হিন্দু চোর গিরেন

পুলিশ কেন “”হিন্দু চোর গিরেন”” নাটক টির প্রদর্শনী বার বার বন্ধ করে দিচ্ছে ?? কি এমন আছে ওই নাটক টি তে??
এই নাটক টি এখন বিতর্কের শিরোনামে।। বাংলা থিয়েটারের ইতিহাসে বাংলাদেশের হিন্দু দের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের নির্মম বাস্তব চিএ পূর্বে কেউ এতো স্পষ্ট ভাবে বলিষ্ঠ যুক্তি ও তথ‍্য সহকারে তুলে ধরেছিল কিনা আমার জানা নেই।। নাট‍্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা প্রবীর মন্ডল তা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই কাজ টি করে দেখালেন।। ভবিষ্যতে বাংলা নাটকের ইতিহাসে অবশ্যই প্রবীর মন্ডলের এই “”হিন্দু চোর গিরেন “” নাটক টি উজ্বল হয়ে থাকবে।। প্রথমে এই নাটক টির নাম নিয়ে কিছু মানুষ আপওি ও প্রতিবাদ করেছিল।। কিন্তু তারপর পুলিশ কেন নাটক টি তিনবার প্রদর্শনী বন্ধ করে দিয়েছিলো?? এখানেই প্রবীর মন্ডলের বড় জয় ;; আসল জায়গায় প্রবীর ঢিল টি ছুঁড়েছেন।। কি আছে নাটকের সংলাপে যা শুনে পুলিশ বার বার নাটক টি বন্ধ করে দিচ্ছে?? যেটা নিয়ে এখনো মামলা চলছে।। আসলে এতো বড় সত্য কথা টি পূর্বে বাংলা থিয়েটার — সিনেমা য় কেউ তুলে ধরার স্পর্ধা দেখায়নি ;; প্রবীর সেই দুঃসাহসী কাজ টি করে দেখালেন।। নাটকের সংলাপ গুলো আপনারা যদি একটু গভীর ভাবে অনুধাবন করেন,, তাহলে বুঝতে পারবেন।। নাটকে হাজি সাহেব গিরেন কে বলছেন,, “” গিরেন আমাগো মুসলমানের দ‍্যাশে তোমরা জামাই আদরে আছো “”।। তাই শুনে হিন্দু চোর গিরেন রেগে গিয়ে বলে যে,, “” আচ্ছা হাজি সাহেব আপনি কথায় কথায় আমাগো মুসলমানের দ‍্যাশ আমাগো মুসলমানের দ‍্যাশ কেনো বলেন “”?? তাহলে আমাগো হিন্দু গো দ‍্যাশ কোনটা ?? হাজি সাহেব একটু অপ্রস্তুত হয়ে হিন্দু চোর গিরেন কে অনেক কথা,, দুর্বল যুক্তি সাজাবার পর স্বীকার করে নেয় যে,, “” পৃথিবীতে মুসলমানদের অনেক গুলো দ‍্যাশ আছে,, খ্রিষ্টান গো অনেক গুলো দ‍্যাশ আছে,, বৌদ্ধ গো অনেক দ‍্যাশ আছে,, এমনকি কয়েক লাখ ইহুদি গো জন্য একটা নির্দিষ্ট দ‍্যাশ আছে,, কিন্তু হিন্দু গো কোনো দ‍্যাশ নাই “”!! আচ্ছা গিরেন এর জন‍্য কি মুসলমান রা দায়ী?? আমি যদি তর্কের খাতিরে ধরেই নি যে মুসলমান রা দ‍্যাশ ভাগের জন্য দায়ী।। তারা একটা তাদের নিজস্ব দ‍্যাশ চেয়েছিল যাতে করে তারা শিক্ষায় দিক্ষায় জ্ঞানে বিদ‍্যায় বুদ্ধি তে হিন্দু গো সমান হতি পারে।। আচ্ছা মুসলমান রা কি কখনও এই দাবি করেছিল যে “” পৃথিবীতে হিন্দু গো কোনো দ‍্যাশ থাকবেনা ?? তোমরা ১০০ কোটি হিন্দু যদি দাবী তোলো যে তোমাগো একটা হিন্দু রাষ্ট্র চাই,, কোনো মুসলমান কোনো খ্রিষ্টান কি তা বাধা দিতি পারে “”??


এই সংলাপ টি তেই পুলিশের আপওি।। তাই প্রবীর মন্ডলের নামে মামলা চলছে।। ২০১২ সালে র ১৮ ই জুলাই বুধবার পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাগৃহে শিশির মঞ্চে এই নাটক টি প্রথম মঞ্চস্থ হয়।। এর পর এই নাটক টি আরো ৪ বার শো করে নাটক টি বন্ধ রাখা হয়।। এর পর ২০১৮ সালে ২৫ এ জুন নাটক টি শিশির মঞ্চে শো করার আয়োজন করা হয় কিন্তু পুলিশ নাটক টি বন্ধ করে দেয়।। এরপর প্রবীর মরিয়া হয়ে ওঠে নাটক টি দর্শক দের দেখানোর জন‍্য।। তারপর চুপিসারে কিছু সহ‍ৃদয় ব‍্যক্তির সাহায্যে প্রবীর নাটক টি পুলিশের নজরদারিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রেক্ষাগৃহ ICCR হলে ২০১৮ সালে র ৩০ এ জুলাই নাটক টি মঞ্চস্থ করেন।। এরপর পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ২০১৮ সালের ২৭ এ আগষ্ট তপোন থিয়েটারে আরেক বার শো টি হয়।। এরপর পুলিশ উঠে পড়ে লাগে ও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এই নাটক টি বন্ধ করার জন‍্য।।

২০১৮ সালের ২৮ এ আগষ্ট অর্থাৎ শো এর ঠিক পরের দিন ই হেস্টিং থানার পুলিশ প্রবীর মন্ডল কে নোটিশ পাঠায়।। এরপর ২০১৯ সালের ২৭ এ মার্চ বিশ্ব নাট‍্য দিবসে সুজাতা সদনে নাটক টি র শো আয়োজন করা হয় কিন্তু পুলিশ তা বন্ধ করে দেয়।। এরপর পুলিশ তার ভবানিপুরের ঠিকানা য় বার বার হানা দেয় যার ফলে বাড়িওয়ালা প্রবীর কে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে।। এরপর পুলিশ প্রবীর এর বিরুদ্ধে ব‍্যাঙ্কশাল কোর্টে মামলা শুরু করে যা এখন চলছে।। এখানে ই “”হিন্দু চোর গিরেন”” নাটকটির সার্থকতা।। তাহলে কি বাংলাদেশের অসহায় নির্যাতিত হিন্দু দের কথা থিয়েটারে,, সিনেমায় তুলে ধরা অপরাধ??

শান্তনু হালদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.