সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কি কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়েছেন? বিশেষ করে বিজেপির। প্রশ্নটা ভীষণ ভীষণ অবাক করল তো? হয়তো ভাবছেন ভারতের দোর্দণ্ড প্রতাপ ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা বিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্টের আর কী দায় পড়ল, যে তাকে রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে হবে? আসলে হয়তো ঠিকই ভাবছেন, কিন্তু সৌরভের একটি জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠানকে ঘিরে তার ওপর যেভাবে আক্রমণ শানানো হচ্ছে, সেই আক্রমণকারী কমিউনিস্টরা কেবল তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপরই এমন আক্রমণ করে থাকে। ‘দাদাগিরি’তে ভূতের বিশ্বাসের গল্প ছড়াচ্ছেন সৌরভ, এমনই অভিযোগে তাঁকে বয়কটের ডাক উদযাপিত করেছে কমিউনিস্টরা, অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়ায়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কুসংস্কার’ছড়াচ্ছেন কিনা, সেটা আমাদের বিবেচ্য নয়; যদি তার মন্তব্য পছন্দ না হয় তবে যুক্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে এই গণতান্ত্রিক দেশে কে আটকাচ্ছে?
কিন্তু সংস্কার’বস্তুটি কমিউনিস্টদের কাছে শেখার কী পরিণাম হতে পারে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে নতুন করে সেকথা বলার দরকার নেই। আসল সমস্যা অন্য জায়গায়, ভূতের গল্পে বিশ্বাস করা’, ‘কুসংস্কার ছড়ানো এসব তো অছিলা মাত্র। সৌরভের ‘অপরাধ’ বিসিসিআই সভাপতি হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ এবং বিসিসিআই সচিব হিসাবে তার সহকর্মী অমিত পুত্র জয় শাহ। ভূতেদের মুচকি হাসতে দেখা গিয়েছে কিনা তা জানি না, তবে অদৃষ্টের বিলোল কটাক্ষের সামনে আমরা সবাই রয়েছি। প্রায় একযুগ আগে সৌরভ গঙ্গেপাধ্যায় যখন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ‘অনুপ্রেরণায় তার ক্রিকেট জগতের গুরু জগমোহন ডালমিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে যান, বুদ্ধবাবুর অহংপূর্ণ উক্তির তখনও অবসান হয়নি, দখলদারির সেই রাজনীতির ববাড়ে সৌরভ নিজের ভুল বুঝতে পেরে ডালমিয়ার কাছে নিজের অনুতাপও প্রকাশ করেন। সৌরভ কিন্তু তখন ছিলেন মহান কমরেড। জ্যোতিবাবুর সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গতার ছবিও কারোর অজানা ছিল না। এহেন সৌরভ আর কমিউনিস্টদের কথায় উঠছেন-বসছেন না, তার ওপরে পাকিস্তানের জঙ্গিরা আমাদের সেনার ওপর হামলা চালালে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ বয়কটের ডাক দিচ্ছেন, এতটা সাম্প্রদায়িক’মনোভাবের সঙ্গে আর যারাই হোক, জেহাদপন্থী ভারতীয় বামপন্থার পক্ষে আপস করা সম্ভব নয়। বামপন্থীদের এই সযত্ন লালিত রাগ তাদের একদা ‘অনুরাগী’ সৌরভের ওপর সেদিন। থেকেই ছিল, আজ ভূত-বিশ্বাসের অছিলায়। ভুতে-পাওয়া বামপন্থীরা তাদের লেজুড়বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চ’ ইত্যাকার হ য ব র ল-র মাধ্যমে সেই রাগ মেটাচ্ছে। ভোটবাক্সে ভূতের নৃত্য তৃণমূল তো বহু পরে দেখিয়েছে, সত্যি কথা বলতে কী বামপন্থীরাই এই ভোটবাক্স-ভূতের আবিষ্কারক। যেখানে ধরুন এক হাজার ভোটার, অথচ ভোট পড়ে এগারোশো, এর মধ্যে এক হাজার নিরানব্বইটি আবার কমিউনিস্ট দলের পক্ষে— এমন নমুনা বিগত চৌত্রিশ বছরে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ঢের ঢের দেখেছেন।
