মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমক্র্যাট প্রার্থী এখনো অনিশ্চিত

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড জে ট্রাম্প তা নিশ্চিত। ডেমক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কে? এই প্রশ্নের উত্তর এ মুহূর্তে কারো জানা নেই। ধরে নেওয়া হয়েছিল যে, সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট জে বাইডেন হবেন এবার ডেমোক্রেট প্রার্থী। দলীয় হাইকমান্ডের সমর্থন ছিল তার পেছনে। মার্কিন গণতন্ত্রের চমৎকার কৌশলে তিনি এখন অনেকটা পিছিয়ে পড়েছেন। ভোটাররা বাইডেনকে তেমন একটা পছন্দ করছেন না? বাইডেন কি ফিরে আসতে পারবেন? সেই সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে হয়নি। সুপার টুইস-ডে’র পর দৃশ্যপট পরিষ্কার হতে শুরু করে। বাইডেন থাকেন না বিদায় নেন, তা নির্ধারণে আরও কিছুটা সময় লাগবে।
সাবেক স্পিকার নিউটগিংরিচ বলেছেন, সুপার ‘টুইস-ডে’র পর জে বাইডেন ও এলিজাবেধ ওয়ারেন বিদায় নেবেন। তার মতে এরপর চারজন প্রার্থীর মধ্যে ডেমক্র্যাটিকমনোনয়ন ঘুরপাক খাবে। তিনি বলেন, সাবেক নিউইয়র্ক মেয়র মাইক বুলুমবার্গ টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনতে চাইছেন ! ডেমক্রেট শিবিরে এখন ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন লাভের জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ৭৮, ফ্রন্ট রানার, তার পর আছেন ইন্ডিয়ানের সাবেক মেয়র পিট বুটিলেগ ৩৮, মিনেসোটার সিনেটর এমি ক্লোবুচার ৬৯, সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট জে বাইডেন ৭৭, মাইকেল ব্লুমবার্গ ৭৭, এলিজাবেথ ওয়ারেন ৭০, বিলোনিয়ার ব্যবসায়ী টম স্টেয়ার এবং হাওয়াই’র কংগ্রেস ওম্যান তুলসী গাবার্ড, ৩৮।
সুপার ‘টুইস-ডে’মঙ্গলবার ৩মার্চ ২০২০ এদিন একসঙ্গে আলাবামা, আরকানসাস, ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, মেইন, ম্যাসাচুসেটস, মিনেসোট, নর্থ ক্যারেলিনা, ওকলাহোমা, টেনেসি, টেক্সাস, উটাহ, ভারমন্ট, ও ভার্জিনিয়ায় একসঙ্গে প্রাইমারি নির্বাচন। নেভাদায় ককাস ২২ ফেব্রুয়ারি, যদিও সেখানে আগাম ভোট’ চলছে। সাউথ ক্যারোলিনায় প্রাইমারি ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০। ইতিমধ্যে আইওয়া এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারে ককাস ও প্রাইমারি সম্পন্ন হয়েছে। আইওয়াতে বুটিগেগ এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারে বার্নি স্যান্ডার্স জিতে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। ২০১৬-তে বার্নি এ দুটো জেতেন, কিন্তু ডেমোক্রেট মনোনয়ন পান হিলারি ক্লিন্টন।
নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ দেরিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন এবং নবম ডেমক্র্যাট টিভি বিতর্কে অংশ নেওয়ার প্রথম সুযোগ পান ১৯ ফেব্রুয়ারি। প্রায় সকল প্রার্থী তাকে আক্রমণ করেন। সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন তাকে মহিলাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। অন্যরা বুলুমবার্গকে তাঁর অপ্রকাশিত ট্যাক্স-রিটার্ন, নিউইয়র্ক মেয়র থাকাকালে কালোদের বিরুদ্ধে স্টপ অ্যান্ড ফ্রিস্ক পলিসি, তার অঢেল সম্পদ প্রসঙ্গ তোলেন। বুলুমবার্গ প্রশ্ন তুলেন বার্নি স্যান্ডার্স কি নির্বাচিত হতে পারবেন? ব্লুমবার্গ এ পর্যন্ত ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন, তিনি এক বিলিয়ন ডলার খরচের পরিকল্পনা নিয়েছেন।
ডিক মরিস, যিনি আরকানসাস থেকে ক্লিন্টন দম্পতির রাজনৈতিক গুরু ছিলেন, তিনি সদ্য অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, হিলারি ক্লিন্টন ডেমক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছেন। ২০১৬-তে ডিক মরিস বলেছিলেন যে, ট্রাম্প নির্বাচিত হবেন। তার ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক হয়েছিল। হিলারি কি আসলেই নামছেন? পিটবুটিগেগ’কে কেউ চিনতো না। তার উত্থান বেশ চমকপ্রদ। সদ্য সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকপ্রাপ্ত রেডিয়ো-হোস্ট রাস লিম্বো বলেই ফেলেছেন যে, আমেরিকানরা এখনো একজন ‘সমকামী’-কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রস্তুত নয়। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পশিবির হয়তো পিট বুটিগেগ-কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রস্তুত নয়। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প শিবির হয়তো পিন্টু বুটিগেগ-কে সেক্সচুয়াল লাইনে অ্যাটাকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে ট্রাম্প ও বুলুমবার্গের মধ্যে ইতিমধ্যে এক পশলা ‘টুইট-যুদ্ধ’ হয়ে গেছে, যা কারো কারো মতে স্কুলের বাচ্চাদের মতো বালখিল্য ! অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল ইউলিয়াম পি বার কদিন আগে বলেছেন, ট্রাম্পের টুইটের কারণে কাজ করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে দিয়ে টুইট বন্ধ হওয়া দরকার। ট্রাম্প বলেছেন, উইলিয়াম পি বার-কে পরামর্শ দেওয়ার অধিকার তার আছে। ট্রাম্পের বন্ধু রজার স্টোন মামলা নিয়ে এই দ্বন্দ্ব। এই মামলার প্রেক্ষিতে প্রায় দুই হাজার কৌঁসুলি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি করেছেন। জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট বলেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল পদত্যাগ করেছেন না।
ওয়াশিংটন পোস্ট-এবিসি জরিপ জানাচ্ছে, বার্নি স্যান্ডার্স তার নিকটতম ডেমক্রেট প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে এই প্রথম ‘ডবল ডিজিট’ এগিয়ে গেছেন। একই জরিপে জানুয়ারিতে জে বাইডেন এগিয়ে ছিলেন। ট্রাম্পের জন্যে ভালো খবর হচ্ছে, ২০১৬-তে তার বিশ্বস্ত হোপ হিক্স হোয়াইট হাউসে ফিরে আসছেন, তিনি ২০১৮ পর্যন্ত হোয়াইট হাউস কমিউনিকেশন ডিরেক্টর ছিলেন। নেভাদার বৃহৎ শ্রমিক ইউনিয়ন (কুলিনারি ইউনিয়ন) বার্নি স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। হাউস ও সিনেট বাই-পার্টিজান প্রস্তাব পাশ করেছে যে, ইরানে পূনরায় আক্রমণ করতে হলে ট্রাম্পকে কংগ্রেসের অনুমতি নিতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এতে ভেটো দেবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই?
শিতাংশু গুহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.