প্রধানমন্ত্রী রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে কোনাে অসাংবিধানিক কাজ করেননি

গত ৫ আগস্ট ভারতের ইতিহাসে একটি বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে। অযােধ্যার রামজন্মভূমিতে রামমন্দির নির্মণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছে। এটি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদীর হাত দিয়ে। করােনা অতিমারীর আবহে খুব অল্পসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে কাল ও ক্ষণ বিচার করে শাস্ত্রবিশারদদের নির্দেশ মেনে প্রধানমন্ত্রী রামমন্দিরের শিলা স্থাপন করেছেন। এই ঘটনাটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। এরও একটি পূর্বঘটনা আছে। ভারতের মহামান্য সর্বোচ্চ আদালত ৫ জন বিচারপতি নিয়ে বেঞ্চ গঠন করে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি-সহ ৫ বিচারক সর্বসম্মত ভাবে রায় ঘােষণা করেন যে রামজন্মভূমির জমির অধিকার বর্তাবে রামজন্মভূমি ন্যাসের ওপর। এবং একটি ট্রাস্ট গঠন করা হবে মন্দির নির্মাণের উদ্দেশ্যে। এইট্রাস্ট গঠিত হবে ভারত সরকারের তত্ত্বাবধানে। সুন্নি মুসলমানদের জন্যও এর বাইরে জমি প্রদান করা হবে।

সুপ্রিম কোর্টের রায় দানকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে ও মুসলমান বিরুদ্ধাবাদীদের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু কোনাে কিছুই ধােপে টেকেনি। ১৯৪৯ সাল থেকে যে বিতর্কের সূচনা হয়েছিল এবং যা প্রাক্তনমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সময়ে (১৯৮৫) একটা ভােটকেন্দ্রিক কৌশলীমাত্রা লাভ করেছিল যা বহু দশক ধরে কোনাে আদালতই নিষ্পত্তি করতে পারেনি। বলা সঙ্গত কোনাে আদালতই (এমনকী সুপ্রিম কোর্টও) তার সাহসিক সমাধানে শব্দ উচ্চারণ করেনি। শেষ পর্যন্ত ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব সমাজ ও নানা দলিল দস্তাবেজ ও আইনের চুলচেরা বিচার করে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতি সর্বসম্মত ভাবে সংবিধান সম্মত ধর্মনিরপেক্ষ রায় ঘােষণা করেছেন। আইনের বিচারে কোনাে রায় কোনাে ব্যক্তি বা ধর্মীয় গােষ্ঠীর পক্ষে গেলেও তা মূলত নিরপেক্ষ বলেই গণ্য হবে। কোন গােষ্ঠী এতে আনন্দ অনুভব করবে তা আইনের বিচার্য বিষয় নয়। সত্য কঠিন। সুপ্রিম কোর্ট এই কঠিন সত্যকেই সহজে মেনে নিতে আজ্ঞা দিয়েছিল। প্রতিক্রিয়া যার যেমন। এই রায়েরই অনুবর্তী হিসেবে পরবর্তী বড়াে ঘটনা হলাে মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।।

এক সময় প্রশ্ন উঠেছিল বাবরি মসজিদের নীচে অন্য কোনাে ধাঁচা বা মন্দির আছে কিনা। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যের পর সে প্রশ্ন মীমাংসিত হয়েছে। ধাঁচা ছিল। সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টও তা উল্লেখ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর প্রশ্ন উঠল ওই অবিতর্কিত জমিতে মন্দির না করে কেন হাসপাতাল বা মিউজিয়াম তৈরি করা হবে না। সে দাবিও বুদবুদের মতাে মিলিয়ে গেল। এরপর থেকে কোনাে জরুরি প্রশ্ন আর ওঠেনি। কোনাে রাজনৈতিক আন্দোলনেরও অবকাশ নেই। রামের নামে মন্দির নির্মাণ হবেই এই অনিবার্যতা বিরুদ্ধবাদীরা বুঝতে পারলেন। যদিও তারা মুসলমান নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েসির (এআইএমইন) মতাে আজও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সমালােচনা করেন। সব পথ ও কৌশল রুদ্ধ হলে পর আজ হইচই করছেন। ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র রণকৌশল নিয়ে যার তাৎপর্য বাস্তবেশূন্য। এদের সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা ও একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল জমি বিতর্কের কোনাে মীমাংসা না ঘটতে দেওয়া। কারণ তাহলে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে এরা সদাসর্বদা গােলােযােগ সৃষ্টি করতে পারবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেভাবেই হােক ভারতের ভাবমূর্তিকে বিশ্বের দরবারে খাটো করতে হবে। ডাইনে বাঁয়ে সবসময় শুধু মােদী বিরােধিতা করে যেতে হবে। এই প্রচেষ্টারই অঙ্গ হিসেবে এখন প্রশ্ন তােলা হচ্ছে যে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদী মন্দিরের শিলান্যাস করে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা লঙ্ঘন করেছেন। যারা এ প্রশ্ন তুলছেন তারা যে সংবিধান বােঝেন না তা নয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের মনে কমিউনিস্ট-নেহরু মার্কাবস্তাপচা ধারণা ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা করছেন। মুসলমান সম্প্রদায়ের মনে অহেতুক ভীতি সৃষ্টি করছেন। এ ভাবনাটি বর্তমান নিবন্ধের আলােচ্য বিষয় নয়। আমরা দেখতে চাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদী শিলন্যাস করে ও রামলালার মাহাত্ম্য বর্ণনা করে সংবিধান কীভাবে লঙ্ঘন করেছেন এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি কলুষিত করেছেন।

