শ্রীকৃষ্ণদার প্রয়াণে স্বজন বিয়ােগের ব্যথা


যে দুটি সাংগঠনিক ধারাপ্রবাহ বর্তমানে ভারতবর্ষ তথা বিশ্বকে পরিশীলিত ও পরিশুদ্ধ করছে, তার একটি হলাে— শ্রীরামকৃষ্ণ- বিবেকানন্দ প্রবর্তিত ধর্মীয় আধ্যাত্মিক ধারা। যার উৎস ভূমি কলকাতা তথা বঙ্গভূমি। দ্বিতীয়টি হলাে— ডাক্তারজী-গুরুজী প্রবর্তিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক ধারা, যার উৎসভূমি নাগপুর তথা মহারাষ্ট্র।
স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকেই এই দুই প্রদেশের আদান-প্রদান সুবিদিত। সঙ্কার্য বিস্তারের প্রাথমিক ধাপে নাগপুর থেকে বাঙ্গলায় এসেছেন শ্রীগুরুজী, বালাসাহেব দেওরসজী। পরবর্তীতে একের পর এক প্রচারক নাগপুর ও মহারাষ্ট্র থেকে বাঙ্গলায় এসেছেন। শ্রীকৃষ্ণ মােতলগজী নাগপুরে বালুজী নামে পরিচিত। আমাদের এখানে এসে হয়েছেন শ্রীকৃষ্ণদা। তিনি পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন সহ-প্রান্ত প্রচারক রূপে ১৯৮১ সালে। কলকাতাকে কেন্দ্র করে কাজ শুরু করেছেন। ক্রমশ সমগ্র রাজ্যের সব জেলায় গেছেন। পরবর্তীতে প্রান্ত প্রচারক, পূর্ব ক্ষেত্র (পশ্চিমবঙ্গ ও অসম) প্রচারক, অখিল ভারতীয় সহ-প্রচারক প্রমুখ হয়েছেন।
শ্রীকৃষ্ণদার চরিত্রের অনেক দিকের মধ্যে একটি দিক হলাে, যে কার্যকর্তার পরিবারে তিনি গেছেন সেই পরিবারের সকলের সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। অনেক পরিবারে তিনি ভাই বা দাদার মতাে পরিবারের একজন সদস্য, কোথাও অভিভাবকের মতাে হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর প্রয়াণে সেইসব পরিবার আজ আত্মীয় বিয়ােগ অনুভব করছেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে নাগপুরে বিশেষ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের প্রাতঃস্মরণীয় ডাক্তারজীর বাড়ি ও প্রধান কার্যালয় দর্শনের সময় শ্রীকৃষ্ণদার সঙ্গে অন্তিম সাক্ষাৎ হয়। বয়স ও ঠাণ্ডায় একটু ভারাক্রান্ত থাকলেও তাঁর ঘরে পশ্চিমবঙ্গের সব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচয় করেন। পরিচিত সবার খোঁজখরব নেন। এটা সেবারের পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার্থীদের কাছে এক দুর্লভ মুহূর্ত ছিল।
সেই শ্রীকৃষ্ণদা আজ আমাদের মধ্যে নেই, তার বিদেহী। আত্মার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
গােবিন্দ ঘােষ
(লেখক উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের সম্পর্ক প্রমুখ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.