#পর্ব_৩
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।
হ্যাঁ হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের লোককথা , রূপকথাগুলি পৃথিবীর পথ হেঁটেছে। জম্বুদ্বীপ হতে সিংহল সমুদ্র হয়ে মলয় সাগর পেরিয়ে তারা ছুটে গেছে কোন কোন সে সুদূর প্রান্তে। সাতসমুদ্র তেরোনদী পেরিয়ে সেই যে তেপান্তরের মাঠ ছাড়িয়ে পক্ষীরাজের পিঠের চড়ে সে গেছে ইউরোপ। সে অরণ্য ঘেরা সবুজ আফ্রিকা থেকে গেছে ইউরোপে। সে পেরুর সূর্যদেবের সাতরঙা ঘোড়ায় চড়ে গেছে সেই কোন ইউরোপে। সে দক্ষিণ আমেরিকার সমুদ্রতীর হতে রপ্তানী হয়ে গেছে কোনো অজানা দেশের না জানা শহরে।
আমি যেমন বলেছিলাম অনেক লোককথারই আক্ষরিক অর্থেই মাইগ্রেশন ঘটেছে। ইতিহাস তার প্রমাণ দিয়েছে বার বার । তবে সেসব বেশি দিনের কথা নয়। বিভিন্ন এলাকায় মানুষের যখন নতুন বসতি গড়ে উঠতে লাগল ,তখনই লোককথার সুস্পষ্ট মাইগ্রেশন ঘটল ।
প্রথম পর্বে যে বৃহত্তর ভারতের কথা বলেছিলাম। তারই আরো একটু ব্যাখ্যা করি… লোককথা বা রূপকথার মাইগ্রেশনের ইতিহাস জানতে গেলে এগুলোও জানা একান্ত আবশ্যক।
ফরাসি পণ্ডিতদের মতে খোটানের ধর্ম ও সাহিত্যের ভাষা ছিল সংস্কৃত। কিন্তু খোটান এ প্রাপ্ত প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপি প্রাকৃত ভাষায় খরোষ্ঠী লিপি তে লিখিত ধম্মপদ। জনসাধারণের ভাষা ছিল প্রাকৃত তাদের মধ্যে বৌদ্ধ মার্গের প্রভাব প্রচারের জন্যই ওই ভাষায় ধমমপদ লিখিত হয়েছিল বলে ধরা হয় ।
সংস্কৃত, প্রাকৃত ও খোটানি ভাষায় লিখিত অনেক পাণ্ডুলিপি পাওয়া গিয়েছে । ওই সব পুস্তক থেকে ভারতীয় সভ্যতার সর্বাঙ্গীণ প্রভাব বেশ উপলব্ধি করা যায় । খোটানে প্রথম খরোষ্ঠী লিপিই ছিল , পরে পঞ্চম শতাব্দীতে ব্রাহ্মী লিপি প্রবর্তিত হয় ।
এখানে সুপ্রাচীন সনাতন ধর্ম তো ছিলই, তার সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তীকালে বৌদ্ধ মার্গ প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং উভয়ই আপামর জনসাধারনের ধর্ম হয়ে উঠেছিল ।
সিল মোহরে কুবেরের মূর্তির প্রাপ্তি থেকে মনে হয় এখানে কুবেরের উপাসনা প্রচলিত ছিল ।।এছাড়া গণেশের চিত্রও পাওয়া গিয়েছে। রামায়ণের এক সংস্করণ মধ্য এশিয়ায় পাওয়া গিয়েছে।শিব ও দুর্গার নানা রূপ এখানে শৈব ও তন্ত্রের প্রচলনের কথা মনে করায়।
খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে খোটানে বৌদ্ধ মতের প্রসার ঘটে এবং তা একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বিপুল প্রসারের – প্রভাবের সঙ্গে স্থায়ী ছিলো; যেকারণে খোটানের জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠের সনাতনী ও বৌদ্ধকে অনুসরণ করতেন। প্রাপ্ত অধিকাংশ চিত্র, ভাস্কর্য এবং পুস্তক বৌদ্ধধর্মের ব্যাপকতার নিদর্শন বহন করে।