প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ও তাঁর সরকার সুপ্রিম কোর্টের নিদের্শ ও ফর্মুলা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। এ সম্বন্ধে বিরুদ্ধবাদীদের কিছু বলার নেই। যদি থাকত তবে তারা তা নিয়ে এই মুহূর্তেই সুপ্রিম কোর্টে দৌড়াতেন।

দ্বিতীয়ত, যে কোনাে ভারতীয় নাগরকিই তার মৌলিক অধিকার চর্চা করতে ও দাবি করতে পারেন। এক্ষেত্রে সংবিধানের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার (২৫ থেকে ২৮ নং ধারা) পালন করা আমার আপনার মতাে নরেন্দ্র মােদীরও আছে। ঘটনাক্রমে তিনি আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার বর্জন করতে হবে এমন ধারা সংবিধান বা শপথ গ্রহণের ভূর্জপত্রে নেই। সুতরাং তিনি যেখানেই যাবেন প্রধানমন্ত্রীর তকমা তার থাকবেই। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বত্রই তার উপস্থিতি হিসেবেই গণ্য হবে। মন্দির বা হাসপাতাল পরিদর্শনে গেলেও প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীই থাকবেন। ভারতের সংবিধানের কোনাে ধারার সঙ্গে এ বিষয়ে কোনাে বিরােধ নেই।

তৃতীয়ত, নরেন্দ্র মােদী বিজেপি দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হয়েছেন। এই বিজেপি দলের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে রামমন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি লিপিবদ্ধ আছে। এই প্রতিশ্রুতি কারুর পছন্দ হতে পারে আবার কারুর অপছন্দ হতে পারে। কিন্তু তা নির্বাচন বিধি বা সংবিধান ভঙ্গ করে না। বিজেপির মতে তারা ধর্মনিরপেক্ষতার বিশ্বাস করে, মেকি ধর্মনিরপেক্ষতার বাতুলতায় নয়। এটা তর্কের বিষয়। কিন্তু তা যদি সংবিধান বিরুদ্ধ বলে প্রমাণিত হয় তবে তারা নির্বাচনী বিধিভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত হতাে। নরেন্দ্র মােদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে তঁার প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পালন করলে ধর্মনিরপেক্ষতার কীভাবে সর্বনাশ ঘটল তার কোনাে যুক্তিগ্রাহ্য বক্তব্য নেই। রাজনৈতিক বাগবিস্তার ছাড়া এর কোনাে মূল্য নেই।

এ প্রসঙ্গে ইতিহাসের একটি পুরানাে ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে। ঘটনাটি হচ্ছে— গুজরাটের প্রাচীন সােমনাথ মন্দির প্রসঙ্গ। তুর্কি মুসলমান শাসকমহম্মদ গজনি সােমনাথ মন্দির ধ্বংস করে বহু কোটি মূল্যের সম্পদ লুণ্ঠন করেছিল। জোতির্লিঙ্গ বিনষ্ট করে হিন্দুমানসে চিরস্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। একবার নয় বহুবার এই মন্দিরের ওপর। আক্রমণ ঘটেছে। দেশ স্বাধীন হবার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের উদ্যোগে সােমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মন্দির উদ্বোধনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদকে আহ্বান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নেহরুমন্দির পুনর্নির্মাণের কার্যে বরাবরই সরকারের মন্ত্রী-আমলা ও রাষ্ট্রপতিকে যুক্ত থাকায় আপত্তি জানিয়ে এসেছেন। ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ ২ মার্চ, ১৯৫১ সালে একটি চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী নেহরুকে লেখেন যে, মন্দির উদ্বোধনে অংশগ্রহণ করাকে তিনি আপত্তিকর মনে করেন না। তিনি এই অনুষ্ঠানে অবশ্যই যাবেন। প্রধানমন্ত্রী নেহরু প্রত্যেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি দিয়ে এই অনুষ্ঠানে যােগ না দেবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ অবিচল চিত্তে মন্দিরের অনুষ্ঠানে যােগ দিয়ে নেহরুর বিরােধিতা করে বলেছিলেন যে তিনি ভারতের কোনাে ঐতিহ্যকে লঙ্ঘন করেননি। মনে রাখতে হবে সে সময় ভারতের সংবিধানে ‘সেকুলার’শব্দটিই ছিল না। এই শব্দের স্থাপন ১৯৭৬ সালে ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালে। যাইহােক, মূল বক্তব্য হচ্ছে এই যে, এর পরেও ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ আরও বহু বছর (১৯৬২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) রাষ্ট্রপতির পদে ছিলেন এবং ভারতও ‘সেকুলার’ ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে নরেন্দ্র মােদীর রামমন্দিরের শিলান্যাস কোনাে কোনাে বুদ্ধিজীবীর অনুমােদন না পেলেও তা ‘সেকুলার সংবিধানের কোন ধারাকে লঙ্ঘন করেছে তার কোনাে উত্তর তাদের জানা নেই। কিছুদিন আগেও বেলুড়মঠ রামকৃষ্ণ মিশনে প্রধানমন্ত্রী কেন রাত্রিবাস করেছিলেন সে সম্পর্কেও প্রশ্ন তােলা হলাে কয়েকটি অর্বাচীন প্রাক্তনীদের দ্বারা। আসলে ‘সেকুলারইজম’বা রাষ্ট্রীয়তা নয়, মােদী বিরােধিতার জন্যই সবকিছু ঘুলিয়ে দেওয়াই কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু রাজনৈতিক দলের এবং তাদের শাগরেদদের।

