বারাণসীতে গেলে বিশ্বনাথ মন্দির দর্শন করাটাই রেওয়াজ। কিন্তু এবার কাশীর সেই বিশ্বনাথ মন্দিরের প্রত্নতাত্ত্বিক পরীক্ষা করার বিষয়ে রায় দিল ফাস্ট ট্র্যাক আদালত। মন্দির ও সংলগ্ন জ্ঞানবাপী মসজিদ মামলায় এই রায় দিল সিনিয়র ডিভিশন ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারপতি।
আদালত পুরাতত্ত্ব বিভাগকে ৫ জনের দল বানাতে বলেছে যার পুরো বিষয়টির রিসার্চ করবে। বল হচ্ছে আদালত কাশী বিশ্বনাথ মন্দির কর্তৃপক্ষের দিকেই রায়দান করেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক পরীক্ষার বিষয়টির আবেদন বাদী পক্ষ অর্থাৎ মন্দির কর্তৃপক্ষ গত ২ এপ্রিল জানিয়েছিল। ১৯৯১ সাল থেকে এই মামলা চলছে। ২০১৯ সালেও পুরাতাত্ত্বিক পরীক্ষার আবেদন করেছিল মন্দির কর্তৃপক্ষ।
ভোট জিততে ধমক দাওয়াই গৌতমের! কমিশনে যাচ্ছে BJP
গত সপ্তাহে মামলার শুনানি শেষ হয়েছে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে অন্যতম কাশী বিশ্বনাথ মন্দির। মন্দিরের ঠিক গা ঘেষেই রয়েছে জ্ঞানব্যাপী মসজিদ। ১৯৯১ সাল থেকে বাদীপক্ষ কাশী বিশ্বনাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ এই নিয়ে মামলা করে করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের অনুরোধও জানানো হয়, মন্দির কর্তৃপক্ষ পুরো জ্ঞানবাপী মসজিদ অঞ্চলটি প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ করার কথা বলে। এই বিষয়ে দুই তরফের কথা শোনার পর আদালত জানিয়েছিল ৮ এপ্রিল সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
বদলি হওয়ার আগে বিচারকের সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হ’ল সিভিল জাজ সিনিয়র ডিভিশন ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট আশুতোষ তিওয়ারির বারাণসী থেকে শাহজাহানপুরে বদলি হয়েছেন। বিচারক আশুতোষ তিওয়ারি ২৮ এপ্রিল তার দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। তার আগেই এই বিষয়ে রায় দিলেন তিনি।
গতবছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ড্রিম প্রোজেক্ট কাশী বিশ্বনাথ করিডর প্রকল্পের জন্য খনন কার্য চলাকালীনই মসজিদের পাশের মাটি খুঁড়তেই আবিষ্কার হয় ১৬ শতকের প্রাচীন এক মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ! মেলে একটি সুড়ঙ্গেরও হদিশ।র সেবার কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের পশ্চিমদিকে জ্ঞানভারিদ ময়দানের শৃঙ্গার গৌরি মন্দিরে বুলডোজার দিয়ে খননকার্য চলছিল। সেই সময়ই শ্রমিকেরা মাটির নীচে বহু প্রাচীন একটি সুড়ঙ্গ দেখতে পান । তড়িঘড়ি কাজ থামিয়ে দেওয়া হয়। খবর দেওয়া হয় মন্দির কর্তৃপক্ষকে। ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজনা ছড়ায় ভক্তদের মধ্যে। কবেকার এই মন্দির তা পরীক্ষা করে দেখা হবে বলেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বনাথ মন্দিরের ইতিহাস পুরাণের কাশীখণ্ডে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়। একাদশ শতাব্দীতে হরি চন্দ্র মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা যায়। ১১৯৪ সালে মহম্মদ ঘোরি বারাণসীর অন্যান্য মন্দিরগুলির সঙ্গে এই মন্দিরটিও ধ্বংস করে দেন বলে শোনা যায়। এরপরেই আবার মন্দিরটি পুনরায় তৈরি করা হয়। এরপর কুতুবুদ্দিন আইবক মন্দিরটি ধ্বংস করেন। আইবকের মৃত্যুর পর ফের মন্দিরটি তৈরি হয়। এরপরেও একাধিকবার মন্দির পুনর্নিমাণ হয়েছে। ১৬৬৯ সালে ঔরঙ্গজেব পুনরায় মন্দিরটি ধ্বংস করে জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি করান। এই মসজিদটি আজও মন্দিরের পাশে অবস্থিত। মসজিদের পিছনে পুরনো মন্দিরের কিছু ধ্বংসাবশেষ মিলেছে বলে আগেই দাবি করা হয়েছিল।