#একনাথ_রানাডে : বিশ্বধাতার যজ্ঞশালায় এক আত্মনিবেদিত কর্মযোগী

আমার মুক্তি সর্বজনের মনের মাঝে,          দুঃখবিপদ-তুচ্ছ-করা কঠিন কাজে।বিশ্বধাতার যজ্ঞশালা আত্মহোমের বহ্নি জ্বালা–          জীবন যেন দিই আহুতি মুক্তি-আশে।

স্বামীজি বলেছেন, ‘তোমরা কাজ করে চল। দেশবাসীর জন্য কিছু কর-তাহলে তারাও তোমাদের সাহায্য করবে, সমগ্র জাতি তোমার পিছনে থাকবে। সাহসী হও, সাহসী হও! মানুষ একবারই মরে। আমার শিষ্যেরা যেন কখনো কোনমতে কাপুরুষ না হয়।’

গীতায় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন :”দূরেণ হ্যবরং কর্ম বুদ্ধিযোগাদ্ ধনঞ্জয়।বুদ্ধৌ শরণমন্বিচ্ছ কৃপণাঃ ফলহেতবঃ।।কর্মজং বুদ্ধিযুক্তা হি ফলং ত্যক্ত্বা মনীষিণঃ।জন্মবন্ধবিনির্মুক্তাঃ পদংগচ্ছন্ত্যনাময়ম্।।”
একনাথ রানাডে নামটি উচ্চারিত হলেই আমার চক্ষে সম্মুখে উদ্ভাসিত হয়েওঠে সুবিশাল উচ্চসিত ফেনীত সমুদ্র জলরাশি, তার মাঝে নিজ গরিমায় উত্থিত এক সুবিশাল শীলা , তার মাঝে ধ্যানস্থ বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ ….বর্তমানের কন্যাকুমারীর তিনটি সমুদ্রের সঙ্গমে অবস্থিত  “স্বামী বিবেকানন্দ শিলা স্মৃতিসৌধ” অপরূপ প্রতিকৃতি। সরসংঘচালক গুরুজী শীলা স্মৃতিসৌধের কাজের সকল দায়িত্ব শ্ৰী একনাথ রানডের স্কন্ধে প্রদান করেছিলেন।  


 নিজ গুরু এবং শিক্ষা স্থল দ্বারা প্রদত্ত গুরুদ্বায়িত্বকে নিজের জীবনের বাজী রেখে কিভাবে সম্পূর্ণ করা যায় তারই অন্যতম আদর্শ প্রতিস্থাপন করেছিলেন শ্ৰী একনাথ জী। সংঘের অনুশাসন এবং বিচারধারায় নির্মিত ইস্পাতের ন্যায় শক্তিশালী সব দুর্গম দুর্যোগকে হারিয়ে জয়ী ব্যক্তিত্বই হলেন শ্ৰী একনাথ রানাডে।
মহারাষ্ট্রের অমরাবতী জেলার ছোট্ট গ্রাম তিতিলা । সেখানে না ছিল কোনো সুযোগ না ছিল কোনো সুবিধা।সেখানেই সরসংঘচালক শ্ৰী একনাথ রানাডে ভূমিষ্ঠ হন  ১৯১৪ সালের ১৯ নভেম্বর ।
ছোট্ট সে গ্রামে শিক্ষার আলো বলতে কিছুই ছিলনা। একারণে একনাথজী নাগপুরে চলে আসেন । নাগপুরে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে তাঁর বড় ভাইয়ের বাড়িতেথাকতেন।


গৃহের নিকটেই সংঘের শাখা ছিল।  সহজাত কৌতূহল নিয়েই শাখার ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে নিকটস্থ ছেলেরা সেখানে জড়ো হত।  তাদের মধ্যে একনাথও ছিলেন।  এখানেই তাঁর সঙ্গে ডক্টর হেডগেওয়ারের পরিচয় ঘটে। 


শীঘ্রই সংঘের বালক শাখায় তাঁর দেশসেবার শিক্ষা শুরু হয়। যে শাখায় একনাথ প্রবেশ করেছিলেন সেখানে  ডঃ সাহেব তাঁকে একজন মনোযোগী এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে লক্ষ্য করেছিলেন। ছোট থেকেই একনাথ জী খুবই দুষ্টু , একরোখা এবং জেদী ছিলেন। তাঁর চঞ্চলতা এবং বাল্য দুষ্টমির জন্য বেশ কয়েকবার শাখায় শাস্তি পান এবং বহিস্কৃত হন। কিন্ত তাঁর একরোখা স্বভাবের জন্য বারবার শাখায় ফিরে আসেন। এই জেদের বশেই তিনি যে কাজে একবার হাত দিতেন সেটা সম্পূর্ণ করে ছাড়তেন।
মেট্রিকেশন পাশ করার পর একনাথ জী ডক্টর সাহেবের নিকট সঙ্ঘপ্রচারক হবার ইচ্ছা জানান।তবে ডক্টর সাহেব তাঁকে আরো পড়াশোন করার উপদেশ দেন। ১৯৩২ সালে তিনি হিসলপ কলেজ নাগপুরে ভর্তি হন এবং কলেজে একনাথজী কঠোর পরিশ্রমী, নির্ভীক ও মেধাবী ছাত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন।  পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি শাখার কাজও চালিয়ে যান।


