সম্প্রতি বাম-কংগ্রেস জোটের পক্ষ থেকে রাজ্যসভায় প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে। অপর পক্ষে তৃণমূলের সমর্থনে নির্দল প্রার্থী : হিসেবে রাজ্যসভায় শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন দীনেশ বাজাজ। তৃণমূলের চারজন প্রার্থীর নিশ্চিত জয়ের পরে পঞ্চম প্রার্থী হিসেবে বিকাশরঞ্জন নাকি দীনেশ বাজাজ কে জিতবেন তাই নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু দীনেশ বাজাজের মনোনয়নপত্র ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার করণে বাতিল হওয়ায় বিকাশবাবুর জয় একরকম নিশ্চিত হয়ে গেল। সেই সঙ্গে প্রমাণ হলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাম-বিরোধিতা স্পষ্টতই লোকদেখানো। কারণ তার অনুপ্রেরণা না থাকলে দীনেশবাবুর মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ মনোনয়নপত্রে ভুলও। করতেন না আর সেই ভুলের সুযোগ নিয়ে বিকাশবাবুর জেতাও হতো না।
এ রাজ্যে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি। সিপিএম ও কংগ্রেসের অস্তিত্ব অণুবীক্ষণ যন্ত্রেও আর ধরা পড়ছে না। এই অবস্থায় তৃণমূল-বিজেপি যৌথ প্রার্থী দেবে বলে যারা ভাবছেন তারা মুখের জগতে বাস করছেন। কিন্তু এখন হলপ করে বলা যায় বিজেপির ছ’জন বিধায়কের ভোট বিকাশবাবুর বিপক্ষেই যাবে এবং সেটা হওয়াই উচিত। গত লোকসভা নির্বাচনেও দেখেছিলাম বিকাশবাবুর বিরুদ্ধে হিন্দু সমাজ সম্মিলিত ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কারণ, তিনি প্রকাশ্য রাস্তায় নিষিদ্ধ মাংস খেয়েছিলেন। এবং অতি সম্প্রতি তার আর এক কীর্তি সমগ্র হিন্দু সমাজকে তালিবান আখ্যা দেওয়া।
বিকাশবাবুর এহেন হিন্দুবিরোধী মানসিকতাই গত লোকসভা ভোটে তার বিপক্ষে গিয়েছিল। বস্তুত আজকে রাজ্যে যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্টি তার জন্যও বিকাশবাবু মতো রাজনীতিকরা কোনো অংশে কম দায়ী নন। তিনি মুসলমান প্রধান এলাকায় গোমাংস খেতে পারেন,
কিন্তু শুয়োরের মাংস খাবারমতো সৎসাহস তার নেই। তারা সাম্প্রদায়িকতা বলতে একতরফা ভাবে মুসলমান তোষণ বোঝেন এবং যতদিন সরকারে ক্ষমতায় ছিলেন হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের উসকানি দিয়েছিলেন ভোটের স্বার্থ চরিতার্থ করতে।
নির্জলা খাঁটি সত্যি এটাই যে, বিকাশবাবুর বিরুদ্ধে সামগ্রিক ভাবে হিন্দু সমাজ জেগেছে। বামপন্থীদের চৌত্রিশ বছরের যাবতীয় অপকীর্তির মধ্যে প্রধানতর অপকীর্তি হলো মুসলমান তোষণের মাধ্যমে হিন্দু সমাজকে অবদমিত করে রাখা। কিন্তু পাপ কখনোও চাপা থাকে না। তাই লোকসভা থেকে অবলুপ্তির পরে রাজ্যসভা থেকেও তাদের বিদায় জানানোর সময় এসেছে। হিন্দু সন্ত্রাসবাদী’শব্দটি আমদানি করার জন্য এই ইতালির মহিলাটি যত-না দায়ী বিদেশিদের দালালি করে আসা বামপন্থীরা তার চাইতে কোনো অংশে কম দায়ী নন। বিকাশবাবুদের এটা বোঝা উচিত, যখন রাজ্যে তাঁরা হাতে মাথা কাটতেন তখন হিন্দুদের বিরুদ্ধে জিগির তোলার কাজটা সহজ ছিল। তাই তাদের মুখ্যমন্ত্রী গর্বোদ্ধত আচরণ করে বলতে পেরেছিলেন—‘দু’চার পিস আরএসএসের মাথা গুড়িয়ে দেব’।
অদৃষ্টের পরিহাস যে তাদেরই এখন মাথা গুঁড়িয়ে গেছে। তৃণমূলের দয়াদাক্ষিণ্যে দু’চার পিস সিপিএম এখনও বেঁচেবর্তে আছে, নইলে তাদের অবস্থা আরও শোচনীয় হতো। এমনকী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও তৃণমূলের দয়াদক্ষিণ্যেই জিতবেন। বামপন্থীদের উচিত দেওয়াল লিখনটা পড়া। নীচের তলার কেউ কেউ সেটা অবশ্য পড়তে পারছেন। তাই তাদের পার্টি অফিসেই অষ্টপ্রহর নামসংকীর্তনের আয়োজন করা চলছে। অবশ্য এই প্রয়োজনটি এখনোও উঁচুতলায় অনুভূত হচ্ছে না। তাই বিকাশবাবু হিন্দুদের অক্লেশে তালিবান বলতে পারেন এবং সম্ভবত বলার সময় এটা ভুলে যান যে দমদম দাওয়াই দেওয়ার দিন তাদের ফুরিয়েছে। তাদের মাথা ভাঙার ক্ষমতা নেই। কিন্তু এখন হিন্দুদের দমদম দাওয়াই দেবার দিন বা মাথা ভাঙার ক্ষমতা দুই-ই আছে।
বিশ্বামিত্র