মানবতার ভেকধারী জেহাদি হায়নাদের প্রতিহত করতে হবে

টেলিভিশনে দিল্লির রাজপথে ৭১ তম সাধারণতন্ত্র দিবসের প্যারেডে দেশের শক্তি ও সংস্কৃতির প্রদর্শন দেখতে দেখতে মনে। হচ্ছিল বহিঃশত্রুদের চোখরাঙানি থেকে দেশের মানুষকে সুরক্ষার বার্তা দেওয়া সেই সঙ্গে অপশক্তিকে সতর্ক করে দেওয়া এবং দেশের অনুপম সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য তুলে । ধরতেই এত বড়ো আয়োজন। সিএএ বিরোধিতার নামে দেশব্যাপী অপশক্তির উল্লাসের আবহে অনুষ্ঠিত ৭১তম গণতন্ত্র দিবসের প্যারেড যতই এগোচ্ছিল ততই মনে হচ্ছিল বহিঃশত্রুর চেয়ে এই মুহূর্তে দেশের ভিতরে সাধারণ নাগরিকের ছদ্মবেশে সক্রিয় দেশের শত্রুদেরও কঠোর বার্তা দেওয়ার কোনো আয়োজন থাকলে। ভালো হতো।
সিএএ-র বিরোধিতার নামে দেশ জুড়ে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস, দেশবিরোধী স্লোগান দিয়ে জেহাদি শক্তির দাপিয়ে বেড়ানো থেকে এটা প্রমাণ হয়ে গেছে সাতচল্লিশে দেশভাগ হলেও বিগত সত্তর বছর ধরে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির দৌলতে দেশভাগের জীবাণুরা আবার নতুন । করে শক্তি সঞ্চয় করে ফেলেছে। এদের শক্তির কাছে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নির্ভর রাজনৈতিক দলগুলির অসহায় আত্মসমর্পণ করা ছাড়া উপায় নেই। ২০০১ সালে লস্কর-ই-তৈবা ও জৈশ-ই-মহম্মদদের সন্ত্রাসবাদীরা সংসদের স্টিকার লাগানো গাড়ি নিয়ে সংসদ ভবন আক্রমণ করেছিল। ২০১৯-২০ সালে সিএএ বিরোধী আন্দোলনের নামে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে, মহাত্মা গান্ধীর ছবি নিয়ে, অনেক জায়গায় সংবিধানের কপি হাতে নিয়ে গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষার নামে হিংসাত্মক আন্দোলন করছে, প্রকাশ্যে দেশকে টুকরো টুকরো করার স্লোগান তুলছে।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োতে দিল্লির শাহিনবাগে মুসলমান মহিলা ও শিশুদের সিএএ-র বিরোধিতার অজুহাতে এক মাসের বেশি সময় ধরে দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ করে পরিকল্পিত অবস্থান আন্দোলনের কোঅর্ডিনেশন কমিটির প্রধান জেএনইউ -এর প্রাক্তন ছাত্র শরজিল ইমামকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “যদি আমাদের পাঁচ লক্ষ সংগঠিত মানুষ থাকতো তাহলে উত্তরপূর্ব ভারতকে স্থায়ী ভাবে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারতাম। স্থায়ী ভাবে না হলেও এক মাসের জন্য বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারতাম। রেলের ট্রাক ও রাস্তাগুলি এমন ভাবে জ্যাম করে দিতে হবে যাতে এক মাসেও ওরা সেগুলি সরাতে না পারে। যদি তারা সেখানে যেতে চায়। তাহলে বায়ুপথে যেতে বাধ্য হবে।”শরজিল ইমামকে আরও বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আপনারা জানেন অসমে মুসলমানদের উপর কী হচ্ছে? ওখানে এনআরসি প্রয়োগ করে মুসলমানদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। ওখানে ম্যাসেকার হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি বিগত ৬-৮ মাসে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে বাঙ্গালিদের হত্যা করা হয়েছে। যদি আমরা অসমকে সাহায্য করতে চাই তা হলে অসমে আর্মি যাতায়াত ও অন্যান্য রসদের ও জোগান বন্ধ করতে হবে।
আরেকটি ভিডিয়োতে ইমামকে বলতে শোনা গেছে, ব্রিটিশ শাসনের শেষ পঞ্চাশ বছরে মুসলমানদের অবস্থা স্বাধীন ভারতের পঞ্চাশ বছরের চেয়ে ভালো ছিল। আমাদের এটা স্পষ্ট করে বলতে হবে যে, ১৯৪৭ সালে আমরা স্বাধীনতা পাইনি, আমরা শুধু মাত্র বাজে ধরনের গুলামি পেয়েছি। শিক্ষিত মুসলমানরা স্পষ্ট করে সরাসরি এই কথা বলতে শুরু করলে আমজনতা আমাদের অনুসরণ করবে এবং বলতে শুরু করবে। ইমামকে বলতে শোনা যায়, আমাদের ইনটেলেকচুয়াল গ্রুপ তৈরি করতে হবে এই গ্রুপের গান্ধীজী কিংবা ভারতের প্রতি কোনো সহানুভূতি থাকবে না এবং শত্রু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকবে। আমাদের অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন গান্ধীজী নিজে ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড়ো ফ্যাসিস্ট নেতা।…’