 হিসলপ কলেজ মিশনারী দ্বারা পরিচালিত ছিল। কলেজে বিদ্যা গ্রহনের সময় একনাথ জী কে বার বার বাইবেলের ক্লাস করতে যেতে হত । সেখানে শিক্ষকের নাম ছিল ফিলিপস। সেই ফিলিপস কেবল হিন্দুধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করত। একনাথ জী ভীষন কষ্ট পেতেন। একদিন উনি ঠিক করলেন যে এর অন্তিম হওয়া দরকার। 


“শ্রেয়ান্‌ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ স্বধর্মে নিধনং শ্রেয় পরধর্ম ভয়াবহ”। 
তিনি তাই স্বামী বিবেকানন্দ ও বাল গঙ্গাধর তিলকের রচনা ও ব্যাখ্যাকে হৃদয়ঙ্গম করলেন। তারপর প্রতিদিন ক্লাসে তিনিই ব্যাখ্যা করতেন হিন্দুত্বের, শিক্ষক নয়। একদিন শিক্ষক তাঁকে ক্লাসে আসতে বারন করল কিন্তু জোর করে ক্লাসে আসতেন। 
এদিকে একনাথ জীর পারিবারিক অবস্থা খারাপ হল। আর্থিক অনটন দেখা দিল। সেই বছর তাঁর ফাইনাল পরীক্ষা। কলেজ কতৃপক্ষ তাঁকে পরীক্ষায় বসতে বাঁধা দেয়। তিনি কলরজ কতৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করেন “কেবলমাত্র আমার দারিদ্রতার জন্য আপনারা পরীক্ষায় বসতে দেবেন না?” এতে তাঁকে জানানো হয় যদি তিনি প্রতিটি শিক্ষকের অনুমতি সহ হস্তাক্ষর সংগ্রহ করতে পারেন তাহলেই পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে। এরপূর্বে ই বাইবেল ক্লাসে তাঁর আচরণের কথা সকলেই জ্ঞাত ছিল। তাই অনেকেই ভেবেছিল ফিলিপস স্বাক্ষর করবে না এবং নেটিভ ইন্ডিয়ানটি খুব জব্দ হবে। তবে ফিলিপস একনাথ জীর স্পর্শে তখন বদলাতে শুরু করেছে। বাইবেল ছেড়ে গীতা তার কণ্ঠস্থ হয়েছে। তাই প্রথম অনুমতি স্বাক্ষরটি ফিলিপস করেছিল। তারপর সকল শিক্ষক অনুমতি দিতে শুরু করেন।


 ১৯৩৭ সালে তিনি স্নাতক হন। এরপর তিনি নিজেকে সঙ্ঘপ্রচারক হিসাবে দেশসেবার কাজে নিয়োজিত করেন। তাঁর কাজের মূল এলাকা ছিল মধ্যপ্রদেশ।  প্রথমে তাঁকে নাগপুরের আশেপাশের এলাকায় কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ১৯৩৮ সালে তাঁকে মহাকৌশলের কার্য সমর্পন করা হয়। তিনি মহাকৌশল এবং ছত্তিশগড়ে শাখার কাজ প্রসারিত করেছিলেন। ১৯৪৫ সালে মধ্য প্রদেশে অবস্থানকালে তিনি ডঃ হরিসিং গৌর বিশ্ববিদ্যালয় (সাগর বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তরও করেছিলেন।


জব্বলপুরে কাজ করার সময় তিনি একটি অদ্ভুদ পন্থা নেন। তিনি কংগ্রেসের প্রতি অধিবেশনে যেতেন। এমনকি তাঁকে ত্রিপুরী কংগ্রেসের অধিবেশনেও দেখা যায়। কি করতেন সেখানে ? কংগ্রেসের মত সুবিশাল শক্তিশালী দলের শক্তিকে নিজের দিকে আকর্ষণ করেন। সেখানে তাঁর কথার মাধুর্যের ফলে বহু বন্ধু বানাতেন এবং তাঁদের ধীরে ধীরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবকের দিকে আকর্ষন করে নিয়ে আসতেন। 
 ১৯৪৮ সাল , গান্ধীজী হত্যা হলেন। তখন একনাথজী মধ্যপ্রদেশে কাজ করছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তৎকালীন নেহেরুর কংগ্রেস সরকার সংঘকে নিষিদ্ধ করেছিল। সংঘ এই কালানিয়মের বিরুদ্ধে যে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন। ভিতর থেকে তারও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শ্রী একনাথ।

