উপনির্বাচনেও উন্নয়নবাহিনীর তাণ্ডব

রাজ্যের একটি সাধারণ উপনির্বাচন, তাতেও পশ্চিমবঙ্গবাসী যে ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাক্ষী থাকল তা ভারতবর্ষের রাজনীতিতে বহু চর্চিত বিষয় হয়ে থাকবে। রাজ্যবাসী সেদিন প্রত্যক্ষ করল কীভাবে একজন বিধায়ক পদপ্রার্থীকে চরম শারীরিক হেনস্থার স্বীকার হতে হয়েছে। নদীয়ার করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারের দোষ ছিল তিনি ছাপ্পা ভোটের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘিয়াঘাট ইসলামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢুকে পড়েন, আর তাতেই তৃণমূলের উন্নয়নবাহিনীর গোঁসা হয়। বাকিটা সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে সকলের জানা। সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রার্থী অভিযোগ জানাতে শুরু করলেই শুরু হয় উন্নয়নবাহিনীর কিল, চড়, ঘুসি। এবং শেষপর্যন্ত তাকে লুঙ্গিবাহিনী এসে লাথি মেরে ঝোপে ফেলে দেয় ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে।
এবার প্রশ্ন হলো কারা এরা? কার নির্দেশেই বা তাদের এই বাড়বাড়ন্ত ? এবং আরেকটি দিকও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। নেত্রীর দেখানো পথ অনুসারে যদি সত্যি করিমপুরে উন্নয়ন হয়েই থাকে তাহলে সাধারণ মানুষের উপর তাদের ভরসা নেই কেন? কেন তারা জোর করে বলপূর্বক ভোট করাচ্ছে?
উন্নয়নের কথায় করিমপুরবাসী কেবলমাত্র উন্নয়নের ফলাফল ইভিএমে পর্যবসিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ওয়ার্ডভিত্তিক সমীকরণ করলে দেখা যাবে পানীয় জল, রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে আলোর সুষ্ঠু পরিকাঠামো দিতে রাজ্য সরকার ব্যর্থ। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে মিডডে। মিলের চরম বেহাল অবস্থা, গ্রামের একশোদিনের কাজের টাকার লুট—এইসব ইস্যুগুলি তো আছেই। কিন্তু নেত্রী যেই মাস্টারস্ট্রোকটিকে কাজে লাগিয়ে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছেন সেটি হলো এই এলাকার মানুষগুলিকে এনআরসি নিয়ে ভয় ধরিয়ে দেওয়া। কার্যত এনআরসি নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করে হিন্দুদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে তিনি সক্ষম হয়েছেন। এলাকার সাংসদ মহুয়া মৈত্র যেভাবে পুলিশ প্রশাসনকে নিজের কাজে লাগিয়েছেন, যেভাবে আই.সি-কে নিয়ে দলের প্রচার সেরেছেন, তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করাও ছিল সহজ।
সাধারণভাবে কোনো রাজ্যে উপনির্বাচনে যে সরকার ক্ষমতাসীন, সেই দলের জেতার সম্ভাবনাই প্রবল থাকে। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রমও থাকে। অতীতেও উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকার গঠন করলেও উপনির্বাচনে বিজেপি ভালো ফল করতে পারেনি। তবে পশ্চিমবঙ্গ যে ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী থাকল তার নিন্দার ভাষা নেই। নির্বাচন আসবে যাবে, সরকার গড়বে ভাঙবে কিন্তু একজন নির্বাচনী প্রার্থীকে এহেন শারীরিক নির্যাতন আক্ষরিকভাবেই অনভিপ্রেত। যে রাজনৈতিক দলটির পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্টি, শিক্ষা, ঐতিহ্য, পরম্পরা নিয়ে এত গলাবাজি, ট্রাফিক সিগন্যালে যারা মানুষকে রবীন্দ্রসংগীত শোনায় তাদের দ্বারাই এহেন আচরণ সমাজকে কী বার্তা দেবে? গাজোয়ারি করে একটি নির্বাচন জেতা যায়, কিন্তু স্বচ্ছতা, সামাজিক সদ্ভাব এগুলির উপর যে কদর্য আঘাত এল তা ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের মানুষ স্মরণে রাখবে।
বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারকে এই নিগ্রহের পরেও তৃণমূল সুপ্রিমোর একটি প্রতিক্রিয়া বা একটি টুইট সামনে আসেনি। মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ বলে ধরে নিলে বলা যায় লুঙ্গিবাহিনী আবার এই নির্যাতন চালাবে। একবার নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, যে লাথিটি জয়প্রকাশবাবুর উপর পড়েছে। সেটি শুধুমাত্র তার উপর পড়েনি, পড়েছে নেত্রীর লালিত পালিত দুধেল গোরর দ্বারা হিন্দুদের উপর। রাজ্যে আজ যে হিন্দুরা। বিপদের দিকে এগোচ্ছে এই ঘটনা তার জ্বলন্ত উদাহরণ।
সংস্কৃতির উপর যে চরম আঘাত করা হয়েছে ঐক্যবদ্ধ হিন্দুশক্তি সুদূর ভবিষ্যতে তার জবাব দেবে। তবে তার জন্য সবার আগে দরকার হিন্দুদের মধ্যে থেকে এনআরসি সম্পর্কে বিভ্রান্তি দূর করা, স্বচ্ছ ব্যাখ্যা ও নাগরিক সংশোধনী বিল বা সিএবির গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে তাদের বোঝানো। সেকুলারিজমের বিষবাষ্প থেকে বেরিয়ে এসে চোখ খুলে চারপাশটা হিন্দুদের দেখতে হবে, বুঝতে হবে এই রাজ্যটা হিন্দু বাঙ্গালির অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। অস্তিত্বের সংঙ্কটে পড়লে অস্তিত্বের জন্য লড়াই বলেও একটা বিষয় আছে….. প্রত্যক্ষভাবে এবার তাদের এটি বুঝতে হবে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অনুপ্রবেশকারীদের আধিক্য, তাদের নাগরিক তৈরি করতে রাজ্য সরকারের চূড়ান্ত তৎপরতা এবং মূলত কেন তাদের এত তোষণ এই দিকগুলি নিগৃঢ়ভাবে বুঝতে পারলেই অনেক প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার হয়ে যাবে।
রণিতা সরকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.