করোনামহামারীর প্রকোপে থমকে যাওয়া দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি যাতে কিঞ্চিৎ গতি লাভ করতে পারে, তার জন্য ভারতের পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী গত ১৭ জুন ভারতের ২৮টি রাজ্যের গ্রামীণ লোকাল বডি অর্থাৎ পঞ্চায়েতগুলির জন্য মোট ১৫,১৭৭.৫০ কোটি টাকার অনুদান মঞ্জুর করেছে ভারতের অর্থমন্ত্রক। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের ব্যয়দপ্তর বা ডিপার্টমেন্ট অব এক্সপেনডিচারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, সংশ্লিষ্টরাজ্যগুলির অর্থদপ্তরের কাছে অনুদানের অর্থমূল্য পৌঁছনোর সর্বাধিক ১০ দিনের মধ্যে যেন রাজ্যের গ্রামীণ লোকাল বডি বা পঞ্চায়েতগুলির কাছে সেই টাকা পৌঁছে যায়। টাকা পৌঁছতে ১০ দিনের বেশি দেরি হলে রাজ্যকে উক্ত বিলম্বিত সময়ের সুদসহ পঞ্চায়েতগুলিকে দিতে হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের ব্যয়দপ্তর।
প্রশ্ন উঠতে পারে , রাজ্যের অ্যাকাউন্ট থেকে পঞ্চায়েতগুলিকে টাকা পাঠানোর জন্য ১০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের ? উত্তর সম্ভবত এই যে, কোনো রাজ্য যাতে অনুদানের অর্থ রাজ্যের অ্যাকাউন্টে ফেলে রেখে সুদ সংগ্রহ না করে গ্রামীণ এলাকাগুলির পঞ্চায়েতের হাতে যথাশীঘ্র তুলে দেয়, সেই উদ্দেশ্যেই এমত নির্দেশিকা বলে অনুমান করা যায়।
১৭ জুন অর্থমন্ত্রকের নোটিফিকেশনের ১ নং অ্যানেক্সার অনুযায়ী উপরোক্ত খাতে অনুদান বাবদ পশ্চিমবঙ্গ পাচ্ছে ১১০৩ কোটি টাকা। করোনা ও আমফান বিধ্বস্ত পঞ্চায়েতগুলির হাতে এই অর্থ পৌঁছলে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অর্থনীতির নিশ্চিতভাবেই কিঞ্চিৎ সুরাহা হওয়ার কথা। কিন্তু রাজ্য যদি যথাসময়ে এই অর্থ পঞ্চায়েতগুলির হাতে তুলে না দিয়ে এই অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করে অথবা কোনো খাতেই ব্যয় না। করে রাজ্যের অ্যাকাউন্টে ফেলে রাখে, তবে গ্রামীণ লোকাল বডিগুলি এই অনুদানের আর্থিক লাভ পাবে না। এটি ঠেকানোর জন্যই সম্ভবত কেন্দ্রীয় ব্যয়দপ্তরের নির্দেশিকায় ১০ দিনের মধ্যে অর্থ বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থদপ্তর এও জানিয়েছে যে, পঞ্চায়েতগুলির নিজস্ব অ্যাস্টাব্লিসমেন্ট কস্ট ও কর্মচারীদের বেতন খাত বাদ দিয়ে এই মৌলিক অনুদান গ্রামীণ এলাকার অঞ্চলভিত্তিক নানা স্থানীয় প্রয়োজন মেটানোর জন্য ব্যয় হতে হবে।
অনুদানের খরচ সংক্রান্ত নির্দেশিকায় কিছু শর্তাবলী যেহেতু কেন্দ্র রেখেছে, সেহেতু একথা অনুমান করা যায় যে, অনুদান-মূল্যের যথাযথ ব্যবহার এবং তার পূর্ণ হিসাব পরবর্তীতে কেন্দ্রের কাছে পেশ করা ওই ২৮টি রাজ্যের কর্তব্যের মধ্যে পড়বে। ১৭ জুন রিলিজ করা হয়েছে রুরাল লোকাল বডি বেসিক অনুদানের প্রথম ইনস্টলমেন্ট। অনুদানের দ্বিতীয় ইনস্টলমেন্ট কেন্দ্রের কাছ থেকে আশা করার আগে, প্রথম ইনস্টলমেন্টের ব্যবহার ও তার যথাযথ হিসাব কেন্দ্রের কাছে পেশ না করলে পরবর্তী ইনস্টলমেন্ট পেতে রাজ্যগুলির অসুবিধা হওয়া স্বাভাবিক।
পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র তার বাজেট বক্তৃতায় এবং তৎপরবর্তীকালেও অজস্রবার সংবাদমাধ্যমের সামনে অভিযোগ করেছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার প্রাপ্য টাকা রাজ্যকে দিচ্ছেনা। ড. মিত্রের মতো বিদগ্ধ ব্যক্তির মুখ থেকে বার বার এমত অভিযোগ শুনলে রাজ্যের সাধারণ মানুষের মনে হতে পারে যে, ভারত সরকার বুঝি সত্যই বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে আমাদের রাজ্যটির প্রতি। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি কি সত্যই তাই? আমাদের দেশ একটি ওয়েলফেয়ার স্টেট। অর্থাৎ অনুদান জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয়িত হওয়ার কথা। দেশের প্রতিটি রাজ্যে জনকল্যাণের দায়িত্ব রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয়েরই। কেন্দ্র ও রাজ্যের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হলো এ বিষয়ে পরস্পরের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব বজায় রেখে ফেডেরেলিসমের নীতি মেনে চলা। কিন্তু রাজ্য যদি কেন্দ্রীয় অনুদানের ব্যয় বিষয়ক কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মেনে না চলে এবং তার হিসাব পুস্তিকা যথাসময়ে কেন্দ্রের কাছে পেশ না করে, তাহলে পরবর্তী কেন্দ্রীয় অনুদান পেতে তার অসুবিধা হওয়া অস্বাভাবিকও নয়, অনুচিতও নয়। ১৭ জুন রুরাল লোকাল বডি বেসিক অনুদানের প্রথম ইনস্টলমেন্ট বাবদ ১১০৩.০০ কোটি টাকা পশ্চিমবঙ্গ পাচ্ছে। এই অনুদানের দ্বিতীয় ইনস্টলমেন্ট পেতে হলে রাজ্যকে এর হিসাব দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, সর্বপ্রকার সরকারি কাজকর্ম আদতে হয় আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে। মন্ত্রী তথা এক্সিকিউটিভ দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নিলেও সে সিদ্ধান্তের রূপায়ণ হয় আমলাদের দ্বারা। কোনো খাতে কোনো অর্থ বরাদ্দ করতে হলে বা অনুরূপ যে। কোনো রকম সরকারি পদক্ষেপ নিতে গেলে আমলাদের হাতে যে। সকল প্রয়োজনীয় সহায়ক ডকুমেন্টস থাকা দরকার, তার সব কটি সন্তোষজনকভাবে না থাকলে অর্থ বরাদ্দের কাজ বা অন্য যে কোনো রকম সরকারি ক্লিয়ারেন্স দিতে তারা অপারগ থাকেন কারণ এই সব কাজের আইনগত উত্তরদায়িত্ব থাকে আমলাদের। সরকারি সিস্টেম। এমনই যে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ছাড়া কোনো কাজ করার ঝুঁকি নিয়ে নিজেদের আইনত বিপদে ফেলা আমলাদের পক্ষে অসম্ভব। এই ব্যবস্থাটিকেই সাধারণ ভাষায় বলা হয়ে থাকে আইনের শাসন। সরকারি অর্থের যথেচ্ছ ব্যবহার করার অধিকার বা ক্ষমতা আইনত কাউকেই দেওয়া নেই। প্রত্যেককেই সাংবিধানিক ও আইনগত সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। এহেন পরিস্থিতিতে পূর্ববর্তী সমস্ত কেন্দ্রীয় অনুদানের যথাযথ হিসাব পশ্চিমবঙ্গ পেশ করেছে কি না, তা না জানলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয় না। কেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্য প্রায় ৯০.০০০ কোটি টাকা (ড. অমিত মিত্রের বক্তব্য অনুযায়ী) কেন্দ্রীয় সরকার আটকে রেখেছে, তা জানার অধিকার প্রতি পশ্চিমবঙ্গবাসীর আছে। সেই সঙ্গে এ প্রশ্ন করার অধিকারও পশ্চিমবঙ্গবাসীর আছে যে সমস্ত কেন্দ্রীয় অনুদানের খরচের যথাযথ হিসাব পুস্তিকা পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভারত সরকারের কাছে পেশ করেছে কি না? এ প্রশ্ন করার অধিকার এ রাজ্যের মানুষের এই কারণে রয়েছে যে, রাজ্য যদি তার প্রাপ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয় শুধুমাত্র এমত হিসাব পেশ না করার ফলে, তবে সে বঞ্চনা রাজ্যের মানুষের ভাগ্যে বর্তায়। অর্থাৎরাজ্যের পাবলিক সার্ভেন্ট আমলারাতাদের কর্তব্য কর্ম যথাযথভাবে পালন করে কেন্দ্রীয় অনুদানের হিসাবপত্র ভারত সরকারের কাছে না পাঠানোর কুফল ভোগ করতে হচ্ছে রাজ্যের সাধারণ মানুষকে। তারা বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন রাষ্ট্রীয় অনুদান থেকে। কিন্তু একথাও অবশ্য উল্লেখ্য যে, কর্তব্যে অবহেলা এ রাজ্যের আমলারা নিজ সিদ্ধান্তে করছেন না। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বার বার অভিযোগ করেছেন যে, রাজ্যের প্রাপ্য টাকা কেন্দ্র রাজ্যকে দিচ্ছে না। কিন্তু একথা ড. মিত্র একবারও দাবি করেননি যে পূর্ববর্তী সমস্ত কেন্দ্রীয় অনুদানের হিসাবপুস্তিকা রাজ্যের তরফ থেকে ভারত সরকারের হাতে তুলে দেওয়া সত্ত্বেও ভারত সরকার পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্য টাকা আটকে রেখেছে। বরং এ বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কথা স্মরণীয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের আমলাদের সুপারিশ করেছিলেন। যে রাজ্যের কোনো তথ্য যেন কেন্দ্রকে জানানো না হয়। পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমগুলি এমত সংবাদ পরিবেশনও করেছে। আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী—“কেন্দ্রের সঙ্গে কার্যত পূর্ণ অসহযোগিতার পথ নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অসত্য প্রচারের অভিযোগ তুলে নবান্নকে দিল্লির সঙ্গে সংঘাতে যাওয়ার সংকেত দিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, রাজ্য সরকারের প্রকল্প সম্পর্কিত কোনও তথ্য এবার থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে পাঠানো হবে না।” অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের পাবলিক সার্ভেন্ট আমলারা রাজ্যের তথ্য ও হিসাব কেন্দ্রের কাছে যথাসময়ে পেশ করে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা মুখ্য জনপ্রতিনিধির সুপারিশ অনুযায়ী। তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে রাজ্যের সাধারণ মানুষকে। কারণ তারা বঞ্চিত হচ্ছেন কেন্দ্রীয় অনুদান থেকে। এমতাবস্থায় গণতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের মানুষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, এমন ব্যক্তিকে মুখ্য জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা আর নির্বাচন করবেন কী না।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আরও যে সঙ্গত প্রশ্নটি উঠে আসে তা হলো , রাজ্য যদি তার তথ্য কেন্দ্রের কাছে পরিবেশন না করে অর্থাৎ কেন্দ্রীয় অনুদানের হিসাব এবং রাজ্যের জনসম্পদ সংক্রান্ত তথ্য যদি ভারত সরকার জানতে না পারে, তবে পরবর্তী অনুদান কেন্দ্র পাঠাবে কীসের ভিত্তিতে? রাজ্যের জন্য বরাদ্দ কেন্দ্রীয় অনুদানের ক্লিয়ারেন্সের জন্য রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর মৌখিক দাবি বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দরবার করা নিঃসন্দেহে যথেষ্ট নয়, কারণ ইতিপূর্বেই উল্লেখ করেছি যে সর্বপ্রকার সহায়ক তথ্য ব্যতীত আমলাতন্ত্রের পক্ষে কোনো ক্লিয়ারেন্স দেওয়া আইনত সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে আরও উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে পশ্চিমবঙ্গের ওয়েলফেয়ার স্কিমগুলির প্রসেস অডিট করতে চেয়েছিল কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়া। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের অর্থদপ্তর এ বিষয়ে সিএজি-র সঙ্গে সহযোগিতা করতে রাজি না হওয়ায় প্রসেস অডিট করতে ব্যর্থ হয় সিএজি। এই ঘটনাও এ প্রশ্নের জন্ম অবশ্যই দেয় যে, যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির বকেয়া অর্থ না পাওয়ার অভিযোগ রাজ্যের অর্থমন্ত্রী বারবার তুলছেন, সেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিরই প্রসেস অডিটে বাধা সৃষ্টি কেন করল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থ দপ্তর ? বরং প্রসেস অডিটের মাধ্যমে ওই প্রকল্পগুলির হিসেব-নিকেশ সংক্রান্ত সমস্ত জটিলতার নিবৃত্তি করার সুযোগ ছিল, যার মাধ্যমে রাজ্যের বকেয়া সব অনুদান মঞ্জুর হয়ে যেতে পারত। কিন্তু প্রসেস অডিট আটকে দিয়ে সে পথ বন্ধ করল রাজ্য সরকার নিজেই। প্রশ্ন হলো, তবে কি পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় জকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির অনুদান তহবিল তছরূপ করতে অভ্যস্ত এবং পশ্চিমবঙ্গের অর্থ দপ্তর কি সেই তছরূপে সরাসরি জড়িত? সিএজি প্রসেস অডিটে সেই তছরূপ ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়েই কি রাজ্য আটকে দিল প্রসেস অডিট? তবে কি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা ক্লাব, ইমাম, মোয়াজ্জিনভাতা দেওয়া, পুজোর চাঁদা দেওয়া, মেলা, খেলা উৎসবের নামে নয়-ছয় করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার? সিগনেটরি অথরিটি হিসেবে কে আছেন এই নয়ছয়ের পিছনে? কেই-বা এসবের আইনসঙ্গত মাথা? নয়-ছয়। যদি কোনো মন্ত্রীর সুপারিশেও হয়, তাহলেও আইনত তার জন্য দায়ী থাকার কথা কোনো না কোনো আমলার। তবে কি অর্থ দপ্তরের আমলারা জড়িয়ে আছেন সরকারি তহবিল তছরূপের সঙ্গে?
এ বিষয়ে আরও উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় অভিযোগ তুলেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দপ্তর সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপদস্থ করছে কোনো এক বিশেষ কোম্পানিকে যে কোম্পানি আইন মেনে চলে এবং সেই বিষয়ে টেন্ডার সংক্রান্ত গভীর দুর্নীতি ও ফেভারিটিজমের অভিযোগও রাজ্যপাল তুলেছেন। তিনি এও বলেছেন যে, পাবলিক সার্ভেন্টরা এই ধরনের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে আইনের হাতুড়ির আঘাত তাদের মাথায় এসে পড়বেই। রাজ্যপালের এমত অভিযোগ থেকেও আভাস পাওয়া যায় যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দপ্তরের (যা অর্থদপ্তরের অধীনে) আমলারাও সম্ভবত রাজ্যের আর্থিক দুর্নীতি ও তহবিল তছরূপের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। রাজ্যপালের এমত অভিযোগ আমার ব্যক্তিগত কিছু পর্যবেক্ষণের সঙ্গেও সাযুজ্যপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গে মদের ব্যবসার লাইসেন্স এক বিশেষ শ্রেণীর মানুষ ছাড়া অন্য কাউকে দেওয়া হচ্ছিল না, এমন অভিযোগ এ রাজ্যে উঠেছিল ২০১৮ সালেই।
পরিশেষে বলা প্রয়োজন যে, কেন্দ্র-রাজ্য এই দ্বৈরথের অবতারণা কেবলমাত্র বৃথা রাজনীতি। হয়তো এ জাতীয় বৃথা রাজনীতর আদত কারণ দুর্নীতি চাপা দেওয়া, কিন্তু কারণ যাই হোক, এই দ্বৈরথ ওয়েলফেয়ার স্টেটের মূল উদ্দেশ্যটিকে ব্যর্থ করছে। অন্য কেউ নয়, বঞ্চিত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচিত প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য ভারত সরকারকে সরবরাহ করা যাতে পশ্চিমবঙ্গের জনগণ তার ন্যায্য পাওনা রাষ্ট্রীয় অনুদান যথাসময়ে যথা পরিমাণে পেতে পারে। ১৭ জুন যে পঞ্চায়েত অনুদানের প্রথম ইনস্টলমেন্ট রাজ্যের জন্য বরাদ্দ হলো, সেই অনুদানের পরবর্তী ইনস্টলমেন্টগুলি পেতে রাজ্যের যেন কোনো অসুবিধা না হয় তা দেখা রাজ্যেরই দায়িত্ব। কেন্দ্রকে দোষারোপ করে সে দায়িত্ব থেকে মুক্ত হতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পারবে না।
দেবযানী ভট্টাচাৰ্য্য