 
সেই সময় এমন একটা দিন ছিল না যখন একজনও স্বয়ং সেবক গ্রেপ্তার না হয়ে থেকেছেন।  রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবকের প্রতিদিনের প্রাতঃ সভার পর এলাকার পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেত। পরের দিন অন্য দল আবার সভা করত। এরম করে প্রায় দুবছর আন্দলন চলে। ক্রমে সেই আন্দোলন সারাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সত্যাগ্রহের ফলে একটা সময় পুলিশও হাল ছেড়ে দেয়। তারপর পুলিশও সম্মানের সঙ্গে প্রাতঃ অধিবেশন শেষ হলে তবেই গ্রেপ্তার করত।


সংঘের উপর নিষেধাজ্ঞার অবসান হওয়ার পরে, শ্রীযুক্ত একনাথ একজন অনুগত কর্মীর মতো সংঘের অবনতিস্থিত অবস্থাকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেন ও গুরুজীকে সাহায্য করেন সংঘকে নতুন করে গড়ে তুলতে।  তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাসিত হিন্দুদের পুনর্বাসনের জন্য, সংঘ কলকাতায় “বাস্তুহারা সহায়তা কমিটি” প্রতিষ্ঠা করে। এই প্রকল্পের সমস্ত কাজ একনাথ রানাডেজী পরিচালনা করেছিলেন।

 
১৯৫০ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত  একনাথজী কে দিল্লিতে প্রেরণ করা হয়ে এবং  তিনি পাঞ্জাব প্রদেশের প্রচারক নিযুক্ত হন । সেখানে তিনি প্রতিটি শাখা পরিদর্শন করেন এবং সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা বিষয়সমূহকে একত্র করে, সুসম্পন্ন করার কার্য সম্পন্ন করেন।  এই সময় তাঁর উপর সঙ্ঘের সরকার্যবাহের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ফলত তিনি পুরো ভারতবর্ষকে পরিদর্শন করেন এবং প্রতিটি শাখার কাজকে প্রসারিত করতে সচেষ্ট হন।
 একনাথজীর সংঘের কার্যকালের সময়ই স্বামী বিবেকানন্দের জন্মশতবর্ষ মহোৎসবের অবসর আসে।পূজনীয় গুরুজী রামকৃষ্ণ মিশনের একজন দীক্ষাপ্রাপ্ত সন্ন্যাসী ছিলেন। একনাথ জী সংঘের তরফ থেকে স্বামীজীর জন্মশতবর্ষের কার্যক্রম আয়োজন করেন। সেইদিনই কেরল প্রদেশের প্রসিদ্ধ সমাজসেবী এবং নায়ার সম্প্রদায়ের নেতা শ্রী মান্নাথ পদ্মনাভনের নেতৃত্বে কন্যাকুমারীতে “বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল কমিটি” প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পাথরে স্বামী বিবেকানন্দ তিন দিন ধ্যান করেছিলেন এবং তিনি সত্য দর্শন করে ছিলেন।  


 শ্রী পদ্মনাভান এই স্মৃতিসৌধের কাজের জন্য সংঘের সহযোগিতা কামনা করেন।  এই কাজের জন্যই পূজনীয় গুরুজী একনাথজীকে কাজটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব প্রদান করেন। সেই নির্বাচন কতটা সঠিক ছিল তা কেবলমাত্র যখন খ্রিষ্টানরা সৌধ নির্মাণের বিরোধীতা করে তখন উপলব্ধি হয়েছিল। তারা দাবি করতে থাকে যে ওই শীলা সেন্ট জেভিয়ারের নামে পরিচিত। হ্যাঁ সেই সেন্ট জেভিয়ার্স যে কুখ্যাত ইনকুইজিশন এবং ভয় দেখিয়ে ধর্মান্তর করে বিখ্যাত ( কু)  হয়েছিল। সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে সোসাইটি অফ রোমের নিকট লিখেছিল, ” আমি যেখানে মূর্তিপূজার সংবাদ পাই সেখানে একদল ছেলেকে নিয়ে যাই। তারা সেই মূর্তিপূজা ও পুরহিত ও অন্যান্যদের অপমান জনক কথা বলে গালি দিয়ে অতিষ্ঠ করে তোলে। ছেলেরা পরে সেদিকে ছুটে যায় ও থুতু দিয়ে পূজা স্থল অপবিত্র করে তোলে।”
যাক তো তৎকালীন ভারত সরকারও বিরোধীতা করেছিল , তবে শ্ৰী রানাডে সফলভাবে এই প্রতিবাদের মুখোমুখি হন। 

তাঁকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে ” আপনি ওই উত্তাল সমুদ্রে পাথর ছাড়া কি দেখছেন?” উনি বলেছিলেন ” আমি স্বামীজী ভব‍্য স্মৃতি সৌধ দেখতে পাচ্ছি। ” এই সময় তামিলনাড়ুর সরকার ভক্ত বৎসলম সব থেকে বেশিবিরোধীতা করে। কেন্দ্রের সংস্কৃতি মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর বলেছিল যে ওখানে কোনো সৌধ নির্মাণ হলে প্রকৃতি নষ্ট হবে। একনাথ জী রামকৃষ্ণ মিশন যান ও প্রেস কর্নফারেন্স করলেন, বিরোধী সব যুক্তি খন্ডন করেন। 


একনাথ জী গেলেন নেহেরুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। কিন্তু তার আগে অনুমতি নিতে হত লালবাহাদুর শাস্ত্রীর থেকে। লালবাহাদুর শাস্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন , ” আপনি যদি সমস্ত রাজনৈতিক দলের লোকসভার সদস্য থেকে অনুমতির হস্তাক্ষর নিয়ে আসতে পারেন তাহলে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারি।”
একনাথজী সমাজবাদী পার্টি থেকে শুরু করে সব কমিউনিস্ট দল গুলির সদস্যদের হস্তাক্ষর সংগ্রহ করতে সক্ষম হন।


তিনি ৩২৩ জন লোকসভার সদস্যের সমর্থন পেয়েছিলেন যাঁরা এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছিলেন।  স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা হয় এবং স্বামী বিবেকানন্দ জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্বপ্ন বাস্তব হয়।
  ব্যক্তির জীবনে গুণাবলীর যে উপলব্ধি রয়েছে,  তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ এটি এই স্মৃতিসৌধের প্রতি একনাথজির মনোভাব কতটা বৃহৎ ছিল।আজ বিবেকানন্দ কেন্দ্র একটি শিক্ষামূলক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ১৯৬২ সালের ২২ আগস্ট গণেশ চতুর্থীর দিন একনাথজির জীবনাবসান হয়। তাঁর মৃত্যু অবধি তাঁর জীবন বিবেকানন্দময় হয়ে উঠেছিল।  


“যদা তে মোহকলিলংবুদ্ধির্ব্যতিতরিষ্যতি।তদা গন্তাসি নির্বেদং শ্রোতব্যস্য শ্রুতস্য চ।।শ্রুতিবিপ্রতিপন্না তে যদাস্থাস্যতি নিশ্চলা।সমাধাবচলা বুদ্ধিস্তদাযোগমবাপ্স্যসি’।।”
তাই বিবেকানন্দ রকের স্মৃতি সৌধের দাবি কোনোদিন একনাথ জী নিজেকে বিখ্যাত করার জন্য করেন নি। তিনি কর্মে বিশ্বাস করতেন। আজ অধিকাংশ ভারতবাসী তথা বাঙ্গালী জানেই না যে এই স্মৃতি সৌধ কার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় নির্মিত  বা বাস্তুহারা উন্নয়ন সমিতির কাজ কে করেছিলেন? তবুও একনাথ জী অমর অজেয় হয়ে আছেন তাঁর কর্মযোগ দ্বারা। ফলাসক্তি ও কর্তৃত্বাভিমান বন্ধনের কারণ। আসক্তি ও অহংবুদ্ধি ত্যাগ করে ফলাফলে উদাসীন হয়ে কর্ম সম্পাদনে বন্ধন হয় না। অর্থাৎ সর্বকর্ম ঈশ্বরে সমর্পণ করে ফলাকাঙ্ক্ষা বর্জন ও অহংবুদ্ধি বা কর্তৃত্বাভিমান ত্যাগ করাই নিষ্কার্ম কর্মের লক্ষণ। কিন্তু আত্মজ্ঞান ব্যতীত এই আসক্তি ও কর্তৃত্বাভিমান দূর হয় না। অবিবেচকপূর্বক অভ্যাস অপেক্ষা শ্রুতি (বেদোক্ত শাস্ত্রাদি)ও যুক্তি দ্বারা আত্মনিশ্চয় উৎকৃষ্ট।আত্মনিশ্চয় অপেক্ষা জ্ঞানপূর্বক ধ্যান শ্রেষ্ঠ। জ্ঞানপূর্বক ধ্যান অপেক্ষা কর্মফলত্যাগ শ্রেষ্ঠ। কর্মফল ত্যাগের অব্যবহিত পরেই সহেতুকসংসার নিবৃত্তিরূপ পরম শান্তিলাভ হয়।


কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন

।মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোহস্ত কর্মণি।।
#দুর্গেশনন্দিনী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.