এই রাজনৈতিক প্রশ্ন ছেড়ে এবার আবার অন্য একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। ভারতের সংবিধান কতজন বুদ্ধিজীবী পড়েছেন বা অন্ততপক্ষে শুধু চোখে দেখেছেন তা বলা দুরূহ। কিন্তু তাদের কেউ কেউ নিশ্চয় জানেন যে মূল হস্তলিখিত সংবিধানে কিছু চিত্র আছে। এই চিত্রগুলিতে সনাতন ভারতবর্ষের ঐতিহ্য, আদর্শ ও ভাবকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই চিত্রগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে রাম-সীতা-লক্ষ্মণ, রথারূঢ় অর্জুন ও শ্রীকৃষ্ণের চিত্র। আছে বীরভক্ত হনুমানের চিত্র। এই চিত্রগুলি অঙ্কন করেছেন নন্দলাল বসু ও বিশ্বভারতীর কতিপয় ছাত্র। ভারতের সংবিধান কিন্তু রামায়ণমহাভারতের নীতি গ্রহণ করেও ‘সেকুলার সংবিধানের মর্যাদা পেয়েছে। সুতরাং নিজের ধর্ম বিশ্বাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন কখনই নেতিমূলক ফলের কারণ হতে পারে না। শুধু ভােটের তাগিদে মাথায় ঘােমটা ভাসুর-ভাদ্দর বউয়ের ভড়ং করা আত্মপ্রবঞ্চনার নামান্তর। এটা তাে আমাদের রাজ্যের নেতা-নেত্রীরাও বােঝেন। যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে মা-দুর্গার আবরণ উন্মােচন করেন বা খুঁটি পুজোর অনুষ্ঠানে বিধায়ক, সাংসদ বা স্থানীয় পৌর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন পুরােহিতদের সঙ্গে তখন কি ধর্মনিরপেক্ষতার ভাব দূষিত হয়? মাজার বা দরগায় মাথা ঠেকিয়ে কি ধর্মনিরপেক্ষতা ক্ষয়ে যায় ? ইফতার পার্টিতে ঘুরে ঘুরে কোন ধর্মনিরপেতার পােষণ করা হয়? অথচ প্রধানমন্ত্রী। রামমন্দিরের শিলান্যাস করবেন ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে এই দুশ্চিন্তায় যদি কারও শরীর ও মন। বিবশ হয়ে যায় তবে তা সত্যিই চিন্তার বিষয়। কারণ এ ব্যাপারে তাে আদালতের শরণাপন্ন । হওয়ার কোনাে উপায় নেই। আমরা কি কেউ প্রশ্ন তুলেছিলাম যখন ধর্মনিরপেক্ষ (আদতে ধর্মহীন) জওহরলাল নেহরুর চিতাভস্ম (তারই ইচ্ছায়) কীভাবে সদগতি প্রাপ্ত হয়েছিল? আমরা কি জানতে চেয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর গলায় কার আশীর্বাদী রুদ্রাক্ষের মালা শােভিত হতাে? না। কারণ এসব অবন্তর ও অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন।

কারণ এতে ধর্মের হানি হয়নি। কিন্তু ভারতবাসীর গভীর ঐতিহ্যের ধারক বাহক রাম ও হনুমান (যাঁদের রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দও বন্দনা করেছেন)-কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদী সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে ভারতের সংবিধানের। সর্বনাশ ঘটিয়েছেন এমন অভিযােগ আজ কেন করছেন। এরা কোনাে কালেই ধর্ম কী সে সম্বন্ধে জানতে বা মানতে চাননি। বাস্তবে এরা সংবিধান নয়, অধর্মেরই রক্ষাকবচ। ১৩৫ কোটি ভারতবাসীর এরা কতটুকু অংশ?

পুলকনারায়ণ ধর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.