একটি খরোষ্ঠী লিপিতে খোটানের মহারাজ রাজাতিরাজ দেববিজিত সিংহ-এই নামটি পাওয়া যায়। কাঠের ফলক,চামড়া, কাগজ ও রেশমের উপর ভারতীয় অক্ষরে ও ভারতীয় ভাষায় লিখিত লিপিগুলি থেকে বেশ বোঝা যায় যে একসময় এখানে ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রসার ঘটেছিলো।
খোটানে অনেক বড়ো বড়ো বৌদ্ধ মন্দির ও বিহার ছিলো-এদের মধ্যে গোমতী বিহার এককালে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিলো। চিনদেশীয় পরিব্রাজক ফা-হিয়েন চতুর্থ শতাব্দীর শেষে এবং হিউয়েন সাঙ সপ্তম শতকের মধ্যভাগে এই বিহারের ও খোটানের সমৃদ্ধির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। এখানে ভারতীয় সভ্যতার পাশাপাশি একশত বিহার (সংঘারাম) ও পাঁচ হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষু ছিলো।
অনেক ভারতীয় বৌদ্ধ পণ্ডিত ও ভিক্ষু এখানে বাস করতেন। চিনদেশীয় অনেক পণ্ডিত বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র পাঠের জন্য ভারতে না গিয়ে এখানেই শিক্ষা লাভ করতেন। গোমতী বিহারে রচিত অনেক গ্রন্থ প্রায় বৌদ্ধ ত্রিপিটকের ন্যায় মর্যাদা লাভ করেছিলো।
বৌদ্ধ শ্রমন বৈরচন তৎকালীন রাজা বিজয়সম্ভব কে বৌদ্ধ মতালম্বী করেন এবং তার সহায়তায় প্রথম বৌদ্ধ বিহার তৈরি হয় ।
সপ্তম শতাব্দীর চীনা পর্যটক হিউয়েন সাঙের বিবরণী থেকে জানা যায় যে খোটানে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ছিলো অত্যন্ত কম ,কিন্তু যেগুলি ছিল সেগুলি ছিল খুবই উর্বর। এইসব উর্বর জমিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য ও ফল উৎপন্ন হতো। তিনি আরও উল্লেখ করেছিলেন যে, এ স্থান কার্পেট আর রেশম উৎপাদনে সুপরিচিত ছিল।
এছাড়াও জেড নামে সাদা কালো সিলিকেটঘটিত এক ধরণের রূপান্তরিত শিলা দিয়ে খোটানীরা সুদৃশ্য অলংকার তৈরি করতো।
এক কথায় বলতে গেলে, খোটানের প্রধান অর্থনৈতিকভিত্তি ছিলো নদীর জলসেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসল এবং উল্লিখিত কুটিরশিল্প। হিউয়েন সাঙ খোটানের মানুষের সংস্কৃতির কথাও উল্লেখ করেছেন। সাহিত্যের প্রতি এদের অনুরাগ যেমন ছিলো তেমনি সংগীত ও নৃত্যকলায় এরা পারদর্শী ছিলো। শহরের মানুষেরা হাল্কা ও সাদা রঙের রেশমের পোশাক পরিধান করতেন।
চিনদেশে প্রথম রেশম চাষ শুরু হয়েছিলো একথা যেমন সত্য তেমনি একথাও সমভাবে সত্য যে চিনদেশের বাইরে প্রথম রেশমের প্রচলন হয়েছিলো খোটানে। মতভেদ থাকলেও খোটানে রেশম চাষ বিষয়ে জনশ্রুতি আছে যে, জনৈক চৈনিক রাজকুমারী খোটানী রাজাকে বিয়ের সময়ে তাঁর কবরীর মধ্যে লুকিয়ে রেশম কীট নিয়ে আসেন। সেখান থেকেই খোটানে রেশমের প্রচলন হয় এবং কালক্রমে রেশমশিল্প খোটানের অর্থনীতির অঙ্গীভূত হয়ে পড়ে।
