নির্বাচনের দামামা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যাশিতভাবেই শুরু হয়ে গিয়েছে ইসলামপন্থীদের সংখ্যাশক্তির আস্ফালন। গত ১০ বছর যাবৎ এঁরাই পরিচালনা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, আর এঁদের অঙ্গুলিহেলনেই গত দশকে পশ্চিমবঙ্গ-পরিচালনা করেছেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। এ রাজ্যে ইসলামপন্থী ইমামদের ঘাঁটি হুগলী জেলার ফুরফুরা শরীফ। রাজ্যে মুসলমান সংখ্যাবৃদ্ধির পরিচিত মেকানিজমের মাধ্যমে রাজ্য রাজনীতিতে অপরিসীম অথচ অবাঞ্ছনীয় প্রভাব বিস্তার করেছে ইসলামিক এই ধর্ম প্রতিষ্ঠানটি। রাজস্থানের আজমেঢ় শরীফের পরে এ রাজ্যের ফুরফুরা শরীফই হল ধর্মের মোড়কে রাজনৈতিক ইসলামের অন্যতম ঘাঁটি।
ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী এবং তাঁর অনুগামীরা ইতিমধ্যেই আশীর্বাদের হাত রেখেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মাথায়। অন্যদিকে ত্বহার ভাইপো আব্বাস সিদ্দিকী (যিনি ‘ভাইজান’ নামে পরিচিত) এআইএমআইএম-এর আসাদউদ্দিন ওয়েইসি’র সমর্থন নিয়ে গঠন করে ফেলেছেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ নামে তাঁর নিজস্ব পৃথক রাজনৈতিক দল। এ হেন আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফের সঙ্গে নির্বাচনী আসন-সমঝোতায় চলে গিয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট।
এইভাবেই, পশ্চিমবঙ্গের পুরো মুসলিম সমাজকে কেবলমাত্র ধর্মীয়ভাবে নয়, রাজনৈতিকভাবেও নিজেদের ছত্রছায়ায় নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ওপর সংখ্যাগতভাবে আধিপত্য বিস্তার করেছে ফুরফুরা শরীফ। বর্তমান ফুরফুরার দুই হাত। ১. কাকা ত্বহা ও ২. ভাইপো আব্বাস। ত্বহা হাত রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথায়, আর আব্বাস রয়েছেন বাম-কংগ্রেসের সাথে। গোটা পশ্চিমবঙ্গের তথাকথিত সেক্যুলার দলগুলো, অর্থাৎ টিএমসি, কংগ্রেস ও সিপিএম প্রত্যেকেই, সেক্যুলার মন্ত্র জপ করতে করতে কিভাবে যে ম্যাজিকের মত চলে এসেছে একটি বিশেষ ধর্মের ধর্মগুরুদের ছত্রছায়ায়, তা একটি কেস স্টাডি হওয়ার উপযুক্ত। সুনিশ্চিত সংখ্যক জয়সূচক ভোটের লোভে এই ফুরফুরার ধর্মগুরুদের থাবার মধ্যে থেকেই গত দশ বছর ধরে ওঠবোস করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সেই কারণেই পশ্চিমবঙ্গ কার্যতঃ পরিণত হয়েছে একটি ইসলামিক ধর্মগুরু-পরিচালিত রাজ্যে। মুসলিম ইমামরা কিভাবে ভোটের টোপ দিয়ে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারেন, রাজ্যে নির্বাচনী ঘন্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে তা আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠল।
নির্বাচনের ময়দানে ত্বহা ও আব্বাস যদিও একে অপরের প্রতিপক্ষ, তবুও সময় ও সুযোগ মত ক্ষমতা ও রাজনৈতিক ফায়দার সমীকরণ দেখতে পেলে ‘আমে-দুধে মিশে যেতে’ কাকা-ভাইপো জুটি যে একটুও অতিরিক্ত সময় নেবেন না, তা অনুমান করতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পড়ে না। এতকালের মত পর্দার আড়াল থেকে নয়, বরং সরাসরিই যদি রাজ্য রাজনীতির ওপর তাৎপর্যপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে পারে ফুরফুরা শরীফ তবে আসাদউদ্দিন ওয়েইসি’র AIMIM এর এ রাজ্যের রাজনীতিতে দৃঢ় ও স্থায়ী পদক্ষেপ রাখাও হবে কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষা। ফুরফুরার দাপট ও ফুরফুরা-আইমিমের যুগলবন্দীর সম্ভাবনা ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদীদের পক্ষে সুবর্ণসুযোগ হলেও পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে তা ঘোর অমঙ্গলজনক। এমন সব ঘটনায় বাংলার মানুষের প্রমাদ গোনা উচিত।
তৃনমূল তাদের মুসলিম তোষন নীতির জন্য প্রথম থেকেই সুপরিচিত। কিন্তু ২০২১ এর নির্বাচন স্পষ্ট করে দেখালো হল যে কেবলমাত্র তৃণমূল নয় ‘মুসলিম ক্রাচ’ ছাড়া কার্যক্ষেত্রে চলতে পারে না বাম-কংগ্রেস জোটও। তারও কারণ ভোটব্যাঙ্ক বৈ নয়। এ রাজ্যে বামপন্থীরা এবং কংগ্রেসও জয়লাভ করে মূলতঃ মুসলিম-অধ্যুষিত বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে, মুসলমান ভোটের ভিত্তিতে। এবছর সে সব ভোট আব্বাস সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের বাক্সে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে গিয়েছে। ফলে আইএসএফের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজেদের জোরে ভোটে যাওয়ার ক্ষমতা বাম-কংগ্রেসের