“শীতলকুচিতে ওসি ছিলাম, কোচবিহারের শীতলকুচি।( আজ যেখানে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে চারজন প্রয়াত হলেন )
Debashis Banerjee এর ওয়াল থেকে —– শীতলকুচিতে আইনের শাসন নিয়ে লিখেছেন এক সময় ওখানে কর্মরত পুলিশের ওসি । কি ভয়াবহ অবস্থা । বাম আমল থেকেই এই চূড়ান্ত অরাজগতার শুরু তৃণমূল আমলে পাপের বৃত্তটা সম্পুর্ণ হয়েছিল । একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে আইনের শাসনের বাইরে রেখে বস্তুতপক্ষে ধীরে ধীরে সমগ্র উত্তরবঙ্গ তুলে দেওয়া হচ্ছিল জিহাদিদের হাতে । শুনুন —
“শীতলকুচিতে ওসি ছিলাম, কোচবিহারের শীতলকুচি।( আজ যেখানে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে চারজন প্রয়াত হলেন )
1998সালের জুলাইয়ে জয়েন করেছিলাম তুফানগঞ্জ থেকে!তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা জেলা কনভেনার বলেছিল বা পরামর্শ দিয়েছিল_ ভাই ওখানে যেয়েন না ! খুব বাজে জায়গা, চাকরি করতে গেলে বিপদে পড়ে যাবেন। আপনাকে চিনি বলে বলছি!
আমি উত্তর দিয়েছিলাম যে এস পি ( ডঃ সুধীর মিশ্র, আই পি এস) পোষ্টিং করেছেন, যাবো না কেন ? যতদিন পারি থাকবো, নাহলে মরবো ! আর একান্তই না পারলে এস পি কে বলবো স্যার অন্য জায়গায় দিন!
1998জুলাইয়ে গেলাম 2000সালের মার্চে সবার সাথে আমার ও বদলি হলো হলদিবাড়ী ওসি হিসেবে। মানে প্রায় 22মাস ছিলাম ওখানে ওসি হিসেবে।
তৎকালীন শাসক দল ও শাসকগোষ্ঠী তাদের নির্দেশ মত বা পরিকল্পনা মত আমাকে চালাতে পারেনি। সরাসরি বিরোধিতা করতো প্রতিটি কাজের! থানা এলাকায় বাংলাদেশ সীমান্ত প্রায় 22/23 কিমি , এছাড়া একদিকে মাথাভাঙ্গা, একদিকে সিতাই, কিছুটা কোচবিহার সদর !!
ঐ থানায় দায়িত্ব নিয়ে দেখলাম প্রায় 2500মত নন বেলেবল ওয়ারেন্ট! তারমধ্যে 1984 সালের ভয়ঙ্কর একটি রায়টিং ও আর্সন কেসে ই প্রায় তিনশো ওয়ারেন্ট ! শাসকগোষ্ঠীর ছোট বড় নেতার ই চার পাঁচ টি করে ওয়ারেন্ট।
আমি পরিচয় হবার পর ও দিন সাতেক পরে ওয়ারেন্ট এর ব্যাপারটা জানার পর লোকাল ও জোনাল সেক্রেটারি দের বলেছিলাম ওয়ারেন্ট খারিজ করে থানায় আসবেন। জেলা সেশন কোর্টে বা হাইকোর্টে স্যারেন্ডার করে বেল নিয়ে আসুন ! এইটাই হলো ওদের উষ্মার কারণ। কোনো ওসি বলতে সাহস করেনি, আমিই বলেছিলাম।
22 মাস আমিও অত্যন্ত সাবধানে ছিলাম, ওদের ও চরম টেনশনে রেখেছিলাম। আমাকে বদলি করে দেবার হুমকি প্রায় প্রত্যহ দেওয়া হতো। আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম। কোনোভাবেই আমাকে ক্যাপচার না করতে পেরে আমার কাজের বা রান্নার মাসি ( মেড) কে হাত করে খাবারে বিষ মেশানোর পরিকল্পনা হলো , যাতে দুনিয়া থেকে ই বিদায় করে দেয়া যায় !
বেলা বারোটা নাগাদ থানায় একটি ফোন আসলো, মহিলা কন্ঠ ! ডিউটি অফিসার ফোন তুললে বলা হলো ওসির সাথে কথা বলবো_ লাইনটা দিন। ডিউটি অফিসার পরিচয় জানতে চাইলে বলা হলো ওসি আমাকে নিশ্চয় চিনতে পারবেন।
রিসিভার তুললাম, গলা চিনতে পারলাম না। আমি মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা, 900কিমি দূরে শীতলকুচি বা মাথাভাঙ্গায় কে পার্সোনালি চিনবে? পরিচয় জানতে চাইলে বললেন পরে বলছি। আপনি আগে আপনার রান্নার মাসি কে ছাড়িয়ে দিন। আর ওর হাতের রান্না করা কোন খাবার খাবেন না!
আমি অবাক হয়ে গেলাম, উনি বললেন আপনাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত চলছে! আপনি শাসক দলের কথায় চলছেন না ! আপনি খুব সাবধানে থাকবেন। আমার ভয় করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনি আমাকে কিভাবে চেনেন? উনি বললেন আমি আপনাকে চিনি আপনি আমাকে চেনেন না ! তবে আমি আপনার খবর রাখি!
ফোন ছাড়লাম, কোয়ার্টারে আসলাম। রান্নার মাসি আগের ওসি মিঃ ছেত্রীর আমল থেকেই কাজ করতো ! সাড়ে বারোটার দিকে কাজ সেরে চলে গেছে। হটকেস খুললাম, চারবাটির মিলটন হটকেস , ভাত, ভাল, তরকারি- মাংস ! ফেলে দিলাম দরজা খুলে।
ভালো করে ধুয়ে নিয়ে হোমগার্ড ডেকে বললাম সাইকেলে করে গিয়ে হোটেল থেকে খাবার নিয়ে এসো !
কাজকর্ম সেরে বেলা দুটোর সময়ে আবার কোয়ার্টারে ফিরলাম। আধঘন্টা পরে টিভি খুলে খেতে বসলাম। খাওয়া হলে কৌতুহল বশত পেছনের দরজা খুলে দেখলাম। আমার ফেলে দেয়া খাবার খেয়ে একটা বিড়াল ও একটা কাঠবেড়ালি মরে পড়ে আছে, একটা কুকুর বমি করছে – গড়াগড়ি দিচ্ছে !! “
(প্রথম পর্ব সমাপ্ত- পরবর্তী তে চোখ রাখুন )
জয়দীপ বসু।
Writer is in service and hold a post of deputy superintendent of police, WBPS
(সংগৃহীত)