পঞ্চম শতাব্দীতে পূর্ব তিব্বতীয় এক জাতির আক্রমণ ও ধ্বংসলীলার ফলে কিছুদিনের জন্য খোঁটানে বৌদ্ধ প্রভাব ম্লান হয়ে পড়ে। পুনরায় কাসগর থেকে অনেক ভিক্ষু এসে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করেন।
ইউয়ান চোয়াং মধ্য এশিয়ার পথে চীন থেকে ভারতে এসেছিলেন ।ফিরেছিলেন মধ্য এশিয়া হয়ে ।তার বিবরণ থেকে তৎকালীন মধ্য এশিয়ার বৌদ্ধ প্রভাব জানা যায়। তিনি ফিরবার পথে খোটানে যান।
সেই সময় খোটানে একশত বৌদ্ধ বিহার ও ৫০০০ ভিক্ষু ছিলেন । এক হাজার খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি মুসলমান বিজয়ের ফলে খোটানে ভারতীয় সভ্যতার প্রভাব ম্লান হয়ে আসে ।
দেড় লক্ষ বছর আগে পুরোনো প্রস্তর যুগের মাঝের পর্বে আগ্নেয় কাচ অবসিডিয়ান বিনিময় করছে মানুষ। তখন মুদ্রা অনুপস্থিত । নতুন প্রস্তর যুগে ভুমধ্যসাগরীয় এলাকায়, সিন্ধুসভ্যতায় এসেছে দামি পাথর ল্যাপিজ লাজুলি। মেহেরগড় খননে মিলছে তার নমুনা । সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরোনো স্যাক্রোফ্যাগাস, পাথুরে কফিনে লাপিস লাজুলি খচিত তুতানখামুন-এর চোখ । বিনিময় বাণিজ্য, অথবা ব্যঞ্জনাময় পথচলা , যে অর্থই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করি, পথ,পথিক,পণ্য – ব্রহ্মা,বিষ্ণু, মহেশ –ত্রিদেব সমাহার। প্রাগিতিহাস থেকে ইতিহাস – দ্রব্যের চাহিদার সঙ্গে অ-দ্রব্যে কৌতূহল দুইই মেটাবার জিনবাহিত অদম্য তাড়নে পৃথিবীর বুকে মাকড়সা জালের মতো অগণিত পথ কেটেছে মানুষ। তাদের সবকটা সুনির্মিত,প্রশস্ত রাজপথ নয়।
ধর্ম, সাহিত্য ,শিল্পকলা এই তিন দিক দিয়ে কুচা সম্পূর্ণরূপে বহির ভারতের অংশবিশেষ ছিল ।কুচা বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চার একটি বড় কেন্দ্র ছিল । বিখ্যাত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী কুমারজীব (৩৪৪ থেকে ৪১৩ খ্রিস্টাব্দ)কুচার অধিবাসী ছিলেন ।তাঁর পিতা ছিলেন এক ভারতীয় বাসিন্দা এবং মা ছিলেন ওই দেশের রাজকন্যা।
তিনি বেদ থেকে শুরু করে বৌদ্ধধর্ম পুস্তকসমূহ কাশ্মীরে অধ্যয়ন করেন। তিনি কুচা এবং চীন দেশের স্বাধর্মপুন্ডরিক ও অন্যান্য বৌদ্ধ পুস্তক অনুবাদ করে ভারতের সংস্কৃতিকে প্রচারে অশেষ সাহায্য করেন । সিলভা লেভির মতে যে সমস্ত অনুবাদক ভারতীয় বৌদ্ধ মার্গের ভাবধারার চীন দেশে প্রচার করেছেন তার মধ্যে কুমারজীবই শ্রেষ্ঠ। কুচার মারফতে বহু সংস্কৃত পুস্তক পূর্ব এশিয়ায় বিস্তার লাভ করে।
