বিরােধীরা ভুল বােঝানােয় সিএএ নিয়ে দিল্লিতে উত্তেজনা ছিলই। কিন্তু এক পুলিশ কনস্টেবল ও আধিকারিকের মৃত্যু পরিস্থিতির তৈরি হয়নি। ডােনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের মুহূর্তে এই ঘটনায় ভারতের আতিথেয়তায় কলঙ্ক পড়ল। ঠিক এটাই চেয়েছিল কমিউনিস্টরা। অন্য রাষ্ট্রের দালালি তাদের মজ্জাগত। এই পরিপ্রেক্ষিতে একটি সন্দেহের বাতাবরণকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রশ্ন হচ্ছে, ডােনাল্ড ট্রাম্প যখন ভারত সফরে এলেন তখন তার নিরাপত্তা নিচ্ছিদ্র করার জন্য খােদ মার্কিন গােয়েন্দা সংস্থা সিআইএ হরেক আয়ােজন করেছিল। তা সত্ত্বেও যেখানে মাছি গলার উপক্রম থাকে না, সেখানে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হলাে কীভাবে? সবাই এও জানে মার্কিন প্রশাসনে যেই থাকুন না কেন, আসল চাবিকাঠিটি থাকে সিআইএ-র হাতে। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে ট্রাম্পের ভারত সফরের সময় এই গণ্ডগােল মার্কিন গােয়েন্দা সংস্থার ইচ্ছাকৃত নয়তাে?
বেশ কয়েকবছর আগে, এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক জনৈক জাল পিএইচডি-ধারী উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযােগ করেছিলেন সেই ব্যক্তিটি আদতে সিআইএ-র চর। তিনি উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছিলেন, সেই ব্যক্তিটি আমেরিকায় গেলে কীরকম খাতির যত্ন পান এবং দিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে তার কীরকম দহরম-মহরম। সেই ব্যক্তিটিকে আমরা একজন বামপন্থী হিসেবেই জানি যিনি মােদী সরকারের সমালােচনায় সর্বদা সরব। একথাও আমাদের অজানা নয় আমেরিকায় প্রবাসী অনেক তথাকথিত কৃতবিদ্য ব্যক্তিত্ব সিআইএ-র মদতে ভারতকে হেয় করবার কতরকম মতলব ভাজেন।।
তাছাড়া ট্রাম্প যেভাবে মােদীর গুণগানে মুখরিত হয়ে ভারতকে প্রশংসিত করেছেন তাতে সিআইএ এবং তাদের বিশ্বস্ত অনুগামী বামপন্থীদের খুশি না হওয়ারই কথা। ফলে দিল্লির এই পরিকল্পিত উত্তেজনাকর পরিস্থিতির জন্যই তারা অপেক্ষায় ছিল এবং এটা তাদের সুচতুর পরিকল্পনার অঙ্গ হওয়াও বিচিত্র নয়। এখন প্রশ্ন হলাে, এর শেষ কোথায় ? একথা মানতেই হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে এই সিএএ বিরােধী বিক্ষোভকে কড়া হাতে দমন করতেই হবে। সিএএ-তে নাগরিকত্ব বাতিলের কোনাে বিষয় না থাকলেও বিরােধীদের অপপ্রচারে মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে। একে বাড়তে দেওয়া আর কোনাে মতে উচিত হবে না। এতদিন বামপন্থীরা দিল্লিতে কেজরিওয়ালের জয়কে নিজেদের জয় হিসেবে দেখাতে সচেষ্ট হয়েছিল, যদিও তাদের সম্মিলিত ভােট শতাংশ ছিল ০.৩৷ কেজরিওয়াল কেন্দ্রের পরিস্থিতি শান্ত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে বসায় বামপন্থীদের গাত্রদাহ হয়েছে। আমাদের ভারতীয় গণতান্ত্রিক কাঠামােয় এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
কোনাে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করবেন। কিন্তু একমাত্র কেরল বাদ দিয়ে আর সব জায়গা থেকেই বামপন্থীদের মানুষ কুলাের বাতাস দিয়ে বিদায় করেছে। কেরলেও নিভু নিভু অবস্থা। তাই চিরকাল বিদেশের দালালি করে আসা কমিউনিস্টরা বিদেশের মদতে যে ভারতকে অশান্ত করতে চাইবেন তাতে আর নতুনত্ব কী?
সুতরাং এদের জন্য কড়া পদক্ষেপ নিতেই হবে ভারত সরকারকে। একথা ঠিক যে, জেএনইউ বা যাদবপুরের মতাে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এদের কিছু প্রভাব রয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে এও অনস্বীকার্য সাম্প্রতিক যাদবপুরে ছাত্র নির্বাচনে বিদ্যার্থী পরিষদ যথেষ্টভালাে। ফল করেছে। একটা কথা স্পষ্ট ভাবে বুঝতে হবে পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্টদের মূল প্রভাবের কারণ হচ্ছে একটি নকশাল পরিচালিত সংবাদগােষ্ঠী। তারা দিল্লির উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সময়ে মানুষকে কৌশলে বিভ্রান্ত করেছে, দাঙ্গার মদত জুগিয়েছে, সর্বোপরি মিথ্যা খবর ছড়িয়েছে। এই সংবাদমাধ্যমটিকে আমাদের বামপন্থীদের প্রচারযন্ত্র হিসেবেই দেখা উচিত। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের মর্যাদা এটি পেতে পারে না কোনাে মতেই। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন কলকাতায় আসেন তখন তৃণমূলের মদতে সিপিএমের হুলিগানরা রাস্তায় নেমে অসভ্যতা করেছিল। পুলিশ যথারীতি দেখেও নীরব দর্শকের ভূমিকায়। সুতরাং সাধারণ মানুষকেই সচেতন হতে হবে নয়তাে ৪৬-এর “The Great Calcutta Killing’-এর দিনগুলাে অচিরেই ফিরে আসবে।
বিশ্বামিত্র
2020-03-10