মোদ্দা কথাটা হলো এধরনের অসভ্যতা বামপন্থীদের মজ্জাগত, আর সম্প্রতি এর শিকার হলেন পশ্চিমবঙ্গ ও বাঙ্গালির গর্ব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি নিজের ক্রিকেট প্রজ্ঞায় ভারতীয় ক্রিকেটকে বিশ্বের দরবারে সম্মানিত করেছেন, খেলোয়াড় হিসাবে এবং এখন প্রশাসক হিসাবেও তা করছেন। বাঙ্গালির মুখোজ্জ্বলকারীদের সাম্প্রতিক তালিকাটা একেবারেই ছোটো এবং সৌরভ নিশ্চয়ই সেই তালিকায় সর্বাগ্রে থাকবেন। তাতে বামপন্থীরা যতই কাদা ছেটানোর চেষ্টা করুন না কেন, বামপন্থার কর্দমাক্ত রূপ বাঙ্গালিরা অন্তত হাড়ে হাড়ে চেনে। সুতরাং এদের মানুষ এখন হাসির খোরাক বলেই দেখেন, আদর্শ বা রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়।
একটা কথা মনে রাখবেন বামপন্থীদের অতীত বলে বাঙ্গালি তথা ভারতীয়দের শ্রদ্ধার ব্যক্তি ও বস্তুকে অপমান করা, বিশ্বের দরবারে হেয় করা এদের মজ্জাগত। বেশিদূর যেতে হবে না, সাম্প্রতিককালেই দেখুন জেএনইউতে বর্বর কমিউনিস্টরা নির্বিচারে বিবেকানন্দের মূর্তি ভাঙল, ইতরামির একশেষ করলো। আর পশ্চিমবঙ্গের মহান বামপন্থীগণ, তাদের অবস্থা তো আরও নক্কারজনক। একটি বাজারি সংবাদমাধ্যমের প্রকাশনা সংস্থা, যেখানে জেল থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত এক নকশাল নেত্রীর গরিব-গুর্বোর থেকে লুঠ করা টাকা খাটছে বলে কলেজস্ট্রিট মার্কেটের খবর, সেখানে কর্মরতা এক তথাকথিত সাহিত্যিক, বামপন্থী বলেই পরিচিতা, স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে বলেছেন। গেরুয়াপন্থীরা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে অমার্জনীয় কাজ করেছেন। এরপর আলতো করে জুড়ে দিয়েছেন এখন বিবেকানন্দের বেলায় আফশোস করে কী লাভ! বিবেকানন্দের মূর্তি ভাঙায় তার মতো বামপন্থীরা উল্লসিত হতেই পারে, কিন্তু ম্যাডাম বিদ্যাসাগর মূর্তি গেরুয়াপন্থীরা ভেঙেছে আপনাকে কে বলল? আপনি কি সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছেন। নাকি আর পাঁচটা বামপন্থী ও কমিউনিস্ট তৃণমূলিদের। মতো জানেন ফুটেজ প্রকাশ্যে এলে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ ক্ষুন্ন হবে? বিদ্যাসাগর কলেজের সাধারণ সম্পাদক, তাদের মতে তো জানি মূর্তি ভাঙার রেওয়াজ আছে। সুতরাং এটা কাদের চ্যালাচামুণ্ডাদের কাজ বোঝাই যায়। আর এদের মতাদর্শ কী, ৭০-এর দশকে কলেজস্কোয়ারে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয়েছিল।
সুতরাং মহান কমিউনিস্ট গণ, প্রেসিডেন্সিতে আপনাদের জাতভাইকে (যাদের কাছে একদা শ্রেণীশত্রু বলে বিবেচিত হতেন) গট আপ গেমে হারানোর আনন্দে বিভোর থাকুন, আর নরেন্দ্র মোদীকে সরিয়ে কারাট ইয়েচুরি জুটিকে প্রধানমন্ত্রী করে ইমরানভাইয়ের ঋণ শোধ করার দিবাস্বপ্ন দেখুন, এখন বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে সৌরভ গাঙ্গুলি আপনাদের দুচোখের বিষ তো হবেনই। ভগবান আপনাদের দেশদ্রোহী কমিউনিস্ট করেই রেখেছেন, মানুষ হওয়া দূর অস্ত।
বিশ্বামিত্র-র কলম
2019-11-21