হিউয়েন সাং যখন ভারতে আসেন তখন সুবর্নদেব, স্থানীয় টোখারীভাষায় তিনি স্বর্ণটেপ নামে পরিচিত , সেখানকার রাজা ছিলেন । তার পিতা এবং পূর্ববর্তী রাজা ছিলেন সুবর্ণপুষ্প । গোবী অঞ্চলের অন্যান্য টোখারী রাজার মতো রাজা সুবর্ণদেবও একজন নিষ্ঠাবান বৌদ্ধ ছিলেন। সে সময় কুচায় ভিক্ষু সংখ্যা পাঁচ হাজারের কম ছিল না । তাদের মধ্যে স্থবির মোক্ষগুপ্ত ছিলেন রাজগুরু।
তুরফান বৌদ্ধ মার্গের এক বৃহৎ কেন্দ্রস্থল ছিল।অশ্বঘোষের নাটক “সারিপুত্র প্রকরণ”কুমারলাভের গল্পপুস্তক “ক্লপনামন্ডিতিকার” অংশবিশেষ এবং আরো অন্যান্য পুস্তক ও বহু উচ্চাঙ্গের চিত্র তুরফানে আবিষ্কৃত হয়েছে ।
৬২৯ সালে একটি স্বপ্ন দেখে ভারত যাত্রার প্রতি আকৃষ্ট হন হিউয়েন সাং। ঐ সময়ে তাং সম্রাজ্যের সাথে তুর্কদের যুদ্ধ চলছিল তাই তাং রাজা তাইজং সকল নাগরিকদের বিদেশ যাত্রা নিষেধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু হিউয়েন সাং ইউমেনে শহরের সদর দরজার বৌদ্ধ প্রহরীদের বুঝিয়ে শহর থেকে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হন। তারপর তিনি ৬২৯ সালেই কুইংঘি প্রদেশ হয়ে গোবি মরুভূমি পার হয়ে ৬৩০ সালে হিউয়েন সাং ভারতে আসার পথে তুরফানে যান তখন সেখানকার বৌদ্ধ রাজা তাকে বৌদ্ধ বিহার সমূহের প্রধান করে রাখতে চান। তিনি সম্মত না হলে ভয় দেখিও রাখবার ব্যবস্থা করেন। অবশেষে হিউয়েন-সাং চার দিন উপবাস থাকার ফলে রাজা ভীত হয়ে তাকে আসার অনুমতি দেন এবং হিউয়েন সাংকে কিছু মূল্যবান জিনিষপত্র এবং যাত্রার জন্য রসদ সরবরাহ করেন।
তুরফান থেকে আরো পশ্চিমে যেতে থাকলে ইয়ানজি ও কুচা হয়ে কিরজিকিস্তান পৌছান যেখানে তিনি তুর্ক খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। যদিও ৬৩০ সালের দিকে তুর্কদের সাথে তাং সম্রাজ্যের যুদ্ধ চলছিলো, যখন হিউয়েন সাং, খানের সাথে দেখা করেন তত দিনে তাং সম্রাজ্যের সাথে খানের বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিরজিকিস্তান থেকে পরবর্তীতে তিনি বর্তমান উজবেকিস্তানের রাজধানি তাসখন্দে পৌছান।
সেখান থেকে আরো পশ্চিমে পার্সিয়া নিয়ন্ত্রিত সমরখন্দ শহরে পৌছান। সমরখন্দে তিনি কিছু ধ্বংশ হয়ে যাওয়ে মন্দির স্থাপনা দেখে বিস্মিত হন। সমরখন্দ থেকে আরো পশ্চিমে আমু দরিয়া এবং তিরমিজে পৌছান যেখানে তিনি প্রায় এক হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষুর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
আরো পশ্চিমে গিয়ে তিনি খুন্দুজ শহরে সেখানকার যুবরাজ তার্দুর অন্তুষ্টিক্রিয়া দেখার জন্য কিছুকাল অবস্থান করেন। সেখানেই তিনি ধর্মসীমা নামে এক বিখ্যাত বৌদ্ধ ভিক্ষুর সাথে সাক্ষাৎ করেন। সদ্য মৃত যুবরাজ তার্দুর উপদেশেই তিনি পরবর্তিতে আরো পশ্চিমে নব বিহার পরিদর্শন করেন। নব বিহারের বর্তমান আফগানিস্তানে। সেখানে তিনি অনেক বৌদ্ধ মঠ এবং মহাবিশ্ব গ্রন্থের অনুসারী প্রায় তিন হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষু দেখেন।
