কিছু উদ্বাস্তু কাশ্মীরি মহিলার উপার্জনের মাধ্যম খাদি রুমাল

জেহাদি সন্ত্রাসের কারণে উদ্বাস্তু হবার পর জম্মু পৌঁছে হাজার হাজার কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারের সামনে ছিল এক অনিশ্চয়তার ভবিষ্যৎ। সেই সময় আশ্রয়-সম্বল তো দূরের কথা, জীবনধারণের নূন্যতম প্রয়োজন খাদ্য, বাসস্থান এবং পরিধেয়ের মতো কোনো কিছুর ব্যবস্থা করাও দুরূহ ছিল। তাসত্ত্বেও সেসব পরিবারের মহিলারা ভেঙে পড়েননি। এঁদের মধ্যে অনেকেই খাদির মাধ্যমে নিজেদের উপার্জনের পথ খুঁজে নেন।নগরোটা গ্রামের চোকবজিরাতে ইউসুফ মেহেরালি সেন্টারের মাধ্যমে মহিলারা আর্থিক উপার্জলের পথ খুঁজে পেয়েছেন।

জম্মুর কাছেই অবস্থিত নগরোটার। চোকবজির গ্রাম। এই গ্রামের শতাধিক পরিবারের মহিলারা ইউসুফ মেহেরালি সেন্টারে খাদির রুমাল বানিয়ে চলেছেন। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগ মহিলা ১৯৯০-এ ভয়ংকর সন্ত্রাসেরর জন্য সবকিছু ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই সংস্থানটির মাধ্যমে তাদের আত্মনির্ভর বানানো হচ্ছে। খাদি ও গ্রামোদ্যোগ আয়োগ এখন এই ব্যাপারে শীঘ্রই কাজের বিস্তার করে চলেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতীন গড়করি দিল্লিতে এই সেন্টার দ্বারা তৈরি রুমা ‘লঞ্চ’করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের জনগণের কাছে আবেদন করেছেন, তারা যেন কমপক্ষে একটি করে রুমাল অবশ্যই কেনেন।

কাশ্মীর থেকে বিতাড়িত হবার পরে এই পরিবারগুলির খাওয়া-পরার সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে দৈনিক মজুরের কাজও করেছেন। অনেক বছর পর্যন্ত কোনো স্থায়ী উপার্জন ব্যবস্থাও হয়নি তাদের। তখন খাদিদপ্তর এগিয়ে আসে। খাদি ও গ্রামোদ্যোগ আয়োগের মাধ্যমে ইউসুফ মেহেরালি সেন্টারের কথা মহিলারা জানতে পারেন। তারা তখন এখানে প্রশিক্ষণ নেন। এখন তারা এতটাই পারদর্শী হয়ে উঠেছেন যে, প্রত্যেক মহিলা চারঘণ্টায় সত্তর থেকে দু’শোটি রুমাল বানিয়ে রোজ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা উপার্জন করে থাকেন। মহিলারা এখানে সকাল দশটা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত কাজে ব্যস্ত থাকেন। ২০১৬ সাল থেকে এই সংস্থাটি কাজ করে চলেছে। ইউসুফ মেহেরালি সেন্টারের দায়িত্বে থাকা নম্বতা দেবী ও মনা দেবী জানান যে, এই সেন্টারটি দুঃস্থ ও দরিদ্রদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে সফলতার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। এখানে মহিলাদের প্রথমে কাজ শেখানো হয়, তারপর কাজে নেওয়া হয়। প্রতিটি রুমাল বাবদ মজুরি দেড় থেকে দু’টাকা। সেন্টারে দু’টি ইন্টারলক ও পঞ্চাশটি সেলাই মেশিন আছে। আলাদা করে। কাটিং মেশিনও আছে। রুমালের কাপড় সরবরাহ করে খাদি ও গ্রামোদ্যোগ বোর্ড।

খাদি গ্রামোদ্যোগ আয়োগের সহায়তায় খাদি ও গ্রামোদ্যোগ আয়োগ জম্মু-কাশ্মীরের স্টেট ডাইরেক্টর ডি. এস ভাটি জানিয়েছেন যে, আয়োগ ও পেটি এম-এর মধ্যে পাঁচ কোটি রুমাল বানানোর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রথম বছর দু’কোটি রুমাল বানানো হবে। তাছাড়া শুদ্ধ তুলো থেকে তৈরি সাদা রঙের খাদি রুমাল দেশের সমস্ত আউটলেটের সেন্টারে বিক্রি করা হবে। সরকারি কার্যক্রমেও পুষ্পগুচ্ছের সঙ্গে খাদি কাপড়ের তৈরি এই রুমাল উপহার দেবার প্রথা শুরু করা হচ্ছে।

সংস্থানটিতে কর্মরত নির্মলা দেবী বলেছেন, তারা ১৯৯১ সালে কাশ্মীরের কুলগ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়ে জম্মুর কোট বজরাঁতে আসেন। কাশ্মীরে তার স্বামী রণধীরের শুকনো ফলের দোকান ছিল। এখানে এসে দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে জীবন কেটেছে। খাদির রুমাল বানিয়ে তারা এখন দৈনন্দিন খরচ চালিয়ে নিচ্ছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পিঙ্কি দেবীর স্বামী রোশন কাশ্মীরে গাড়ি চালাতেন। তাদেরও কাশ্মীর থেকে বিতাড়িত হতে হয়। সংকটের মধ্যে দিল কাটছিল। বর্তমানে খাদির রুমাল বানিয়ে তারা দুটি সন্তানকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন।

সন্ত্রাসের কারণে উদ্বাস্তু পরিবারগুলি আপ্রাণ চেষ্টা করেছে পুনরায় সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার। খাদি ও গ্রামোদ্যোগের সহায়তায় এই সংস্থাটি যেভাবে কাশ্মীরি মহিলাদের স্বনির্ভর হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছেন, তা অবশ্যই প্রশংসনীয় ও অভিনন্দনযোগ্য।

সুতপা বসাক ভড়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.