আদতে আর নেই। সেই কারণেই অস্তিত্ব রক্ষার্থে আব্বাস সিদ্দিকির স্মরণে আসা ছাড়া বাম-কংগ্রেস জোটের সামনে কোনো বিকল্প বাস্তবসম্মত পথ ছিল না। অর্থাৎ একথা স্পষ্ট যে শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসই নয়, এ রাজ্যে কংগ্রেস এবং সিপিএমের জয়ের পিছনেও অবদান মূলতঃ মুসলিমদেরই। এবছর আব্বাস সিদ্দিকীর উপস্থিতির কারণে তাদের ভোটব্যাঙ্ক হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হওয়াতেই লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে হলেও মুসলিম পীরজাদার শরণাপন্ন হয়েছে বিপ্লবের বুলি কপচানো বামপন্থীরা আর দেশভাগের কারিগর শতাব্দী-প্রাচীন কংগ্রেস দল।
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে কোনো ভণিতা ছাড়াই ‘দুধেল গাই’ হিসাবে দাবি করেছেন রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়কে এবং নজিরবিহীনভাবে একের পর এক ঘোষণা করে গিয়েছেন সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বিপুল পরিমাণ সরকারী অনুদান, আদায়িকৃত রাজস্বের অপ্রতুলতার পরোয়া না করেই। তবে এই বিষয়ে বাম-কংগ্রেস জোটও যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথেরই পথিক তা বোঝা গিয়েছে তারা ফুরফুরা শরীফের সেকেন্ড উইং কমান্ডার আব্বাস সিদ্দিকির স্মরণ নেওয়ার পর।
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজনৈতিক সমীকরণগুলি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে রাজ্যের তথাকথিত ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দলগুলি, যেমন তৃনমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস এবং সিপিএম নির্বাচনে জয়ী হয় মুসলিম-ভোটের উপর নির্ভর করে। তাদের ভোটের সিংহভাগই আসে মুসলিমদের থেকে। যদিও ইংরেজী “সেক্যুলার” শব্দটির অর্থ ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বা আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে ‘ধর্মবিরহিত’, কিন্তু মজার ব্যাপার হ’ল যে ভারতে এই শব্দটি সুচতুরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘ইসলামিক’ অর্থে। ব্যবহার করছে তথাকথিত সেক্যুলার দলগুলি। ‘সেক্যুলার’ শব্দের অর্থ পরিবর্তনের এই বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের মত চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিতে বোধ হয় আর কোনো রাজ্যই এ পর্যন্ত পারে নি।
কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠী পশ্চিমবঙ্গে এলেন কোথা থেকে? উত্তর হল—বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের মাধ্যমে। যতই অস্বস্তিকর হোক না কেন, এটিই এই বিষয়ক ওপেন সিক্রেট। বাংলাদেশ থেকে এ রাজ্যে প্রবেশ করে ভুয়ো নির্বাচনী পরিচয়পত্র নিয়ে গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা এবং ভোট দান করে গোটা রাজ্যের বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রের নানা বুথে।
ত্বহা এবং আব্বাস আগুনে পাখির দুইটি ডানা, যে দুই ডানার নীচে গুটিগুটি গিয়ে সেঁধিয়েছে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং সিপিএমের মতো সবকটি তথাকথিত সেক্যুলার দল। আগুনেপাখির ডানায় ভর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনের আকাশে অবিরাম উড়তে চাইছে তারা, আর ডানার নীচে তাদের গুটিয়ে নিয়ে অলক্ষ্যে মিটিমিটি হাসছে ফুরফুরা। কাকা-ভাইপো জুটিকে সুপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করে ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদের ঘাঁটি বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতেও বিস্তার করতে চাইছে তারা। দিয়েছে কিস্তির চাল। কিন্তু মাত করবে কে বা কারা? ভাগ্যনির্ধারণের প্রহর গুনছে পশ্চিমবঙ্গের মাটি। সিদ্ধান্ত নেবেন পশ্চিমবঙ্গের অমুসলিম জনগণ। তাঁরাই স্থির করবেন আগামী পশ্চিমবঙ্গের পরিচিতি কি হবে। হিন্দু হোমল্যাণ্ডই সে রইবে? নাকি পর্দার আড়াল সরিয়ে দিয়ে সরাসরি তাকে শাসন করবে ফুরফুরা শরীফ? মাতৃপূজার এই ভূমি কি হারিয়ে ফেলবে তার সংস্কৃতি? এক যুগসন্ধিক্ষণ। দ্য কাউন্টডাউন বিগ্যান।
This is a must read in @newsbred. This shows how the so called SECULAR parties like TMC, Congress & CPM artfully used the word SECULAR to mean ISLAMIC & dragged #WestBengal stand again at a turning point. Furfura-land? or Hindu Homeland? #BengalElections2021.
দেবযানী ভট্টাচার্য্য
Debjani Bhattacharyya