হিউয়েন সাং এর মতে নব বিহার হল পৃথিবীর সর্ব পশ্চিমে অবস্থিত দেশ, যা বৌদ্ধ মার্গকে প্রতিপালন করে। নব বিহারে কিছুদিন অবস্থান করে ৬৩০ সালের দিকে তিনি আদিপুর (বর্তমান জালালাবাদ) যান। জালালাবাদ এসেই তিনি মনে করতে থাকেন যে তিনি ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছেন।
কুচা ও তুরফানের মধ্যবর্তী স্থানে কিন্তু কতটা দক্ষিণ দিকে অবস্থিত Khorsan প্রদেশ ছিল । যার প্রাচীন নাম ছিল অগ্নিদেশ। এটি সুপ্রাচীন সনাতনী ধর্ম ও তার মার্গ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মূল কেন্দ্র ছিল। কারসার রাজাদের মধ্যে ইন্দ্রঅর্জুন, চন্দ্রঅর্জুন প্রভৃতির নাম পাওয়া যায়।
হিউয়েন সাং মধ্য এশিয়ার অনেক রাজ্যের নাম করেছেন যেখানে ভারতের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। তার মধ্যে তুর্কি জাতীয় খানের রাজত্ব ও বহিলক উল্লেখযোগ্য।
রাজা খান টোপো ৫৮০ খ্রিস্টাব্দে গান্ধারদেশীয় সন্ন্যাসী জিন গুপ্তের প্রভাবে বৌদ্ধ মার্গ গ্রহণ করেন । তার রাজত্ব একদিকে চীন দেশের সিনকিয়াং প্রদেশ থেকে অন্যদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার সমারিয়াচিনাক্ষের পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। বহলিক সে সময় নিষ্ঠাবান বৌদ্ধ মতাবলম্বী ছিল। সম্রাট অশোকের সময়ই বলহিকে ভিক্ষুরা বৌদ্ধমার্গ প্রচার করেন। তখন সেখানে একশত বৌদ্ধ বিহার ,তিন হাজার সন্ন্যাসী ছিল। সম্ভবত এখান থেকেই প্রাচীনকালে বৌদ্ধমার্গ সগদিয়ানায় প্রবর্তিত হয়।
শিল্পকলার দিক দিয়ে পূর্ব – চিনি – তুর্কিস্তানের টুনহুয়াঙ্গে অবস্থিত প্রাচীন “হাজার বুদ্ধের গুহা” থেকে আবিষ্কৃত চিত্রশিল্প বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। উল্লেখযোগ্য বৌদ্ধধর্ম এই শিল্পের উৎস ছিল।
এসব স্থানে জলসেচনের ভাল ব্যবস্থা থাকায় গাছপালা উৰ্বর ভূমি ছিল।
এখন সে সব ব্যবস্থা নষ্ট । মরু বালু ও মরু দস্যু লোকের বসতি অনেক গ্রাম ও নগরকে বালি ও রক্তে ঢেকে দিয়েছে । হাঙ্কোব ছট মন্দির এর গর্বের কারুকার্য , ছিল তার্ষ্যজাতীয় লোক , স্বলিক বা সগড়ীয় লোক এবং খাতানীয় বা শক জাতীয় লোক, ইতাব ইরাণীয় আধ্য ভূষি বলত; আর ছিল কুচ ও কাবা শহলে তুঙ্গার জাতীয় লোক, ইঙ্গারা পুথ একটি শর্ধ্য ভাষা বলত। এই লোকেরা ভারতীয় ধৰ্ম্ম, ভারতীয় বর্ণমাল ও সভ্যতা গ্রহণ করে৷ মধ্য এশিয়ায় উপনিবিষ্ট ভারতীয়দের সঙ্গে মিলে একটি ছোটখাট বৃহত্তর ভারতের সৃষ্টি করে।
ক্রমশঃ
#দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ লোককথার লিখিত ঐতিহ্য