদেশি ট্রাইবুনালের কাছে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমান করতে পাঠানো হয় ।এইরকম ডি-ভোটার চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া আসামে বহুবার হয়েছে এবং ২০১১ সালের গুয়াহাটি হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে ৬ টি ডিটেনশন সেন্টারে রেখে তাদের বিদেশীদের জন্য গঠিত ট্রাইবুনালে গিয়ে নাগরিকত্ব প্রমান করতে বলা হয় । কাজেই ডি-ভোটার বা ডিটেনশন সেন্টার কোনটিই বিজেপির দ্বারা সৃষ্ট নয় । আসামে নাগরিকত্বের এই আন্দোলনে দুটি ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি হল ১৯৮৩ সালের নেইলি গণহত্যা যার ফলস্বরূপ সেই বছরই সদ্য গঠিত হিতেশ্বর সাইকিয়ার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার ভেঙ্গে দেওয়া হয় । আর একটি হল ২০১২সালে কোকরাঝড় হিংসার ঘটনা ।দুটি ক্ষেত্রেই বোড়ো জনজাতির সাথে বাংলাদেশী মুসলিমদের সংঘর্ষ বাধে । তাই বাঙালী অসমীয়া দ্বন্দ্ব বা আদিবাসী ও সাধারণ জনজাতি দ্বন্দ্ব কোনটিই ধোপে টেকে না । এবার যারা অসমে বসবাসকারী বাংলাদেশী হিন্দু ও মুসলিমদের একই দাঁড়িপাল্লাই রেখে বিচার করতে চাইছেন তাদেরকে কিছু তথ্য দেবার প্রয়োজন । ১৯৬৩ সালে শ্রীনগরের হজরতবেল মসজিদের একটি ধ্বংসাবশেষ হারিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা খুলনা সহ ঢাকা ,নারায়নগঞ্জ ,রাজশাহী ,সিলেট ও ময়মনসিংহে সরকারের প্রত্ক্ষ মদতে অবাধ হিন্দু নিধন সংগঠিত হয় এবং ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকার একটি অর্ডিন্যান্স জারি করে হিন্দুদের সম্পত্তি বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ,যার ফলস্বরূপ ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু সহায় সম্বল হারিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ,আসাম ও ত্রিপুরায় আশ্রয় নেয় । সরকারী মদতে সংগঠিত হওয়া এটি বিশ্বের অন্যতম এথনিক ক্লিনসিং বা জাতিগত নির্মূলকরণ , যাতে মাত্র দুই বছরে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ খুলনা জেলা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতে রূপান্তরিত হয় । জাতিগত নির্মূলকরণের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয় স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশের ছয় বছর পর ১৯৭৭ সালে যখন তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে ধৰ্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থেকে পরিবর্তন করে ইসলামিক প্রজাত্ৰন্ত্রে রূপান্তরিত করার কথা ঘোষণা করেন । এরপর থেকে প্রথমে ১৯৮৮ তারপর ১৯৯২ ,১৯৯৮ ,২০১১সালে ঘটে চলা সংগঠিত হিন্দু নিধন এছাড়াও নিরন্তর বিচ্ছিন্নভাবে ঘটে চলা হিন্দু উৎপীড়ন লক্ষাধিক বাংলাদেশী হিন্দুকে তাদের ভিটে মাটি ছেড়ে এদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে । এটি একটি বৃহত্তর ইসলামিক মৌলবাদী পরিকল্পনার অংশ যেখানে প্রথমে বাংলাদেশকে হিন্দু শূন্য করা ও পরে ভারতের উত্তর পূর্ব অংশে জনসংখ্যার বিন্যাসে পরিবর্তন করে সেখানে ইসলামিক প্রভুত্ব স্থাপন করা ।২০১১সালের জনগণনাও আমাদের সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে যেখানে ২০০১থেকে ২০১১ এই দশ বছরে আসামে হিন্দু জনসংখ্যা তিন শতাংশ কমেছে ও মুসলিম জনসংখ্যা ঠিক সমপরিমাণে বেড়েছে । এই প্রবণতা চলতে থাকলে আসামে তেত্রিশ টি জেলার মধ্যে পনেরোটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়বে । এই সত্যিটা কোন রাজনৈতিক দলের কাছেই অজানা নয় তবুও তারা ভোটব্যংকের স্বার্থে এই অসহায় হিন্দুদের পাশে দাঁড়াতে অপারগ । তাতে তারা রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবধিকার সনদ যাতে ভারত অন্যতম সাক্ষরকারী তার বিরোধীতা করতেও পিছুপা নয় । মহাভারতের দুর্যোধনের মতই তাদেরও জ্ঞান আছে কিন্তু নৈতিকতার পথে চলার প্রবৃত্তি নেই

সোমনাথ গোস্বামী (Somnath Goswami)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.