স্বাধীনতা পূর্ব সময়েও মুসলিম লিগের নেতারা কংগ্রেসকে হিন্দুদের দল গান্ধীজীকে হিন্দুনেতা বলে অভিহিত করলেও তৎকালীন জাতীয় নেতৃত্ব এই বিষয়গুলিকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে তুলে ধরে মুসলমানদের মন জয় করার জন্য নানা কর্মসূচি নিতেন। যেমন গান্ধীজী খিলাফত আন্দোলনে নেমেছিলেন। জাতীয় নেতাদের এই অদূরদর্শী ভ্রান্ত নীতির পরিণামে রচিত হয়েছিল অভিশপ্ত দেশভাগ, গণহত্যা, কোটি কোটি হিন্দুর বাস্তুচ্যুত হওয়ার ইতিহাস।
সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট নিয়ে গুজবের জেরে সংখ্যালঘুরা পথে নামলো, ট্রেন পুড়ল বাস, পুড়ল সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস হলো, প্রতিবাদের নামে দিনের পর দিন দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা অবরুদ্ধ হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে থাকলো। সিএএ নিয়ে প্রতিবাদের নামে হিংসা দেখে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ১৭ বছর বয়সের এক কিশোরের ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে বাদুরিয়া, বসিরহাট, তেতুলিয়ায় ছড়িয়ে পড়া হিন্দুদের ওপর আক্রমণের জেরে ঘটানো ধ্বংসযজ্ঞের কথা মনে পড়ছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের জুলাই পর্যন্ত সময় কালের মধ্যে নগণ্য কারণে মালদা, ধুলাগড়, বর্ধমান-সহ বিভিন্ন জায়গায় কম করে সাতটি হিন্দু বিরোধী হিংসার ঘটনা ঘটেছে। সেই পরম্পরা এখনো নিয়ম করেই ঘটে চলেছে, সেসব খবর কখনো মিডিয়ায় আসছে আবার কখনো আসছে না। পাকিস্তানে বাংলাদেশেও কোনো গুজব রটিয়ে দিয়ে কিংবা ইচ্ছাকৃত ভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তির নাম করে ভুয়ো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা হামেশাই ঘটছে।
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে মুসলমানদের পক্ষে পূর্ণ মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করা সম্ভব নয় সে জন্যই শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্যই পাকিস্তান নামে একটি পৃথক দেশ চাই। মুসলিম লিগের পাকিস্তানের দাবি এই কল্পিত তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির ২৩ বছর পর ওই দেশ ভাগ হয়ে আরেকটি ইসলামিক দেশ বাংলাদেশের জন্ম, সেই সঙ্গে ভারতে বসবাসকারী মুসলমানদের প্রশ্নাতীত স্বাচ্ছন্দ্য প্রমাণ করে দিয়েছে যে একটি সাজানো মিথ্যেকে ভিত্তি করেই জন্ম হয়েছিল পাকিস্তানের। পাকিস্তানের দাবি আদায়ের জন্য প্রত্যক্ষ সংগ্রামের নামে কলকাতা ও নোয়াখালিতে হিন্দু নিধন যজ্ঞ চালানো হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে একের পর এক আক্রমণে হিন্দুনিধন যজ্ঞ চালানো হয়েছে। ফলস্বরূপ পাকিস্তান হিন্দু শূন্য, বাংলাদেশও সেই পথেই এগিয়ে চলেছে।
সাতচল্লিশ ও একাত্তরের সংগঠিত গণহত্যার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ হিন্দুর নির্বিচার নির্মম হত্যালীলা,লক্ষ লক্ষ হিন্দু নারীর উপর সংগঠিত গণধর্ষণ ও নারকীয় অত্যাচার, কোটি কোটি হিন্দু ভিটেচ্যুত হওয়ার পর হিন্দুরা পাল্টা প্রতিরোধে নেমে সন্ত্রাসবাদী হয়ে উঠেছে, ডাইরেক্ট ইনডাইরেক্ট অ্যাকশনে নেমেছে, ট্রেন বাস জ্বালিয়ে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে রাস্তা অবরোধ করে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে এমন নজির নেই।
কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ৫০০০ বছরেরও বেশি ইতিহাস আছে। কাশ্মীরের ক্ষমতায় তখন শেখ আব্দুল্লা-পুত্র ফারুক আব্দুল্লা। ১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে ফারুক আব্দুল্লা কুখ্যাত ৭০ জন জঙ্গিকে কাশ্মীরের কারাগার থেকে নিঃশর্তে মুক্তি দেয়। তারপরেই কাশ্মীরে শুরু হলো এক নাগাড়ে হিন্দু নিধন। ১৯৯০ সালের ৪ জানুয়ারি হিজবুল মুজাহিদিন দেশের প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে গণমাধ্যমে রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঘোষণা করল, হিন্দুদের কাশ্মীর ছাড়তে হবে। জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি পণ্ডিতদের বাড়ির দরজায় কাশ্মীর ছাড়ার নোটিশ ঝুলিয়ে দিল। স্লোগান উঠলো—“কাশ্মীরে থাকতে গেলে আল্লা-হু আকবর বলতেই হবে। সেই সঙ্গে শুরু হলো নৃশংস হত্যালীলা। প্রায় চার লক্ষ কাশ্মীরি হিন্দু সেদিন চৌদ্দপুরুষের ভিটে ছেড়ে সর্বস্ব হারিয়ে উদ্বাস্তু হলো। সেদিনের নরহত্যার দলিলে উল্লেখ রয়েছে কিছু হৃদয় বিদারক ঘটনার কথা। বিচারপতি নীলকান্ত গাঞ্জুকে হত্যা করে তার দেহ রাস্তায় ফেলে রাখা হলো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার ছিন্নভিন্ন দেহ রাস্তায় পড়ে রইল। সাহস করে কেউ সেই মৃতদেহ সরাতে এগিয়ে এলো না। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সর্বানন্দ কাউল প্রেমী। প্রতিদিন কপালে তিলক পরতেন। কপালের ঠিক যে জায়গায় তিনি তিলক পরতেন, সেই জায়গায় পেরেক ঠুকে ঠুকে তাঁকে নৃশংস ভাবে তিল তিল করে হত্যা করা হলো। বি. কে. গাঞ্জুকে নৃশংস ভাবে খুন করে তার রক্ত দিয়ে মাখা-ভাত তাঁর স্ত্রীকে খেতে বাধ্য করানো হলো, তারপর তাকে এমন তীব্র গণধর্ষণ করা হলো, যে সেই ভয়াবহ ধর্ষণের তীব্র অত্যাচারেই তার মৃত্যু ঘটল। নার্স শ্ৰীমতী সরলা ভাটকে প্রকাশ্য রাস্তায় গণধর্ষণ ও হত্যা করে তার নগ্নদেহ রাস্তায় উঁচুতে ঝুলিয়ে রাখা হলো হিন্দুদের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের জন্য। স্কুল শিক্ষিকা গিরিজা টিক্কাকে নৃশংস ভাবে গণধর্ষণ ও খুন করা হলো। এ ছাড়াও হিন্দু পণ্ডিতদের জীবন্ত অবস্থায় লোহার শলাকা দিয়ে চোখ ফুড়ে দেওয়া হলো। মহিলাদের স্তন ও যৌনাঙ্গ ছিন্নভিন্ন করে প্রকাশ্য রাস্তায় প্রদর্শন, সিগারেটের ছ্যাকা দিয়ে যুবতীদের শরীরের গোপন অঙ্গ পুড়িয়ে দেওয়া, কেটে টুকরো করে চৌরাস্তায় সংযোগ স্থলে ঝুলিয়ে রাখার অজস্র ঘটনা ঘটলো। জীবন, মানসন্ত্রম। বাঁচাতে দলে দলে কাশ্মীরি পণ্ডিত সপরিবারে পালিয়ে এসেছিলেন দিল্লিতে। ইতিহাস বলছে তারা কিন্তু একবারের জন্যও পালটা হাতে আইন বা অস্ত্র তুলে নিয়ে সন্ত্রাসবাদের পথে পা বাড়াননি কিংবা ট্রেন। বাস জ্বালিয়ে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে, রাস্তা অবরোধ করে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলেনি।
হিন্দুদের অত্যাচারিত হওয়ার এই পরম্পরা শুধু বাংলাদেশ, পাকিস্তান আফগানিস্তানে নয়, হিন্দুবহুল ভারতের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে এখনো ঘটে চলেছে। যেমন মুর্শিদাবাদের হিন্দুরা বাংলাদেশের হিন্দুদের মতোই আতঙ্কে দিন যাপন করে। কিন্তু হিন্দুরা এর প্রতিবাদে ধ্বংসাত্মক আন্দোলন চালিয়েছে এমন নজির নেই। ইতিহাসের এই ধারা বলছে হিন্দুদের এই সহনশীলতার জন্যই ভারতের ঐক্য ও সংহতি, সেই সঙ্গে হিন্দুদের অস্তিত্ব ক্রমশই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। সেজন্য নিজেদের রক্ষা, জেহাদি ইসলামের ভয়ংকর থাবা থেকে ভারতবর্ষকে রক্ষার জন্য এবার রুখে দাঁড়াতে হবে।
মানবতার ভেকধারী জেহাদি হায়নাদের প্রতিহত করতে হবে।
সাধন কুমার পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.